আল্লাহর আহবানে বায়তুল্লাহর অতিথির সাড়া-“হে আল্লাহ আমি হাযির-১৫ উমরাহ

উমরাহ

অনেকে শুধু উমরা করতেও মক্কায় সফর করে থাকেন বছরের অন্যান্য সময়ে। হজ্জের উদ্দেশ্যে যাবার পরও উমরা করতে হয়।

 আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: এক উমরাহ আদায়ের পর পরবর্তী উমরাহ আদায় করা ( দু উমরাহর) মধ্যবর্তী গোনাহসমূহের জন্য কাফ্ফারা আর মকবুল হজ্জের (যে হজ্জ আল্লাহর কাছে কবুল হয়) পুরস্কারই হচ্ছে জান্নাত।                     সহীহ আলবুখারী:১৬৪৭                         

মহান আল্লাহতা’আলার সন্তুষ্টি ও রাসূল(সঃ) এর দেখানো নিয়মে সব কাজ করতে হবে, তবেই সেই কাজ আমলে সালেহ এর মাঝে গন্য হবে ইনশা’আলাহ।

উমরার জন্য ফরয কাজ তিনটি

১। নিয়্যত মুখে উচচারন করে করা- আল্লাহুম্মা লাব্বায়িকা ঊমরাতান/ লাব্বায়িকা ঊমরাতান

২। কা’বা ঘরের তাওয়াফ করা।

৩। সাফা-মারওয়ার মধ্যে সা’য়ী করা।

উমরার জন্য ওয়াজিব কাজ দুইটি

১। মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা (বাংলাদেশীদের জন্য ইয়ালামলাম যা একটি পর্বতের নাম)

২। হালাক বা তাকসীর অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে পুরুষরা মাথা নেড়া বা চুল ছোট করা এবং মহিলাদের জন্য চুলের গোছার শেষাংশ থেকে আংগুলের মাথার শেষ গিট(এক আংগুল) পরিমান চুল কাটতে হবে বা সমগ্র চুল একত্র করে ঐ পরিমান কাটতে হবে।

                      ইহরাম

ইহরাম শব্দের অর্থ হারাম বা নিষিদ্ধ করা। হজ্জ ও উমরাহকারী ব্যক্তিকে ইহরাম অবস্থা ধারন করতে হলে মীকাত থেকে বা মীকাত অতিক্রম করার পূর্বে কিছু কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

ইহরামের ৩টি শর্ত

১। মীকাত থেকে ইহরাম করা

২। পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন কাপড় পড়া

৩। তালবিয়্যা পড়া(ইহরাম শুরু করার পর পরই) তবে এ ব্যাপারে মতভেদ আছে,অনেকের মতে এটা সুন্নাত।

 

ধারাবাহিকভাবে যেভাবে এহরাম বাঁধতে হয়:

ইহরাম বাঁধার আগে করনীয় প্রস্তুতি, তা হলো:

  • নখ কাঁটা
  • বগল ও নিম্নাংগের লোম পরিষ্কার করা
  • গোসল করা বা অযু করা, পরিচ্ছন্ন হওয়া। তবে গোসল করাই উত্তম।
  • পুরুষেরা শরীরে সুগন্ধী লাগানো সুন্নত কিন্তু এহরামের কাপড়ে লাগাবেন না। মেয়েরা সুগন্ধি লাগাবে না।
  • পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান করবেন । সেলাইবিহীন চাদরের মত দুটুকরো কাপড় একটি নিচে পরবে এবং অন্যটি গায়ে পড়বে। টুপি,গেঞ্জি,জাঙ্গিয়া পড়বেন না।

কিন্তু মেয়েদের জন্য যেমন ইচ্ছা কাপড় পরিধান করতে পারেন তবে চাকচিক্য, ফিতনা সৃষ্টিকারী পোষাক যেন না হয়।

এই ক্ষেত্রে বোনেরা অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যেহেতু পুরুষরা সাদা কাপড় পরিধান করেন তাই ভীরের মাঝে মহিলা হিসেবে নিজেকে চিহ্ণিত করার জন্য সাদা ছাড়া অন্য রঙের কাপড় পড়লে ভালো।

হাত মোজা থাকবেনা, মুখের নেকাব(যা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা হয়) খোলা থাকবে তবে ওড়না বা কাপড়ের কিছু অংশ দ্বারা প্রয়োজনে পর-পুরুষ থেকে পর্দার জন্য ব্যবহার করবে।

বোনেরা আমার লক্ষ্য করুন-এহরাম অবস্থায় মুখ খলে রাখার নির্দেশ থাকে তাহলে অন্য সময় অবশ্যই মুখের সৌন্দর্য্য ঢেকে রাখা পর্দার একটি শর্ত।

সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় আয়েশা (রাঃ) তাওয়াফের সময় যখনই কোন পুরুষ দল কাছে এসে যেত তখনই তিনি নিজের চেহারা কাপড় দিয়ে আড়াল করে নিতেন। আসলেই ইসলাম কত বিজ্ঞানসম্মত। নারীর সৌন্দর্য্য প্রথমে তার চেহারা দিয়েই উপভোগ করে অন্যরা। তাই এই মুখ তথা চেহারার সৌন্দর্য্য ঢেকে রাখাটা জরুরী। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

কোন নারী এই সময় হায়েজ বা নিফাস অবস্থায় থাকলে সে অন্য নারীর মত গোসল করে পরিষ্কার হয়ে এহরাম বাঁধবে। পাক পবিত্র হওয়া পর্যন্ত এহরাম অবস্থায় থাকবে। পাক হলে গোসল করে তাকে উমরার কাজ শেষ করতে হবে।

  • পায়ের গোড়ালি ঢেকে রাখে এমন কোন জুতা বা মোজা পড়া যাবে না। সেন্ডেল পড়তে পারবে।
  • গোসল বা অযুর পর দুরাক’আত সুন্নত নামাজ( যা তাহিয়্যাতুল অযুর নামাজ) পড়ে উমরার নিয়্যত মুখে উচচারন করে করা। যদি ফরয সালাত আদায়ের পর হলে আলাদা করে আর কোন সালাত পড়া লাগবে না।

ক। শুধু উমরার ক্ষেত্রে বলতে হয়-              লাব্বাইকা উমরাহ

খ। শুধু হজ্জের ক্ষেত্রে বলতে হয়-                লাব্বাইকা হাজ্জা

গ। কিরান হজ্জের ক্ষেত্রে উমরা ও হজ্জের কথা একত্রে বলতে হয়- লাব্বাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জা

ঘ।  ইফরাদ হলে বলতে হয়-                     লাব্বাইকা হাজ্জা

ঙ।  বদলি উমরা হলে বলতে হয়-  লাব্বাইকা উমরা আন(ফুলান)-ফুলানের জায়গায় ব্যক্তির নাম বলবেন

চ।  বদলি হজ্জ হলে বলবেন- লাব্বাইকা হাজ্জান আন (ফুলান)-ফুলানের জায়গায় ব্যক্তির নাম বলবেন।

ছ। তামাতু হজ্জের জন্য প্রথমে শুধু উমরার নিয়্যত করবেন। পরে ৮ই যিলহজ্জ তারিখে হজ্জের নিয়্যাত করবেন।

যদি আশঙ্কা থাকে যে কোন বাঁধার সম্মুখীন (অসুস্থতা, শত্রুতা বা অন্য কোন কারনে) হতে পারে তাহলে ্নিয়্যত করার সময় এই ভাবে শর্ত করে বলতে হবে-যদি আমি বাঁধাপ্রাপ্ত হই তাহলে বাঁধাপ্রাপ্ত স্থান হবে আমার মাহল(এহরাম খোলার স্থান)। তাহলে হজ্জ বা উমরা পালন করতে কোন বাঁধার সম্মুখীন হন তাহলে সেস্থানে এহরাম খুলে ফেলতে পারবেন তাতে কোন ফিদইয়া নেই।

  • এরপর তালবিয়া পড়া সুন্নাত। তালবিয়া হলো—

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ»

লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মূলক লা শারীকা লাক্।

আমি হাযির, হে আল্লাহ ! আমি হাযির, আমি হাযির, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমারই কাছে এসেছি। নিষ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার।  কেউ তোমার শরীক নেই।”

পুরুষেরা জোরে তালবিয়া পড়বেন কিন্তু নারীরা পর-পুরুষের সামনে জোরে পড়বেন না।

এখন এহরাম বাঁধা হয়ে গেল। এই অবস্থায় অনেকগুলো কাজ হারাম হয়ে যায়। বায়তুল্লাহিল হারাম বা পবিত্র কাবা ঘরে পৌছার আগ পর্যন্ত দোয়া যিকির ও তালবিয়া পাঠ করতে থাকবেন।

তালবিয়া পাঠ কতক্ষন পর্যন্ত করবেন–

১। উমরার উদ্দেশ্যে ইহরামের নিয়্যত করা শেষ হলেই তালবিয়া পড়া শুরু করবে এবং হারাম শরিফে পৌছে তাওয়াফ শুরু করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবে।

২। হজ্জের বেলায় ১০ই যিলহজ্জে বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকবে।

রাসূল স.কে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন ধরনের হজ্জ সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেন, চিৎকার করা (উচ্চস্বরে  তালবিয়া পাঠ) ও রক্ত প্রবাহিত করা (কোরবানী দেওয়া)।           জামে আত তিরমিযী:৭৭৫

বাংলাদেশ থেকে যারা হজ্জের জন্য বা ওমরার জন্য যান বাসা বা হাজ্জীক্যাম্প থেকে এহরাম বাঁধতে পারেন।

যে কোন সফরে যে ভাবে দোয়া পড়ে বের হন সেভাবে দোয়া পড়ে বাসা থেকে বের হবেন।

মক্কায় পৌছে সম্ভব হলে আবার গোসল করে তাওয়াফ করতে যাওয়া উত্তম।

পবিত্র কাবা ঘরে পৌছুলে ডান পা দিয়ে ঢোকা সুন্নত এবং মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়ুন। পবিত্র কাবা ঘরে পৌছে তালবিয়া বন্ধ করে তাওয়াফ শুরু করুন।

 

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ

হজ ও উমরার কাজে প্রবেশের সাথে সাথে আপনার উপর অনেকগুলো কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে সে কাজগুলো আপনার জন্য হারাম হয়ে যায়। এগুলোকে বলা হয় ‘‘ইহরামের নিষিদ্ধকাজ’’।

আর তা হল : (ইহরামে প্রবেশের পর ব্যক্তিকে মুহরিম বলা হয়)

১। কেটে বা অন্য কোনভাবে চুল উপড়ে ফেলা এবং হাত বা পায়ের নখ কাটা। অবশ্য হাত দ্বারা মুহরিম ব্যক্তির মাথা চুলকানো জায়েয যদি তা প্রয়োজন হয়। এতে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন চুল পড়ে যায় অথবা মুহরিম ব্যক্তি তা ভুলে কিংবা হুকুম না জেনে করে ফেলে, তাহলে তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না।

২। ইহরামের পর কাপড়ে কিংবা শরীরে কিংবা অন্যত্র সুগন্ধি ব্যবহার করা। তবে ইহরামের আগে মাথায় ও দাঁড়িতে যে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়েছে তা ইহরামের পর বাকী থাকলেও কোন অসুবিধা নেই।

৩। মুহরিম ব্যক্তি স্ত্রী সঙ্গম করতে পারবে না, যৌন উত্তেজনার সাথে স্ত্রীকে স্পর্শও করবে না, স্ত্রীকে চুমু খাবে না এবং যৌন কামনার বশবর্তী হয়ে তার দিকে তাকানো যাবে না। মুহরিম ব্যক্তি মহিলাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে না এবং নিজের জন্য বা অন্য কারো জন্য বিয়ের আকদ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে ইহরাম অবস্থায় থাকবে।

৪। মুহরিম ব্যক্তি হাত মোজা ব্যবহার করবে না।

৫। মুহরিম ব্যক্তির জন্য খরগোস ও কবুতর প্রভৃতির ন্যায় কোন স্থলজ শিকারী প্রাণীকে হত্যা করা অথবা পশ্চাদ্ধাবন করা কিংবা সে কাজে সাহায্য করা নিষিদ্ধ। মুহরিম ব্যক্তির জন্য সর্বাবস্থায় শিকার করা নিষিদ্ধ।

৬। সর্বাঙ্গে অথবা শরীরের কোন অঙ্গে জামা কিংবা পাজামা, গেঞ্জি, পাগড়ী, টুপী ও মোজার ন্যায় সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা পুরুষের জন্য হারাম।

মুহরিম ব্যক্তির জন্য সেন্ডেল, হাত ঘড়ি, আংটি, চশমা, কানে শোনার যন্ত্র, বেল্ট এবং টাকা-পয়সা ও কাগজপত্র হেফাযতের ব্যাগ ব্যবহার করা জায়েয।

৭। মুহরিম ব্যক্তি পুরুষ হলে মাথার সাথে লেগে থাকে এমন কিছু যেমন ইহরামের কাপড় বা পাগড়ী, রুমাল কিংবা টুপি দিয়ে মাথা ঢাকা হারাম।

তবে ছাতা, তাঁবু কিংবা গাড়ীর ছাদের ছায়ায় থাকলে অথবা মাথার উপর বোঝা বহন করলে কোন অসুবিধা নেই। মুহরিম ব্যক্তি যদি ভুলে কিংবা হুকুম না জেনে মাথা ঢেকে ফেলে তাহলে তার উপর ওয়াজিব হল যখনই স্মরণ হবে কিংবা হুকুম সম্পর্কে জানতে পারবে আবৃতকারী বস্ত্তটি সরিয়ে ফেলবে। আর এতে তার উপর কোন দম আসবে না।

৮। ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাত মোজা পরিধান করা নিষিদ্ধ ও নেকাব দিয়ে মুখ ঢাকা হারাম। নেকাব হলো দেখার জন্য দু‘চোখ খোলা রেখে যদ্বারা মুখমন্ডল আবৃত করা হয়। ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য এসবের কোনটাই বৈধ নয়। তাদের জন্য ওয়াজিব হলো তারা পুরুষদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় কিংবা পুরুষরা তাদের পাশদিয়ে যাওয়ার সময় শরীয়ত সম্মত ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা, যা মাথার উপরের দিক থেকে মুখের উপর ছেড়ে রাখবে।

৯। মুহরিম এবং মুহরিম নয় এমন ব্যক্তির জন্য হারাম শরীফের গাছ পালা এবং মানুষের চেষ্টা-চরিত্র ছাড়াই জন্মে এমন সবুজ তৃণলতা কাটা নিষিদ্ধ। হারাম শরীফের মধ্যে পড়ে থাকা জিনিস উঠিয়ে নেয়া যাবে না, অবশ্য মালিকের কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে প্রচার করার জন্য তা উঠানো যাবে।

ইহরাম অবস্থায় কি কি কাজ বৈধ—–

  • কখনো আপনার ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা কিংবা পরিস্কার করা এবং মাথা ও শরীর ধৌত করার প্রয়োজন হতে পারে। এসব কিছু করা জায়েয। এর ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন চুল পড়ে গেলে তাতে আপনার কোন অসুবিধা নেই।
  • ফোঁড়া গালানো, প্রয়োজনে দাঁত উঠানো,অপারেশন করা যাবে।
  • পানিতে মাছ ধরা ও মোরগ,ছাগল গরু ইত্যাদি জবাই করতে পারবে।
  • মানুষের জন্য ক্ষতিকারক প্রানী যেমন: হিংস্র কুকুর, চিল, কাক, ইদুঁর, সাপ, বিচ্ছু, মশা-মাছি ও পিঁপড়া মারা জায়েয। নাসাঈ:২৮৩৫
  • বেল্ট, আংটি, ঘড়ি, চশমা, কানের শ্রবন যন্ত্র, মানিব্যাগ ইত্যাদি ব্যাবহার করতে পারবে।
  • ছাতা, তাবু, গাড়ি,ঘর বা যেকোন ছায়ার নিচে বসতে পারবে।
  • সুগন্ধিবিহীন সাবান দিয়ে গোসল ও হাত ধোয়া যাবে।
  • সুগন্ধিবিহীন তেল ব্যাবহার করা যাবে।
  • ঠান্ডা লাগলে গলায় মাফলার ব্যবহার করতে পারবে।

 

## ইহরাম অবস্থায় যে সব কাজ নিষেধ এর কোন একটি কাজ ভুলে বা না জেনে করে ফেললে কোন দম বা ফিদইয়া দিতে হবে না, স্মরণ হওয়া মাত্র বা অবগত হওয়ার সাথে সাথে এ কাজ থেকে বিরত হয়ে যাবে এবং এ জন্য ইস্তিগফার করবে। তবে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

## উযরবশত: একান্ত বাধ্য হয়ে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মাথার চুল উঠায় বা কেটে ফেলে তাহলে ফিদইয়া দিতে হবে। উলামায়ে কিরামের কিয়াস অনুসারে মাথা ছাড়া অন্য অংশ থেকে চুল উঠালে বা কাটলে বা নখ কাটলেও ফিদইয়া দিতে হবে।

ফিদইয়া হলো—

  • একটি ছাগল জবাই করে গোশত বিলিয়ে দেয়া অথবা
  • ৬জন মিসকিনকে (প্রত্যেককে ১কেজি ২০ গ্রাম পরিমান) একবেলা খাওয়াতে হবে অথবা
  • তিনদিন রোযা রাখতে হবে।

হজ ও উমরার কাজে প্রবেশের ফলে ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হয়ে পড়ে সকল পাপ থেকে দূরে থাকা এবং বেশী বেশী যিকর ও তালবিয়া পাঠ করা। গীবত (পরনিন্দা), চোগলখুরী (অন্যের দোষ প্রচার করা), অশ্লীল কথা বার্তা ও ঝগড়াঝাটি ইত্যাদি যা কোন কোন লোক বহুল পরিমাণে করে থাকে – আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করুন – তা দ্বারা আপনি আপনার হজ ও উমরাকে বিনষ্ট করা থেকে সতর্ক থাকুন।

অনুরূপভাবে আপনার উপর আরো ওয়াজিব হলো – আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা থেকে আপনার চোখ ও কানকে সংযত রাখা এবং আপনার প্রভুর প্রতি মনোযোগী হওয়া ও তাঁর ইবাদাতে মশগুল থাকা।

আপনার কর্তব্য হলো সর্বদা তালবিয়া, যিকর ও কুরআন পাঠে মগ্ন থাকা। আর আপনার পুরো সফরটাই ইবাদাত ও যিকরে পরিণত হওয়া উচিত। প্রত্যেক হাজীর জন্য আল্লাহর কাছে আমরা দো‘আ করি তিনি যেন তাদের হজ কবুল করেন এবং তাদেরকে সাহায্য করেন। আল্লাহর কাছে আমাদের আরো প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের উত্তম আমল ও উত্তম বস্তু চাওয়ার তাওফীক দেন।

ইহরামের সাথে সংশ্লিষ্ট ভুলসমূহ

১. মীকাত থেকে ইহরাম না বাধা।

২. ইহরামের কাপড় পাল্টানো যাবে না-এ ধারণা পোষণ করা, প্রকৃতপক্ষে ইহরামের কাপড় যখন ইচ্ছা তখন পাল্টানো যাবে।

৩. ইহরামের শুরু থেকে ইযতিবা করা। (ইযতিবা মানে হচ্ছে- পুরুষের জন্য: ডান কাঁধ খোলা রেখে চাদরটা ডান বগলের নীচ দিয়ে এনে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেয়া।) অথচ শুধুমাত্র তাওয়াফের সময় ইযতিবা করা সুন্নত। তাও যদি সেটি তাওয়াফে কুদুম হয়। তাওয়াফে কুদুমকে বাংলায় আগমনী-তাওয়াফ বলা যেতে পারে।

৪. ইহরামের জন্য বিশেষ নামাজ পড়াকে ওয়াজিব মনে করা।