দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
সালাতুল কুসূফ-সূর্য গ্রহন ও চন্দ্র গ্রহন এর সময় সালাত
আমাদের সমাজে সূর্য গ্রহন ও চন্দ্র গ্রহনকে যেন উপভোগ করার মত একটি ঘটনা বানিয়ে নিয়েছে, ফলে দেখা যায় এটা অবলোকন করার জন্য কত রকমের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। আবার অনেকে বিভিন্ন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থাকেন। অথচ মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল স. এর মাধ্যমে এই বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন ও কি করনীয় তাও শিখিয়ে দিয়েছেন।মূলত এটি একটি মহান রবের নিদর্শন যা মহান রবের বড়ত্ব ও কর্তৃ্ত্বকে তুলে ধরে।
কুসূফ অর্থ সূর্য বা চন্দ্রের আলো চলে যাওয়া, নিভে যাওয়া। এটা মহান আল্লাহ তা‘আলার একটি মহা নিদর্শন। এ সালাত মানুষকে এ জীবনের পরিবর্তনের তথা কিয়ামতের ভয়াবহ দিবসের জন্য প্রস্তুতি, আল্লাহর কাছে বিনীত হওয়া ও মহাবিশ্বের মহাপরিচালনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে আহ্বান করে। মহান আল্লাহই যে একমাত্র ইবাদতের হকদার এ সালাত তাঁরই অন্যতম আহ্বান। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলে জামা‘আতের সাথে এ সালাত পড়া সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ لَا تَسۡجُدُواْ لِلشَّمۡسِ وَلَا لِلۡقَمَرِ وَٱسۡجُدُواْۤ لِلَّهِۤ ٱلَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ٣٧﴾ [فصلت: ٣٧]
“আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ। তোমরা না সূর্যকে সাজদাহ করবে, না চাঁদকে। আর তোমরা আল্লাহকে সাজদাহ কর যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত কর”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৭]
অধিকাংশ বিদ্বানের মতে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা। ওয়াজিব নয়। নিঃসন্দেহে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামাযের নির্দেশ প্রদান করেছেন। অতি গুরুত্বসহকারে অন্যান্য নামায থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে তিনি এ নামায আদায় করেছেন।
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ এ নামাযকে ফরযে আঈন বা ফরযে কেফায়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের দলীল হচ্ছে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামাযের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর নির্দেশ মানেই ফরয বা ওয়াজিব। তাছাড়া অন্যান্য নিদর্শন থেকেও এনামাযের অতিরিক্ত গুরুত্ব পাওয়া যায়। এছাড়া বান্দার ত্রুটির কারণেই এই সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হয়ে থাকে এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এটি একটি সতর্কতা। তাই বান্দাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে এই শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ্র কাছে কাকুতি-মিনতী করা এবং সালাত আদায় করা।
নিঃসন্দেহে এমতের পক্ষের দলীল ও যুক্তি শক্তিশালী। সর্বনিম্ন বিষয়টি ফরযে কেফায়া। আমিও এটাই মনে করি। জমহুর (অধিকাংশ) বিদ্বান যে মত পোষণ করেন অর্থাৎ সুন্নাতে মুআক্কাদা- তাদের মতের পক্ষে ওয়াজিবকে প্রত্যাখ্যান করার কোন দলীল নেই। তবে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই হাদীসটি তাদের পক্ষে দলীল হতে পারে: গ্রাম্য ব্যক্তিকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর নির্দেশ দিলেন তখন সে প্রশ্ন করল, এই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ছাড়া কি আমার উপর অন্য কিছু ফরয রয়েছে? তিনি বললেন, “না, তবে তুমি নফল আদায় করতে পার।” এ হাদীসের মাধ্যমে অন্যান্য নামাযের আবশ্যকতা বা ফরয হওয়া অস্বীকার করা যাবে না- যদি তার যথাপযোক্ত কারণ থাকে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ‘না’ বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে সুন্নাত নামায সমূহ যা দিন রাতে বার বার আদায় করতে হয় তা আবশ্যক নয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণের সাথে সংশ্লিষ্ট নামায সমূহের আবশ্যকতা এখানে নিষেধ করা হয়নি। ফাতওয়া আরাকানে ইসলাম
মোটকথা, আমরা যা মনে করি তা হচ্ছে, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায ফরযে আঈন বা ফরযে কেফায়া।
সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সালাতের ওয়াক্ত:
সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত এর সময় অবশিষ্ট থাকে। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ শেষ হয়ে গেলে এ সালাতের কাযা নেই এবং আলোকিত হয়ে গেলেও এ সালাত পড়ার নির্দেশ নেই, কেননা তখন এ সালাতের ওয়াক্ত চলে যায়।
সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সালাতের পদ্ধতি:
দু’রাকাত সালাত পড়তে হয়। প্রথম রাকাতে উচ্চস্বরে সূরা আল-ফাতিহা ও দীর্ঘ সূরা পড়তে হয়, অতঃপর দীর্ঘ রুকু করে মাথা উঠিয়ে সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদা ও রাব্বানা লাকাল হামদ পড়বে। অতঃপর সূরা ফাতিহা পড়ে দীর্ঘ সূরা পড়বে। অতঃপর রুকু করবে, অতঃপর রুকু থেকে মাথা উঠাবে। অতঃপর দু’টি দীর্ঘ সাজদাহ দিবে। অতঃপর প্রথম রাকাতের মতো দ্বিতীয় রাকাত পড়বে, তবে কিরাত, রুকু, সাজদাহ ইত্যাদি প্রথম রাকাতের চেয়ে তুলনামূলক কম দীর্ঘ করবে। এ সালাতের অন্য পদ্ধতিও আছে। তবে এটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ পদ্ধতি। যদি তিন বা চার বা পাঁচ বার রুকু করা হয় তবে প্রয়োজন হলে তাতে কোনো অসুবিধে নেই।
https://www.youtube.com/watch?v=jM24icTiJss