হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য শর্তসমূহ:
১। মুসলমান হওয়া
২। বালেগ হওয়া
৩। আকল- বুদ্ধি থাকা
৪। আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা থাকা।
আর্থিক সক্ষমতা বলতে এখানে বুঝায় হজ্জের খরচ বহন করার পর তার পরিবারের ভরণপোষন চালিয়ে যাওয়ার মতো সম্পদ ও সক্ষমতা থাকতে হবে।
মহিলাদের জন্য আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।
মাহরাম কারা?
এখানে মাহরাম তারাই যাদের সাথে বিয়ে হওয়া স্থায়ীভাবে হারাম। তারা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:
এক. বংশীয় মাহরাম।
বংশীয় মাহরাম মোট সাত শ্রেণি:
১- মহিলার মূল যেমন, পিতা, দাদা, নানা। (যত উপরেই যাক)
২- মহিলার শাখা যেমন, পুত্র, পুত্রের পুত্র, কন্যার পুত্র। (যত নীচেই যাক)
৩- মহিলার ভাই। আপন ভাই বা বৈপিত্রেয় ভাই অথবা বৈমাত্রেয় ভাই।
৪- মহিলার চাচা। আপন চাচা বা বৈপিত্রেয় চাচা অথবা বৈমাত্রেয় চাচা। অথবা কোন মহিলার পিতা বা মাতার চাচা।
৫- মহিলার মামা, আপন মামা বা বৈপিত্রেয় মামা অথবা বৈমাত্রেয় মামা। অথবা কোন মহিলার পিতা বা মাতার মামা।
৬- ভাইপো, ভাইপোর ছেলে, ভাইপোর কন্যাদের ছেলে (যত নীচেই যাক)।
৭- বোনপো, বোনপোর ছেলে, বোনপোর কন্যাদের ছেলে (যত নীচেই যাক)।
দুই. দুধ খাওয়াজনিত মাহরাম।
দুধ খাওয়াজনিত মাহরামও বংশীয় মাহরামের মত সাত শ্রেণি। যাদের বর্ণনা উপরে চলে গেছে।
তিন. বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম।
বৈবাহিক কারণে চার শ্রেণি মাহরাম হয়।
১- মহিলার স্বামীর পুত্রগণ, তাদের পুত্রের পুত্রগণ, কন্যার পুত্রগণ (যত নীচেই যাক)।
২- মহিলার স্বামীর পিতা, দাদা, নানা (যত উপরেই যাক)।
৩- মহিলার কন্যার স্বামী, মহিলার পুত্র সন্তানের মেয়ের স্বামী, মহিলার কন্যা সন্তানের মেয়ের স্বামী (যত নীচেই যাক)
৪- যে সমস্ত মহিলাদের সাথে সহবাস হয়েছে সে সমস্ত মহিলার মায়ের স্বামী এবং দাদি বা নানির স্বামী।
মাহরাম- এর কিছু শর্ত:
মাহরামকে অবশ্যই মুসলিম, বিবেকবান এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।
যে কোন ইবাদাত কবুল হওয়ার শর্ত ৪টি।
১। ঈমান –কাফির ও মুশরিক থাকা অবস্থায়,ঈমানের প্রতি সন্দেহ পোষনকারী বা ঈমান ছুটে গেলে ইবাদাত কবুল হবে না।
২। ইখলাস –শুধুমাত্র ও একমাত্র মহান রবের খুশির জন্য হতে হবে।
৩। সুন্নাত অনুসারে- প্রিয় নবী স.এর দেখানো নিয়মে হতে হবে।
৪। শির্কমুক্ত থাকা
হজ্জ বা উমরা কবুলের জন্যও উপরে উল্লেখিত শর্তের সাথে আরো কিছু শর্ত রয়েছে যেমন-
১। হালাল মাল বা অর্থ দিয়ে হজ্জ করা-
আল্লাহর ইবাদাত করবে অথচ তার উপার্জন হালাল হবে না, এটা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। অতএব হালাল উপার্জন ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। আবূ হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ইমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে, হে আমার রব, হে আমার রব অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। সুতরাং তার প্রার্থনা কীভাবে কবুল হবে?। ইমাম মুসলিম: ২৩৯৩।
২। যাবতীয় মন্দ কাজ ও ঝগড়া থেকে দূরে থাকা ও আল্লাহর ভয় ও মক্কার ফযিলত অন্তরে জাগ্রত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া।
মহান আল্লাহ বলেছেন
হজ্জের মাসগুলো সবার জানা। যে ব্যক্তি এই নির্দিষ্ট মাসগুলোতে হজ্জ করার নিয়ত করে, তার জেনে রাখা উচিত, হজ্জের সময়ে সে যেন যৌন সম্ভোগ, দুষ্কর্ম ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হয়। আর যা কিছু সৎকাজ তোমরা করবে আল্লাহ তা জানেন। হজ্জ সফরের জন্য পাথেয় সঙ্গে নিয়ে যাও আর সবচেয়ে ভালো পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। কাজেই হে বুদ্ধিমানেরা! আমার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো। সূরা আল বাকারা:১৯৭
যে ব্যক্তি মক্কার যমীনে সীমালংঘন করে কোন অন্যায় কাজ করতে ইচ্ছা পোষন করবে,আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করাব। সূরা হজ্জ:২৫
৩। হজ্জ উমরাহ বিনষ্টকারী কাজ সমূহ থেকে দূরে থাকা
হজ্জ ও উমরার আহকাম ও কার্যাবলী
উমরার ফরয বা রুকন ৩টি।
১। ইহরাম করা।
২। কাবাঘর তাওয়াফ করা।
৩। সাঈ করা
উমরার ওয়াজিব ২টি।
১। মীকাত পার হওয়ার আগেই ইহরাম করা।
২। চুল কাটা বা মাথা মুণ্ডানো। মহিলাদের চুলের অগ্রভাগ কাটা।
হজ্জের ফরয বা রুকন ৩টি।
১। ইহরাম করা
২। আরাফাতে অবস্থান (৯ই যিলহজ্জ)
৩। তাওয়াফ করা (তাওয়াফে যিয়ারাহ বা ইফাদাহ)
হজ্জের ওয়াজিব ৯টি
১। ইহরাম করতে হবে মীকাত পার হয়ার আগেই।
২। সাফা মারওয়ার মাঝে সাঈ করা।
৩। আরাফাতে অবস্থান সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘায়ীত করা।
৪। মুযদালিফায় অবস্থান করা।
৫। মীনায় রাত্রি যাপন।
৬। জামরা সমূহে কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
৭। হাদী (পশু) কুরবানী করা।
৮। চুল কাটা বা মাথা মুণ্ডানো। মহিলাদের চুলের অগ্রভাগ কাটা।
৯। বিদায়ী তাওয়াফ। ( হায়েয বা নেফাস শুরু হয়ে গেলে নারীদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে-বুখারী)
উল্লেখিত ওয়াজিবসমূহের মধ্যে কোন একটি যে কোন কারনেই ছুটে গেলেই বা বাদ পরে গেলে দম বা কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
দম বা কাফফারা আদায় করতে হয় যেভাবে—উমরা বা হজ্জের কোনো একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে এর পরিবর্তে একটি খাসি,দুম্বা বা বকরি যবাই করে দিতে হয়।
এটি মিনায় বা মক্কায় দিতে হয়। এর গোশত শুধুমাত্র ফকির-মিসকীনরা খাবে, দমদাতা নিজে খাবে না।
অজানা ও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির জন্য দম দিতে হয় না,শুধুমাত্র ওয়াজিব তরক করলে দম দিতে হবে।
হজ্জের প্রধান সুন্নাত সমূহ
১। ইহরামের পূর্বে গোসল করা
২।পুরুষদের সাদা রঙের ইহরামের কাপড় পরিধান করা
৩।তালবিয়্যা পাঠ করা
৪।৮ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা
৫।ছোট ও মধ্যম জামারায় কংকর নিক্ষেপ করার পর দু’আ করা
৬।ইফরাদ হাজীদের তাওয়াফে কুদূম করা।
৭। তাওয়াফে কুদূমে ইযতেবা ও রমল করা
৮। সাফা-মারওয়ার সাঈর সময় সবুজ চিহ্নিত স্থানে পুরুষদের দৌড়ানো
৯।তাওয়াফ শেষ দুই রাকাত সালাত আদায় করা
সুন্নাত সমূহের কোন একটি ছুটে গেলে দম বা কাফফারা দিতে হবে না।
হজ্জের প্রকারভেদ—৩ প্রকার
১। তামাত্তু ২। কিরান। ৩। ইফরাদ
তামাত্তু হজ্জ—তামাত্তু শব্দের অর্থ হলো কিছু সময়ের জন্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করা।
প্রথমত : ‘তামাত্তু’ হল হজ্জের সময় প্রথমে উমরা করে হালাল হয়ে ইহরামের কাপড় বদলিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা। এর কিছু দিন পর আবার মক্কা থেকেই ইহরাম বেধে হজ্জের আহকাম পালন করা।
দ্বিতীয়ত : ‘কিরান’ হল উমরা ও হজ্জের মাঝখানে হালাল না হওয়া এবং ইহরামের কাপড় না খোলা। একই ইহরামে আবার হজ্জ সম্পাদন করা।
তৃতীয়ত : ‘ইফরাদ’ হল উমরা করা ছাড়াই শুধুমাত্র হজ্জ করা।
প্রথম প্রকার : তামাত্তু
আর তা হল হজের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু উমরার ইহরামের নিয়্যত করা। হজের মাস সমূহ হল শাওয়াল, যিলক্বদ এবং যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন।
এ কথা বলে ইহরামের নিয়্যত করবে যে, لبيك عُمْرَةً ‘লাববাইকা উমরাতান’।
এরপর উমরার কাজসমূহ পরিপূর্ণরূপে সমাধা করবে। তাওয়াফ, সা‘য়ী ও মাথার চুল হলক করলে কিংবা ছেঁটে নিলে উমরার কাজ শেষ হবে এবং ইহরামের কারণে তার উপর যা কিছু হারাম ছিল সবই তার জন্য হালাল হয়ে যাবে। এরপর যিলহজ মাসের আট তারিখে সে মক্কার যে স্থানে অবস্থান করবে সেখান থেকেই শুধু হজের ইহরামের নিয়্যত করবে এ কথা বলে যে,
لبيك حَجاً
‘‘লাববাইকা হাজ্জান’’
তামাত্তু হজ পালনাকারীর উপর হাদী যবাই করা ওয়াজিব। আর হাদী হল একটি ছাগল কিংবা উটের এক সপ্তমাংশ অথবা গরুর এক সপ্তমাংশ। যদি কুরবানীর জন্য হাদী না পাওয়া যায়, তাহলে হজের মধ্যে তিন দিন রোযা রাখতে হবে এবং নিজ পরিজনের কাছে ফিরে এলে সাতদিন রোযা রাখবে।
আলেমগণের বিশুদ্ধ মতের আলোকে হজের প্রকারভেদের মধ্যে সর্বোত্তম হল তামাত্তু হজ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে নিজের সাথে হাদীর পশু না নেয়, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা ও মারওয়ায় সা‘য়ী করবার পর সাহাবীগণকে বলেছিলেন,
‘‘তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর হাদী নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং এ কাজ গুলোকে উমরা হিসাবে গন্য করে।’’ সহীহ মুসলিম:৩০০৯
এ প্রকার হজ উত্তম হওয়ার আর একটি কারণ হল – হাজী সাহেব তার সফরে হজ ও উমরার উভয়কাজ ভিন্নভাবে সম্পাদন করেছেন।
দ্বিতীয় প্রকার : ক্বিরান
আর তা হল হজের মাসসমূহে মীকাত থেকে হজ ও উমরার জন্য একত্রে ইহরামের নিয়্যত করা। হজের কাজে প্রবেশের নিয়্যতের সময় একথা বলবে যে,
لبيك عُمرةً و حَجاً
“লাববাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জান”
অত:পর মক্কায় পৌঁছে উমরার তাওয়াফ করবে এবং হজ ও উমরার জন্য হজ্জের সা‘য়ী তাওয়াফে ইফাদার পর পর্যন্ত বিলম্ব করতে পারবে। এভাবে মাথার চুল হলক না করে কিংবা না ছেঁটে ইহরাম অবস্থায় থাকবে। এরপর যিলহজ্জ মাসের আট তারিখে মিনায় রওয়ানা করবে এবং হজ্জের বাকি কাজগুলো সমাধা করবে। তামাত্তু হজ্জকারীর মতই ক্বিরান হজ্জ আদায়কারীর উপরও ‘‘হাদী’’ যবাই করা ওয়াজিব। তবে ‘হাদী’ না পেলে হজ্জের মধ্যে তিনদিন ও পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার পর সাতদিন রোযা রাখবে।
তৃতীয় প্রকার : ইফরাদ
তা হল হজ্জের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু হজ্জের জন্য ইহরামের নিয়্যত করবে। হজ্জের কাজে প্রবেশের নিয়্যতের সময় বলবে-
«لبيك حَجاً»
“লাববাইকা হাজ্জান”
ইফরাদকারী ক্বিরান হজ্জ পালনকারীর মতই আমল করবে। অবশ্য ক্বিরান পালনকারীর উপর ‘হাদী’ যবাই করা ওয়াজিব, আর ইফরাদকারীর উপর ‘হাদী’ ওয়াজিব নয়; কেননা সে ক্বিরান ও তামাত্তু কারীর ন্যায় হজ্জ ও উমরাকে একত্র করে নি।
এ তিন প্রকার হজ্জের যে কোনটি পালনের ব্যাপারে হাজীসাহেবের এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু তন্মধ্যে সর্বোত্তম হল তামাত্তু – ঐ ব্যক্তির জন্য, যে নিজের সাথে হাদী এর পশু নেয়নি, যেমনটি ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে।
মীকাত
কাবা শরীফ গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থানগুলো নবীজির হাদীস দ্বারা নির্ধারিত আছে। ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। হারাম শরীফের চর্তুদিকেই মীকাত রয়েছে।
হজ্জের জন্য মীক্বাতের স্থান সমূহ হচ্ছে পাঁচটিঃ ১) যুল হুলায়ফা ২) জুহ্ফা ৩) ইয়ালামলাম ৪) কারণে মানাযেল ৫) যাতু ঈরক্ব।
১) যুল হুলায়ফাঃ যাকে বর্তমানে আবা’রে আলী বলা হয়। ইহা মদীনার নিকটবর্তী। মক্কা থেকে এর অবস্থান ১০ মারহালা দূরে (বর্তমান হিসেবে প্রায় ৪০০ কিঃ মিঃ)। মক্কা থেকে এটি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। এটি মদীনাবাসী এবং সেপথ দিয়ে গমণকারী অন্যান্যদের মীক্বাত।
২) জুহ্ফাঃ শাম তথা সিরিয়াবাসীদের মক্কা গমণের পথে পুরাতন একটি গ্রামের নাম জুহ্ফা। সেখান থেকে মক্কার দূরত্ব ৩ মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১৮৬ কিঃ মিঃ)। এটা এখন আর গ্রাম নেই। বর্তমানে লোকেরা এর বদলে পার্শবর্তী স্থান রাবেগ থেকে ইহরাম বাঁধে।
যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম পরিধান করে তা হল :
(ক) সিরিয়া, (খ) লেবানন, (গ) জর্দান, (ঘ) ফিলিস্তীন, (ঙ) মিশর, (চ) সূদান, (ছ) মরক্কো, (জ) আফ্রীকার দেশসমূহ (ঝ) সৌদী আরবের উত্তরাঞ্চলীয় কিছু এলাকা এবং (ঞ) মদীনার পথ ধরে যারা আসে না তারাও এখান থেকে ইহরাম বাঁধে।
৩) ইয়ালামলামঃ ইয়ামানের লোকদের মক্কা আগমণের পথে একটি পাহাড় বা একটি স্থানের নাম ইয়ালামলাম। বর্তমানে এস্থানকে সা’দিয়া বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ৯২ কিঃ মিঃ।)
যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হল : (ক) ইয়ামেন, (খ) বাংলাদেশ, (গ) ভারতবর্ষ, (ঘ) চীন, (ঙ) ইন্দোনেশিয়া, (চ) মালয়েশিয়া, (ছ) দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্বের দেশসমূহ।
৪) কারণে মানাযেলঃ নজদ তথা পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের মক্কা গমণের পথে তায়েফের কাছে একটি পাহাড়ের নাম। বর্তমানে একে সায়লুল কাবীর বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা (বর্তমানে প্রায় ৭৮ কিঃ মিঃ।)
যেসব এলাকা ও দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হল : (ক) রিয়াদ, দাম্মাম ও তায়েফ (খ) কাতার (গ) কুয়েত (ঘ) আরব আমীরাত (ঙ) বাহরাইন (চ) ওমান (ছ) ইরাক, (জ) ইরানসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে।
৫) যাতু ইরক্বঃ ইরাকের অধিবাসীদের মক্কা আগমণের পথে একটি স্থানের নাম। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১০০ কিঃ মিঃ।) প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট না থাকায় এটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না।
এটা ছিল ইরাকবাসীদের মীকাত। তারা এখন তৃতীয় মীকাত ‘সাইলুল কাবীর’ ব্যবহার করে।
প্রথম চারটি মীক্বাত রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারিত। শেষেরটিও আয়েশা (রাঃ)এর বর্ণনা অনুযায়ী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারণকৃত মীক্বাত। যেমনটি নাসাঈ ও আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যাতু ইরক্বের ব্যাপারে সহীহ্ সূত্রে ওমর রা. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি উহা কূফা ও বস্রার অধিবাসীদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তারা এসে অভিযোগ করল, হে আমীরুল মু‘মেনীন! নবী সা. নজদবাসীদের জন্য কারণে মানাযেলকে (তায়েফ) মীক্বাত নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদেরকে অনেকটা পথ ঘুরে সেখানে যেতে হয় এবং আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তখন ওমর রা. বললেন, তোমাদের পথে ঐ মীক্বাতের বরাবর কোন স্থান তোমরা অনুসন্ধান কর। তখন যাতু ইরক্ব মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
মোটকথা, যদি নবী সা. থেকে সহীহ্ সূত্রে প্রমাণিত হয় তবে তো কোন প্রশ্ন নেই। যদি প্রমাণিত না হয়, তবে উহা ওমর বিন খাত্তাব রা. এর সুন্নাত থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি চার খলীফার মধ্যে অন্যতম। যারা ছিলেন সুপথপ্রাপ্ত এবং তাঁদের অনুসরণ করার নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওমরের সমর্থনে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কয়েকটি বিধান নাযিল করেছেন। আয়েশা বর্ণিত হাদীসটি যদি সহীহ্ হয়, তবে এটাও তাঁর প্রতি নবী সা. এর সমর্থন। তাছাড়া হযরত ওমরের নির্দেশ যুক্তি সংগত। কেননা কোন মানুষ যদি মীক্বাত থেকে ভিতরে যেতে চায় তবে সেখান থেকেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু এ স্থানের বরাবর কোন পথ দিয়ে ভিতরে যেতে চাইলে মীক্বাত অতিক্রমকারী হিসেবে উক্ত স্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবে।