শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ এবং ছওয়াবের আশায় মানুষ ক্ববর যিয়ারত করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ক্ববর যিয়ারত কর। কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়’[. ইমাম মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘তোমরা ক্ববর যিয়ারত কর। কেননা তা মরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়’ (‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৬)।
. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৬।
যাহোক, ক্ববর যিয়ারত দুই ধরনেরঃ
১. নির্দিষ্টভাবে কোন এক ব্যক্তির ক্ববর যিয়ারত করা। এই ক্ষেত্রে যিয়ারতকারী ক্ববরটির পাশে দাঁড়িয়ে তার জন্য যত ইচ্ছা দো‘আ করবে; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। (ঘটনা হল) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে তাঁর মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অনুমতি দেন নি। কিন্তু তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন।
মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৬।
ফলে তিনি তাঁর কতিপয় ছাহাবীকে নিয়ে তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারত করেন।
২. ক্ববরস্থানের সবার ক্ববর যিয়ারত করা। এক্ষেত্রে যিয়ারতকারী ক্ববরসমূহকে সামনে করে দাঁড়াবে এবং ক্ববরবাসীদেরকে সালাম প্রদান করবে;
যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী‘ নামক ক্ববরস্থান যিয়ারতের সময় করতেন। তিনি বলতেন:
«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ, وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ. يَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَمِنْكُمْ وَالْمُسْتَأْخِرِينَ. نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ, اَللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُمْ, وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُمْ, وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُمْ»
‘হে ক্ববরবাসী মুমিনগণ! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আমাদের ও আপনাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের উপরে আল্লাহ রহম করুন। আমরা আমাদের ও আপনাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তাদের পূণ্য থেকে আপনি আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। তাদের মৃত্যুর পরে আমাদেরকে আপনি ফেতনায় ফেলবেন না। আপনি আমাদেরকে এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দিন’।
মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ৯৭৪, ৯৭৫।
মহিলাদের ক্ববর যিয়ারত
মহিলাদের ক্ববর যিয়ারত করা হারাম; বরং কবীরা গোনাহ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববর যিয়ারতকারিণীদেরকে অভিশাপ করেছেন। তবে যিয়ারতের নিয়্যত ছাড়াই কোনো মহিলা যদি ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ক্ববরবাসীদের জন্য দো‘আ করলে কোন সমস্যা নেই।
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যায়. মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৭৪।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
‘দু’জন ব্যক্তিকে ক্ববরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। ফলে শাস্তি মাফের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ববরে খেজুরের ডাল পুঁতে দিলেন’ বুখারী, ‘অযূ’ অধ্যায়, হা/২১৬। এই হাদীছের আলোকে ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল ইত্যাদি পোঁতা কি সুন্নাত নাকি এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল?
ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল বা ঐ জাতীয় কিছু পোঁতা সুন্নাত নয়; বরং ইহা একদিকে যেমন বিদ‘আত, অন্যদিকে তেমনি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণের শামিল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ক্ববরে এরূপ রাখতেন না। শুধুমাত্র ঐ ক্ববর দু’টিতে তিনি রেখেছিলেন।
কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
অতএব, ক্ববরের উপরে খেজুর ডাল পোঁতা মৃতের প্রতি অন্যায় এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ বৈ কিছুই নয়। আর কেউ তার মুসলিম ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে পারে না। কেননা কেউ কারো ক্ববরের উপর খেজুরের ডাল পোঁতার অর্থই হচ্ছে, সে বিশ্বাস করে যে, ঐ ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন বলেই তো তাদের ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল পুঁতেছিলেন।
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়, ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল বা এ জাতীয় কিছু পোঁতা বিদ‘আত এবং মৃতব্যক্তি সম্পর্কে কু–ধারণা পোষণ। কেননা যে ডাল পুঁতে, সে মনে করে ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই তো সে তার শাস্তি লাঘব করতে চায়।
এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সুপারিশ ক্ববূল করেছিলেন; কিন্তু তিনি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশ ক্ববূল করবেন কিনা তা তো আমরা জানি না।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
https://www.youtube.com/watch?v=Gt2oA8laeLk