আমাদের মাঝে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়েই বিশেষ কিছু মতভেদ দেখা যায় তবে ফরয ওয়াজিবের ব্যপারে এই ধরনের সমস্যা সাধারনত হয় না। তাই সহজ ও সহিহ হাদীসের আলোকে যেভাবে আমল করাটা প্রাধান্য পায় সেটাই আমাদের অনুসরন করা প্রয়োজন। আবার এই নিয়ে কারো সাথে মতভেদে বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়া যেমন ঠিক নয় আবার কাউকে বলে দেয়াও ঠিক নয় যে আপনার সালাত হবেই না কারন যেহেতু ফরয ও ওয়াজিব নিয়ে কথা হচ্ছে না।
তবে যা সহিহ হাদীসের মাধ্যমে স্পষ্ট নির্দেশনা জানা যায় তা থেকে দূরে থাকা মোটেও সমিচীন নয়। মহান আল্লাহ আমাদের স্কল মুসলিম উম্মাহকে এক হয়ে তাঁর পথে কাজ করার তাওফিক দান করুন।
স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্..’ পাঠ করা উচিত নয়। সুন্নাত হচ্ছে নীরবে পাঠ করা। কেননা ‘বিসমিল্লাহ্..’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়। কিন্তু কখনো যদি স্বশব্দে তা পাঠ করে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, বরং কখনো স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্..’ পাঠ করা উচিত। কেননা নবী সা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, “তিনি কখনো স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্..’ পাঠ করতেন।” (ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে) মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
কিন্তু বিশুদ্ধভাবে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে, “তিনি উহা স্বশব্দে পাঠ করতেন না।” আর এটাই উত্তম। তবে যদি কখনো বিসমিল্লাহ্ স্বশব্দে পাঠ করে এতে কোন অসুবিধা হবে না।
সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় মনে রাখা প্রয়োজন যে মহান রব, ব্যক্তির পঠিত প্রতিটি আয়াতের সাথেই উত্তর দেন যদি সে মহান রবের দিকে মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার ও বান্দার মাঝে সালাতকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে আমার নিকট চায়। যখন বান্দা বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক), তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। আর বান্দা যখন বলে, ‘আর-রাহমানির রাহীম’ (অতিশয় দয়ালু পরম করুণাময়), আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণাগুণ বর্ণনা করেছে।
আর যখন বলে ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’ (বিচার দিনের মালিক), তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মানিত করেছে। আর যখন বান্দা বলে, ‘ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়াইয়্যাকা নাস্তা‘য়ীন’ (আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই), তখন আল্লাহ বলেন, এটি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমাবদ্ধ, আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে যা সে আমার নিকট চায়।
আর যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম, সিরাতাল্লাযীনা আন‘আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবে ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন’ (আমাকে সঠিক পথ দেখান, তাদের পথ যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথ নয় যাদের উপর আপনার ক্রোধ পতিত হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট),
তখন আল্লাহ বলেন, এটি আমার বান্দার জন্য আর আমার বান্দার জন্য রয়েছে তা, যা সে চায়”। মুসলিম, সালাত অধ্যায়;
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ হাদিস। প্রতিটি মুসল্লি যদি সালাতে হাদিসটির মর্মার্থটিকে অন্তরে উপস্থিত রাখে, তাহলে অবশ্যই তার অন্তরে সর্বোচ্চ খুশু‘ হাসিল হবে এবং সে সূরা ফাতেহার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব অনুভব করবে। কেনই বা হবে না, যখন সে বুঝতে পারছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে কথা বলছেন, তার কথা উত্তর দিচ্ছেন, যা চাচ্ছে তা পাচ্ছে।
সুতরাং একজন বান্দার জন্য করণীয় হল, সে এ কথোপকথনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে এবং যথাযথ মূল্যায়ন করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যখন কোনো ব্যক্তি সালাত আদায় করতে দাড়ায়, সে তার রবের সাথেই কথা বলছে। সে যেন লক্ষ্য রাখে কিভাবে তার রবের সাথে কথা বলে”। মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/২৩৬; সহীহুল জামে‘, হাদিস: ১৫৩৮।
আয়াত তিলাওয়াতের সাথে সাথে সাড়া দেওয়ার একটি উদাহরণ হচ্ছে, সূরা ফাতেহার পর আমীন বলা। এতে রয়েছে অনেক সাওয়াব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا أمَّنَ الإمام فأمِّنُوا فإنه مَن وافق تأمِينُهُ تأمين الملائكة غُفر له ما تقدم من ذنبه»
“যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বলবে, যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে, তার অতীত জীবনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে”। বুখারি, ৭৪৭।
আমীন বলা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্। বিশেষ করে ইমাম যখন আমীন বলেন।
ইমাম ও মুক্তাদীর আমীন বলা একই সময়ে হতে হবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“ইমাম যখন আমীন বলেন তোমরাও আমীন বলবে।”