হজ্জের যাবার জন্য কিছু পূর্ব প্রস্তুতি থাকা দরকার। এত বড় একটি এবাদত যা আমার আপনার শারীরিক অর্থনৈতিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কাজে লাগাতে হয়, সেই এবাদতটা অবশ্যই যেন শুধু মক্কা-মদিনা যাওয়া আসার মধ্যে না হয় এবং তা যেন জীবনের রাস্তাকে পরিবর্তন করে একমুখী হয়ে মহান আল্লাহর দেয়া সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে পরিচালিত হয় সেইভাবে নিজেকে তৈরী হতে হবে।
তাই আমাদের থাকা দরকার—
- ব্যক্তিগত প্রস্তুতি—-মানসিক ও শারীরিক
- পারিবারিক দায়িত্ব
- সামাজিক অবস্থান
মানসিক প্রস্তুতি
১।প্রথমেই আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে, এটা হজ্জে যারা যেতে চান তাদের জন্য ওয়াজিব।
একমাত্র উদ্দেশ্য হবে মহান আল্লাহর সন্তষ্টি লাভ ও পরকালের সৌভাগ্য অর্জন। নির্দিষ্ট মর্যাদাপূর্ণ স্থানসমূহে এমন সব কথা ও আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে যেন আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। মহান আল্লাহ জানিয়েছেন,
. আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ ও উমরাহ পূর্ণ করো। সূরা আল বাকারা:১৯৬
লোক দেখানো বা হাজী নাম অর্জন করার জন্য বা লোকদের মাঝে গল্প করে গর্ব প্রকাশ করা হতে নিজেকে পূর্ণমাত্রায় বাঁচিয়ে চলতে হবে। কারন এর ফলে মহান আল্লাহর কাছে আমল বাতিল বলে গন্য হবে।
এমনকি অনেকে যদি এইভাবে চিন্তা করেন যে আল্লাহর জন্য এবং সমাজে একজন হাজী বলে সম্মানিত হবো তাহলেও আমল বাতিল বলে গন্য হবে হাদীসের আলোকে।
কারন রাসূল সা. বলেছেন: আল্লাহ বলেন, সমস্ত শরীকদের মধ্যে আমি শিরক হতে সর্বাধিক বেনিয়ায-বেপরোয়া। অর্থাৎ শরীকানা কাজের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং যদি কেউ কোন কাজে আমার সাথে আমি ভিন্ন অন্যকে শরীক করে তখন আল্লাহ তাকে এবং তার শিরককে পরিত্যাগ করে থাকেন। হাদীসে কুদসী,ইমাম মুসলিম
আমাদের মাঝে অনেক ভাই-বোনেরা অনেক ফরয কাজ নিয়মিতভাবে আদায় করতে সচেষ্ট হননি যেমন নামাজ ও পর্দা শুরু করেননি কিন্তু এখন নিয়্যত করেছেন যে হজ্জে যাওয়ার পর সেগুলো নিয়মিত করবো। হজ্জ থেকে ফেরার পর শরীয়ত মেনে চলবো। হজ্জ থেকে ফিরে আর কখনো হারাম রুজির দিকে যাবো না। বাবা-মা,ভাই-বোন ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক রাখবো ইত্যাদি। আলহামদুলিল্লাহ। খুবই ভালো চিন্তা, মহান আল্লাহ অবশ্যই ভালো কাজের নিয়্যত করলেই সওয়াব দেন। কিন্তু একটু চিন্তা করুন—আমাদের জীবনের যেখানে কোন নির্দিষ্ট সময় বলে দেয়া নেই-আপনি জানেন না যে হজ্জে যাওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন কিনা! তাহলে কি এই মূহুর্ত থেকেই নিজেকে সংশোধিত করে মহান আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়াটা বুদ্ধিমান ইমানদারের কাজ হয় না?
মহান আল্লাহ জানিয়েছেন:
কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না ৷ মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে ৷ যে ব্যক্তি দুনিয়াবী পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো ৷ আর যে ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার পাবে এবং শোকরকারীদেরকে আমি অবশ্যি প্রতিদান দেবো ৷ সূরা আলে ইমরান:১৪৫
তাহলে নামাজ পর্দার মত ফরজ কাজগুলোসহ জীবনের বিভিন্ন দায়িত্ব কেন আমি ফেলে রাখবো? তাহলে মহান আল্লাহতা’আলার কাছে কি জবাবদিহী হবে???
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:
আর তারা (যেন না ভুলে যায়) সেদিনের কথা যেদিন তিনি ডাকবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, “যে রসূল পাঠানো হয়েছিল তাদেরকে তোমরা কি জবাব দিয়েছিলে?” সেদিন তাদের কোন জবাব থাকবে না, তারা নিজেদের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে না ৷তবে যে ব্যক্তি আজ তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে সে–ই সাফল্যলাভের আশা করতে পারে ৷ সূরা কাসাস:৬৫–৬৭
অনেক মা বোনেরা হজ্জের সময়কালীন পর্দার অনুশাসন মেনে চলেন ঠিকই কিন্তু পূর্ব থেকেই নিয়ত করে নেন যে হজ্জ থেকে ফিরে আর পর্দা করবো না, অনেক ভাইরা খুব আবেগ নিয়ে দাঁড়ি রেখে দেন কিন্তু বিদায়ী তাওয়াফ করে ফিরতি ফ্লাইটে উঠার আগেই দাঁড়ি কামিয়ে ফেলেন। আবার অনেকে হজ্জ করে এসে চল্লিশ দিন পর্যন্ত (অনেকে বলে থাকেন হজ্জ থেকে আসার পর ৪০ দিন দু’য়া কবুল হয় এবং এই সময় বাইরে বের হোন না,পর্দাও মেনে চলেন) শরীয়তের নিয়ম নীতি ভালোভাবেই মেনে চলেন অথচ ৪০ দিনের ব্যপারে কোন সহীহ হাদীস জানা যায় নাই এবং এর কোন ভিত্তি নেই।। অবাক ব্যপার যে, যা শরীয়তে বলা নেই তা নিয়ে কিছু মানুষের অতি আগ্রহ অথচ যা শরীয়তে বার বার তাগিদ করা হচ্ছে, সেটার ব্যাপারে একদম উদাসীন। সাময়িক পরিবর্তনের জন্য হজ্জের আহকাম দেয়া হয় নাই। তাই সত্যই যদি নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে থাকেন তাহলে মৃত্যুর মূহুর্ত পর্যন্ত আত্মসমর্পনকারী হিসেবে থাকার চেষ্টা করতে হবে,তা না হলে সেটা হবে আল্লাহর সাথে, নিজের সাথে, সমাজের সাথে প্রতারনা, যার শাস্তি আরো ভয়ানক।
২। নিজের সকল প্রকার গুনাহ হতে তাওবাতুন নাসূহার জন্য জলদি করা তার জন্য ওয়াজিব মনে করতে হবে।
সকল অন্যায় ও গুনাহগুলি স্মরন করত এমন খাঁটিভাবে একাগ্রতার সাথে তাওবাহ করবে, যেন সেই অন্যায়গুলি পুনরায় সংঘটিত না করার জন্য দৃঢ়চিত্ত হওয়া যায়।
প্রসঙ্গত জানা থাকা প্রয়োজন যে তাওবাহ শুধুমাত্র আস্তাগফিরুল্লাহ বললেই হয়ে যায় না।
সত্যিকার তাওবাহ করার শর্তসমূহ:
১। ইখলাসের (একনিষ্ঠতা) সাথে তাওবাহ করা।
২। কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
৩। গুনাহের কাজ চিরতরে ত্যাগ করা।
৪। সেই গুনাহের কাজে আবার ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
৫। সময় শেষ হওয়ার আগে তাওবাহ করা (মৃত্যুকালে রূহ কবযের আগে, সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবার আগে)।
৬। কারো হক থাকলে তা ফিরিয়ে দেয়া ও ক্ষমা চাওয়া। এটা খুবই জরুরী।
রাসূল সা. বলেছেন: কোন মুমিন যখন কোন গুনাহের কাজ করে, তখন তার ক্বলবের উপর একটি কালো দাগ বসে যায়। তারপর সে যদি তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে তার ক্বলবটি পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যদি গুনাহ করা অব্যাহত রাখে তবে ক্রমশঃ দাগটি বাড়তে বাড়তে তার সমস্ত ক্বলব আচ্ছন্ন করে ফেলে। আল জামে আত তিরমিযী
রাসূল সা. আরো বলেছেন: হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। কেননা নিশ্চয়ই আমি দিনে একশ’বার আল্লাহর কাছে তাওবা করি।
সহীহ মুসলিম
মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
হে নবী! বলুন, হে আমার বান্দাহগণ, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমুদয় গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। অতএব তোমরা তোমাদের মালিকের দিকে ফিরে এসো এবং তাঁর কাছেই আত্মসমর্পন করো, তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব আসার আগেই, অতঃপর তোমাদের আর কোন রকম সাহায্য করা হবে না। সূরা আয যুমার: ৫৩-৫৪
আল্লাহ আমাদের অন্তরের চাওয়া পাওয়া দেখেন, জানেন, বুঝেন। তিনি একমাত্র অন্তর্যামী। যিনি আমাদের সব দিতে পারেন। তাঁর ক্ষমা, দয়া, করুণা, রহমত, বরকত দিয়েই আমরা শান্তি, সুস্থতা, বিপদ থেকে উদ্ধার, রিযিকে বরকতলাভ করে থাকি।
হেদায়ায়েতের আলো এবং মৃত্যু পর্যন্ত সীরাতুল মুস্তাকীমের পথে কায়েম রাখা তিনিই করে দিতে পারেন।
একমাত্র মহান রাহীম ও রাহমানই আমাদের জান্নাতের উত্তরাধীকার বানিয়ে দিতে পারেন।
মহান আল্লাহর কাছে তাই আমরা মন খুলে চোখের পানি ফেলে চলুন না আবার তওবা করে মুমিন হওয়ার অংগীকার করি, যেন সব গুনাহ থেকে নিজেদের পবিত্র করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি।
মাবরুর হজ্জতো সেই হজ্জ যা আমাকে আপনাকে আল্লাহর নিকট আরো অনুগত করে দেয়।
যেই কাজগুলোকে আপনারা মনে করছেন করা প্রয়োজন তাহলে কার জন্য, কোন দিনের আশায় সেগুলো ফেলে রাখছেন????
আমরা মহিলারা বেশী নির্বোধের মত কাজ করি, বিশেষ করে বাংগালী নারী, নিজের আখেরাতের কথা ভাবার সময় নেন না—জীবনকে শুধু রান্না খাওয়া ও ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা করাতে পারলেই আর একটু নামাজটা কোন রকম আদায় করতে পারলেই হলো। কিন্তু না বোনেরা, আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। কবরে আপনি আমি একাই যাব এবং আমার আপনার প্রত্যেকের কাজের উপরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে। এত ভালবাসার স্বামী বা সন্তানেরা কেউই তখন সাফাই করবেন না।
মহান আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন:
সেদিন মানুষ পালাতে থাকবে নিজের ভাই, বোন,মা, বাপ, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের থেকে ৷ তাদের প্রত্যেকে সেদিন এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে যে, নিজের ছাড়া আর কারোর কথা তার মনে থাকবে না৷
সূরা আবাসা: ৩৪–৩৭
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: হে মানুষেরা ! তোমাদের রবের ক্রোধ থেকে সতর্ক হও এবং সেদিনের ভয় করো যেদিন কোন পিতা নিজের পুত্রের পক্ষ থেকে প্রতিদান দেবে না এবং কোন পুত্রই নিজের পিতার পক্ষ থেকে কোন প্রতিদান দেবে না৷ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। কাজেই এ দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে এবং প্রতারক যেন তোমাকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারিত করতে সক্ষম না হয় ৷
সূরা লোকমান:৩৩
আমরা যদি একটু খেয়াল করি যখন কেউ মারা যান তার পরমূহুর্ত থেকে তাকে একটি পরিচয়ে সবাই সম্বোধন করে, আর তা হলো মূর্দা বা লাশ। তখন কিন্তু নাম, বউ বা মা বাবা বলে কেউ ডাকে না। আরো বাস্তব সত্য যে ঘরে যে বিছানাতে প্রিয়জনকে নিয়ে থাকা হতো, সেই ঘরেই সেই প্রিয়জনেরা থাকতে মারা যাবার পর ভয় পায়, এত বাস্তব নমুনা আমাদের সামনে দেখা যায়,তারপরও কি আমরা নিজেদের ব্যপারে সচেতন হবো না?
৩। অসিয়ত করে যাওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“কোন মুসলিমের যদি কোন কিছু অসিয়ত করার থাকে তার জন্য এটা উচিত হবে না যে, সে অসিয়ত না করে দু’টি রাত যাপন করে”। বুখারি: ২৫৮৭, মুসলিম: ১৬২৭
আলেমগণ বলেন, যদি মানুষের হকের ব্যাপারে কোন অসিয়ত থাকে, যেমন কারো ঋণ, আমানত অথবা কোন ফরজ হক যা অসিয়ত ছাড়া সাব্যস্ত করার উপায় নেই এমতাবস্থায় অসিয়ত করে তা লিখে রাখাও উচিত। আর যদি কারো জন্যে সম্পদ থেকে নফল অসিয়ত করতে চায় তাহলে এক তৃতীয়াংশের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ রাখা প্রয়োজন।
মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার ও আমলদার হবার তৌফিক দান করুন। আমাদের ক্ষমা করুন।
শারীরিক প্রস্তুতি
শারীরিক প্রস্তুতি খুবই জরুরী। সুস্থ্যতা আল্লাহতা’আলার দেয়া একটি বড় নি’আমত। সুস্থ্য থেকে হজ্জের সব আহকাম নিজে করতে পারাটা মহান আল্লাহতা’আলার দেয়া একটি বিরাট সাহায্য। তাই দোয়া করার সাথে সাথে নিজের সুস্থ্যতার জন্য শরীরের দিকে যত্নশীল হতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করুন তাহলে মহান আল্লাহই আপনাকে সুস্থ্যতার সাথে হজ্জের কাজ সমাধা করিয়ে দিবেন ইনশা’আল্লাহ। এই ব্যাপারে মহান আল্লাহর কাছে দুয়া করুন।
এখন থেকে শারীরিক কোন সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
এখন থেকে একটু হাঁটার অভ্যাস করুন তাহলে হজ্জের সময় হাঁটাটা স্বাভাবিক মনে হবে।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা হলো মা-বোনদের মাসিক ঋতুস্রাব। এইক্ষেত্রে অনেকে প্রথমবারের মত হরমোনের ঔষধ খেয়ে থাকেন বন্ধ রাখার জন্য।
বোনদের বলবো—মক্কা মদিনার আবহাওয়া এবং হজ্জের সময় যে পরিশ্রম হয় তাতে ঔষধের ডোজ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক সময় বেশী লাগে। তাই গাইনোকোলজিষ্টের সাথে বিস্তারিত আলাপ করেই প্রয়োজনীয় ঔষধ সাথে নিয়ে নিবেন। একটু বেশী নিবেন যেন প্রয়োজন হলে সমস্যায় না পড়েন। সেখানেও(মক্কা-মদিনায়) ঔষধ পাওয়া যায় তবে দাম একটু বেশী এবং আপনি যা চান সেটা হয়তো না ও পেতে পারেন।
যদিও হজ্জ মিশনে ডাক্তার থাকেন তথাপি নিজেদের কোন ডাক্তারের ফোন নাম্বার সাথে নিয়ে যান, যেন প্রয়োজনে পরামর্শ করতে পারেন।
বাস্তব অভিজ্ঞতায় বলছি, হজ্জে অনেক বোনেরই এই সমস্যা হয়েছে। রাত ২-৩টায় (বাংলাদেশ সময়) ডাক্তার বান্ধবীদের কাছে ফোন করে অনেক বোনদের পরামর্শ দেয়ার সুযোগ মহান আল্লাহতা’আলা দিয়েছিলেন, সেই অবস্থায় সময় করে ডাক্তারের কাছে অনেকেই যেতে চান না বা লজ্জা পান।
কিছু ঔষধ নিতে হবে যা আপনাদের হজ্জ গ্রুপে বলে দিবে। যেমন সেখানে আবহাওয়ায় অনেকের জ্বর ও কাশি, পায়ে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
কিছু এখানে উল্লেখ করলাম—
- Paracetamol(or similar)
- Saline packet
- Neotack Or Ranitide or other for prevention of acidity
- Any antibiotic(may take Azin, Amodis)
- Antihistamin
- Antiematic
- Anticough chocolate(strepsil)
- Hyscomide
- Eye drop for conjuctivities
- Any muscle relaxant
এছাড়া যার যার নিজের প্রয়োজনীয় ঔষধ সাথে নিবেন। যা যা নিতে হবে তা আপনার সেই ডায়রীতে লিষ্ট করে রাখুন।
অনেকে হেরেম শরীফে রক্ষিত যমযম পানি খেতে যেয়ে বেশী ঠাণ্ডা পানি (cool লেখা থাকে) খেয়ে ফেলেন ফলে কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। একটু মিশিয়ে (Hot লেখা) বা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় খেলে এই অবস্থা থেকে হেফাজত থাকা যাবে ইনশা’আল্লাহ।
মহান আল্লাহতা’আলার সাহায্যে সাহস রাখুন এবং আশা করুন সুস্থ্যভাবেই হজ্জ করে আসতে পারবেন ইনশা’আল্লাহ। লাখ লাখ মানুষ হজ্জ করে ফিরে যাচ্ছেন দেশে মহান আল্লাহতা’আলার সাহায্যে।
পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ এর প্রস্তুতি:
আমাদের সমাজে দেখা যায়,পরিবারের মূল ব্যক্তিরা হজ্জে যাচ্ছেন এটা যেন শুধু তাদের(যে হজ্জে যাচ্ছেন) তাদের ব্যপার। পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যপারে কোন নির্দেশনা নাই।
কিন্তু না,একটু চিন্তা করুন। আপনার আমার অনুপস্থিতিতে এই ঘরে (যা নিজের সংসার) কি হচ্ছে বা কি শিক্ষার ধারা দিয়ে গিয়েছেন যা পরিবারের অন্য সদস্যরা কি সেই ভাবে নিজেদের পরিচালিত করছেন!!
হাজ্জ থেকে ফিরে আসতে পারাটাও মহান আল্লাহর হুকুম। সব অবস্থাতেই আমাদের মৃত্যু পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার। তাই প্রথমেই স্বীয় পরিবার-পরিজনদের এবং সংগী-সাথীগনকে তাকওয়ার জন্য নসীহাত করা যেন মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে অনুগত থাকে।
মহান আল্লাহ বলেছেন:
হে লোকজন যারা ঈমান এনেছো, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার ও সন্তান–সন্তুতিকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো মানুষ এবং পাথর হবে যার জ্বালানী ৷ সেখানে রুঢ় স্বভাব ও কঠোর হৃদয় ফেরেশতারা নিয়োজিত থাকবে যারা কখনো আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে না এবং তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তাই পালন করে ৷ সূরা আত তাহরীম:৬
এ আয়াত থেকে প্রকাশ পায় যে, আল্লাহর আযাব থেকে নিজেকে রক্ষা কারা জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোন মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয় ৷ বরং প্রকৃতির বিধান যে পরিবারটির নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে স্থাপন করেছে তার সদস্যরা যাতে আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে সাধ্যমত সে শিক্ষা দীক্ষা দেয়াও তার কাজ ৷ তারা যদি জাহান্নামের পথে চলতে থাকে তাহলে যতটা সম্ভব তাদেরকে সে পথ থেকে ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা করবে ৷ তার সন্তান-সন্তুতি পৃথিবীতে সুখী হোক তার শুধু এই চিন্তা হওয়া উচিত নয় ৷ বরং এর চেয়েও তার বড় চিন্তা হওয়া উচিত এই যে, তারা যেন আখেরাতে জাহান্নামের ইন্ধন না হয় ৷
সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমরা প্রত্যেকই রাখাল এবং তাকে তার অধিনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে ৷শাসকও রাখাল ৷ তাকে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে ৷ নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান–সন্তুতির তত্ত্ববধায়িকা তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে ৷ মহান আল্লাহ বলেছেন:
যারা ঈমান গ্রহণ করেছ এবং তাদের সন্তানরাও ঈমানসহ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে আমি তাদের সেসব সন্তানকেও তাদের সাথে (জান্নাতে) একত্রিত করে দেব ৷ আর তাদের আমলের কোন ঘাটতি আমি তাদেরকে দেব না ৷ প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জিত কর্মের হাতে জিম্মী রয়েছে ৷ সূরা আত তুর:২১
এখানে “জিম্মী” বা “বন্ধক” শব্দটি রূপক ব্যবহার অত্যন্ত অর্থবহ ৷ কোন ব্যক্তি যদি কাউকে কিছু ঋণ দেয় এবং ঋণদাতা তার পাওনা আদায়ের নিশ্চয়তা হিসেবে ঋণ গ্রহীতার কোন জিনিস নিজের কাছে বন্ধক রাখে তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঋণ পরিশোধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধকী বস্তু মুক্ত হবে না ৷
তাছাড়া নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি বন্ধকী বস্তু মুক্ত না করে তাহলে বন্ধকী বস্তুটি বাজেয়াপ্ত বা হাতছাড়া হয়ে যায় ৷
আল্লাহ তা’আলাও মানুষের মধ্যকার লেনদেনের বিষয়টিকে এখানে বন্ধকী লেনদেনের সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে যে সাজ-সরঞ্জাম, যেসব শক্তি, যেসব যোগ্যতা, এবং যেসব ইখতিয়ার দিয়েছেন তা যেন মালিক তার বান্দাকে ঋণ দিয়েছেন ৷ এ ঋণের জামানত হিসেবে বান্দা নিজেই আল্লাহর কাছে বন্ধক বা জিম্মী হয়ে রয়েছে ৷
বান্দা যদি এসব সাজ-সরঞ্জাম, শক্তি এবং ইখতিয়ার সঠিক ভাবে ব্যবহার করে নেকী অর্জন করে যে নেকী দ্বারা এসব ঋণ পরিশোধ হবে, তাহলে সে বন্ধকী মাল অর্থাৎ নিজেকে মুক্ত করে নেবে ৷ অন্যথায় তা বাজেয়াপ্ত করে নেয়া হবে ৷
পূর্ববর্তী আয়াতের পরপরই একথা বলার কারণ হচ্ছে, সৎকর্মশীল ঈমানদারগণ যত বড় মর্যাদা সম্পন্নই হোক না কেন তাদের সন্তানরা নিজেদের কর্ম দ্বারা নিজেদের সত্তাকে মুক্ত না করলে তাদের বন্ধক মুক্তি হতে পারে না। বাপ-দাদার কর্ম সন্তানদের মুক্ত করতে পারে না ৷ তবে সন্তানরা যদি যে কোন মাত্রার ঈমান ও সৎকর্মশীলদের আনুগত্য দ্বারা নিজেরা নিজেদের মুক্ত করতে পারে তাহলে আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তাদেরকে নিম্ন মর্যাদা থেকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে বাপ-দাদার সাথে একত্রিত করে দেবেন ৷ এটা নিছক আল্লাহ তাআলার মেহেরবানী ও দয়া ৷
সন্তানরা বাপ-দাদার সৎকাজের এ সুফলটুকু অন্তত লাভ করতে পারে ৷ তবে তারা যদি নিজেদের কর্মদ্বারা নিজেরাই নিজেদেরকে দোযখের উপযোগী বানায় তাহলে এটা কোনক্রমেই সম্ভব নয় যে, বাপ-দাদার কারণে তাদেরকে জান্নাতে পৌছিয়ে দেয়া হবে ৷
সাথে সাথে এ আয়াত থেকে একথাও বুঝা যায় যে, নিম্ন মর্যাদার নেক সন্তানদের নিয়ে উচ্চ মর্যাদার নেক পিতা-মাতার সাথে একত্রিত করে দেয়া প্রকৃতপক্ষে সেসব সন্তানের কর্মের ফল নয়, বরং তা ঐসব পিতা-মাতার কর্মের ফল ৷ তারা নিজেদের আমল দ্বারা এ মর্যাদা লাভের উপযুক্ত হবে ৷ তাই তাদের মন খুশী করার জন্য সন্তানদেরকেও তাদের সাথে একত্রিত করা হবে ৷ এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা মর্যাদা হ্রাস করে তাদেরকে তাদের সন্তানদের কাছে নিয়ে যাবেন না ৷ বরং সন্তানদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদের কাছে নিয়ে যাবেন’ যাতে নিজ সন্তানদের থেকে দূরে অবস্থানদের কারণে মনোকষ্ট না হয় এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিয়াতমসমূহ পূর্ণ করে দেয়ার ক্ষেত্রে এ কমতিটুকু না থেকে যায় ৷
পরিবারের জন্য এখন থেকে কিছু নির্দেশনা দিতে থাকুন। যেমন:
- প্রথমেই আপনার অনুপস্থিতিতে যিনি অভিভাবক হিসেবে থাকবেন তিনি যেন একজন পরহেজগার হোন সেইভাবে মনোনিত করুন।
- বাড়ির যে পরিচারিকা আছে বা রেখে যাবেন তাকেও পরহেজগার দেখে নিন বা শিক্ষা দিন।
- সন্তানদের একটি নেক আমলের পরিকল্পনা তৈরী করে দিন যেন আপনাদের অনুপস্থিতিতে সেই অনুযায়ী আমল করে যেতে থাকে।
- সন্তানদের বুঝতে দিন, তাদের সহযোগীতায় মানসিকভাবে প্রশান্তির সাথে হজ্জ করতে পারলে তারাও সওয়াব পাবে ইনশা’আল্লাহ।
- পরিবারের বাড়ির নিরাপত্তার জন্য যা করা প্রয়োজন তা এখন থেকে গুছিয়ে নিন।
- বাজার রান্না স্কুল/কলেজ ইত্যাদি সব নির্দেশনা সুন্দর করে গুছিয়ে এখন থেকে একটু করে করিয়ে নিন সেই ভাবে।
- আমাদের সমাজে একটি প্রচলন আছে যে, হজ্জে যাওয়ার পূর্বে সবার সাথে দেখা করে ক্ষমা চাওয়া, দেখা যায় সারা জীবনেও এমন মানুষদের দেখা নাই তাদের সাথে যেয়ে দেখা করে মাফ চাওয়া এবং এটাকে করনীয় একটা অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলক করে নেয়া হয়।
আসলে আমাদের সবার কাছে সব সময়ের জন্য ক্ষমা ও ঋনমুক্ত থাকা দরকার কারন যে কোন সময়েই আমার জীবনের পরিসমাপ্তি হতে পারে,শুধু হজ্জে গেলেই নয়।
- আত্মীয়ের ব্যপারে আমরা দাওয়াত করে খাবার খাওয়ানো এবং কিছু বৈষয়িক উপহার দেয়াটাকে দায়িত্ব মনে করেই শেষ। অথচ আত্মিয়ের মুল হক হলো ভালো কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ করা। শুভাকাংখী হয়ে এই সংক্রান্ত বই উপহার দেয়া যেন তারা জান্নাতের পথে চলতে পারে-এটাই হলো সত্যিকার ভালোবাসা যা আখেরাতে সহায়ক।
মহান আল্লাহতা’আলার এটা একটা বিশেষ দয়া যে, যখন আপনি হজ্জে থাকবেন তখন পরিবারের ব্যপারে দুশ্চিন্তা আসে না। একটি প্রগার বিশ্বাস নিজের মধ্যে আসে যে, মহান আল্লাহতা’আলা অবশ্যই আমার পরিবারের হেফাজত করবেন। বাস্তবেও মহান আল্লাহ অবশ্যই হেফাজত করেন। আপনি আল্লাহর ঘরের মেহমান হিসেবে মক্কায় সফরে যাচ্ছেন আর মহান আল্লাহ আপনার ঘরের যিম্মাদার হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ-এইভাবেই আল্লাহর কাছে চাইতে থাকুন। মক্কা মদিনা থাকা অবস্থায় যে কোন দুয়া সাথে সাথে কবুল হওয়ার বাস্তব নমুনাও আপনি পাবেন ইনশা’আল্লাহ। আল্লাহু আকবার। সুবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহীল আযীম।
https://www.youtube.com/watch?v=R2ls8bizlAU