নামাযে পঠিত বিষয়গুলোর অর্থ ও শিক্ষা-2(আউযুবিল্লাহ পড়ার প্রয়োজনীয়তা)

 

                           দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

তাকবীর ও দু পাঠের পর রসূলুল্লাহ (সঃ) প্রথমে আল্লাহর কাছে নিম্নরুপ বাক্যে আশ্রয় চাইতেন

أعوذ بالله من الشيطان الرجيم»

অথবা বলবে:

«أعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم، من همزه، ونفخه، ونفثه».

আউযুবিল্লাহীস সামীয়ীল আলীমি মিনাশ শাইতোয়ানির রাযীমী মীন হামযিহী ওয়া নাফাখিহী ওয়া নাফাসিহ

“আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাই, তার আছর থেকে, তার অহঙ্কার থেকে ও তার খারাপ অনুভূতি থেকে”। আহমদ: ৩/৫০, আবু দাউদ:৭৭৫, তিরমিযি: ২৪২

কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿َإِذَا قَرَأۡتَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٩٨

সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও”। সূরা নাহল: ৯৮

তারপর তিনি বিসমিল্লাহীর রাহমানীর রাহীম পাঠ করতেন।

আরবী উচচারন সহীহ রাখার জন্য অবশ্যই আরবি দেখে পড়া অত্যাবশ্যক। অনুগ্রহ করে আপনারা রসুলুল্লাহর নামাজ বইটা হাতের কাছে রাখুন সব সময়ের সহায়ক হিসাবে।

                  আউযুবিল্লাহ পড়ার প্রয়োজনীয়তা

মহান আলাহ বলেছেন

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

যখন তুমি কোর’আন পাঠ কর তখন বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহন কর। সূরা আন নহল-৯৮

এটি একটি আল্লাহতা’আলার আদেশমূলক বাক্য।

তাহলে বুঝা যায় মানুষ যখন কুর’আন পাঠ করে তখন শয়তান তার কাছে আসে, তার দিকে ধাবিত হয় বা তাকে আক্রমন করে। আল্লাহর নিকট তাই আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 

শয়তান মানুষের নিকট কখনই প্রকাশ্যভাবে আসে না, সে আসে অদৃশ্যভাবে। তবে কেউ একটু সচেতন হলেই বুঝতে পারবে শয়তানের উপস্থিতি। যেমন –

সালাত শুরু করার পরই সালাতে থাকা অবস্থায় দেখা যায় ভালো  এবং জরুরী কথা মনে পড়ে, মনে হয় এগুলোতো ভাল চিন্তাই করছি কিন্তু নামাযে অন্যমনস্ক হওয়া খুশু খুজু নষ্ট হয়-এটাই শয়তানের চেষ্টা। সে তার নামাযের একাগ্রতা নষ্ট করবে। সুতরাং যখনই নামাযে অন্য চিন্তা দেখা দিবে তখনই বুঝতে হবে শয়তানের ওয়াসওয়াসা শুরু হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন কাজে শয়তানের ওয়াসওয়াসা শুরু বুঝা যায়। মানুষ সাবধান হলে শয়তান সুবিধা করতে পারে না।

তুমি যদি শয়তানের কুমন্ত্রনা অনুভব কর (শয়তান কুমন্ত্রনা দেয়), তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় লও। তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। সূরা হা মীম আস-সাজদাহঃ৩৬

 

হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদিগকে তেমন করে আবার ফিতনায় ফেলতে না পারে, যেমন করে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল, এবং তাদের পোষাক তাদের দেহ হতে খুলে ফেলেছিল, যেন তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের নিকট উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।

সে(শয়তান) এবং তার সাথি তোমাদিগকে এমন স্থান থেকে দেখতে পায়, যেখান হতে তোমরা তাদিগকে দেখতে পাও না। এই শয়তানগুলোকে আমরা ঈমানদার নহে এমনলোকদের জন্য পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে দিয়েছি। সূর আল আরাফঃ২৭

আউযুবিল্লাহ কোন মন্ত্রের মত জিনিষ নয়। শয়তান মানবজাতির প্রকাশ্য দুশমন। মানুষ যখন বুঝে মনের উপলব্ধি নিয়ে আউযুবিল্লাহ পড়বে এবং শয়তানের বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার নিজস্ব চেষ্টা অব্যাহত রেখে শয়তানের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে, সেটাই হবে প্রকৃ্ত আউযুবিল্লাহ বা আশ্রয় চাওয়া। যতবারই শয়তান আসবে কুমন্ত্রনা নিয়ে ততবারই মুমিন ব্যক্তি নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে মহান রবের দিকে,তাহলে একসময় শয়তান নিরাশ হয়ে চলে যাবে ইন শা আল্লাহ।

 জানবো শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে।

শয়তানের মূল লক্ষ্য হলো মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করা।

আল্লাহ বলেছেন—

সে (শয়তান) বললঃ আমার আল্লাহ! আমাকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যখন সব মানুষকে উঠানো হবে। আলাহ বললেনঃ আচ্ছা, তোকে অবকাশ দেয়া হলো। সেই দিন পর্যন্ত, যার সময় আমাদেরই জানা আছে। সূরা আল হিজরঃ৩৬-৩৮

শয়তান জানতো যে, মহান রবের ক্ষমতা কত অসীম- তাই সেই বিশ্বাস নিয়েই আল্লাহর কাছ থেকে সে কিছু শক্তি নিতে চাইলো যেন সেটা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

শয়তান কিয়ামত পর্যন্ত সুযোগ নিলো মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। কিন্তু আল্লাহ বলে দিলেন কত সুন্দর ও নিশ্চিত করে যে তাঁর আসল বান্দাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। শয়তান অহংকার করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে ইবলিশ হিসাবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

সে(ইবলিস) বললঃ আমার আল্লাহ, যেমন করে তুমি আমাকে বিভ্রান্ত করেছ, অনুরুপভাবে আমিও এখন পৃথিবীতে তাদের (মানুষের) জন্য চাকচিক্যের সৃষ্টি করে এই সবকে বিভ্রান্ত করবো। তোমার সেই সব বান্দাহ ছাড়া, যাদেরকে তুমি তাদের মধ্য থেকে একনিষ্ঠ বানিয়ে নিয়েছ।

আল্লাহ বললেনঃ ইহা একটি পথ  সোজা ও ঋজুভাবে, ইহা আমার পর্যন্ত পৌছায় সূরা আল হিজরঃ ৩৯-৪১

লক্ষ্য করুন যে ইবলিস ঠিকই তার কাজের সুবিধার জন্য যা যা প্রয়োজন তা চেয়ে নিয়েছে এবং মহান আল্লাহ তাকে দিয়েছেন, অথচ আমরা মহান রবের বান্দা হয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিষ চাইতে পারি না- যা দিয়ে শয়তানের চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিয়ে মহান রবের পথে এগিয়ে যেতে পারবো এবং খালেসভাবে চাইলে মহান আল্লাহ অবশ্যই সেটা আমাদের দান করবেন।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আমার প্রকৃত বান্দাহ যারা তাদের উপর তোর কোন আধিপত্য চলবে না। তোর কর্তৃত্ব তো কেবল সেই বিভ্রান্ত লোকদের উপর চলবে, যারা তোর অনুসরন ও আনুগত্য করবে। আর এইসবের জন্য জাহান্নামের দুঃসংবাদ রয়েছে। সূরা আল হিজরঃ৪২-৪৩

অতপর আমার নিকট থেকে জীবন বিধান তোমাদের নিকট পৌছে যাবে যারা সেই বিধান অনুসরন করবে তাদের কোন ভয় নেই তাদের চিন্তিত হওয়ার কোন কারন নেই। সূরা আল বাকারাঃ৩৮

হ্যা,  এটাই আসল রাস্তা যা আমাদের দুনিয়ার জীবন ও আখেরাতের জীবন সুন্দর ও শান্তিময় করতে পারি। আর তাই সেই জীবন বিধান যা কুর’আন থেকে আমাদের জানতে হবে সেটা যেন না পারি শয়তান আমাদের ওয়াসওয়াসা দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। আর আল্লাহ তাই আমাদের এই অবস্থায় তাঁর আশ্রয় চাইতে শিখিয়েছেন।

শয়তান মানুষের সকল কাজ এবং সকল এবাদতের মধ্যে কুর’আন পাঠ নিয়ে শয়তানের মাথা ব্যথা বেশী এবং এখানে বিজয়ী হতে পারলেই শয়তানের বিজয়।

অতপর আমার নিকট থেকে জীবন বিধান তোমাদের নিকট পৌছে যাবে যারা সেই বিধান অনুসরন করবে তাদের কোন ভয় নেই তাদের চিন্তিত হওয়ার কোন কারন নেই। সূরা আল বাকারাঃ৩৮

তাই শয়তান বুঝতে পারলো এই কিতাব থেকে মানব জাতিকে বঞ্চিত রাখার মধ্যেই সফলতা। তাই যুগে যুগে ইবলিস নানা ভাবে কিতাব থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।

কিন্তু সর্বশেষ কিতাব যেহেতু স্বয়ং আল্লাহ হেফাজত করেন আল্লাহ বলেছেন—

নিশ্চয়ই এই কিতাব আমি নাযিল করেছি এবং এটা নিশ্চিত যে আমিই এই কিতাব সংরক্ষণ করবো। সূরা আল হিজরঃ৯

তাই শয়তান বুঝলো একমাত্র মানুষকে যদি কুর’আনের আলো বা পথ থেকে সরিয়ে রাখা যায় তবেই তার উদ্দেশ্য পুর্ণ হবে। তাই কুর’আনকে মানুষ যেন বুঝতে না পারে, সফলতার মূলমন্ত্র যেন শিখতে না পারে নানা ভাবে মানুষকে শয়তান অন্য দিকে সরিয়ে রাখে।

শয়তান বলল, তুমি যেমন আমাকে গোমরাহীতে নিমজ্জিতকরে দিয়েছ, আমিও এখন তোমার সত্য-সরল পথের বাঁকে এই লোকদের জন্য ওৎ পেতে থাকবো;  সম্মুখে ও পিছনে, ডানে বামে সক দিক দিয়ে তাদিগকে ঘিরে ফেলবো এবং তুমি এদের অধিকাংশকে কৃ্তজ্ঞ পাবে না। সূরা আল আ’রাফঃ১৬-১৮

 আর হে মুহাম্মদ! এদের সামনে সেই ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা কর যাকে আমরা আমাদের আয়াত সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছিলাম কিন্তু সে সেই আয়াত সমূহ পালন করার দায়িত্ব এড়াইয়া যায়। শেষ পর্যন্ত শয়তান তার পশ্চাতে ধাওয়া করে, আর সে পথভ্রষ্টদের মধ্যে শামিল হয়ে গেল। সূরা আল আ’রাফঃ১৭৫

আল্লাহ আমাদের এই অবস্থা থেকে হেফাজত করুন।  আমাদের আরো সচেতন হতে হবে আমাদের আখেরাতের জীবনকে সাফল্য করতে চাইলে । আর তাই শুধু রামাদান মাসেই  নয় সারাটি বছর যেন কুর’আনকে ধারন করে চলি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।

আমরা চাইলে তাকে ঐ আয়াতসমূহের সাহায্যে উন্নত করতে পারতাম কিন্তু সে তো যমীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে থাকে এবং স্বীয় নফসের খাহেশ পূরনেই নিমগ্ন থাকে। ফলে তার অবস্থা কুকুরের মত হয়ে গেল; তুমি উহার উপর আক্রমন করলেও উহা জিহবা ঝুলাইয়া রাখে আর উহাকে ছেড়ে দিলেও জিহবা ঝুলিয়ে রাখে। আমাদের আয়াত সমূহকে যারা মিথ্যা মনে করে অমান্য করে তাদের  দৃষ্টান্ত ইহাই। তুমি এই কাহিনীসমূহ তাদিগকে শুনাতে থাক, সম্ভবত এরা কিছু চিন্তা-ভাবনা করবে।

সূরা আল আরাফঃ১৭৬

আর তাই আল্লাহ এই শয়তান থেকে তাঁর আশ্রয় চাইতে বলেছে, যেমন সুরা নাসে আমরা বলি—

আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই ঐ শয়তান থেকে যে মানুষের অন্তরে ফুসলানী দেয়, সেই শয়তান জিন এবং মানুষ উভয়ই। সূরা আন নাসঃ৫-৬

বছরের প্রতিটা সময় আমাদের এভাবে কুর’আনের শিক্ষা দিয়ে উন্নত করতে হবে  এবং নিজেদের বাস্তব আমল দিয়ে প্রকৃ্ত মুসলিম হতে হবে। আর প্রতিটা সময় আলাহর কাছে জিন ও মানুষরুপী শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা আমাদের উন্নত হওয়ার পথে সহায়ক হবে। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।-আমীন

যখন বান্দা সালাতে দাড়ায় তখন তার উপর শয়তানের ঈর্ষা-হিংসা ও দ্বেষ চলতে থাকে। কারণ, তখন বান্দা একটি মহান ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের স্থানে দাঁড়িয়েছে এবং শয়তানের জন্য সবচেয়ে অধিক কষ্টদায়ক ও কঠিন স্থানে অবস্থান করছে। একজন বান্দা যাতে সালাতকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে না পারে, সে জন্য শয়তান যাবতীয় চেষ্টাই করতে থাকে।

সে সালাতে বান্দাকে এমন সব কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা সালাত আরম্ভ করার পূর্বে স্মরণ করানো হয় নি। এমনকি দেখা যায়, কোনো বিষয় ও প্রয়োজন এমন আছে, যা বান্দা একেবারে ভুলে গেছে এবং তা হতে সে নিরাশ হয়ে গেছে, এ ধরনের বিষয়গুলো শয়তান সালাতের মধ্যে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যাতে তার অন্তরকে সালাত থেকে ফিরিয়ে নেয়া যায় এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখা যায়। ফলে সে সালাতে নিষ্প্রাণ হয়ে (আল্লাহর সামনে) দাঁড়ায়। আল্লাহকে সামনে রেখে মনোযোগ সহকারে সালাত আদায়কারী যেভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও সাওয়াব হাসিল করে, সে তার কোন কিছুই লাভ করতে পারে না। ফলে সে যেভাবে খালি হাতে সালাতে দাড়িয়ে ছিল, সেভাবে খালি হাতেই সালাত থেকে গুনাহের বোঝা নিয়ে বের হয়ে আসে। সালাত আদায়ের কারণে তার গুনাহের বোঝা একটুও হালকা হয় না। কারণ, সালাত ঐ ব্যক্তির গুনাহগুলো দূর করে, যে সালাতের হক আদায় করে, সালাতকে মনোযোগ সহকারে আদায় করে, সালাতে খুশুকে পরিপূর্ণ করে এবং সালাত আদায় করার সময় আল্লাহর সামনে মনোযোগ সহকারে দাড়ায়। আল ওয়াবিলুস সাইয়্যেব: ৩৬।

শয়তানের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করা ও শয়তানের কুমন্ত্রণাকে দূর করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্ন লিখিত চিকিৎসার প্রতি দিক নির্দেশনা দেন। আবুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার সালাতের মাঝে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এবং আমার কেরাআত পড়ার মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি শয়তান, এর নাম খানযাব যখন তুমি তা অনুভব করবে, তখন আল্লাহর নিকট শয়তান হতে আশ্রয় চাও এবং তোমার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেল। তিনি বলেন, আমি কাজটি করলে, আল্লাহ তাআলা আমার থেকে তা দূর করে দেন  মুসলিম: ২২০৩।

সালাত আদায়কারীকে শয়তানের ধোঁকা দেয়া ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন এবং তিনি বলেন,

যখন তোমাদের মধ্য হতে কোন ব্যক্তি সালাতে দাড়ায়, শয়তান এসে তাকে বিপাকে ফেলে। অর্থাৎ তার সালাতকে এলোমেলো করে দেয় এবং সালাতের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করে। ফলে সে কত রাকাত সালাত আদায় করল, তা ভুলে যায়। যখন তোমাদের এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তখন বসা অবস্থায় তোমরা দুটি সেজদা করে নিবে বুখারি, সেজদা সাহু অধ্যায়

অনুরূপভাবে শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে আমাদের আরও সংবাদ দেন যে,

 “যখন তোমাদের কেউ সালাতে থাকা অবস্থায় তার পায়ু পথে নড়-চড় অনুভব করে এবং ওজু ভঙ্গ হল কি হল না সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারছে না, সে যেন যতক্ষণ পর্যন্ত কোন আওয়াজ না শোনে বা হাওয়া না বের হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত না ছাড়ে  মুসলিম, হাদিস: ৩৮৯।

বরং শয়তানের ষড়যন্ত্র অনেক সময় আশ্চর্য রূপ ধারণ করে। যেমনটি এ হাদিস তা স্পষ্ট করে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, যার মনে হচ্ছে যে, সালাতে তার বায়ু বের হয়ে অজু ভঙ্গ হয়েছে অথচ তার ওজু ভঙ্গ হয় নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শয়তান তোমাদের সালাতে উপস্থিত হয়ে তার পায়ু পথ খোলে দেয়, ফলে সে মনে করে তার অজু নষ্ট হয়ে গেছে অথচ তার জু নষ্ট হয় নি। সুতরাং যখন তোমাদের কেউ এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন সে যে সালাত থেকে ফিরে না যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজ কানে পায়ুর আওয়াজ শুনতে না পায় অথবা নাকে তার দুর্গন্ধ অনুভব না করে

তাবরানী, খণ্ড ১১, পৃ: ২২২, হাদিস: ১১৫৫৬; মাজমায়ুয যাওয়েদ ১/২৪২ গ্রন্থে বলা হয়েছে, হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী। 

সালাতে শয়তানের এক প্রকার ধোঁকা আছে, যে ধোঁকাটি খানযাব নামের শয়তান মুসল্লিদের মধ্যে যারা ভালো তাদেরকে দিয়ে থাকে। আর তা হল, মুসল্লিদের মনোযোগকে সালাত থেকে সরিয়ে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীর দিকে নিয়ে যায়। যেমন, মুসল্লিদের মনোযোগকে সাংসারিক বা অফিসিয়াল কোন জরুরী কাজ বা কোন ভালো কাজের প্রতি মগ্ন করে দেয়া অথবা কোনো ফিকহী মাসআলার মধ্যে চিন্তা মগ্ন করে দেয়। ফলে তারা তাদের সালাতের একটি অংশে কি করল তা বুঝতেই পারে না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

কোনো মুসলিম যখন কোনো ফরয সালাতে উপস্থিত হয় এবং সুন্দর করে ওজু করে এবং সুন্দর করে রুকু-সেজদা করে, তখন সেটা তার জন্য তার অতীতের গুনাহগুলোর কাফফারা হিসেবে গণ্য করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গুনাহ না করে। আর এটি সব সময়ের জন্য মুসলিম, ১/২০৬।

 সালাতের সাওয়াব নির্ধারিত হয় বান্দার খুশু অনুযায়ী। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 “নিশ্চয় বান্দা সালাত আদায় করে, অথচ তার সে সালাতের সাওয়াব তার জন্য লেখা হয়, শুধু এক দশমাংশ, এক নবমাংশ, এক অষ্টমাংশ, এক সপ্তমাংশ, এক ষষ্ঠাংশ, এক পঞ্চমাংশ, এক চতুর্থাংশ, এক তৃতীয়াংশ ও অর্ধেক  ইমাম আহমদ: ৪/৩২১। হাদিসটি আলবানী রহ. সহীহুল জামে গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হাদিস নং ১৬২৬।

 মুসল্লি সালাতের ততটুকু সাওয়াব পাবে, যতটুকু সে বুঝতে পারবে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

 “তোমার সালাত হতে তুমি ততটুকু পাবে, যতটুকু তুমি বুঝতে পারবে

 যখন কেউ পরিপূর্ণ খুশু ও ভালোভাবে সালাত আদায় করে, তখন তার গুনাহ ও পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 “যখন কোন বান্দা সালাতে দাড়ায়, তখন তার সমস্ত গুনাহকে উপস্থিত করা হয় এবং গুনাহগুলো তার মাথা ও ঘাড়ের উপর রাখা হয়। তারপর যখন রুকু করে এবং সেজদা করে তখন তার গুনাহসমূহ ঝরে যায়

বাইহাকী, সুনানুল কুবরা ৩/১০। সহীহুল জামেতেও হাদিসটি বর্ণিত