গর্ভপাত বা এবরশন(Abortion)
সাধারণত কোনো স্ত্রীর গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট করাকে গর্ভপাত বলে।চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে,
Abortion, the expulsion of a fetus from the uterus before it has reached the stage of viability (in human beings, usually about the 20th week of gestation).
Abortion is when a pregnancy is ended so that it doesn’t result in the birth of a child. Sometimes it is called ‘termination of pregnancy’.
গর্ভপাত হলো কোনো ফিটাস বা ভ্রূণ নিজে নিজে বেঁচে থাকতে সক্ষম হওয়ার আগেই এটিকে অপসারণ করে অথবা মাতৃগর্ভ থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে গর্ভধারণের অবসান ঘটানো।
“An abortion is a procedure to end a pregnancy. It uses medicine or surgery to remove the embryo or fetus and placenta from the uterus.
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিনের কম হয়, তখন ভ্রুণ একটি রক্তপিণ্ড হিসেবে মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। এ সময় পর্যন্ত তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় না।আধুনিক যুগে ভ্রুণ হত্যা জাহেলি যুগে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত সমাধিস্থ করার মতোই। তখন বাবা নিজ মেয়েকে গর্তে পুঁতে ফেলত আর এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে মায়ের পেটেই শিশুকে মেরে ফেলা হচ্ছে।
গর্ভপাত যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকে, কোনো ধরনের কারণ যদি এর মধ্যে না আসে তাহলে এটি হারাম। এটি যে কোনো অবস্থায় বা যত দিনেই হোক না কেন। কারণ যেহেতু একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে সেটাকে ধ্বংস করা আর সেটা যদি মানবভ্রূণ হয়ে থাকে তাহলে কোনো অবস্থাতেই এটি হালাল নয়, যেহেতু রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জা-লিকাল ওয়াদুল খাফি’ অর্থাৎ এটি গোপন হত্যা। এটি গোপনীয়ভাবেই ভ্রূণ হত্যা যেটি সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে।আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,
“যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল?” (সুরা তাকভীর ৮-৯)।
আমাদের সমাজে খুব সহজেই এই ভয়ানক রকমের কাজটি অকপটে করে যাচ্ছে।
অনেক স্বামী স্ত্রী বিয়ের পর, এখনই সন্তান নিবো না বলে পারিবারিক জীবনে যখনই ইচ্ছের বাইরে সন্তান গর্ভে চলে আসে তখনই শুরু হয়ে যায় অস্থিরতা, ডাক্তারের কাছে যেয়ে গর্ভপাত করিয়ে আসেন অথবা ছোট ক্লিনিক বা সেন্টারে, এনজিওর তত্তাবধানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে যেয়ে এটি অল্প খরচে করে আসেন, কোন চেতনাই যেনো কাজ করে না।
আবার সমাজে বিয়ে বহির্ভুত হারাম সম্পর্কিত গর্ভধারনের ফলেও গর্ভপাত করেথাকে অনেকেই।
নির্ধারিত শরীয়তের কারন ছাড়া অন্য যেকোন কারনেই হোক মানব সত্তাকে হত্যা করা হারাম ঘোষনা করা হয়েছে।
আল্লাহ জানিয়েছেন-
নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোন কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো৷ আর যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করলো. মায়েদাঃ ৩২
বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) বলেন, ‘আজ এই পবিত্র দিনে (বিদায় হজের দিন) পবিত্র মাসে এবং পবিত্র (মক্কা) শহরে তোমাদের জন্য যেমন (যুদ্ধবিগ্রহ ও অপকর্ম করা) অবৈধ, তেমনিভাবে তোমাদের জান ও মাল বিনষ্ট করাও অবৈধ।’ (বুখারি : ১৭৪১, মুসলিম : ১৬৭৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারি : ৬৮৭১, মুসলিম : ৮৮)
রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘একজন প্রকৃত মুমিন তার দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ আজাদ ও প্রশান্ত থাকে, যে পর্যন্ত সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়।’ (বুখারি : ৬৮৬২)
‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে তা হলো, রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।’ (বুখারি : ৬৩৫৭)
কেনো ও কখন ভ্রুন হত্যা মানুষ হত্যার সমানঃ
রাসুলুল্লাহ (সা.) মাতৃগর্ভে মানবশিশু জন্মের স্তর সম্পর্কে বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন, জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠান এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) আমল, রিজিক, আয়ুকাল ও ভালো না মন্দ সব লিপিবদ্ধ কর। অতঃপর তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৬৮)
আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করেন। ফেরেশতা বলেন, হে রব! এখনো তো ভ্রূণ মাত্র। হে রব! এখন জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। হে রব! এবার গোশতের টুকরায় পরিণত হয়েছে। আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান, তখন ফেরেশতা বলেন, হে আমার রব! (সন্তানটি) ছেলে না মেয়ে হবে, পাপী না নেককার, রিজিক কী পরিমাণ ও আয়ুকাল কত হবে? অতএব এভাবে তার তাকদির মাতৃগর্ভেই লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৮৭)
তাহলে জানা যাচ্ছে ১২০ দিনে রুহ ফুকে দেয়া হয় অর্থাৎ ৪ মাস বয়সি ফিটাস হলে সে তখন পূর্ণ মানুষের বিধানের আওতায় চলে আসে।
আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘‘আর অবশ্যই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে তারপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ ভাণ্ডারে। পরে আমরা শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি ‘আলাকা’তে, অতঃপর ‘আলাকা’কে পরিণত করি মাংসপিণ্ডে, অতঃপর মাংসপিণ্ডকে পরিণত করি অস্থিতে; অতঃপর অস্থিকে ঢেকে দিই গোশত দিয়ে; তারপর তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব, (দেখে নিন) সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়।’’ (সুরা মুমিনুন: ১২-১৪)
‘তোমাদের সৃষ্টি করেছি তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে।’ (সুরা যুমার: ৬)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘শুক্রবিন্দু থেকে, তিনি তাকে সৃষ্টি করেন, পরে তার পরিমিত বিকাশ সাধন করেন, তারপর তার জন্য পথ সহজ করে দেন।’ (সুরা আবাসা : ১৯-২০)
মহান আল্লাহ পৃথিবীতে কোন শিশুকে পাঠাবেন তা পরিকল্পনা করেই রেখেছেন। এর জন্য সুস্থ সুন্দর নিরাপদ ব্যবস্থাপনাও দিয়েছেন। দুনিয়ার জীবন পরীক্ষা ক্ষেত্র। এখানে স্বামী স্ত্রীকেও মনে রাখতে হবে যে, সন্তান নিজেরা নেয়ার বা না নেয়ার ক্ষমতা রাখেন না বরং মহান আল্লাহ যিনি একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী সেই সৃষ্টিকর্তা যাকে চাইবেন তাকেই দান করবেন।যাকে সন্তান দিতে চাইবেন না, দিবেন না।
অনেকেই এই কথা চিন্তা করে গর্ভের সন্তানকে নষ্ট (গর্ভপাত) করে ফেলে যে খাওয়াতে পড়াতে পারবে না, মানুষ করতে পারবে না ইত্যাদি। অথচ এই বিষয়টি সুস্পষ্ট করে আল্লাহ জানিয়েছেন-
আল্লাহ তাআলা সকল মাখলুকের রিযিক নিশ্চয়তা দানকারী। তিনি বলেন: “আর পৃথিবীতে বিচরণশীল যে কারো রিযিক আল্লাহর উপর” [সূরা হুদ: ৬]
আল্লাহ তাআলা বলেন: “দারিদ্রের কারণে সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দেই।”[সূরা আনআম: ১৫১]
“আমি পৃথিবীতে তোমাদের জন্যও রিজিকের ব্যবস্থা করেছি এবং তাদের জন্যও যাদের রিজিকদাতা তোমরা নও, এমন কোনো বস্তু নেই যার ভাণ্ডার আমার কাছে নেই, যার থেকে আমি এক পরিকল্পিত হিসাব অনুসারে বিভিন্ন সময়ে রিজিক নাজিল করে থাকি। (সুরা হিজরঃ২০-২১)
“দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই রিযিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহা অপরাধ।”[সূরা বনী ইসরাইল: ৩১]
১টি বা ২টি সন্তানেই সীমাবদ্ধ রাখার যথাসাধ্য ব্যবস্থা নিতে চায় বর্তমান সমাজে। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ হচ্ছে: “তোমরা প্রেমময়ী ও অধিক সন্তানপ্রসবা নারীকে বিয়ে কর। কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করবো।[সুনানে আবু দাউদ, (২০৫০), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (১৭৮৪) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
কুর’আনে হত্যা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে–
কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত হতে পারে৷আর যে ব্যক্তি ভুলবশত কোন মুমিনকে হত্যা করে তার কাফ্ফারা হিসেবে একজন মুমিনকে গোলামী থেকে মুক্ত করে দিতে হবে এবং নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে রক্ত মূল্য দিতে হবে তবে যদি তারা রক্ত মূল্য মাফ করে দেয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা৷ কিন্তু যদি ঐ নিহত মুসলিম ব্যক্তি এমন কোন জাতির অন্তরভুক্ত হয়ে থাকে যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে তাহলে একজন মুমিন গোলামকে মুক্ত করে দেয়াই হবে তার কাফ্ফারা ৷ আর যদি সে এমন কোন অমুসলিম জাতির অন্তরভুক্ত হয়ে থাকে যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে তাহলে তার ওয়ারিসদেরকে রক্ত মূল্য দিতে হবে এবং একজন মুমিন গোলামকে মুক্ত করে দিতে হবে৷ আর যে ব্যক্তি কোন গোলাম পাবে না তাকে পরপর দুমাস রোযা রাখতে হবে ৷ এটিই হচ্ছে এই গোনাহের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে তাওবা করার পদ্ধতি । আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানময়৷
সুরা আন নিসাঃ৯২
হাদিসে এসেছে- “হত্যাকৃত ব্যক্তি কিয়ামতের দিবসে হত্যাকারীর মাথার অগ্রভাগ নিজ হাতে ধরে এমনভাবে নিয়ে আসবে যে হত্যাকারীর গলার রগসমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। তখন হত্যাকৃত ব্যক্তি এ কথা বলতে বলতে হত্যাকারীকে আরশের কাছে নিয়ে আসবে ‘হে প্রভু! সে আমাকে হত্যা করেছে।'” (মুসনাদে আহমদ : ২৫৫১, তিরমিজি : ২৯৫৫)
হতে পারে একটা জিনিস তোমরা পছন্দ করো না কিন্তু আল্লাহ তার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন৷সুরা নিসাঃ১৯
হতে পারে কোন জিনিস তোমরা পছন্দ করো অথচ তা তোমাদের জন্য খারাপ ৷ আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না ৷সূরা বাকারাঃ২১৬
ইচ্ছে করে যদি কেউ গর্ভপাত করে থাকেন যা কোন শরীয়ত সম্মত কারন ছাড়া(মায়ের জীবন রক্ষার হুমকী) ভ্রুন গর্ভপাত করে থাকেন সেইক্ষেত্রে দুটি অবস্থা জানা যায়ঃ
১। যদি ১২০ দিনের আগে অর্থাৎ ৪মাসের আগের ফিটাস কোন মেডি্সিন বা যন্ত্রপাতি দিয়ে বা সার্জিক্যাল পদ্ধতিতে গর্ভপাত করে থাকেন সেই ক্ষেত্রেও এটা গুনাহ হবে।
গর্ভ যদি প্রথম পর্যায়ে থাকে, যার বয়স চল্লিশ দিন, আর গর্ভপাত করার কারণ যদি হয় সন্তান লালন-পালন করার কষ্ট অথবা তাদের ভরণ-পোষণ করার দুশ্চিন্তা অথবা ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তা অথবা যে সন্তান আছে তাদেরকে যথেষ্ট জ্ঞান করা, তাহলে বৈধ নয়।
যদি নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি টিম বলে যে, গর্ভ থাকলে মায়ের জীবনের আশঙ্কা আছে তাহলে বৈধ, তবে এটা অবশ্যই গর্ভধারী মাকে শঙ্কামুক্ত করার সকল প্রচেষ্টা প্রয়োগ শেষে হতে হবে।
২। যদি ১২০দিন পর অর্থাৎ ৪মাস পর যখন রুহ ফুকে দেয়া হয়েছে সেই গর্ভের শিশুটিকে যেকোন পদ্ধতিতেই যদি গর্ভপাত করা হয় সেটাকে বলা হয়েছে একজন মানুষ হত্যা করার সমান অবস্থা।
সকল ফিকাহবিদ একমত যে রূহ ফুঁকে দেয়ার পর ভ্রুণ একজন পূর্ণ মানুষ ও একটি প্রাণের রূপ ধারণ করে; যার ক্ষেত্রে একটি প্রাণের মর্যাদা ও সম্মান সাব্যস্ত হবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি…”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত:৭০] আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: “যে ব্যক্তি কোন প্রাণের বদলে প্রাণ হত্যার অপরাধ ব্যতিরেকে কিংবা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ব্যতিরেকে কোন মানুষকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল; আবার কেউ যদি কারো জীবন রক্ষা করে সে যেন সব মানুষেরই জীবন রক্ষা করল।…”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩২]
রূহ ফুঁকে দেয়ার পর গর্ভপাত করা হারাম হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে মর্মে মালেকি মাযহাবের ফিকাহবিদ ইবনে জুযাই তাঁর ‘আল-কাওয়ানিন আল-ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন: “যদি গর্ভাশয় বীর্য ধারণ করে নেয় তখন সেটাকে নষ্ট করা জায়েয নয়। আকৃতি হয়ে গেলে বিষয়টি আরও জঘন্য হয়। আর রূহ ফুঁকে দেয়ার পর বিষয়টি আরও জঘন্য হয়ে যায়। বরং সেটা ইজমার ভিত্তিতে প্রাণ হত্যা।”[আল-কাওয়ানিন আল-ফিকহিয়্যা (পৃষ্ঠা-১৪১)]
অনুরূপভাবে নিহায়াতুল মুহতাজ গ্রন্থে এসেছে: “… রূহ ফুঁকে দেয়ার সময় ঘনিয়ে এলে হারাম হওয়ার দিকটি আরও জোরালো হয়। কেননা সেটি একটি অপরাধ। এরপর যদি মানবাকৃতি ধারণ করে এবং ধাত্রীরা হাত দিয়ে নাগাল পায় এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়; সে ক্ষেত্রে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা ওয়াজিব।”[নিহায়াতুল মুহতাজ (৮/৪৪২)]
আল-বাহরুর রায়েক গ্রন্থে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে ভ্রুণের কিছু আকৃতি ফুটে উঠেছে সে ভ্রুণকে সন্তান হিসেবে গণ্য করা হবে। আল-বিনায়া গ্রন্থের গ্রন্থাকার বলেন: “যদি ভ্রুণের কিছু আকৃতি প্রকাশিত হয় সেক্ষেত্রে উক্ত ভ্রুণকে নষ্ট করা জায়েয নয়। যদি রক্তপিণ্ড ও রক্ত থেকে আলাদা রূপ ধারণ করে তখন সেটা প্রাণ হয়ে যায়। প্রাণ হেফাযত করা ইজমার ভিত্তিতে ও কুরআনুল কারীমের প্রত্যক্ষ দলিলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
গর্ভের বাচ্চা হত্যাকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, যদিও তার পরিমাণ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কতক আহলে ইলম বলেন, কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব। অর্থাৎ মুমিন দাসী মুক্ত করা, যদি মুমিন দাসী পাওয়া না যায় লাগাতার দু’মাস সিয়াম রাখবে। কতক আহলে ইলম গর্ভের বাচ্চা হত্যাকে এক প্রকার জ্যান্ত দাফন গণ্য করেছেন। শাইখ মুহাম্মাদ ইবরাহীম (রা.) বলেন, গর্ভে থাকা বাচ্চা ফেলে দেওয়া হালাল নয়, যদি তার মৃত্যু নিশ্চিত না হয়, মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফেলে দিবে। [ফতোয়াসমগ্র: ১১/১৫১]
রক্তমূল্য বা দিয়াত বলা হয়- একজন দাস বা দাসী মুক্ত করা, এটা সম্ভব না হলে ৫টি উট বা সমমূল্য কারন একজন সন্তানের দিয়াত হলো মায়ের দিয়াতের দশ ভাগের একভাগ। মুক্ত মুসলিম নারীর জন্য দিয়াত হলো ৫০টি উট।
কাফ্ফারার’ শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, ”গোপন বস্তু” ৷ কোন সৎকাজকে গোনাহের কাফ্ফারা গণ্য করার অর্থ হচ্ছে এই যে, এই নেকীটি ঐ গোনাহের ওপর ছেয়ে যায় এবং তাকে ঢেকে ফেলে ৷ যেমন কোন দেয়ালের গায়ে দাগ লেগে গেলে চুনকাম করে দাগ মিটিয়ে দেয়া হয়৷
ভুলবশত কেউ যদি কাউকে হত্যা করে ফেলে তাহলে ইসলাম এক্ষেত্রে কাফফারার বিধান রেখেছে। কাফফারার দুটি অংশ রয়েছে। যথা:
প্রথমত, একজন মুসলমান দাস বা দাসী আযাদ করে দেওয়া। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে লাগাতার দুইমাস রোযা রাখা।
দ্বিতীয়ত, দিয়াত তথা আর্থিক ক্ষতিপূরণ। আর তা হল, ১০০ উট বা ২০০ গরু বা ২ হাজার বকরি। আর মূল্যের মাধ্যমে দিলে দশ হাজার দিরহাম বা তার সমপরিমাণ মূল্য(এক দিরহাম=২.৯৭৫ গ্রাম রূপা) বা এক হাজার দিনার বা তার সমপরিমাণ মূল্য (এক দিনার=৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ) নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারিদের দিতে হবে
Expiation of self abortion.
https://www.youtube.com/watch?v=KF8lkswEWgw
Question-১
you will be able to answer my question. I would like to know, besides repenting to Allah, is there a certain punishment a sister in Islam should receive for having an Abortion? And,if so, who carries out the punishment?
Answer
Praise be to Allah.
She has to repent for deliberately aborting her pregnanacy after it had been created, because aborting it is haraam and is not allowed. Once pregnancy is known, it has to be protected and it is haraam for the mother to harm it in any way, because it is a trust which Allaah has placed in her womb, and it has rights. So it is not permitted to treat it badly or to abort it.
Shaykh al-Fawzaan said: if the soul has been breathed into the foetus and it has started to move, then the woman aborts it after that and it dies, then she is considered to have killed a soul and she is obliged to offer the kafaarah (expiation), which is freeing a slave. If she cannot do that, then she has to fast for two consecutive months and repent to Allaah. That is if the pregnancy was over four months, because in that case the soul has been breathed into it. So if she aborts it after that time, then she has to offer kafaarah as we have menioned. This is a serious matter and it is not permissible to take it lightly. And Allaah knows best
See al-Fataawa al-Jaami’ah li’l-Mar’ah al-Muslimah, 3/1052
Question-২
A woman is pregnant and has had several scans, which show that there are deformities in the foetus. Is it permissible to abort it?.
Answer
Praise be to Allah.
Firstly: We have already stated in the answer to question no. 12118 the ruling on aborting a foetus that is physically deformed, and that this is permissible before the soul is breathed into the foetus, i.e., before 120 days of pregnancy have passed. This is allowed after exhausting all possible means of treating the problem. But after the soul has been breathed into the foetus it is not permissible to abort it because of deformity.
The parents have to be patient and accept the will and decree of Allaah, and remember the words of Allaah (interpretation of the meaning):
“and it may be that you dislike a thing which is good for you and that you like a thing which is bad for you. Allaah knows but you do not know”[al-Baqarah 2:216]
“it may be that you dislike a thing and Allaah brings through it a great deal of good”[al-Nisa’ 4:19]
And the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “How wonderful is the affair of the believer, for all his affairs are good, and that applies to no one but the believer. If something good happens to him he gives thanks and that is good for him, and if something bad happens to him he bears it with patience and that is good for him.” Narrated by Muslim, 2999.
Secondly: Here we will add something from a fatwa of the Standing Committee concerning this matter.
The Standing Committee was asked about aborting a pregnancy in the fifth month, after scans proved that the foetus was deformed and the top of the skull was absent.
They replied:
It is not permissible to abort the foetus because of the deformity mentioned in the question. Allaah may heal the foetus during the remainder of the pregnancy, and it may be born normal and healthy, as has happened to many people.
Fataawa al-Lajnah al-Daa’imah, 21/440.
They were also asked about a pregnant woman who was treated for cancer with radiotherapy, which would affect the foetus and cause it to be born deformed – is it permissible to abort it?
They replied:
It is not permissible to abort the foetus which it is feared may be deformed. Rather the matter should be left to the will of Allaah; it may be free of deformity.
Fataawa al-Lajnah al-Daa’imah, 21/249.
They were also asked about a woman in the fifth month of pregnancy; scans had shown the presence of several deformities in the foetus which made the doctors sure that it would die after birth. These deformities were as follows: a deformity in the heart, a severe deformity of the spinal cord and spinal column, the size of the head is very small, there is a large sac between the head and body that is bigger than the head, the intestines are outside the abdominal cavity, and there is a deformity in the brain. Is it permissible to abort it?
They replied:
After studying the question, the Committee replied that it is not permissible to abort this pregnancy, because often the doctor’s reports are speculative, and the basic principle is that the foetus must be respected and it is forbidden to abort it, because Allaah may make the foetus whole during the remainder of the pregnancy, so it may be born free of the things that the doctors mentioned, even if what they said was correct. We must think positively of Allaah and ask Him to heal him and make him whole, and to cause him to be born healthy. His parents have to fear Allaah and ask Him to heal him from all ills and to delight them with a healthy child. The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “Allaah says: ‘I am as My slave thinks I am.’”
Fataawa al-Lajnah al-Daa’imah, 21/250-251.
They were also asked about a woman in the fifth month of pregnancy, whose foetus has some deformities which expose the mother’s life to danger. Is it permissible to abort it?
They replied:
After studying the question, the Committee replied that if the situation is as described, and continuation of the pregnancy to full term will result in danger to the mother’s life, then there is nothing wrong with aborting the pregnancy before it reaches full term, in order to protect the mother’s life. But if the abortion is because of the deformities only, then it is not permissible to abort the pregnancy.
Fataawa al-Lajnah al-Daa’imah, 21/452.
Question-3
We live in a foreign country. A neighbour of ours became pregnant whilst nearly in the fifth month. Doctors told her that the foetus is deformed and that if he lives he will be disabled. They performed an abortion and buried the foetus in a forest as a grave here is very expensive. What is the ruling on this?.
Answer-
Praise be to Allah.
Firstly:
It is not permissible to abort the foetus once four months have passed, even if it is deformed. See the answer to question no. 12118.
Secondly:
If a pregnant woman aborts her foetus by taking medicine and the like after four months of pregnancy, then the diyah must be paid according to scholarly consensus, and the kafaarah (expiation) must be offered according to some of the scholars.
The diyah (blood money) in this case is a slave, male or female. If that is not possible, then the diyah is five camels, because the diyah for a foetus is one tenth of the diyah for his mother, and it well known that the diyah for a free Muslim woman is fifty camels, so the diyah for the foetus is five camels.
This diyah is required from everyone who had anything to do with the abortion of the foetus, so the doctor and the woman must both pay it if she took the medicine to help induce the abortion. The diyah should be paid to the heirs of the foetus, but his killer should not take any of it.
The evidence for that is the report narrated by al-Bukhaari (6910) and Muslim (1681) from Abu Hurayrah (may Allaah be pleased with him) who said: Two women from Hudhayl fought and one of them threw a rock at the other and killed her and the child in her womb. They referred the matter to the Prophet SAWS (peace and blessings of Allaah be upon him) and he ruled that the diyah for her foetus was a slave, male or female.
With regard to expiation, the Shaafa’is and Hanbalis are of the view that it is obligatory, and the Hanafis and Maalikis are of the view that it is mustahabb. The expiation for killing is to free a slave; if that is not possible then one must fast for two consecutive months.
Ibn Qudaamah (may Allaah have mercy on him) said: If the pregnant woman takes medicine then aborts the foetus, then she must give a slave, and she does not inherit anything of this diyah, and she should manumit a slave. There is no difference of opinion concerning this among the scholars whom we know, apart from the view of those who say that it is not obligatory to manumit a slave. That is because she aborted the foetus by her own actions, so she must offer compensation by giving a slave, just as if someone else had transgressed against her. And she does not inherit any share of the slave, because the killer does not inherit from the slain. The slave should be for the rest of his heirs, and she also has to free a slave. End quote from al-Mughni (8/327).
He also said: If a number of people took part in beating the woman and she miscarried the foetus, then the diyah or slave must be given by them all, each contributing a share, and each of them must offer expiation, the same as if a group of people participate in killing one man. If she miscarries several foetuses then they must all contribute to the diyah, and each one must offer expiation for each foetus. If three people strike the woman’s stomach, and she miscarries three foetuses, then they must offer nine expiations in all, each one offering three. End quote from al-Mughni (8/326).
And he said: The value of the slave is half of one-tenth of the diyah, which is five camels. That was narrated from ‘Umar and Zayd (may Allaah be pleased with them). This was also the view of Maalik, al-Shaafa’i and ashaab al-ra’y. End quote.
Thirdly:
If the mother called for the abortion and the doctor did it, then they are undoubtedly partners in this crime, but the scholars differed as to which of them should pay the blood money and offer the expiation.
The correct view is that it is the one who actually did it, because he is the killer in the true sense. This is the view of Imam Ahmad (may Allaah have mercy on him).
See: Mataalib Ooli’l-Nuha (6/50).
Some of the scholars, such as the Shaafa’is, are of the view that the mother is responsible (so she should pay the diyah and offer expiation). See: Asna’l-Mataalib (4/39).
Shaykh Ibn ‘Uthaymeen (may Allaah have mercy on him) favoured the first view and regarded it as more likely to be correct.
Fourthly:
There is nothing wrong with burying the foetus in the forest if you cannot buy a grave for him. This has been discussed in the answer to question no. 98064.
Question-4
What is the ruling on a husband who tries to make his wife abort against her wishes in the second month of pregnancy because he wants to divorce her, by giving her medicine that will cause that to happen, even though he did not manage to bring about an abortion? Is that halaal or haraam? What is the expiation for doing that?.
Answer
Praise be to Allah
Aborting a pregnancy is not permissible, whether the soul has been breathed into the embryo or not, but if that is after the soul has been breathed in, the prohibition is more emphatic.
If a husband tells his wife to abort a pregnancy, it is not permissible for her to obey him.
Shaykh Muhammad ibn Ibraaheem (may Allaah have mercy on him) said:
Trying to abort a pregnancy is not permissible if it is not proven that the foetus has died; if that is proven then it is permissible.
Majmoo’ Fataawa al-Shaykh Ibn Ibraaheem, 11/151
Shaykh Saalih al-Fawzaan (may Allaah preserve him) said:
Firstly:
It is not permissible to abort a pregnancy. Once pregnancy is discovered, it must be protected and it is haraam for the mother to harm the pregnancy or disturb it in any way, because it is a trust that Allaah has placed in her womb and it has rights, so it is not permissible to mistreat it, harm it or destroy it.
The shar’i evidence indicates that it is haraam to abort a pregnancy.
The fact that a baby cannot be born without an operation is no excuse for abortion; many women only give birth by means of an operation (i.e., caesarian), so this is no excuse for aborting the pregnancy.
Secondly:
If the soul has been breathed into the foetus and it has started to move, then it is aborted after that and it dies, then (the woman) is regarded as having killed a soul and she is obliged to offer expiation by freeing a slave; if that is not possible, then she must fast for two consecutive months in repentance to Allaah. That is if four months of pregnancy have passed, because in that case the soul has been breathed into the foetus. If it is aborted after that, then kafaarah (expiation) as described must be offered. This is a serious matter which cannot be taken lightly. If a woman cannot bear a pregnancy for reasons of sickness, then she has to take medication to prevent getting pregnant in the first place; she may take contraceptive pills to delay getting pregnant for a while, until she regains her health and strength. Al-Muntaqa, 5/301-302
Question-5
Shaykh al-Islam Ibn Taymiyah (may Allaah have mercy on him) was asked about a man who said to his wife: “Abort what is in your womb and the sin will be on me.” If she does that and listens to him, what expiation will they have to offer?
He replied:
If she does that, then they both have to offer expiation by freeing a believing slave; if that is not possible then they have to fast for two consecutive months and they have to give a male or female slave to the heir that did not take part in the killing, and not to the father, because the father is the one who ordered that he be killed, so he does not deserve anything.
“A male or female slave” is the diyah (blood money) for the foetus, i.e., the value of a male or female slave, which the scholars stated is equivalent to one-tenth of the diyah for his mother.
We have already discussed the ruling on abortion in more than one answer. Please see questions no. 13317, 42321, 12733.
With regard to the expiation for that, because the pregnancy was in the second month or before the soul had been breathed into the foetus, and the abortion did not take place, then no expiation is required. But what is required is repentance to Allaah from this haraam action. And Allaah knows best.
What should a woman who deliberately aborts her foetus do (to expiate for her sin)?
Question-6
you will be able to answer my question. I would like to know, besides repenting to Allah, is there a certain punishment a sister in Islam should receive for having an Abortion? And,if so, who carries out the punishment?
Answer
Praise be to Allah.
She has to repent for deliberately aborting her pregnanacy after it had been created, because aborting it is haraam and is not allowed. Once pregnancy is known, it has to be protected and it is haraam for the mother to harm it in any way, because it is a trust which Allaah has placed in her womb, and it has rights. So it is not permitted to treat it badly or to abort it.
Shaykh al-Fawzaan said: if the soul has been breathed into the foetus and it has started to move, then the woman aborts it after that and it dies, then she is considered to have killed a soul and she is obliged to offer the kafaarah (expiation), which is freeing a slave. If she cannot do that, then she has to fast for two consecutive months and repent to Allaah. That is if the pregnancy was over four months, because in that case the soul has been breathed into it. So if she aborts it after that time, then she has to offer kafaarah as we have menioned. This is a serious matter and it is not permissible to take it lightly. And Allaah knows best.
See al-Fataawa al-Jaami’ah li’l-Mar’ah al-Muslimah, 3/1052
পাঁচমাসের ভ্রুণকে গর্ভপাত করার হুকুম কী?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
সুন্নাহ্র অনুসারী মাযহাবসমূহের ফিকাহবিদগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, রূহ ফুঁকে দেয়ার পর তথা গর্ভধারণের পর ১২০ দিন পার হয়ে গেলে গর্ভস্থিত ভ্রুণকে হত্যা করা হারাম। কোন অবস্থায় এ ভ্রুণকে হত্যা করা জায়েয হবে না; তবে এই গর্ভ ধারণ অব্যাহত রাখার ফলে মায়ের মৃত্যু ঘটতে পারার অবস্থা ছাড়া।
রূহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে গর্ভপাত করা নিয়ে ফিকাহবিদদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু সকল ফিকাহবিদ একমত যে রূহ ফুঁকে দেয়ার পর ভ্রুণ একজন পূর্ণ মানুষ ও একটি প্রাণের রূপ ধারণ করে; যার ক্ষেত্রে একটি প্রাণের মর্যাদা ও সম্মান সাব্যস্ত হবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি…”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত:৭০] আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: “যে ব্যক্তি কোন প্রাণের বদলে প্রাণ হত্যার অপরাধ ব্যতিরেকে কিংবা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ব্যতিরেকে কোন মানুষকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল; আবার কেউ যদি কারো জীবন রক্ষা করে সে যেন সব মানুষেরই জীবন রক্ষা করল।…”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩২]
রূহ ফুঁকে দেয়ার পর গর্ভপাত করা হারাম হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে মর্মে মালেকি মাযহাবের ফিকাহবিদ ইবনে জুযাই তাঁর ‘আল-কাওয়ানিন আল-ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন: “যদি গর্ভাশয় বীর্য ধারণ করে নেয় তখন সেটাকে নষ্ট করা জায়েয নয়। আকৃতি হয়ে গেলে বিষয়টি আরও জঘন্য হয়। আর রূহ ফুঁকে দেয়ার পর বিষয়টি আরও জঘন্য হয়ে যায়। বরং সেটা ইজমার ভিত্তিতে প্রাণ হত্যা।”[আল-কাওয়ানিন আল-ফিকহিয়্যা (পৃষ্ঠা-১৪১)]
অনুরূপভাবে নিহায়াতুল মুহতাজ গ্রন্থে এসেছে: “… রূহ ফুঁকে দেয়ার সময় ঘনিয়ে এলে হারাম হওয়ার দিকটি আরও জোরালো হয়। কেননা সেটি একটি অপরাধ। এরপর যদি মানবাকৃতি ধারণ করে এবং ধাত্রীরা হাত দিয়ে নাগাল পায় এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়; সে ক্ষেত্রে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা ওয়াজিব।”[নিহায়াতুল মুহতাজ (৮/৪৪২)]
আল-বাহরুর রায়েক গ্রন্থে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে ভ্রুণের কিছু আকৃতি ফুটে উঠেছে সে ভ্রুণকে সন্তান হিসেবে গণ্য করা হবে। আল-বিনায়া গ্রন্থের গ্রন্থাকার বলেন: “যদি ভ্রুণের কিছু আকৃতি প্রকাশিত হয় সেক্ষেত্রে উক্ত ভ্রুণকে নষ্ট করা জায়েয নয়। যদি রক্তপিণ্ড ও রক্ত থেকে আলাদা রূপ ধারণ করে তখন সেটা প্রাণ হয়ে যায়। প্রাণ হেফাযত করা ইজমার ভিত্তিতে ও কুরআনুল কারীমের প্রত্যক্ষ দলিলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
এ আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে গেল যে, রূহ ফুঁকে দেয়ার পর গর্ভপাত করা একটি অপরাধ। একান্ত সুনিশ্চিত জরুরী অবস্থা ছাড়া গর্ভপাত করা বৈধ নয়। সে জরুরী অবস্থাটা হলো গর্ভধারণ অব্যাহত রাখাটা মায়ের জীবনের জন্য হুমকিজনক হওয়া। উল্লেখ্য, আধুনিক চিকিৎসা উপকরণের অগ্রগতি ও বস্তুগত বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ফলে বর্তমানে মায়ের জীবন রক্ষা করার জন্য গর্ভপাত করার বিষয়টি একেবারেই বিরল।
সূত্র: উমর বিন মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আমের রচিত ‘আহকামুল জানিন ফিল ফিকহিল ইসলামী’
মুমিন নারী, আল্লাহ তোমার রেহেমে যা সৃষ্টি করেন তার ব্যাপারে তুমি আমানতদার। অতএব, তুমি আমানত গোপন করো না। আল্লাহ তাআলা বলেন, এবং তাদের জন্য হালাল হবে না যে, আল্লাহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন, তা তারা গোপন করবে, যদি তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮]
গর্ভপাত ঘটানো বা যেভাবে হোক তার থেকে নিষ্কৃতি পেতে বাহানা করো না। কারণ, আল্লাহ তোমার জন্য রমযানের পানাহার বৈধ করেছেন যদি সিয়াম তোমার জন্য ক্ষতিকর হয়। যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ সঞ্চার করা হয় এবং গর্ভপাত ঘটানোর ফলে মারা যায়, তাহলে এটা অন্যায় হত্যার শামিল, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। গর্ভের বাচ্চা হত্যাকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, যদিও তার পরিমাণ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কতক আহলে ইলম বলেন, কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব।অর্থাৎ মুমিন দাসী মুক্ত করা, যদি মুমিন দাসী পাওয়া না যায় লাগাতার দু’মাস সিয়াম রাখবে।কতক আহলে ইলম গর্ভের বাচ্চা হত্যাকে এক প্রকার জ্যান্ত দাফন গণ্য করেছেন। শাইখ মুহাম্মাদ ইবরাহীম (রা.) বলেন, গর্ভে থাকা বাচ্চা ফেলে দেওয়া হালাল নয়, যদি তার মৃত্যু নিশ্চিত না হয়, মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফেলে দিবে। [ফতোয়াসমগ্র: ১১/১৫১]
‘বড় আলেমদের সংস্থা’র সভায় গর্ভপাত ঘটানোর ব্যাপারে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়:
১. শরঈ দু একটি কারণ ব্যতীত গর্ভের কোনো পর্যায়ে বাচ্চা ফেলা বৈধ নয়।
২. গর্ভ যদি প্রথম পর্যায়ে থাকে, যার বয়স চল্লিশ দিন, আর গর্ভপাত করার কারণ যদি হয় সন্তান লালন-পালন করার কষ্ট অথবা তাদের ভরণ-পোষণ করার দুশ্চিন্তা অথবা ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তা অথবা যে সন্তান আছে তাদেরকে যথেষ্ট জ্ঞান করা, তাহলে বৈধ নয়।
৩. জমাট বাঁধা রক্ত অথবা গোশতের টুকরা থাকা অবস্থায় গর্ভপাত ঘটানো বৈধ নয়,হ্যাঁ যদি নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি টিম বলে যে, গর্ভ থাকলে মায়ের জীবনের আশঙ্কা আছে তাহলে বৈধ, তবে এটা অবশ্যই গর্ভধারী মাকে শঙ্কামুক্ত করার সকল প্রচেষ্টা প্রয়োগ শেষে হতে হবে।
৪. গর্ভ যদি তৃতীয় স্তর পার করে ও তার চার মাস পূর্ণহয়, তাহলে গর্ভপাত করা বৈধ নয়, তবে একদল বিশেষজ্ঞ নির্ভরযোগ্য ডাক্তার যদি বলে যে, পেটে বাচ্চা থাকলে মায়ের মৃত্যুর সমূহ আশঙ্কা রয়েছে তাহলে বৈধ। আরঅবশ্যইএটা হতে হবে বাচ্চার জীবন রক্ষা করার সকল প্রচেষ্টা ব্যয় শেষে। এ সুযোগ প্রদান করা হয়েছে দু’টি ক্ষতি থেকে ছোট ক্ষতি দূর করা ও দু’টি কল্যাণ থেকে বড় কল্যাণ অর্জন করার স্বার্থে।
আলেমগণ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেষে আল্লাহর তাকওয়া ও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ একমাত্র তাওফিক দাতা। আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তার পরিবার ও সাথীদের ওপর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন। নারীদের স্বাভাবিক ঋতু সংক্রান্ত পুস্তিকায়, (পৃ.৬০) শাইখ মুহাম্মাদ উসাইমীন (রা.) বলেন, যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ আসার পর গর্ভপাত করে সন্তান নষ্ট করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে হারাম। কারণ এটা অন্যায়ভাবে প্রাণ হত্যার শামিল, নির্দোষ প্রাণকে হত্যা করা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ঐকমত্যে হারাম। ইবনুল জাওযী (রা.) আহকামুন নিসা (পৃ.১০৮ ও ১০৯) গ্রন্থে বলেন, বিবাহের উদ্দেশ্য যখন সন্তান হাসিল করা, আর এটাও সত্য যে সকল বীর্যথেকে সন্তান হয় না,অতএব স্ত্রীর পেটে সন্তান আসলে বিবাহের উদ্দেশ্য হাসিল হলো, তারপর গর্ভপাত ঘটানো বিবাহের হিকমত পরিপন্থী। গর্ভপাত যদি গর্ভের বাচ্চায়রূহ সঞ্চার করার পূর্বে হয় বড় পাপ, আর যদি রূহ সঞ্চার করার পর গর্ভপাত করা হয় সেটা হবে মুমিন নফসকে হত্যা করার মতো। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যখন জ্যান্ত দাফনকৃত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছে। [সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ৮-৯] অতএব, হে মুসলিম নারী আল্লাহকে ভয় কর, যে কোনো উদ্দেশ্যই হোক এ জাতীয় অপরাধে অগ্রসর হয়ো না। পথভ্রষ্টদের প্রচারণা ও পাপাচারীদের অনুসরণ করে ধোঁকায় পতিত হয়ো না, তাদের কর্মের সাথে বিবেক ও দীনের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভুলবশত কেউ যদি কাউকে হত্যা করে ফেলে তাহলে ইসলাম এক্ষেত্রে কাফফারার বিধান রেখেছে। কাফফারার দুটি অংশ রয়েছে। যথা:
প্রথমত, একজন মুসলমান দাস বা দাসী আযাদ করে দেওয়া। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে লাগাতার দুইমাস রোযা রাখা।
দ্বিতীয়ত, দিয়াত তথা আর্থিক ক্ষতিপূরণ। আর তা হল, ১০০ উট বা ২০০ গরু বা ২ হাজার বকরি। আর মূল্যের মাধ্যমে দিলে দশ হাজার দিরহাম বা তার সমপরিমাণ মূল্য(এক দিরহাম=২.৯৭৫ গ্রাম রূপা) বা এক হাজার দিনার বা তার সমপরিমাণ মূল্য (এক দিনার=৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ) নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারিদের দিতে হবে।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلَّا خَطَأً وَمَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ إِلَّا أَنْ يَصَّدَّقُوا فَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ عَدُوٍّ لَكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِنَ اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
‘আর কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত (হলে ভিন্ন কথা)। যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে দিতে হবে না)। আর সে যদি তোমাদের শত্রু কওমের হয় এবং সে মুমিন, তাহলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি এমন কওমের হয় যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে তাহলে দিয়াত দিতে হবে, যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিবারের কাছে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করতে হবে। তবে যদি না পায় তাহলে একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৯২]
হেদায়া ৪/৪৬০; রাওয়াইয়ুল বয়ান ফি তাফসিরি আয়াতিল আহকাম ১/৩৬০
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
https://www.facebook.com/sheikhahmadullahofficial/videos/614633969258516
https://www.facebook.com/watch/?v=614633969258516