মক্কা থেকে বিদায়-২১

 

যারা দীর্ঘদিন অবস্থান করে হজ্জ সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন মহান আল্লাহর অশেষ দয়ায়, বিদায়ের এই সময়টি একদিকে পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার আনন্দ আবার অন্যদিকে ইবাদাতের সুন্দর একটি পরিবেশ, মহান আল্লাহর ঘর থেকে দূরে চলে যাওয়ার বেদনায় অন্তর ব্যথিত হওয়া, দুই রকম অনুভূতি বিরাজ করতে থাকে। বার বার মনের কোনায় জেগে উঠে আবার এই কাবার সন্নিকটে এসে তাওয়াফ করবো ইন শা আল্লাহ এবং প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে আসার অদম্য বাসনা অন্তরে স্থান করে নেয়, আলহামদুলিল্লাহ।

মক্কা মুয়াযযমায় অবস্থানকালে হাজীগন সর্বক্ষন আল্লাহর যিকর,আনুগত্য,আমলে সালেহ, দুয়া-দরুদ,নফল নামায ও তাওয়াফ করবেন। যখন এখান থেকে চলে যেতে চান দেশে তখন তাদের জন্য তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব, যেন তাদের সর্বশেষ অবস্থান কালটি বাইতুল্লাহতে ব্যয়িত হয়।

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত লোকদেরকে হুকুম দেয়া হয়েছে তাদের শেষ সময়টি যেন সমাপিত হয় বাইতুল্লাহে কিন্তু ঋতুবতী নারীদেরকে বিষয়ে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে      সহিহ আল বুখারী মুসলিম

আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই আল্লাহর অশেষ কৃপা ও দয়ায় হাজীগণ পরিপূর্ণভাবে হজের সকল কাজ আদায় করার পর এই তো এক্ষণে হাজীদের কাফেলাসমূহ পবিত্র ভূমি থেকে প্রস্থানের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। তাদের এ বরকতময় সফরের সমাপ্তি ঘটবে বিদায়ী তাওয়ফের মাধ্যমে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য যারা মক্কা থেকে রওয়ানা হয়ে যেতে চান, এ তাওয়াফই হল তাদের জন্য হজের সর্বশেষ ওয়াজিব কাজ। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

 ‘‘বায়তুল্লার তাওয়াফ প্রত্যেক ব্যক্তির শেষ কাজ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন মক্কা থেকে বেরিয়ে না যায়।’’ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৮৩।

তবে যে সকল মহিলা হায়েয ও নেফাস অবস্থায় রয়েছে, এ ব্যাপারে তাদেরকে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে। অতএব তাদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ তরক করা জায়েয। তবে তারা ছাড়া আর কারো জন্য বিদায়ী তাওয়াফ ত্যাগ করা জায়েয নেই।

ঠিক উমরার তাওয়াফের যে নিয়ম, বিদায়ী তাওয়াফের নিয়মও তেমনি। অবশ্য এ তাওয়াফ হাজী তার স্বাভাবিক পোষাক পরেই করবে এবং এতে রমল ও ইতিবা করা সুন্নাত নয়। তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুরাকাত নামায পড়ুন। এরপর মাসজিদুল হারাম থেকে বেরিয়ে পড়ুন এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার দোআটি পাঠ করুন :

«بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلى رَسُوْلِ الله، اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك»

‘‘আল্লাহর নামে (বেরিয়ে যাচ্ছি)। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের উপর। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ কামনা করছি।’’ সহিহ মুসলিম

এরপর আপনি নিজ দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন। আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধান আপনাকে ঘিরে রাখবে। বিদায়ী তাওয়াফের পর যদি আপনি থাকাবস্থায়ই ফরয নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায় কিংবা আপনি নফল নামায পড়তে চান, তাহলে তাতে অসুবিধা নেই। তবে আপনি দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে পারবেন না। চেষ্টা করুন যেন বিদায়ী তাওয়াফটাই মক্কায় যেন আপনার শেষ অবস্থান হয়।

অনেক সময় দেশে ফেরার ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে এসে থাকে, তাই এয়ারপোর্টে অনেক সময় থাকতে হতে পারে। তাই সেইভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন। সবরের যে শিক্ষা আপনি অর্জন করেছেন তা যেন এই এয়ারপোর্টেই হারিয়ে না ফেলেন।