দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
কুরবানী এমন একটি ইবাদাত যা বছরে একবারই আসে নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে করার জন্য। সুন্নাতে মু’আক্কাদাহ/ওয়াজীব এই আমলটি করার জন্য অবশ্যই আমাদের পূর্ণ ইখলাস ও নিয়্যত থাকা দরকার।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবে জীবন যাত্রাকে বিভিন্ন পরিবর্তিত পদ্ধতি(ডিজিটাল সহযোগীতায়) চালিয়ে যাচ্ছি ঠিক সেইভাবেই হিকমাত দিয়ে কুরবানী ইবাদাতটাও করা সম্ভব।
বরং অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্তমান এই করোনা ভাইরাস মহামারী পরীক্ষাতে, মহান রবের কাছে সর্বোত্তম কুরবানী দেয়ার নিয়্যত করে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার প্রচেষ্টা রাখা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের নিয়্যতকে সহিহ রাখার তাওফিক দিন। কোন ধরনের শয়তানী ওয়াসওয়াসায় পড়ে যেনো না যাই,যুগে যুগে নবী রাসূলদের এই কুরবানীর মত ইবাদাতকে আমরাও যেনো সুন্দর সহিহভাবে আদায় করতে পারি।
আর্থিকভাবে যারা কুরবানী দিতে সক্ষম নন বর্তমান পরিস্থিতিতে, তাদের জন্যতো কুরবানী জরুরত নয়। কিন্তু যারা সামর্থবান বর্তমান অবস্থায় কুরবানী দিয়ে গরীব মিসকীনদের সহযোগীতা করাটা খুবই জরুরী। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কষ্ট ত্যাগ করার শক্তি সবর দান করুন।
প্রশ্ন
আমি ও আমার ফ্যামিলি এমন দেশে থাকি যেখানে পশু জবাই করা নিষিদ্ধ। এখন আমাদের করণীয় কী? আমরা কি এর মূল্য সদকা করে দিব?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
যদি আপনার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে কোরবানীর পশু কিংবা নবজাতকের আকিকার পশু এবং আপনি যে দেশে অবস্থান করছেন সেখানে এটি জবাই করা অসম্ভব হয় তাহলে উত্তম হচ্ছে‑আপনি আপনার পক্ষ থেকে অন্য দেশে জবাই করার জন্য অর্থ পাঠিয়ে দিবেন; যেখানে পরিবার-পরিজন রয়েছে কিংবা গরীব-মিসকীন রয়েছে। কেননা কোরবানীর পশু বা আকিকার পশু জবাই করা পশুর মূল্য দান করার চেয়ে উত্তম।
ইমাম নববী বলেন: “পরিচ্ছেদ: আমাদের মাযহাব মতে, আকিকা দেয়া আকিকার পশুর মূল্য সদকা করার চেয়ে উত্তম। ইমাম আহমাদ ও ইবনুল মুনযিরও একই কথা বলেছেন।”[আল-মাজমু (৮/৪১৪) থেকে সমাপ্ত]
‘মাতালিবু উলিন্ নুহা’ গ্রন্থে বলেছেন: কোরবানীর পশু জবাই করা ও আকিকার পশু জবাই করা পশুর মূল্য দান করার চেয়ে উত্তম। এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদের সরাসরি উক্তি রয়েছে। অনুরূপ বিধান ‘হাদি’ এর পশুর ব্যাপারেও প্রযোজ্য। যেহেতু হাদিসে এসেছে‑ “কোরবানীর দিন আল্লাহ্র কাছে রক্তপাতের আমলের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই। কেয়ামতের দিন কোরবানীর পশু তার শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। এবং কোরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা কোরবানীর প্রতি খুশি থাক।”[সুনানে ইবনে মাজাহ] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কোরবানী করেছেন এবং হাদি প্রেরণ করেছেন। তাঁর পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেদীনও একই আমল করেছেন। যদি পশুর মূল্য সদকা করা উত্তম হত তাহলে তাঁরা সেটা বাদ দিয়ে কোরবানী করতেন না।[সমাপ্ত] শাইখ আলবানী ‘আস-সিলসিলাতুয যায়ীফা’ গ্রন্থে (৫২৬) হাদিসটিকে ‘যয়ীফ’ বলেছেন।
শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “আপনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে কোরবানী করা জায়েয হবে? নাকি আপনি এর বদলে নগদ অর্থ নিজের দেশে বা অন্য কোন মুসলিম দেশে পাঠাবেন?
জবাবে তিনি বলেন: আপনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে যদি আপনার সাথে আপনার পরিবার থাকে তাহলে সেখানে কোরবানী করা উত্তম। আর যদি আপনার পরিবার অন্যত্র থাকে এবং তাদের সেখানে কোরবানী করার মত কেউ না থাকে তাহলে আপনি তাদের জন্য দিরহাম পাঠিয়ে দিন। যাতে করে তারা সেখানে কোরবানী করতে পারে।”[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ বিন উছাইমীন (২৪/২০৭) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
https://islamqa.info/bn/answers/85039/%E0%A6%AF-%E0%A6%AC%E0%A6%AF%E0%A6%95%E0%A6%A4-%E0%A6%8F%E0%A6%AE%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A6%B6-%E0%A6%AC%E0%A6%B8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A6%96%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A6%B6-%E0%A6%9C%E0%A6%AC%E0%A6%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%B7%E0%A6%A6%E0%A6%A7-%E0%A6%A4%E0%A6%A8-%E0%A6%95-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B6%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A6%A6%E0%A6%95-%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%AC%E0%A6%A8
প্রশ্ন
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
কোরবানির গোশত তিন ভাগ করার বিষয়টি কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে। তবে এ বিষয়ে প্রশস্ততা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গরীব-মিসকীনদের কাছে কোরবানির গোশতের একটা অংশ পৌঁছা।
ইবনে উমর (রাঃ) বলেন: “কোরবানির পশু ও হাদির পশুর গোশত এক তৃতীয়াংশ নিজের পরিবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ মিসকীনদের জন্য”।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকেও এমন উক্তি রয়েছে।
দুই:
যদি কোরবানিকারী তার কোরবানির গোশত থেকে কোন একজন মিসকীন মুসলিমকে খাইয়ে এরপর বাকী গোশত অমুসলিমদেরকে দান করে দেয় তিনি সেটা করতে পারেন।
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
“কোরবানির গোশত কাফেরকে খাওয়ানো জায়েয। এটি হাসান, আবু সাওর ও কিয়াসপন্থীদেরও অভিমত।
কেননা এটি নফল সদকা। তাই এর থেকে যিম্মি ও অমুসলিম বন্দিকে খাওয়ানো জায়েয; অন্যসব সদকার মত। আর যেটা ওয়াজিব সদকা সেটা কোন কাফেরকে দেওয়া জায়েয নয়। কেননা ওয়াজিব সদকা যাকাত ও কসম ভঙ্গের কাফ্ফারার মত”।[আল-মুগনি (১১/১০৯) থেকে সংক্ষেপিত]
অতএব, আপনি আপনার কোরবানির পশু জবাই করার পর একজন মিসকীন মুসলমানের সন্ধান করবেন এবং তাকে কিছু দিয়ে দিবেন। এরপর যা অবশিষ্ট থাকে আপনি নিজে খাবেন, সংরক্ষণ করে রাখবেন, হাদিয়া দিবেন ও দান করবেন; এমনকি অমুসলিমদেরকে হলেও। হতে পারে এর মাধ্যমে ইসলামের প্রতি অমুসলিমদের অন্তর আকৃষ্ট হবে।
আর যদি আপনি কোন একজন মিসকীনকেও না চিনেন এবং আপনার পক্ষ থেকে ইসলামিক সেন্টার গরীবদেরকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে কোরবানির গোশত পৌঁছিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালন করবে তাহলে ইসলামিক সেন্টারকে আপনি যতটুকু পরিমাণ চান দিয়ে দিতে পারেন।
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
https://www.youtube.com/watch?v=oqnK2bmCF9s