রজব থেকে রামাদান ডায়েরী-২ (রজব থেকে রামাদান পর্যন্ত ব্যক্তিগত পরিকল্পনা)

 

তোমার পায়ে বন্ধন, তোমার অন্তর তালাবদ্ধ

চক্ষুযুগল অগ্নিদগ্ধ, আর পদযুগল কন্টকে ক্ষতবিক্ষত

ইচ্ছা তোমার পশ্চিমে সফর করার

অথচ চলেছ পূর্বমুখী হয়ে

পশ্চাতে মঞ্জিল রেখে কে তুমি চলছ

এখনো সতর্ক হও।।

পংক্তিটি দিল্লীর লাল কেল্লায় লেখা।

আপনাদের সামনে একটি ছোট পরিকল্পনা দিব – যা রজব থেকে শা’বান ও রামাদান মাস পর্যন্ত সময়ে সম্পন্ন করতে পারেন। আরো কোন ভালো আমল করার থাকলে আপনারা নিজেদের মত করে ৩ মাসের একটি পরিকল্পনা নিয়ে ভাগ করে কাজ শুরু করে দিন। এখান থেকে প্রতি মাসে কতটুকু করতে পারবেন তার বাস্তব পরিকল্পনা করুন। তারপর মাসের পরিকল্পনাকে প্রতিদিন কিভাবে কতটুকু করতে হবে তা ভাগ করে ডায়েরীতে একটি ছক করে নিন।

মনে রাখতে হবে সময় হলো সে, যে নাকি –

What is the longest, yet the shortest

The swiftest, yet the slowest

All of us neglect it & then we all regret

Nothing can be done without it

It swallows up all that is small and

It builds up all that is great.

পরিকল্পনা করতে হলে লক্ষ্য রাখতে হবে —

১। লক্ষ্য স্থির করুন

২। নিজের সামর্থ্য, যোগ্যতা, অবস্থা ও অবস্থান

৩। কাজের তালিকায় থাকবে প্রতিদিনের আবশ্যকীয় কাজ, অতিরিক্ত কাজ,জরুরী কাজ।

৪। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজের তালিকা তৈরী

৫। কিছু কাজ অন্যকে দিয়ে করানোর পরিকল্পনা থাকা

৬। সময়কে বাঁচাতে হলে কিছু টিপস:

  • সুপরিকল্পিত ভাবে কাজ করা
  • সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলা
  • কম সময়ের কাজ ততটুকু সময়ে করে ফেলা
  • যা প্রয়োজন নেই তা না করা
  • যা করে লাভ নেই তা না করা
  • যা করলে ক্ষতি তা না করা
  • যা দায়িত্ব না, তা না করা
  • অপ্রয়োজনীয় বা বাজে কথা ও কাজ না করা
  • অবসর সময়কে কাজে লাগানো
  • অপেক্ষার সময়কে কাজে লাগানো
  • এক কাজের ফাঁকে অন্য কাজ করার সুযোগ থাকলে করে ফেলা।

ব্যক্তিগত পরিকল্পনা

১। কোরআন অধ্যয়ন

  • অর্থসহ তিলাওয়াত – রামাদান মাসে শেষ করতে পারবেন এইভাবে আয়াত ভাগ করে নিন প্রতিদিনের জন্য।
  • তাফসীরসহ অধ্যয়ন – ২৮-৩০ পারার সূরা সমূহ।
  • ডায়েরীতে নোট করে অধ্যয়ন – সূরা হুজুরাত, সূরা আস সফ, সূরা মুলক, সূরা হাদীদ, সূরা ওয়াকিয়া, বনী ইসরাঈল, সূরা ফোরকান, সূরা নং ৯৬-১১৪।
  • প্রতি ৩ মাসে এইভাবে সূরা ভাগ করে নোট করে পড়াশুনা করলে পবিত্র কোরআন বুঝা সহজ হবে ইন শা আল্লাহ এবং নিজের ঈমান আরো শক্তিশালী হবে।

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহ. কুরআন দিয়ে কঠিন অন্তরের কিভাবে চিকিৎসা করতে হবে তা অতি সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন এভাবে – দু’টি পথ রয়েছে:

এক – আপনার অন্তরকে দুনিয়া থেকে স্থানান্তর করে আখেরাতের দেশে নিয়ে যাবেন।

দুই – অতঃপর কুরআনের অর্থ বুঝবেন এবং কেন নাযিল হয়েছে সেটা বুঝার চেষ্টা করবেন এবং প্রত্যেক আয়াত থেকে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় অংশ গ্রহণ করে তা আপনার অন্তরের ব্যাধির উপর প্রয়োগ করবেন। তা যদি আপনার অসুস্থ অন্তরের উপর প্রয়োগ করেন, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ করবেন।

  • মুখস্ত: ইতিমধ্যে যা আপনি মুখস্ত করেছিলেন তার একটি লিষ্ট করে প্রতিদিন একবার করে পড়া। এ ছাড়া সূরা বাকারার শেষ ৩ আয়াত, সূরা আলে ইমরান: ১৯০-১৯৪, সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত, সুরা তওবার শেষ ৩ আয়াত।
  • নামাজে পাঠ্য সব কিছুরই অর্থসহ জেনে সহীহ ভাবে তারতীলের সাথে পড়ার অভ্যাস করা।

২। হাদীস পাঠ

সহীহ হাদীস গ্রন্থ থেকে বাস্তব জীবনের মাসয়ালাগুলো জানা।

  • বিষয়: পবিত্রতা, অজু, গোসল, তায়াম্মুম, নামাজ, রোজা, কসর নামাজ, যাকাত ও সুদ সংক্রান্ত।
  • মুখস্ত: সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার, প্রতিটি কাজের পূর্বে নবীজীর সা.এর শেখানো দোয়া (হিসনুল মুসলিমে পাবেন)

৩। ইসলামী বই পড়া: আর-রাহীকুল মাখতুম, আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী।

৪।   অনেকেই আমরা ব্যক্তিজীবনে ভালো কাজের পাশাপাশি দেখা যায় অনেক ফরয-ওয়াজিব বাকী রেখে দিনের পর দিন পরিকল্পনা নিয়ে চলেছি, করবো করবো করে শুরু করছি না। এইবার আমরা, আজ এইমূহুর্ত থেকে সে

গুলো আদায় করা শুরু করি, মহান আল্লাহ সুবহান আমাদের সাহায্য করবেন ইনশা’আল্লাহ।

৫।     কোন ধরনের বাজে কাজে অভ্যস্ত থাকলে এখনই তা বর্জন করা।

রাসূল সা. বলেছেন: মুমিন ব্যক্তি কখনো দোষারোপকারী ও ভৎর্সনাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষী হয় না।  আল-জামে আত-তিরমিযী: ১৯২৭

৬।  পারিবারিকভাবে পাঠাগার গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৫ দিন ব্যাপী লাইব্রেরী পক্ষ পালন করুন।

এই পক্ষে করনীয়:

  • একটি বুক সেলফ, সহীহ বইয়ের একটি তালিকা, একটি সীল ও খাতা (বই তালিকাভুক্তি করার জন্য) ও রেজিষ্ট্রার খাতা (বই বিতরণের জন্য)
  • ছেলেমেয়েদের নামে আলাদা পাঠাগারের সুন্দর নাম দিয়ে সীল করে দিন, যেন তারা নিজেদের উৎসাহেই বই সংগ্রহের জন্য উদ্যোগী হয়ে উঠে। বিশেষ করে কন্যা সন্তানটিও উদ্যোগী হয় যেন পরবর্তীতে সে তার নিজ সংসারে এই বইগুলো সংরক্ষণ করতে পারে সেই পরিবারে দাওয়াতের কাজ করার জন্য।
  • আত্মীয়দের (নিজ ও শ্বশুর বাড়ীর) প্রতিটি পরিবারে কুরআনের সহজ ও সহীহ মানের তাফসীর ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিন, উপহার দিয়ে/হতে পারে ক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ করে/হতে পারে আপনি নিজে ক্রয় করে দিয়ে তার কাছে পৌঁছে দিলেন (অনেকেই কেনার জন্য সুযোগ করে নিতে পারেন না বা এতটুকু বুঝ আসে নাই)।

তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে গেছে এক জ্যোতি এবং একখানি সত্য দিশারী কিতাব, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর সন্তোষকামী লোকদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথপ্রদর্শন করেন এবং নিজ ইচ্ছাক্রমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের দিকে নিয়ে আসেন এবং সরল-সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করে।    সূরা আল মায়েদা: ১৬

  • এলাকায় বা কাছাকাছি কোন বস্তিতে বা মসজিদে পাঠাগারের ব্যবস্থা করে দিন এবং সহজ ও সহীহ লেখা বই এর ব্যবস্থা করে দিন।
  • প্রতি মাসে একটি করে বই নিজে পড়ে শেষ করে অন্যকে সেই বিষয়ে জানান যেন উৎসাহিত হয়ে সে বই পড়ে। ।
  • কম্পিউটারে যারা বেশী সময় থাকেন তাদের অনলাইন পাঠাগার ডেস্কটপে নিয়ে রাখলেন যেন সময়মতো পড়তে পারেন।
  • সহীহ বইয়ের একটি সহজ লিষ্ট করে অন্যদের মাঝে বিতরণ করে দিন যেন তারাও বই ক্রয় করে নিতে পারেন সুযোগ মত।

৭।  যাকাত বণ্টনের জন্য পরিকল্পনা

  • প্রথমেই যাকাতের হকদার ব্যক্তিদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে লিষ্ট করুন।
  • নিজের যাকাতসহ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের বা কলিগদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরী করে নিন।
  • সবার যাকাত একসাথে করে পরামর্শ করে এই বছর সেই তালিকা থেকে ব্যক্তিকে পুনর্বাসন করে দিন যেন আগামী বছরগুলোতে তার আর যাকাত না লাগে।
  • কোন সংস্থা যারা এই ধরনের পুনর্বাসনের কাজ করেন, নিশ্চিত জেনে সেখানেও আদায় করতে পারেন।
  • নিজ গ্রামকে একটি পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে এইভাবে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে স্বনির্ভর ব্যক্তিদের গ্রাম বানাতে পারেন।
  • নিজ এলাকার বস্তিবাসীদেরও একই পরিকল্পনায় স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নিতে পারেন।
  • এছাড়া যাকাতের আরো অন্য খাতে পরিকল্পিত ভাবে আদায় করা প্রয়োজন।

মহান আল্লাহ তা’লা আমাদের সাহায্য করুন।