৮ই যিলহজ্জ:
এই দিনটিকে বলা হয় “তারউইয়্যার দিন”। এইদিন থেকে হজ্জের আমল শুরু হয় এবং সূর্য উঠার পর ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পড়তে পড়তে মীনায় আসা সুন্নাত। এই দিন মক্কায় অবস্থানকারী হাজীগন নিজ নিজ অবস্থানস্থল(ঘর, হোটেল বা আবাসস্থান) থেকে আবার হজ্জের নিয়ত করে ইহরাম বাঁধবেন, এইক্ষেত্রে উমরার সময় যেভাবে বেঁধেছিলেন সেইভাবেই হবে তবে নিয়্যত হবে আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান বা লাব্বাইকা হাজ্জান।
এই ক্ষেত্রে ছোট ব্যাগে কিছু জিনিষ আলাদা করে সাথে নিয়ে নিন। যেমন কাপড়, মুজদালিফার জন্য বিছানা বালিশ ইত্যাদি।
মিনার তাবুর টিকেট, হজ্জের আইডি কার্ড, মনোরেলের টিকেট/বেল্ট সহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র, কিছু মেডিসিন টাকা সাথে নিয়ে নিন।
হজ্জের ইহরাম বাঁধার পর অন্য কোথাও না গিয়ে মীনার দিকে রওয়ানা হওয়া সুন্নাত। ৮ই যিলহজ্জ মীনায় যুহর, আসর, মাগরিব ইশা এবং ৯ তারিখের ফজর পড়বেন।
অনেক ক্ষেত্রে মিনাতে রওয়ানা দিতে হয় আগের দিন মানে সাত তারিখ রাতে ( প্রকারান্তে সেটা আসলে ৮ তারিখের শুরু) আপনাকে রেডি থাকতে বলা হবে হজের ইহরাম বাঁধার জন্য । বলা হবে যে রাত সাড়ে আট টার (মানে ‘এশার) পর যে কোন সময়ে গাড়ি আসবে ।
সকালে না নিয়ে আগের দিন রাতে নেবার কারণ হল , সকালে হাজারে হাজারে বাস এক সাথে রওয়ানা দেয় মীনার উদ্দেশ্যে। এই ঝামেলা এড়ানোর জন্যই মোয়াল্লেমের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা থাকে।
বাস দেরিতে আসছে কেন – এই নিয়ে হৈ চৈ না করে তসবীহ পড়বেন বা ঘুমিয়ে নেবেন।
মিনা মক্কা থেকে ৪-৫ মাইল দুরত্বের। যেতে হয়ত রাত ১/২ টা বেজে যেতে পারে। তাবুগুলো এসি করাই থাকে। এক একটা তাবুতে প্রায় ১০০ জন থাকে । পুরুষ মহিলা আলাদা। তাবুর পাশে পানির ড্রাম আছে। কার্পেটের উপর পাতলা বেডিং থাকে যার প্রস্থ এক হাত হবে কি না সন্দেহ। এখানেই আপনাকে শুতে হবে। মোবাইল চার্জেরও ব্যবস্থা আছে, তবে সেটার জন্য তটস্থ থাকতে হবে। মোবাইলে সব সময় চার্জ রাখবেন এবং ব্যালেন্সও থাকা চাই ।
বাথরুমের ব্যবস্থাপনা সুন্দর ভাবে হলেও এতোগুলো মানুষের জন্য সবসময় রাখাটা অনেক সময় সম্ভব হয় না। নিজের পবিত্রতার জন্য নিজেই সাবধান হোন। ছোট সাবান ও টিস্যু সাথে রাখুন। মহিলাদের জন্য এই সময়(বাথরুমে যাওয়ার সময় বিশেষ করে) সেলোয়ারের চেয়ে পেটিকোট ম্যাক্সী পড়ে থাকলে ভালো, তাহলে নাপাক বা পানি ছিটা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। অনেকে বাথরুমে না যাওয়ার জন্য পানি খাওয়া কমিয়ে দেন যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
মীনায় নামাজের কসর পড়তে হবে। আরাফা ও মুযদালিফাতেও কসর নামাজ হবে। এর মধ্যে মক্কায় অবস্থানকারী ও বহিরাগতদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মিনায় আজকের (৮ই যিলহজ্জ) রাত্রিযাপন মুস্তাহাব বা সুন্নাত। যেহেতু পরেরদিন আরাফাতের দিন তাই এই রাতকে বলে আরাফাতের রাত।
৯ই জিলহজ্জ:
এটি হজ্জের রুকন, এটি বাদ পড়লে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।
এই দিন সূর্যোদয়ের পর হাজীগন মীনা হতে আরাফার দিকে রওয়ানা দিবেন এবং সূর্য ঢলা পর্যন্ত এখানে অবস্থান করাটা ফরয এবং নামেরা নামক ময়দানে অবস্থান করাটা সুন্নাত, যদি তা সহজসাধ্য হয়। রওয়ানা হওয়ার সময় থেকেই বেশী বেশী তালবিয়্যাহ, কালিমা ও তাকবীর বলতে থাকা সুন্নাত।
রাতে রওয়ানা হবে বলে অনেক সময় মুয়াল্লিম বলেন গাড়ি আসবে, আরাফাতে যাবার জন্য তৈরি থাকবেন। যদিও পরের দিন যোহর থেকে থাকার নিয়ম, তবুও রাতেই নিয়ে যায় । কারণ ঐ একই যা মিনায় যাবার কারণটাই।
আরাফার ময়দানের তাবুগুলো অস্থায়ী । এখানে কার্পেট থাকে, তবে বিছানা বালিশ আপনার। আরাফাতের সীমানা চিহ্নিত করে চতুর্দিকে পিলার ও সাইনবোর্ড লাগানো আছে,এ সীমানার ভিতর অবস্থান করতে হবে।
এখানে আপনি গোসল করতে পারবেন, সে ব্যবস্থাপনাও আছে। গোসল করার সময় উপরের নিচের কাপড় ভিজানোর পর নতুন সেটের নিচের পাড়টা আগে জড়িয়ে ফেলবেন । কোনভাবেই ইহরামের কাপড় সম্পুর্ন ছাড়া হবেন না ।
প্রচুর খাবার সরবরাহ করা হয় এসময় । তবে তৈলাক্ত খাবার বেশী খেলে সমস্যায় পড়তে পারেন। জুস ও পানি জাতীয় খাবার অবশ্যই বেশী খাবেন।
আরাফার ময়দানে করনীয়—
১। গোসল করে নেয়া,
২। পরিপূর্ণ পবিত্র থাকা, তবে কোন কারন বশত অযুবিহীন ও অপবিত্র থাকলেও আরাফাতে অবস্থান শুদ্ধ হবে।
৩। কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা ও অন্যান্য তাসবীহ পড়া, তওবা-ইস্তিগফার বেশী করে করা
৪। কিছু সময় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থেকে দু’হাত উত্তোলন ও প্রসারিত করে দোয়া করা।
৫। মনকে বিনম্র ও খুশূ-খুযূ রেখে মোনাজাত করা।
৬। দোয়া নিম্ন স্বরে ও একাকী করা উত্তম। তবে কেউ যদি দোয়া করে ও পিছনে কোন লোকসমষ্টি আমীন বলেন তাতে অসুবিধা নেই(শাইখ উসাইমিন)
৭। হায়েজ নিফাস অবস্থায় দোয়া করা যাবে।
৮। দোয়াতে নিজের জন্য / অন্যের জন্য দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানের জন্য করবেন।
যখন সূর্য ঢলে যাবে (যোহরের ওয়াক্ত), তখন ইমাম সাহেব খুতবা প্রদান করবেন। এই খুতবার বক্তব্যে যে বিষয়ের দিক নির্দেশনা থাকে–
- আল্লাহকে ভয় করে চলা।
- তাওহীদ সম্পর্কিত মাসআলা বর্ণনা করা।
- প্রতিটি আমলের মাঝে খুলুসিয়াত-নিষ্ঠার সাথে ও আল্লাহর জন্য করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা।
- আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ হতে সাবধানবানী করা।
- মহান আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের স. সুন্নাতকে দৃঢ়তার সাথে অবলম্বন করার আহবান।
- নিজেদের যাবতীয় কাজ-কর্ম কুর’আন সুন্নাত মুতাবিক সম্পন্ন করার তাগিদ প্রদান।
- নিজেদের সমুদয় কাজে মহান আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের স. সুন্নাতকে চূড়ান্ত মীমাংসাকারী হিসাবে গ্রহন করার তাগিদ প্রদান।
এরপর যুহর ও আসরের নামায আউয়াল ওয়াক্তে এক আযান ও দু ইকামত দিয়ে কসরের নিয়মে একত্রে পড়বেন, তবে প্রতি নামাযের জন্য পৃথক ইকামাত দিবেন। সহীহ মুসলিম
এরপর হাজীরা আরাফাতের সীমায় অবস্থান করবেন। যেখানেই অবস্থান করুন কিবলামুখী হয়ে বসবেন। সম্ভব হলে জাবালে রাহমাত নামক পর্বতকে সামনে রেখে কিবলামুখী হয়ে বসবেন।
এখানে কোন নফল বা সুন্নাত নামাজ পড়বেন না কারন রাসূল স.পড়েন নি।
জাবালে রহমতে যেখানে রাসূল স. বিদায় হজ্জ ভাষন দিয়েছিলেন, সেখানে আরোহন করা ও আলাদা কোন ইবাদাত ও তাসবিহ করার মর্যাদার কথা কোন হাদীসে আসেনি। তাই এটা করতে যেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন, সামর্থের বাইরে হলেও কষ্ট করে সেখানে উঠতে চান যার কোন বিশেষত্ব নেই।
মাগরিবের বেশ আগেই আপনাদেরকে বাসে উঠিয়ে নেবে, ‘আসরের নামাজের পর পরই । মাগরিবের আগে গাড়ি আরাফাতের ময়দান ক্রস করতে দেওয়া হয় না। গাড়িতে আগে উঠলেও আপনার গাড়ি রওয়ানা করতে করতে মাগরিবের ঘন্টা খানেক পার হয়ে যাবে। শুরু হবে মুজদালেফার উদ্দেশ্যে যাত্রা । এখন অবশ্য ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে যা আরো অল্প সময় ও কষ্টে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারছেন। মাত্র আধা ঘন্টার পথ বাসে গেলে (যদি রাস্তা ক্লিয়ার থাকে)। হেঁটে গেলে রাত হয়ে যায় ৯টা থেকে ১১ টাও বেজে যেতে পারে।
আরাফাতের দিন হাজীরা সাওম রাখবে না কারন রাসূল স. সাওম করেন নি।
সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আরাফাতে মাগরিবের নামায না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা দিবেন। সেখানে পৌছুতে দেরী হলেও মাগরিব ও ইশা নামায মুযদালিফাতে গিয়ে পড়বেন।