আসসালামু’আলাইকুম
আমাদের সমাজে অনেকেই বদরের ময়দানে রাসূল স. মৃত কাফেরদের ডেকে ডেকে কিছু কথা বলেছিলেন এটাকে উল্লেখ করে বলে থাকেন যে মৃত ব্যক্তিরা কথা শুনতে পায়। আসলে এই ধারনাটি সঠিক নয়। শুধুমাত্র রাসূল স.এর জীবনের উক্ত ঘটনাটি মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে বিশেষ ভাবে সংঘটিত হয়েছিল। নিচের লেকচারটি শুনার অনুরোধ রইলো।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিহতদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তোমরা তো সবাই ছিলে নেতৃস্থানীয় লোক। তোমরা আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করোনি অথচ অনেকেই আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। তোমরা আমাকে নিঃসঙ্গ সহায়হীন অবস্থায় ফেলেছিলে, অথচ অনেকে আমাকে সাহয্য করেছে। তোমরা আমাকে বের করে দিয়েছিলে, অথচ অনেকে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে।’ এরপর নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিহতদের মৃত দেহ টেনে বদরের একটি কূয়োর বেতর ছুড়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন।
হযরত আবু তালহা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে বদরের দিন কোরায়শদের ২৪ জন বড় বড় সর্দারের লাশ বদরের একটি নোংরা কূয়োয় নিক্ষেপ করা হয়। তখন নিয়ম ছিলো যে, কোন কাওমের ওপর জয়ী হলে তিনদিন যুদ্ধক্ষেত্রে কাটানো হতো। বদরের মাঠে তিনদিন কাটানোর পর নবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সওয়ারীর পিঠে আসন সাঁটা হলো। এরপর তিনি পদব্রজে চললেন, সাহাবারা তাঁকে অনুসরণ করলেন।হঠাৎ কূয়োর তীরে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলতে লাগলেন, ‘হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করতে, তবে সেটা কি তোমাদের জন্যে ভালো হতো না? আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছেন, আমরা তার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি, তোমরা কি আমাদের প্রতিপালকের কৃত ওয়াদার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছো।’ হযরত ওমর (রা.) আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি এমনসব দেহের সাথে কি কথা বলছেন, যাদের রূহ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে সত্তার শপথ যার হাতে মোহাম্মদের প্রাণ আমি যা কিছু বলছি, তোমরা ওদের চেয়ে বেশি শুনতে পাও না। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, তোমরা ওদের চেয়ে বেশী শ্রবণকারী নও। কিন্তু ওরা জবার দিতে পারে না [বোখারী, মুসলিম, মেশকাত, ২য় খন্ড, পৃ. ৩৪৫]
“হে অমুকের পুত্র অমুক -হে অমুকের পুত্র অমুক! আল্লাহ ও তার রাসূল [ﷺ] তোমাদের পরিণতি সম্পর্কে যে ওয়াদা করেছিলেন- তা কি তোমরা সত্য পেয়েছো? আমার সাথে আল্লাহ যে ওয়াদা করেছিলেন – তা আমি সত্য পেয়েছি।” [মুসলিমঃ জান্নাত পর্ব, জান্নাতে মৃতের স্থান পেশ করা অধ্যায়, ২:৩৮৭, হাদিস: ২৮৭৩, ৬৯৫৯]
তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে আরও বললেনঃ يا أهل القلب بئس العشيرة كنتم كذبتمونى وصدقنى الناس –
– “হে গর্তবাসীগণ! তোমাদের বর্তমান জীবন কতই না নিকৃষ্ট। যখন অন্যান্য লোকেরা আমাকে সত্য নবী বলে গ্রহণ করেছিল, তখন তোমরা আমাকে মিথ্যা মনে করতে।” (তারীখে তাবারীঃ হাঃ নং ৫৬০ তাফসীরে ইবনে কাসির, ৩/৪৪৪, সূরা মায়েদা, ৭৯ নং আয়াতের তাফসীর; আর রাওদ্বুল আনফ, ৫/১৪৭)