এই অবস্থায় সুগন্ধি মাখা ও তাওয়াফে ইফাযা (ফরয তাওয়াফ) বা তাওয়াফে যিয়ারাত করার জন্য মক্কার দিকে অগ্রসর হওয়া সুন্নাত। এটা হজ্জের আরকান সমূহের মধ্যে অন্যতম। এটা ভিন্ন হজ্জ উদযাপন পূর্ণ হয় না।
মহান আল্লাহ বলেছেন:
অতঃপর তারা যেন তাদের দৈহিক অপরিচ্ছন্নতা দূর করা এবং তাদের মানৎ পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন ঘরের-কাবা ঘরের। সূরা আল হাজ্জ:২৯
এ তাওয়াফটি হজ্জের একটা রুক্ন অর্থাৎ ফরজ। এটা ছুটে গেলে হজ্জ হবে না। তাওয়াফে ইফাদার অপর নাম তাওয়াফে যিয়ারাহ বা ফরয তাওয়াফ।
এর উত্তম সময় হলো ১০ই যিলহজ্জ ঈদের দিন কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী করা ও চুল কাটার পর তাওয়াফে ইফাদা করা। তবে সেদিন ফজর উদয় হওয়ার পরই তাওয়াফে ইফাদার সময় শুরু হয়ে যায়।
( ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ)-এর মতে ১০, ১১ ও ১২ই যিলহজ্জ-এ ৩ দিনের যে কোন দিন বা রাতে তাওয়াফে ইফাদা করে ফেলা ওয়াজিব। এ সময়ের মধ্যে না পারলে দম দিতে হবে। পক্ষান্তরে একই মাযহাবের ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে ১২ই যিলহজ্জের পরও যে কোন দিন তাওয়াফে ইফাদা করা যায়। এজন্য কোন প্রকার দম দেয়া লাগবে না, (البدائع الصنائع) এ সময়ে তাওয়াফ ও সাঈতে প্রচণ্ড ভীড় হয় বিধায় বৃদ্ধ, অসুস্থ, শিশু, নারী ও অক্ষম হাজীদের দু’তিন দিন পর তাওয়াফ-সাঈ করা ভাল মনে করছি।)
তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমে দুই রাকয়াত নামায পড়ে সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থলে সাঈ করবে তাহলে হজ্জে তামাত্তু পূর্ণ হলো।
এ তাওয়াফ উমরার তাওয়াফের মতই। তাওয়াফে ইফাদা শেষে যে সাঈ করা হয় তা ওয়াজিব। কেউ কেউ বলেছেন এটা ফরয। উমরার সাঈর মতই এ সাঈ। যে কোন পোষাক পরে এ সাঈ করা যায়। এই সাঈ করার পর চুল কাটতে হয় না। আগেই আপনি চুল কেটে হালাল হয়েছেন।
কিরাণ ও ইফরাদকারীগন তাওয়াফে কুদুমের পর সাঈ করে থাকলে, তাওয়াফে যিয়ারতের পর তাদের সাঈ করতে হবে না। অন্যথায় তাদেরও তাওয়াফে যিয়ারতের পর সাঈ করতে হবে।
উত্তম হল- এ চারটি কাজ ধারাবাহিকভাবে করা, যেভাবে আমরা আপনার উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছি।
প্রথমত: জামরায়ে আকাবায় রমী করবেন, তারপর কুরবানী করবেন, এরপর চুল হলক বা ছোট করবেন, তরপর বায়তুল্লার তাওয়াফ করবেন এবং এরপর সা‘য়ী করবেন যদি তামাত্তুকারী হন কিংবা তাওয়াফে কুদুমের সা‘য়ী করেননি এমন ক্বিরানকারী বা ইফরাদকারী হন। এভাবেই বিদায় হজের সময় আপনার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদায় করেছিলেন।
কিন্ত এ চারটি কাজের ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করে একটির আগে অন্যটি করলে আপনার কোন অসুবিধা নেই। আর আল্লাহ্ চাহেত আপনার হজ শুদ্ধ হবে। এ ব্যাপারে কুরবানীর দিন সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের প্রতি একের পর এক প্রশ্ন পেশ করা হয়েছিলো। তাদের কেউ কুরবানীর আগে হলক করেছিলেন, কেউ রমী করার আগে তাওয়াফ করেছিলেন এবং এভাবে আরো ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম উত্তরে তাদেরকে বলেছিলেন: “করুন, এতে কোন অসুবিধা নেই”। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের কষ্ট লাঘবকরণ, তাদের প্রতি তাঁর দয়া ও করুণা। হে আল্লাহ্ ! আপনি যা সহজ করে দিয়েছেন এবং যে শরীয়ত প্রণয়ন করেছেন সে জন্য সকল প্রশংসা আপনারই প্রাপ্য।
যে সমস্ত কাজ পূর্ণ করার ফলে হাজীগন পুরোপুরি হালাল হয়ে যায় তা তিনটি———–
বড় জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ
মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করা
তাওয়াফে ইফাযার সাথে সাঈ করা
হাজ্জ পালনকারীদের জন্য এই তিনটি কাজ সমাধা হয়ে গেলে তার জন্য ইহরামের কারনে নিষিদ্ধ প্রত্যেকটি কাজ হালাল হয়ে যাবে, স্ত্রীর সাথে মিলন, সুগন্ধি লাগানো ইত্যাদি।
এবার হাজীগন আবার মীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে এই তারিখে অর্থাৎ ১০ই জিলহজ্জে।
১০ ও ১১ই যিলহজ্জ দিবাগত রাতগুলোতে মিনায় থাকা ওয়াজিব। ১২ই যিলহজ্জ তারিখে পাথর নিক্ষেপ শেষে সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে ঐ তারিখের দিবাগত রাতেও মিনায় থাকা ওয়াজিব হয়ে যায়।
যে ধরনের উযর থাকলে মিনায় রাত্রি যাপন না করলেও গোনাহ হবে না?
(১) সম্পদ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকলে।
(২) নিজের জানের নিরাপত্তার অভাববোধ করলে।
(৩) এমন অসুস্থতা যে অবস্থায় মিনায় রাত্রি যাপন করলে তার কষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
(৪) অথবা এমন রোগী সাথে থাকা যার সেবা-শুশ্রুষার জন্য মিনার বাইরে থাকা প্রয়োজন।
(৫) এমন লোকের অধীনে চাকুরীরত যার নির্দেশ অমান্যে চাকুরী হারানোর ভয় আছে, এ ধরনের শরয়ী ওযর থাকলে।
১০, ১১ ও ১২ই যিলহজ্জ তারিখে দিনের বেলায় মিনায় থাকা জরুরী না, তবে থাকাটা উত্তম।