হজ্জ ও আত্মউপলব্ধি
হজ্জের গুরুত্ব আপনারা ধারাবাহিকভাবে জেনেছেন। আসলে আমাদের মাঝে এখনো অনেক এমন আছেন যে তাদের হজ্জ ফরয হয়ে আছে অথচ বিভিন্ন কারনে উদ্যোগ নেন নি। অনেকে ভাবেন ছেলে-মেয়ের বিয়ে সাদী দিয়ে নেই অথবা ব্যবসা গুছিয়ে নেই, সন্তানের পরীক্ষা ইত্যাদি। কিন্তু হজ্জ ফরয হয়ে যাওয়ার পর এই সমস্ত অজুহাত দিয়ে নিজেকে ফরয কাজ থেকে বিরত রাখার ফলে জীবনে মৃত্যুর ঘন্টা বেজে উঠলে তখন কি হবে??
পরিবারের মৌলিক চাহিদা মিটাবার সাথে সাথে হজ্জের সফর খরচ বহনের সামর্থ থাকলেই একজন সুস্থ্য সবল ব্যক্তির পক্ষে হজ্জ ফরয হয়ে যায়। আর মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত শর্ত হল মাহরাম সফরসঙ্গী থাকা।
অনেকে মাহরাম ব্যক্তি কারা তা ই জানেন না। আমাদের দেশে বিভিন্ন এজেন্ট দেখা যায় কোন কোন মহিলাকে ধর্ম মা বা বোন ডেকে বলেন গ্রুপের সাথে যাওয়া যাবে। আবার অনেকে বোনের স্বামী বা ভাসুর দেবর তাদের স্ত্রীসহ যান যা শরীয়াত অনুমতি দেয় না। একটা ফরয কাজ করতে যেয়ে আরেকটি ফরয লংঘন করার কোন নিয়ম নেই।
সবচেয়ে উত্তম হলো স্বামী-স্ত্রী একসাথে হজ্জ করতে যাওয়া,তাতে দুজনের জন্যই উপকার ও সহজ হয়। এই সময়টাতে দুজনেই মন-প্রান দিয়ে আল্লাহর স্মরনে থাকা এবং আল্লাহতা’আলার কাছে চাওয়ার সুযোগ পান- এটা অনেক বড় এক নি’আমত। বর্তমানে সাংসারিক ব্যস্ততা আমাদের এতো বেড়ে গিয়েছে, এই কিছুদিনের জন্য শুধু এবাদতে নিজেকে নিয়োগ করা আত্মশুদ্ধির জন্য ও অনেক সহায়ক।
আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো সামর্থ যার আছে, হজ্জ করা তার ওপর আল্লাহর একটি অনিবার্য নির্দিষ্ট ‘হক’। এতদসত্ত্বেও যে তা অমান্য করবে সে কাফের এবং আল্লাহ দুনিয়া জাহানের মুখাপেক্ষী নন।
সূরা আলে ইমরান: ৯৭
আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পথের সম্বল এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ না করে, তবে এ অবস্থায় তার মৃত্যু ইহুদী ও নাসারার মৃত্যুর সমান বিবেচিত হবে।
সহীহ জামে আত তিরমিযী
উম্মুল মুমেনীন আয়েশা(রা) থেকে বর্নিত। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল স. জিহাদকে আমরা (মেয়েরা) সবচাইতে উত্তম কাজ বলে জানি, আমরা কি জিহাদে অংশগ্রহন করবোনা? তিনি বললেন, না, বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্মম জিহাদ হচ্ছে, “হজ্জে মাবরুর”।
বুখারী শরীফ:১৪২১
ছোট্ট শিশু নিয়েও অনেকে হজ্জে যান। অনেককে দেখেছি ছোট ছোট তিনটি-দুটি সন্তান নিয়ে অনেক পরিবার হজ্জ করছেন। এরা মীনা থেকে মক্কায় হেঁটে হেঁটে আনন্দ করতে করতে যাচ্ছে। দেখা যায় মায়ের কোলে একটি-বাবার কোলে একজন এবং একজন হেঁটে যাচ্ছে। সুবহানাল্লাহ। ওদের দেখে তখন নিজেদের হাঁটার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়। হজ্জে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে মহান আল্লাহ সব সমস্যাকে সমাধান করে দেন। এটা পরীক্ষিত যে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহর ঘরে যাবার উদ্যোগ নেন আল্লাহতা’আলা তার ঘরের হেফাযত করেন-আলহামদুলিল্লাহ।
অনেকের আরো অনেক সুন্দর পরিকল্পনা থাকতে পারে তবে এখানে অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু দিক-নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা রইলো। এখন অবশ্য অনেক বই বের হয়েছে, তবে সহীহ কিনা ভালো করে যাচাই করে তবেই সেটা অনুসরন করুন।
এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত করার জন্য অবশ্যই কিছু প্রস্ততি নিতে হয়। যখন থেকে আপনি হজ্জে যাওয়ার নিয়্যত করলেন তখন থেকে নিজের ছোট একটি ডায়রী বা খাতাতে কিছু প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা লিখতে শুরু করুন।
যারা হজ্জ বা উমরাতে যেতে চান এখন থেকেই কিছু পড়াশুনা করুন। যেমন—
১। হজ্জ সংক্রান্ত অধ্যায় সহীহ বোখারী, মুসলিম ও তিরমিযী শরীফ থেকে ধারাবাহিকভাবে পড়া শুরু করুন। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নোট আপনার ডায়রীতে সংক্ষিপ্তভাবে লিখে নিতে পারেন।
২। পবিত্র কুর’আন বুঝে পড়া শুরু করুন। বিশেষ করে হজ্জ সংক্রান্ত সূরাগুলো পড়ুন (সূরা বাকারা, সূরা হজ্জ, সূরা আস সাফাত) তাফসীরসহ।
৩। কুর’আন পড়তে যেয়ে দোয়া ভিত্তিক আয়াতগুলো আপনার ডায়রীতে তুলে নিতে পারেন ধারাবাহিকভাবে।
৪। রাসূলের স: এর জীবনী বই (আর-রাহীকুল মাখতুম) পড়া শুরু করুন। প্রয়োজনীয় তথ্য দাগিয়ে নিতে পারেন।
৫। মক্কা-মদিনার ইতিকথা বই পড়ে নিলে আরো ভাল হয়।
৬। যারা হজ্জ করে এসেছেন সমসাময়িককালে তাদের সাথে আলাপ করুন। তবে এইক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে অনেকে কিন্তু ভুলতথ্য নিয়ে হজ্জ করে এসেছেন নিজেও জানে না।
৭। এখন ইন্টারনেট থেকে হজ্জের নিয়ম জানারও সুযোগ রয়েছে, সহীহ সাইট থেকে জানতে পারেন।