দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
তাশাহহুদ সংক্রান্ত একটি বর্ণনা সমাজে প্রচলিত আছে যা সহিহ নয়। অনেকে বলে থাকেন তাশাহহুদ মিরাজের রাতে আল্লাহ ও মোহাম্মদ সা এর মাঝে কথোপকথন, কিন্তু এটা সম্পূর্ন ভুল কথা। রাসূল সা নিজে সাহাবা আযমাইন রা দের এটা শিক্ষা দিয়েছেন। এটা মিরাজের সাথে সম্পর্কিত নয়। নিচের ভিডিও তে রেফারেন্স জানার অনুরোধ রইলো।
তাশাহহুদ পাঠ সম্পর্কে হাদীস—
আব্দুল্লাহ(ইবনে মাসউদ) বলেন, যে সময় আমরা নবী(সঃ) এর পিছনে নামায পড়তাম তখন বৈঠকে বলতাম, জিবরীল ও মিকাইলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, অমুক ও অমুকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। রসূলুল্লাহ(সঃ) আমাদের দিকে ফিরে বললেন, আল্লাহ নিজেই ত শান্তি। কাজেই তোমরা কেউ নামায পড়লে বলবে,
আত্তাহিইয়াতু লিল্লাহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াততাইয়েবাতু আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবীইয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিলাহিস সালেহীন কেননা তোমরা এ দু’আ করলে আল্লাহর সকল নেক বান্দার কাছে তা পৌছে যাবে—সে আসমানে বা যমীনে যেখানেই থাক না কেন। এর সাথে আশহাদু আললাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু-ও পড়বে। বুখারী কিতাবুল আযানঃ৭৮৫
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَواتُ، وَالطَّيِّباتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ. أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسولُهُ».
(আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্তায়্যিবা-তু আস্সালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যূহান নাবিয়্যূ ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আস্সালা-মু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লেহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু)।
বাংলা অনুবাদ—
সমগ্র প্রশংসা গুনগান-পবিত্রতা ও রহমত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি এবং আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক; বর্ষিত হোক আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর পূণ্যবান বান্দাদের প্রতি।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ(সঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর যে কথা বলে দোয়া করতে পছন্দ হয়, তা-ই বলে দোয়া করবে।(বুখারী-৭৮৮)
নামাযে এই তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে তাশাহহুদের বিভিন্ন প্রকার শব্দ শিখিয়েছেন।
ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণিত তাশাহহুদ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন এমনভাবে (দুই হাতের তালু এক সাথে মিলিয়ে দেখালেন) যেমনভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন।
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
আল্লাহর জন্যই যাবতীয় তাহিয়াত, ছালাওয়াত ও তইয়াবিত সালাম আপনার প্রতি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত হে আমাদের নবী! সালাম আমাদের প্রতি ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাহগণের প্রতি। (সালিহীন বা সৎকর্মশীল বান্দা বললে আসমান ও যমীনের প্রত্যেকটি সৎবান্দা এর আওতাভুক্ত হয়ে যায়)। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি এই মর্মে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
ইবনু মাসউদ বলেনঃ আমরা উক্ত শব্দে অর্থাৎ أَيُّهَا النَّبِيُّ হে নবী! সম্বোধন সূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে তাশাহহুদ পাঠ করতাম যখন তিনি আমাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলেন, কিন্তু যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন আমরা أَيُّهَا النَّبِيُّ এর পরিবর্তে على النبى এর অর্থাৎ নবীর উপর বলতাম। বুখারী, মুসলিম,
(التَّحِيَّات) আত্তাহিয়াতু এমন শব্দাবলী যা সুরক্ষা, রাজ্য ও স্থায়িত্বের প্রতি নির্দেশ করে। আর এসব গুণাবলীর অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ যাবতীয় প্রকার ত্রুটি-বিচূতি থেকে সুরক্ষিত সকল রাজ্য তাঁরই আর তিনিই কেবল চিরস্থায়ী। (الصَّلَوَات) ছালাওয়াত ঐ সকল শব্দ যার দ্বারা আল্লাহর মহানত্ব প্রকাশ করা উদ্দেশ্য যে সকল শব্দের কেবল তিনিই অধিকারী, আর কারো জন্য তা প্রযোজ্য নয়। (নিহায়াহ)
(الطَّيِّبَات) আত্ত্বাইয়িবাত ঐ মানানসই সুন্দর বাক্য যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়। তবে তা এমন যেন না হয় যে, তার পরিপূর্ণ গুণাবলীর জন্য অনুপযুক্ত। যার দ্বারা রাজা বাদশাহদেরকে সম্ভাষণ জানান হতো।
(السلام) আল্লাহর নিকট আশ্রিত হওয়া ও নিরাপত্তা লাভ করা। কারণ আসসালামু তাঁরই একটি পবিত্রতম নাম যার উহ্যরূপ এই الله عليك حفيظ وكفيل আল্লাহ তোমার সংরক্ষণকারী ও দায়িত্বশীল। যেমন বলা হয় الله معك আল্লাহ তোমার সাথে রয়েছেন- এর অর্থ তিনি তোমার সাথে রয়েছেন সংরক্ষণ, সাহায্য ও দয়া করার মাধ্যমে।
বারাকাতঃ অবিরাম ধারায় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা যে কোন কল্যাণের নাম।
ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর তাশাহহুদঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ শব্দে বর্ণনা করেছেনঃ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ (وَ)الصَّلَوَاتُ (وَ)الطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ اللَّهِ [قال ابن عمر زدت فيها وبركاته] السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ [قال ابن عمر زدت فيها وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ] وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
তাহিয়াত, ছালাওয়াত ও তাইয়িবাত সমস্তই একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। শান্তি ও আল্লাহর রহমত বৰ্ষিত হোক আপনার উপর হে নবী, ইবনু উমার বলেনঃ আমি পরে এর ভিতর “অবারাকাতুহু” এবং ‘তাঁর উপর বরকত’ এ অংশ যোগ করেছি।[১]
শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপর এবং সমস্ত সৎকর্মশীল বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য প্ৰদান করছি এই মর্মে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এর পরে আমি এর ভিতর যোগ করেছি- “অহদাহু লা শারীকালাহু” অর্থাৎ তিনি একক তার কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য প্রদান করছি এই মর্মে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
আবু দাউদ ও দারাকুতনী এবং তিনি একে ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
১।এ বর্ধিত অংশ এবং এর পরের বর্ধিত অংশ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত তাশাহহুদে সাব্যস্ত রয়েছে; ইবনু উমার (রাঃ) নিজের পক্ষ থেকে বৃদ্ধি করেননি, আর তিনি তা করতেও পারেন না। বরং অন্য ছাহাবীদের থেকে গ্ৰহণ করেছেন- যারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এটুকু বৰ্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে সরাসরি যে তাশাহহুদ শুনেছিলেন তার উপর এটুকু বৃদ্ধি করেছেন।