বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
হায়েয বা মাসিক অপবিত্রতার দরুন কুর’আন তেলাওয়াত করা যাবে কি?
আমাদের সমাজে দেখা যায় এই প্রশ্নটি অনেক নারীরাই করে থাকেন। আবার অনেক মসজিদ মাদরাসায় পাড়ার হুজুর(যারা আরবি লাইনে পড়াশুনা করেছেন) অনেকেই এই মাস’আলা দিয়ে থাকেন যে, নারীর হায়েয অবস্থায় কুর’আন পড়া যাবে না। আবার অনেকে মাস’আলা দেন যে ভেংগে ভেংগে আয়াত পড়তে পারবেন, অনেকে বলেন শুধু দু’আ পড়তে পারবেন। এইরকম অনেক মাস’আলা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকেন। ফলশ্রুতিতে দ্বিধা-দ্বন্ধে ভুগতে থাকেন আমাদের মাঝে অনেক নারীই। এই অবস্থাটাই বেশ অস্বস্থিকর । এইধরনের অবস্থায় অনেকে কুর’আন থেকে দূরে থাকেন, অনেকের হায়েযের সময়সীমা দীর্ঘদিন হওয়াতে মাসের বেশীরভাগ সময়ই মহান রবের দেয়া কুর’আন থেকে বঞ্চিত থাকেন।
এই কারনেই আমাদের এই বিষয়টি সহীহভাবে পরিস্কার জানা প্রয়োজন। এরপর সঠিক আমলের উপর ইস্তিকামাত থাকা দরকার, এরপরেও বিভিন্ন মতামতে নিজেকে দ্বিধা-দ্বন্ধে না ফেলাটাই মুমিনের দায়িত্ব। শুধুমাত্র সহিহ হাদীস বা কুর’আনের কোন তথ্য আসলে সেটা গ্রহনযোগ্য। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পথেই স্থির করে দিন।
হায়েজ নিফাস অবস্থায় কুর’আন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা যাবে। জুনুব(স্বামী স্ত্রীর মিলনে অপবিত্রতা) এর ক্ষেত্রে পবিত্র না হয়ে করা যাবে না।
হায়েয নিফাস অবস্থায় সালাত, রোজা, বায়তুল্লাহত তাওয়াফ ও ইতিকাফ করতে পারবে না। অন্য সকল ইবাদাত করতে পারবে।
মুসহাফ যা শুধুমাত্র আরবী কুর’আন সেটা স্পর্শ করার ক্ষেত্রে খালি হাতে ধরা যায় না, কোন কিছু দিয়ে ধরা যাবে। কিন্তু আরবীর সাথে অনুবাদ ও ব্যাখ্যা(তাফসির)ধরা যাবে।
আলহামদুলিল্লাহ।
‘ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা’ নামক কিতাবে নিম্নোক্ত প্রশ্নটি এসেছে:
প্র: আরাফার দিন হায়েযগ্রস্ত নারী কি দোয়ার বইগুলো পড়তে পারবেন; ঐ গ্রন্থগুলোতে কুরআনের আয়াত থাকা সত্ত্বেও।
উ: হায়েয বা নিফাসগ্রস্ত নারীর জন্যে হজ্জের বইসমূহে লিখিত দোয়াগুলো পড়তে কোন অসুবিধা নেই। এবং সঠিক মতানুযায়ী কুরআনে কারীম পড়তেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীকে কুরআনে কারীম পড়তে বারণ করে মর্মে সহিহ ও সুস্পষ্ট কোন দলিল নেই।
দলিল আছে জুনুবী (ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের কারণে যার উপর গোসল ফরয) ব্যক্তির ব্যাপারে। জুনুবী অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে না; যেহেতু এ ব্যাপারে আলী (রাঃ) এর সূত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
পক্ষান্তরে, হায়েযগ্রস্ত ও নিফাসগ্রস্ত নারীর ব্যাপারে ইবনে উমর (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, “হায়েযগ্রস্ত ও নিফাসগ্রস্ত নারী কুরআনের কোন কিছু পড়বে না”। কিন্তু, সে হাদিসটি দুর্বল। কেননা হাদিসটি ইসমাঈল বিন আইয়াশ কর্তৃক হিজাযীদের থেকে বর্ণিত। হিজাযীদের থেকে তার বর্ণনা দুর্বল। তবে, হায়েয বা নিফাসগ্রস্ত নারী মুখস্থ থেকে মুসহাফ (কুরআন-গ্রন্থ) স্পর্শ না করে কুরআন পড়তে পারবে।
আর জুনুবী ব্যক্তি গোসল করার আগ পর্যন্ত কোনভাবে কুরআন পড়তে পারবে না; স্পর্শ করেও না, মুখস্খ থেকেও না। জুনুবী ব্যক্তির সাথে তাদের পার্থক্যটা হল‑ জুনুবী অবস্থা সামান্য কিছু সময় বিরাজ করে। জুনুবী ব্যক্তি স্ত্রী-সহবাস করার পর তাৎক্ষণিকভাবে গোসল করে নিতে পারেন। তাই জুনুবী অবস্থা খুব বেশি সময় দীর্ঘায়িত হয় না এবং বিষয়টি ব্যক্তির নিজের হাতে; যখন ইচ্ছা তখন গোসল করে নিতে পারেন। জুনুবী ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অপারগ হলে তায়াম্মুম করেও নামায পড়তে পারেন এবং কুরআনে কারীম তেলাওয়াত করতে পারেন। পক্ষান্তরে, হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর বিষয়টি তাদের হাতে নয়; বরং তাদের বিষয়টি আল্লাহ্র হাতে। হায়েয ও নিফাস শেষ হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগে। এ কারণে তাদের জন্য কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত জায়েয করা হয়েছে; যাতে করে তারা কুরআনে কারীম ভুলে না যায় এবং যাতে করে কুরআন তেলাওয়াতের ফযিলত ও কুরআন থেকে শরয়ি বিধি-বিধান শেখার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত না হয়। সুতরাং যে সব কিতাবে কুরআন-হাদিস মিশ্রিত দোয়াগুলো রয়েছে তাদের জন্য সে কিতাবগুলো পড়া জায়েয হওয়া আরও অধিক যুক্তিযুক্ত। এটাই সঠিক ও আলেমগণের অভিমতগুলোর মধ্যে সর্বাধিক শুদ্ধ। [শাইখ বিন বায]
দ্বিতীয় আরেকটি প্রশ্ন এসেছে:
প্র: আমি অপবিত্র অবস্থায় উদাহরণত মাসিক অবস্থায় কিছু কিছু তাফসিরগ্রন্থ পড়ি। এতে কি কোন অসুবিধা আছে? এতে কি আমার গুনাহ হবে?
উ: আলেমগণের অভিমতগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সঠিক হচ্ছে- হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারী তাফসিরগ্রন্থগুলো পড়তে কোন অসুবিধা নেই এবং কুরআন-গ্রন্থটি স্পর্শ না করে কুরআনে কারীম পড়তেও কোন অসুবিধা নেই। তবে, জুনুবী ব্যক্তির জন্য গোসল করার আগ পর্যন্ত কুরআনে কারীম পড়া জায়েয নেই। জুনুবী ব্যক্তি তাফসির, হাদিস ও অন্যান্য গ্রন্থগুলো পড়তে পারেন; তবে সেসব গ্রন্থগুলোতে যে সকল আয়াত রয়েছে সেগুলো পড়বেন না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে সাব্যস্ত হয়েছে যে, জুনুবী অবস্থা ছাড়া আর কোন কিছু তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত থেকে দূরে রাখত না। ইমাম আহমাদ কর্তৃক ‘জায়্যিদ সনদে’ বর্ণিত অন্য এক হাদিসের ভাষ্যে রয়েছে যে, “তবে, জুনুবী ব্যক্তি পড়বে না; এমনকি একটি আয়াতও না”। [শাইখ বিন বায]
সূত্র: فتاوى إسلامية 1/239
Question
I like to if a woman is allowed to write Sura in Arabic during mentural cycle.
Answer
Praise be to Allah.
Firstly:
It is permissible for a menstruating woman, and also a woman who is bleeding following childbirth (nifaas) to recite Qur’aan without touching it. For more information please see the answer to question no. 2564.
Secondly:
It is permissible for a menstruating woman, and also a woman who is bleeding following childbirth (nifaas) to write Qur’aanic verses, on the condition that she does not touch the letters, because the prohibition only has to do with touching the Mushaf, and writing is not touching.
It says in al-Jawharah al-Nayyirah, which is a Hanafi book (1/31):
It is makrooh for a person who is junub or a menstruating woman to write down Qur’aan if he or she touches the slate or chalk. But if he or she places it on the ground and writes without putting his or her hand on the written letters, it was nothing wrong with that. End quote.
It is permissible for one who is in a state of impurity, or even a dhimmi, to write it without touching it because the prohibition, as stated above, applies to touching it, and this is not touching.
End quote from Kashshaaf al-Qinaa‘, 1/135
Shaykh Ibn Baaz (may Allah have mercy on him) was asked:
We are female students in the girls’ college and we have to memorise some Qur’aan. Sometimes the tests come during one’s menstrual period. Is it acceptable to write the soorah on a piece of paper and memorise it or not?
He replied:
It is permissible for the woman who is menstruating or bleeding following childbirth to recite Qur’aan according to the more correct of the two scholarly opinions… The same applies to the piece of paper on which Qur’aan is written if necessary.
End quote from Majmoo‘ Fataawa Ibn Baaz, 10/209
Shaykh Ibn ‘Uthaymeen (may Allah have mercy on him) was asked: Is it permissible to write some verses on the chalkboard without having wudoo’? What is the ruling on touching the chalkboard on which those verses are written?
He replied:
It is permissible to write Qur’aan without wudoo’ so long as one does not touch it. As for touching the chalkboard on which those verses are written, the Hanbali fuqaha’ say it is permissible for a boy to touch the slate on which verses have been written in the places that are free of writing, i.e., so long as his hand does not touch the letters – does the chalkboard come under this heading or not? In my view this is a matter for which there is no definite answer.
End quote from Fataawa Ibn ‘Uthaymeen, 11/214
And Allah knows best.
Source: Islam Q&A