আল্লাহর আহবানে বায়তুল্লাহর অতিথির সাড়া-“হে আল্লাহ আমি হাযির-১২ হজ্জ ও উমরার আহকাম ও কার্যাবলী

উমরার ফরয বা রুকন ৩টি

১। ইহরাম করা।

২। কাবাঘর তাওয়াফ করা।

৩। সাঈ করা

উমরার ওয়াজিব ২টি।

১।  মীকাত পার হওয়ার আগেই ইহরাম করা।

২। চুল কাটা বা মাথা মুণ্ডানো। মহিলাদের চুলের অগ্রভাগ কাটা।

হজ্জের ফরয বা রুকন ৩টি।

১। ইহরাম করা

২। আরাফাতে অবস্থান (৯ই যিলহজ্জ)

৩। তাওয়াফ করা (তাওয়াফে যিয়ারাহ বা ইফাদাহ)

হজ্জের ওয়াজিব ৯টি

১। ইহরাম করতে হবে মীকাত পার হয়ার আগেই।

২। সাফা মারওয়ার মাঝে সাঈ করা।

৩। আরাফাতে অবস্থান সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘায়ীত করা।

৪। মুযদালিফায় অবস্থান করা।

৫। মীনায় রাত্রি যাপন।

৬। জামরা সমূহে কঙ্কর নিক্ষেপ করা।

৭। হাদী (পশু) কুরবানী করা।

৮। চুল কাটা বা মাথা মুণ্ডানো। মহিলাদের চুলের অগ্রভাগ কাটা।

৯। বিদায়ী তাওয়াফ। ( হায়েয বা নেফাস শুরু হয়ে গেলে নারীদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে-বুখারী)

উল্লেখিত ওয়াজিবসমূহের মধ্যে কোন একটি যে কোন কারনেই ছুটে গেলেই বা বাদ পরে গেলে দম বা কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

দম বা কাফফারা আদায় করতে হয় যেভাবে—উমরা বা হজ্জের কোনো একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে এর পরিবর্তে একটি খাসি,দুম্বা বা বকরি যবাই করে দিতে হয়।

এটি মিনায় বা মক্কায় দিতে হয়। এর গোশত শুধুমাত্র ফকির-মিসকীনরা খাবে, দমদাতা নিজে খাবে না।

অজানা ও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির জন্য দম দিতে হয় না,শুধুমাত্র ওয়াজিব তরক করলে দম দিতে হবে।

হজ্জের প্রধান সুন্নাত সমূহ

১। ইহরামের পূর্বে গোসল করা

২।পুরুষদের সাদা রঙের ইহরামের কাপড় পরিধান করা

৩।তালবিয়্যা পাঠ করা

৪।৮ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা

৫।ছোট ও মধ্যম জামারায় কংকর নিক্ষেপ করার পর দু’আ করা

৬।ইফরাদ হাজীদের তাওয়াফে কুদূম করা।

৭। তাওয়াফে কুদূমে ইযতেবা ও রমল করা

৮। সাফা-মারওয়ার সাঈর সময় সবুজ চিহ্নিত স্থানে পুরুষদের দৌড়ানো

৯।তাওয়াফ শেষ দুই রাকাত সালাত আদায় করা

সুন্নাত সমূহের কোন একটি ছুটে গেলে দম বা কাফফারা দিতে হবে না।

হজ্জের প্রকারভেদ৩ প্রকার

১। তামাত্তু ২। কিরান। ৩। ইফরাদ

তামাত্তু হজ্জ—তামাত্তু শব্দের অর্থ হলো কিছু সময়ের জন্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করা।

প্রথমত : ‘তামাত্তু’ হল হজ্জের সময় প্রথমে উমরা করে হালাল হয়ে ইহরামের কাপড় বদলিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা। এর কিছু দিন পর আবার মক্কা থেকেই ইহরাম বেধে হজ্জের আহকাম পালন করা।

দ্বিতীয়ত : ‘কিরান’ হল উমরা ও হজ্জের মাঝখানে হালাল না হওয়া এবং ইহরামের কাপড় না খোলা। একই ইহরামে আবার হজ্জ সম্পাদন করা।

তৃতীয়ত : ‘ইফরাদ’ হল উমরা করা ছাড়াই শুধুমাত্র হজ্জ করা।

প্রথম প্রকার : তামাত্তু

আর তা হল হজের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু উমরার ইহরামের নিয়্যত করা। হজের মাস সমূহ হল শাওয়াল, যিলক্বদ এবং যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন।

এ কথা বলে ইহরামের নিয়্যত করবে যে,  لبيك عُمْرَةً ‘লাববাইকা উমরাতান’।

এরপর উমরার কাজসমূহ পরিপূর্ণরূপে সমাধা করবে। তাওয়াফ, সা‘য়ী ও মাথার চুল হলক করলে কিংবা ছেঁটে নিলে উমরার কাজ শেষ হবে এবং ইহরামের কারণে তার উপর যা কিছু হারাম ছিল সবই তার জন্য হালাল হয়ে যাবে। এরপর যিলহজ মাসের আট তারিখে সে মক্কার যে স্থানে অবস্থান করবে সেখান থেকেই শুধু হজের ইহরামের নিয়্যত করবে এ কথা বলে যে,

لبيك حَجاً

‘‘লাববাইকা হাজ্জান’’

তামাত্তু হজ পালনাকারীর উপর হাদী যবাই করা ওয়াজিব। আর হাদী হল একটি ছাগল কিংবা উটের এক সপ্তমাংশ অথবা গরুর এক সপ্তমাংশ। যদি কুরবানীর জন্য হাদী না পাওয়া যায়, তাহলে হজের মধ্যে তিন দিন রোযা রাখতে হবে এবং নিজ পরিজনের কাছে ফিরে এলে সাতদিন রোযা রাখবে।

আলেমগণের বিশুদ্ধ মতের আলোকে হজের প্রকারভেদের মধ্যে সর্বোত্তম হল তামাত্তু হজ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে নিজের সাথে হাদীর পশু না নেয়, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা ও মারওয়ায় সা‘য়ী করবার পর সাহাবীগণকে বলেছিলেন,

‘‘তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর হাদী নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং এ কাজ গুলোকে উমরা হিসাবে গন্য করে।’’ সহীহ মুসলিম:৩০০৯

এ প্রকার হজ উত্তম হওয়ার আর একটি কারণ হল – হাজী সাহেব তার সফরে হজ ও উমরার উভয়কাজ ভিন্নভাবে সম্পাদন করেছেন।

দ্বিতীয় প্রকার : ক্বিরান

আর তা হল হজের মাসসমূহে মীকাত থেকে হজ ও উমরার জন্য একত্রে ইহরামের নিয়্যত করা। হজের কাজে প্রবেশের নিয়্যতের সময় একথা বলবে যে,

لبيك عُمرةً و حَجاً

“লাববাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জান”

অত:পর মক্কায় পৌঁছে উমরার তাওয়াফ করবে এবং হজ ও উমরার জন্য হজ্জের সা‘য়ী তাওয়াফে ইফাদার পর পর্যন্ত বিলম্ব করতে পারবে। এভাবে মাথার চুল হলক না করে কিংবা না ছেঁটে ইহরাম অবস্থায় থাকবে। এরপর যিলহজ্জ মাসের আট তারিখে মিনায় রওয়ানা করবে এবং হজ্জের বাকি কাজগুলো সমাধা করবে। তামাত্তু হজ্জকারীর মতই ক্বিরান হজ্জ আদায়কারীর উপরও ‘‘হাদী’’ যবাই করা ওয়াজিব। তবে ‘হাদী’ না পেলে হজ্জের মধ্যে তিনদিন ও পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার পর সাতদিন রোযা রাখবে।

 

তৃতীয় প্রকার : ইফরাদ

তা হল হজ্জের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু হজ্জের জন্য ইহরামের নিয়্যত করবে। হজ্জের কাজে প্রবেশের নিয়্যতের সময় বলবে-

«لبيك حَجاً»

“লাববাইকা হাজ্জান”

ইফরাদকারী ক্বিরান হজ্জ পালনকারীর মতই আমল করবে। অবশ্য ক্বিরান পালনকারীর উপর ‘হাদী’ যবাই করা ওয়াজিব, আর ইফরাদকারীর উপর ‘হাদী’ ওয়াজিব নয়; কেননা সে ক্বিরান ও তামাত্তু কারীর ন্যায় হজ্জ ও উমরাকে একত্র করে নি।

এ তিন প্রকার হজ্জের যে কোনটি পালনের ব্যাপারে হাজীসাহেবের এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু তন্মধ্যে সর্বোত্তম হল তামাত্তু – ঐ ব্যক্তির জন্য, যে নিজের সাথে হাদী এর পশু নেয়নি, যেমনটি ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে।