কুর’আন শিখিয়ে বিনিময় নেয়া যাবে কি?

আমরা অনেক সময়ই কুর’আনের আয়াতকে শাব্দিক অর্থ পড়ে ভুল বুঝে থাকি। কুর’আনকে বুঝতে হলে আসলে আরবী বুঝা খুবই জরুরী, আর তা না হলে তাফসীরের স্মরনাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। রাসূল স.এর জীবনকেও সহিহভাবে জানা দরকার কুর’আনকে বুঝার জন্য।

অনেকেই নিচের আয়াতটিকে রেফারেন্স দিয়ে কুর’আন শিখিয়ে বিনিময় নেয়া নিষেধ বলে থাকেন।

আয়াতটি হলো সূরা বাকারা ৪১ নং

আল্লাহ জানিয়েছেন-

আর আমি যা নাযিল করেছি তোমরা তাতে ঈমান আন। এটা তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যতা প্রমাণকারী। আর তোমরাই এর প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করো না । আর তোমরা শুধু আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর।

তাফসির থেকে একটু জানি–

 আর আমি যা নাযিল করেছি তোমরা তাতে ঈমান আন। এটা তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যতা প্রমাণকারী। আর তোমরাই এর প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করো না(১)। আর তোমরা শুধু আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর।

১. আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলার আয়াতসমূহের বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো, মানুষের মর্জি ও স্বার্থের বিনিময়ে আয়াতসমূহের মর্ম বিকৃত বা ভুলভাবে প্রকাশ করে তা গোপন রেখে টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ গ্রহণ করা। এ কাজটি সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৪১। তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে আমি যা অবতীর্ণ করেছি তা বিশ্বাস কর। আর তোমরাই ওর (1) প্রথম অবিশ্বাসকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে স্বল্প মূল্য (2) গ্রহণ করো না। তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।

(1) بِه (ওর) সর্বনাম দ্বারা ক্বুরআনকে বুঝানো হয়েছে অথবা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে। আর উভয় মতই সঠিক। কেননা, দু’টিই আপোসে অবিচ্ছেদ্য। যে ক্বুরআনের সাথে কুফরী করল, সে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাথেও কুফরী করল। আর যে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাথে কুফরী করল, সে ক্বুরআনের সাথেও কুফরী করল। (ইবনে কাসীর) ‘প্রথম অবিশ্বাসকারী হয়ো না’ এর অর্থ, প্রথমতঃ তোমাদের যে জ্ঞান রয়েছে, অন্যরা সে জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। কাজেই তোমাদের দায়িত্ব সর্বাধিক। দ্বিতীয়তঃ মদীনায় ইয়াহুদীদেরকেই সর্বপ্রথম ঈমানের প্রতি আহবান জানানো হয়েছিল; যদিও হিজরতের পূর্বে অনেক মানুষ ইসলাম কবুল করে নিয়েছিল। তাই সতর্ক করা হচ্ছে যে, ইয়াহুদীদের মধ্যে তোমরা প্রথম অবিশ্বাসকারী হয়ো না। কারণ, যদি তোমরা তা হও, তাহলে সমস্ত ইয়াহুদীদের কুফরী ও অবিশ্বাস করার (পাপের) বোঝা তোমাদের উপর চাপব

(2) ‘আমার আয়াতের বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করো না’ এর অর্থ এই নয় যে, বেশী মূল্য পেলে ইলাহী বিধানের বিনিময়ে তা গ্রহণ করো। বরং অর্থ হল, ইলাহী বিধানসমূহের মোকাবেলায় পার্থিব সবার্থকে কোন প্রকার গুরুত্ব দিও না। আল্লাহর বিধানসমূহের মূল্য এত বেশী যে, দুনিয়ার বিষয়-সম্পদ এর মোকাবেলায় খুবই তুচ্ছ; কিছুই না। উক্ত আয়াতে বানী-ইসরাঈলকে সম্বোধন করা হলেও এই নির্দেশ কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য। যে ব্যক্তি সত্যকে বাতিল, বাতিলকে প্রতিষ্ঠা অথবা জ্ঞানকে গোপন করার কাজে জড়িত হবে এবং কেবল পার্থিব স্বার্থের খাতিরে সত্য-প্রতিষ্ঠা করা ত্যাগ করবে, সেও এই ধমকের অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল ক্বাদীর)

প্রশ্ন: কুরআন মজিদ শিক্ষা দেয়ার বদলে পারিশ্রমিক নেয়া কি ঠিক?

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ।

কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন নেয়া জায়েয কিনা এ ব্যাপারে ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা জবাব দেন যে, হ্যাঁ; আলেমগণের দুইটি মতের মধ্যে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে- কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন নেয়া জায়েয। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর ব্যাপকতা “তোমরা যে যে কাজের জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ কর এর মধ্যে আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে উপযুক্ত”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] এছাড়া যেহেতু এর প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহই উত্তম তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ এর প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

আল্লাহই ভাল জানেন