শিষ্ঠাচার সংক্রান্ত হাদীস—১৬ (মেহমানদের ব্যপারে-১)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা বলেছেন,

 মেহমানদারি তিন দিন। তিন দিনের বেশি মেহমানদারি করা সদকা”। সহীহ বুখারী: ৫৬৮৮;

এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলে আল্লাহর রাসূল তার স্ত্রীদের নিকট তার আগমনের খবর পাঠালে, তারা বললেন, আমাদের নিকট শুধু পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। তখন রাসূল সা সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা কে আছ লোকটিকে সাথে নিয়ে যাবে বা মেহমানদারি করবে? তখন একজন আনসারী সাহাবী বলল, আমি প্রস্তুত। সাহাবী লোকটিকে বাড়ীতে নিয়ে স্ত্রীকে বলল, আল্লাহর রাসূলের মেহমানের মেহমানদারি কর। স্ত্রী বলল, আমাদের ঘরে কেবল বাচ্চাদের খাওয়ার ছাড়া আর কোনো খাওয়ার নেই। সাহাবী বলল, তুমি খাওয়ার প্রস্তুত কর। স্ত্রী বাতি জ্বালাল এবং বাচ্চাদের ঘুম বানিয়ে দিল। তারা বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঠিক করার ভান করল এবং তারা দুইজন খাওয়ারের  অভিনয় করল, যাতে মেহমান মনে করে তারাও খাচ্ছে। তারা দুইজন না খেয়ে রাত যাপন করল। সকাল বেলা যখন তারা রাসূল সা এর দরবারে উপস্থিত হলো, রাসূল সা তাদের বললেন, গত রাতে তোমরা দুইজন মেহমানের সাথে যে ব্যবহার দেখিয়েছ, তাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দুই জনের কর্মে খুশি হয়ে গেছেন। অতঃপর এ আয়াত নাযিল করেন,

 “এবং অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম” (সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯) সহীহ বুখারী: ৩৭৯৮;

আজ সমাজে মেহমানদারি করাটা বোঝা স্বরুপ বানিয়ে ফেলেছি আমরা। সহজ সরল সাবলীলতা থেকে দূরে যেয়ে অধিক চাকচিক্যতা ও স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে  এবং লোক দেখানো নীতিতে আপ্যায়নের ব্যবস্থাপনা যেন কঠিন করে দেয়।  ফলে দুনিয়াতেও বিরম্বনা ও আখেরাতে এর কোন বিনিময় পাওয়া যাবে না। পূর্বে আন্তরিকতা ও সম্পর্কের দাবী ছিল বেশী আর আজ যেন কি খাওয়ালো ও কি উপহার দিল বা নিয়ে আসলো সেটাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 অথচ সম্পর্কের হক আদায়ে যা করনীয়— “সুন্দর কথা সদকা স্বরূপ”। সহীহ বুখারী: ২৭০৭