অনেকে সেহরীতে উঠে খেতে চান না বা পারেন না। কিন্তু এই সময় উঠে কিছু পান করা উত্তম।
রাসূল স.বলেছেন–
আমাদের রোযা এবং আহলি কিতাব অর্থাৎ ইহুদী ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরী খাওয়া।সহীহ মুসলিম: ২৪১৬
আবার রাতের শেষ সময়ে দু’আ কবুলের সময়, রামাদান মাসে এই সেহরীতে উঠে আমরা সেই সুযোগ লাভ করতে পারি, তাহাজ্জুদের ফায়দা লাভে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ লাভ করতে পারি।
অনেকে আবার তাড়াতাড়ি সেহরী করেই ফজরের নামাজ পড়ে শুয়ে পড়েন কিন্তু
সেহরী ও নামায এ দুয়ের মধ্যে ব্যবধান পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার পরিমান সময়। সহীহ মুসলিম: ২৪১৮
রোযাদারের জন্য সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সহিহ বোখারী ও সহিহ মুসলিমে আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সেহেরী খাও; কারণ সেহেরীতে বরকত রয়েছে।”[সহিহ বুখারী (১৯২৩) ও সহিহ মুসলিম (১০৯৫)]
বিলম্বে সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সহিহ বুখারীতে আনাস (রাঃ) যায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সেহেরী খেলাম। এরপর তিনি নামাযে দাঁড়ালেন। আমি বললাম: আযান ও সেহেরী মাঝে কতটুকু সময় ছিল? তিনি বলেন: পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করার সমান সময়।”[সহিহ বুখারী (১৯২১)
সেহেরী হিসেবে শুধু পানি পান করা কি যথেষ্ট?
আলহামদুলিল্লাহ।
অগ্রগণ্য প্রতীয়মান হচ্ছে- সেটাকে সেহেরী বলা যাবে যদি সে ব্যক্তি অন্য কোন খাবার না পায়। দলিল হচ্ছে- “তোমাদের কেউ ইফতার করলে সে যেন কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করে। আর যদি কাঁচা খেজুর না পায় তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। আর যদি শুকনো খেজুরও না পায় তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করে।” অতএব, সে ব্যক্তির কাছে যদি কোন খাবার না থাকে; অর্থাৎ খাওয়ার মত কিছু না থাকে; কিংবা তার কাছে খাবার আছে তবে সেটা খেতে তার রুচি হচ্ছে না তাহলে সে পানি পান করবে এবং আশা করি সে সওয়াব পাবে।[সমাপ্ত] শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ উছাইমীন (রহঃ)
সেহেরির সময় পড়তে হয় এমন কোন বিশেষ দুআ নেই। শরীয়তসম্মত হল, খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে বা আল্লাহর নামে শুরু করা এবং খাওয়া শেষে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে তাঁর প্রশংসা করা, যেমনটি সব খাওয়ার বেলায় করা হয়।
তবে যে ব্যক্তি রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর সেহেরি খায় তিনি এমন একটি সময় পান যে সময়ে আল্লাহ তাআলা অবতরণ করেন এবং যে সময়ে দোয়া কবুল হয়। আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
( يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ : مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ ). رواه البخاري ( 1094 ) ومسلم ( 758 )
‘‘রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে আমাদের মহান রব্ব দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। অবতরণ করে তিনি বলতে থাকেন: ‘কে আমার কাছে দোয়া করবে? আমি তার দোয়া কবুল করব। কে আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে দান করব। কে আমার কাছে ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (১০৯৪) ও মুসলিম (৭৫৮)] সুতরাং এ সময়ে দুআ করা যেতে পারে। যেহেতু এটি দুআ কবুলের সময়; সেহরির সময় হিসেবে নয়।
আর নিয়্যতের স্থান হচ্ছে অন্তর। জিহ্বা দ্বারা নিয়্যত উচ্চারণ করা- শরিয়তসম্মত নয়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন: “যে ব্যক্তি মনে মনে সংকল্প করলো যে, সে পরের দিন রোজা পালন করবে, তবে তার নিয়্যত করা হয়ে গেলো।’’
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।