নামাযে পঠিত বিষয়গুলোর অর্থ ও শিক্ষা-১৪( ইশরাক/চাশতের ছালাত/দোহা)

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

চাশতের  সালাত/দোহা/আওয়াবীন

মূলত এটি একটি সালাতই। শুধু সময়ের সাথে বিভিন্ন নাম বলা হয়ে থাকে।

‘যোহা’ অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে একে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়। এই ছালাত বাড়ীতে পড়া ‘মুস্তাহাব’। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল সা.কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন। মির‘আত শরহ মিশকাত ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮; ৪/৩৪৪-৫৮।

দুপুরের পূর্বের এই(দোহা) সালাতকেই ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ বলে। মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১২; মির‘আত ৪/৩৫১।

আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে মাগরিবের পরের ছয়, বিশ বা যে কোন পরিমাণ নফল সালাতকে আউওয়াবীন বলে আমল করার কিন্তু এই ধরনের হাদীসগুলি যঈফ(দূর্বল)।তিরমিযী, মিশকাত ১১৭৩-৭৪, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯, ৪৬৭, ৪৬১৭।

সালাতুদ-দোহা:

মাঝে মাঝে সালাতুদ্দোহা আদায় করা সুন্নাত। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى حَتَّى نَقُولَ لاَ يَدَعُ، وَيَدَعُهَا حَتَّى نَقُولَ لاَ يُصَلِّي.

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে সালাতুদ-দোহা আদায় করতেন যে, আমরা বলতাম তিনি হয়ত আর পরিত্যাগ করবেন না। আবার যখন তা আদায়  করা থেকে বিরত থাকতেন তখন আমরা বলতাম যে, হয়ত তিনি আর তা আদায় করবেন না”। তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ৪৭৭; আহমদ, ৩/৩৬।

সালাতুদ-দোহার সর্বনিম্ন সংখ্যা দুরাক‘আত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার ও ছয় রাকাত আদায় করেছেন। আর সালাতুদ-দোহার সর্বোচ্চ সংখ্যা আট রাকাত। এ সালাত সর্বদা আদায় করা শর্ত নয়।

 

নবী আকরাম সা. ইরশাদ করেন

তোমাদের প্রত্যেকেই প্রতিদিন সকালে শরীরের প্রত্যেক জোড়ার উপর একটি করে সদকা নিয়ে উপনীত হও। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) একটি সদকা, প্রত্যেক তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) একটি সদকা, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) একটি সদকা, সৎ কাজের আদেশ একটি সদকা, অসৎ কাজ থেকে বারণ একটি সদকা, চাশতের দু-রাকাত সালাত এ সবগুলোর পরিবর্তে যথেষ্ট। সহীহ মুসলিম: ৭২০,

সাহাবী আবু বুরদা রা. বলেন : আমি রাসুলুল্লাহ সা.কে ইরশাদ করতে শুনেছি :

প্রত্যেক মানুষের শরীরে তিন শত ষাটটি জোড়া রয়েছে। প্রত্যেক জোড়ার পরিবর্তে একটি করে সদকা করা তার উপর জরুরি। লোকেরা বলল : হে আল্লাহর রাসূল! এর সামর্থ্য রাখে কে? তিনি বললেন : মসজিদে নিক্ষিপ্ত থু থু মিটিয়ে ফেলবে, রাস্তা থেকে (কষ্টদায়ক) বস্তু অপসারণ করবে, যদি না পার, তাহলে চাশতের দু-রাকআত তোমার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে যাবে। হাদিস নং ৪২৩৯

বুরাইদা আসলামী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হ’ল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে ছাদাক্বা করা। ছাহাবীগণ বললেন, কার শক্তি আছে এই কাজ করার, হে আল্লাহর নবী? তিনি বললেন, চাশতের দু’রাক‘আত ছালাতই এজন্য যথেষ্ট। আবুদাঊদ, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১৫, ১৩১১ ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮।

দোহা বা চাশত বা আওয়াবীন সালাতের রাক‘আত সংখ্যা ২, ৪, ৮, ১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহর রাসূল সা. হযরত আলী (রাঃ)-এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত পড়েছিলেন। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩০৯ ‘সালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮। যদি বেশী রাক’আত পড়তে চান তবে এই সালাতটি প্রতি দু’রাক‘আত অন্তর সালাম ফিরিয়ে পড়তে হয়।

ইশরাকের সালাতঃ

‘শুরূক্ব’ অর্থ সূর্য উদিত হওয়া। ‘ইশরাক্ব’ অর্থ চমকিত হওয়া।

আনাস রা. হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে পড়ে, অতঃপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে বসে থাকে, অতঃপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ ও ওমরাহর নেকী হয়। তিরমিযী হা/৫৮৬, মিশকাত হা/৯৭১।