আল্লাহর আহবানে বায়তুল্লাহর অতিথির সাড়া-“হে আল্লাহ আমি হাযির”-১১ হজ্জ ও উমরাহ সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত

হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য শর্তসমূহ:

১। মুসলমান হওয়া
২। বালেগ হওয়া
৩। আকল- বুদ্ধি থাকা
৪। আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা থাকা।
আর্থিক সক্ষমতা বলতে এখানে বুঝায় হজ্জের খরচ বহন করার পর তার পরিবারের ভরণপোষন চালিয়ে যাওয়ার মতো সম্পদ ও সক্ষমতা থাকতে হবে।
মহিলাদের জন্য আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।

মাহরাম কারা?

এখানে মাহরাম তারাই যাদের সাথে বিয়ে হওয়া স্থায়ীভাবে হারাম। তারা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:

এক. বংশীয় মাহরাম।

বংশীয় মাহরাম মোট সাত শ্রেণি:
১- মহিলার মূল যেমন, পিতা, দাদা, নানা। (যত উপরেই যাক)
২- মহিলার শাখা যেমন, পুত্র, পুত্রের পুত্র, কন্যার পুত্র। (যত নীচেই যাক)
৩- মহিলার ভাই। আপন ভাই বা বৈপিত্রেয় ভাই অথবা বৈমাত্রেয় ভাই।
৪- মহিলার চাচা। আপন চাচা বা বৈপিত্রেয় চাচা অথবা বৈমাত্রেয় চাচা। অথবা কোন মহিলার পিতা বা মাতার চাচা।
৫- মহিলার মামা, আপন মামা বা বৈপিত্রেয় মামা অথবা বৈমাত্রেয় মামা। অথবা কোন মহিলার পিতা বা মাতার মামা।
৬- ভাইপো, ভাইপোর ছেলে, ভাইপোর কন্যাদের ছেলে (যত নীচেই যাক)।
৭- বোনপো, বোনপোর ছেলে, বোনপোর কন্যাদের ছেলে (যত নীচেই যাক)।
দুই. দুধ খাওয়াজনিত মাহরাম।
দুধ খাওয়াজনিত মাহরামও বংশীয় মাহরামের মত সাত শ্রেণি। যাদের বর্ণনা উপরে চলে গেছে।

তিন. বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম।

বৈবাহিক কারণে চার শ্রেণি মাহরাম হয়।
১- মহিলার স্বামীর পুত্রগণ, তাদের পুত্রের পুত্রগণ, কন্যার পুত্রগণ (যত নীচেই যাক)।
২- মহিলার স্বামীর পিতা, দাদা, নানা (যত উপরেই যাক)।
৩- মহিলার কন্যার স্বামী, মহিলার পুত্র সন্তানের মেয়ের স্বামী, মহিলার কন্যা সন্তানের মেয়ের স্বামী (যত নীচেই যাক)
৪- যে সমস্ত মহিলাদের সাথে সহবাস হয়েছে সে সমস্ত মহিলার মায়ের স্বামী এবং দাদি বা নানির স্বামী।

মাহরাম- এর কিছু শর্ত:

মাহরামকে অবশ্যই মুসলিম, বিবেকবান এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।
যে কোন ইবাদাত কবুল হওয়ার শর্ত ৪টি।
১। ঈমান –কাফির ও মুশরিক থাকা অবস্থায়,ঈমানের প্রতি সন্দেহ পোষনকারী বা ঈমান ছুটে গেলে ইবাদাত কবুল হবে না।
২। ইখলাস –শুধুমাত্র ও একমাত্র মহান রবের খুশির জন্য হতে হবে।
৩। সুন্নাত অনুসারে- প্রিয় নবী স.এর দেখানো নিয়মে হতে হবে।
৪। শির্কমুক্ত থাকা

হজ্জ বা উমরা কবুলের জন্যও উপরে উল্লেখিত শর্তের সাথে আরো কিছু শর্ত রয়েছে যেমন-

১। হালাল মাল বা অর্থ দিয়ে হজ্জ করা-

আল্লাহর ইবাদাত করবে অথচ তার উপার্জন হালাল হবে না, এটা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। অতএব হালাল উপার্জন ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। আবূ হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ইমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে, হে আমার রব, হে আমার রব অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। সুতরাং তার প্রার্থনা কীভাবে কবুল হবে?।
ইমাম মুসলিম: ২৩৯৩।

২। যাবতীয় মন্দ কাজ ও ঝগড়া থেকে দূরে থাকা ও আল্লাহর ভয় ও মক্কার ফযিলত অন্তরে জাগ্রত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া।
মহান আল্লাহ বলেছেন
হজ্জের মাসগুলো সবার জানা। যে ব্যক্তি এই নির্দিষ্ট মাসগুলোতে হজ্জ করার নিয়ত করে, তার জেনে রাখা উচিত, হজ্জের সময়ে সে যেন যৌন সম্ভোগ, দুষ্কর্ম ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হয়। আর যা কিছু সৎকাজ তোমরা করবে আল্লাহ‌ তা জানেন। হজ্জ সফরের জন্য পাথেয় সঙ্গে নিয়ে যাও আর সবচেয়ে ভালো পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। কাজেই হে বুদ্ধিমানেরা! আমার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো। সূরা আল বাকারা:১৯৭
যে ব্যক্তি মক্কার যমীনে সীমালংঘন করে কোন অন্যায় কাজ করতে ইচ্ছা পোষন করবে,আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করাব।  সূরা হজ্জ:২৫

৩।  হজ্জ উমরাহ বিনষ্টকারী কাজ সমূহ থেকে দূরে থাকা