বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
মহান আল্লাহ কুর’আনে ইরশাদ করেছেন–
কিন্তু যারা অন্যায় করেছিল, তারা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল। (1) সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হতে শাস্তি (2) প্রেরণ করলাম, কারণ তারা সত্যত্যাগ করেছিল। সূরা বাকারাঃ৫৯
(1) এর স্পষ্ট বর্ণনা সহীহ বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদিতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, সিজদানত অবস্থায় প্রবেশ কর, কিন্তু তারা পাছাকে যমীনে হিঁচড়াতে হিঁচড়াতে প্রবেশ করে এবং ‘হিত্ত্বাহ’ এর পরিবর্তে (হিনত্বাহ) হাববাতুন ফী শারাহ (অর্থাৎ, শীষে গম) বলতে বলতে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে কতই না অবাধ্যতা ও ধৃষ্টতা জন্ম নিয়েছিল এবং আল্লাহর বিধানের সাথে তারা কিভাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত এ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। বস্তুতঃ যখন কোন জাতি চারিত্রিক ও আচার-আচরণে অধঃপতনের শিকার হয়, তখন আল্লাহর বিধানের সাথেও তাদের কার্যকলাপ অনুরূপ হয়ে যায়।
(2) এই আকাশ হতে আগত শাস্তি বা আসমানী আযাব কি ছিল? কয়েকটি উক্তি এ ব্যাপারে এসেছে। যেমন, আল্লাহর গযব, কঠিন ঠান্ডাজনিত কুয়াশা অথবা প্লেগ রোগ। শেষোক্ত অর্থের সমর্থন হাদীসে পাওয়া যায়। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, এই প্লেগ সেই আযাব ও শাস্তির অংশ যা তোমাদের পূর্বে কোন জাতির উপর নাযিল করা হয়েছিল। তোমাদের উপস্থিতিতে কোন স্থানে যদি এই প্লেগ মহামারী দেখা দেয়, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না এবং কোন স্থানে যদি এই মহামারী হয়েছে বলে শোন, তবে সেখানে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ সালাম, পরিচ্ছেদঃ প্লেগ, কুলক্ষণ এবং ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদি ২২১৮নং) তাফসীরে আহসানুল বায়ান
প্রশ্ন: ইসলামে কি ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয়েছে?
উত্তর:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لا عَدْوَى وَلا طِيَرَةَ وَلا هَامَةَ وَلا صَفَرَ ”
“রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাস বলতে কিছু নাই।” (সহীহু বুখারী, হা/৫৭০৭)
মুহাদ্দিসগণ বলেন, উক্ত হাদীসে পেঁচা ও সফর মাসের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয় নি বরং জাহেলী যুগে পেঁচার ডাক এবং সফর মাসকে কুলক্ষণে মনে করা হত (বর্তমানেও মূর্খ লোকদের মাঝে এ কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে) এই বাতিল ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে অস্বীকার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সংক্রমন রোগের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করা হয় নি বরং একটি ভ্রান্ত বিশ্বাসের অনোদন করা হয়েছে। তা হল, জাহেলী যুগে কোনো কোন ব্যাধিকে এমন মনে করা হত যে, তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। কিন্তু ইসলামের সৃষ্টিভঙ্গী হল, রোগ কখনও নিজে নিজে সংক্রমিত হতে পারে না। বরং তা আল্লার ইচ্ছার সাথে সংম্পৃক্ত। তার লিখিত তাকদীর ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না।
উক্ত হাদীসের এই ব্যাখ্যাটি নিন্মোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নাই বললে জনৈক বেদুঈন আরব জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রসূলুল্লাহ! তবে সেই উটপালের অবস্থা কি যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? অতঃপর তথায় কোনো খুজলী-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট তাদের মধ্যে এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ঐ রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে?
(এর জবাবে) তিনি বললেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিলো?” (সহীহ মুসলিম)
এ হাদীসের অর্থ হল, যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে আক্রান্ত করেছিলেনে তিনিই অন্যান্য উটকেও আক্রান্ত করেছেন। অর্থাৎ রোগ-ব্যাধী নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না যদি আল্লাহর হুকুম না থাকে।
মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমনের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দোষের নয়। বরং কিছু হাদীসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। [বাযলুল মাজহূদ ১৬/২৪২; শরহুন নববী ২/২৩০; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৩৩)
❑ ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি:
ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি তার প্রমাণে অনেক হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে নিচের হাদীসগুলো অন্যতম:
💠 আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لا يورد ممرض على مصح
“অসুস্থ উটগুলোর মালিক তার উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না। (কারণ এতে ঐসুস্থ প্রাণীগুলো রোগাক্রান্ত হতে পারে।) [সহীহ মুসলিম]
💠 তিনি আরও বলেন:
فر من المجذوم فرارك من الأسد
“সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন কর কুষ্ঠরোগী থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।” (সহীহ আল বুখারী)
আবার তিনি কুষ্ঠরোগীর সাথে বসেও খাবার খেয়েছেন আর বলেছেন:
كل بسم الله ثقة بالله
“আল্লাহর উপর আস্থা রেখে আল্লাহর নামে খাওয়া শুরু করো।” (তিরমিযী, অধ্যায়: খাদ্যদ্রব্য, অনুচ্ছেদ: কুষ্ঠরোগীর সাথে খাবার খাওয়া)
এটা তিনি এ জন্য করেছেন যে, কুষ্ঠ রোগীর কাছে গেলেই যে, সে রোগে আক্রান্ত হতে হবে তা জরুরি নয়। বরং কখনও হতে পারে আবার কখনও নাও হতে পারে। এটা আল্লাহ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
সারাংশ:
পোস্টের সারাংশ হল, সংক্রমণ ব্যাধি আছে কিনা এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দুই ধরণের হাদিস পাওয়া যাচ্ছে। উভয় প্রকার হাদিসের মাঝে সমন্বয় পূর্বক যা প্রমাণ করা হয়েছে তা হল, জাহিলী যুগের ধারণা ছিল যে, রোগ-ব্যাধি নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। এখানে আল্লাহর ইচ্ছা বা ক্ষমতা নেই নেই। ইসলাম কেবল এই ধারণাকে রদ করেছে।
সঠিক ইসলামী বিশ্বাস হল, অবশ্যই সংক্রামক ব্যাধি আছে কিন্তু তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয় না বরং তা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতেই ঘটে। অর্থাৎ রোগ-ব্যাধির নিজস্ব শক্তি নেই মহান আল্লাহ যদি ইচ্ছা না করেন।
অতএব, কেউ যদি সংক্রামক ব্যাধিকে অস্বীকার করে তাহলে অনেকগুলো হাদিসকে অস্বীকার করা হবে। এটা নিছক অজ্ঞতা অথবা ইসলাম সম্পর্কে ভুল বুঝ। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে, রোগ-ব্যাধি নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না বরং তা হয় আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে।
এ বিশ্বাসের অর্থ হল, কোন ব্যক্তি আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলেই যে, সেও নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হবে তা জরুরি নয়। বরং হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এটা আল্লাহ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
এ ক্ষেত্রে এটাই হল, মুসলিম এবং অমুসলিমদের মাঝে মূল পার্থক্য। আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব
What did the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) mean by “No contagion (‘adwa)”?
Answer
Praise be to Allaah.
There are several versions of this hadeeth. Al-Bukhaari (5776) and Muslim (2224) narrated from Anas ibn Maalik (may Allaah be pleased with him) that the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “There is no ‘adwa (transmission of infectious disease without the permission of Allaah) and no tiyarah (superstitious belief in bird omens), but I like good omens.” They said: What is a good omen?” He said: “A good word.”
Al-Bukhaari (5316) narrated from Abu Hurayrah (may Allaah be pleased with him) that the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “There is no ‘adwaa [contagion, transmission of infectious disease without the permission of Allaah], no tiyarah [superstitious belief in bird omens], no haamah [refers to a Jaahili Arab tradition described variously as: a worm which infests the grave of a murder victim until he is avenged; an owl; or the bones of a dead person turned into a bird that could fly], and no Safar [the month of Safar was regarded as “unlucky” during the Jaahiliyyah].”
Shaykh Ibn ‘Uthaymeen (may Allaah have mercy on him) said:
The words of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) “There is no ‘adwa” are general in meaning, thus the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) states that there is no contagion (without the permission of Allaah).
‘Adwa (contagion) refers to the spread of a disease from a sick person to a healthy one. What happens in the case of physical diseases may also happen in the case of psychological diseases. Hence the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said that a bad companion is the like one who operates the bellows: Either he will burn your clothes, or you will notice a bad smell from him.
The words “there is no ‘adwa” include both physical and psychological diseases, even though it is more apparent with regard to physical disease.
The words “no tiyarah (lit. superstitious belief in bird omens)” refers to feeling superstitious because of something that you see, hear or know..
With regard to the words “no haamah”, haamah is interpreted in two ways:
1 – That it is a bird similar to an owl, or an owl. The Arabs believed that if a person was killed, his bones became a haamah that could fly and shriek until he was avenged. Some of them believed that the haamah was the soul of the slain person.
2 – Some of the Arabs said that the haamah was a particular bird, which they regarded as a bad omen. If it landed on the house of one of them and made a sound, they said that it was predicting a death. They believed that this was a sign that that person would die soon. All of these are undoubtedly false beliefs.
The words “No Safar” refers to the month of Safar, which the Arabs used to regard as inauspicious, especially for marriage.
And it was said that it was a stomach disease that affected camels and was transmitted from one camel to another; based on this, mentioning it after ‘adwa (contagion) comes under the heading of mentioning something specific after something general.
It is more likely that what is meant by Safar here is the month, and that what is meant by saying “No Safar” is that it is not to be regarded as inauspicious, rather it is like any other time, during which good or bad things may be decreed.
This does not mean that these things do not happen, because they do happen. Rather it is a statement that they do not have any effect. The One Who causes things to happen is Allaah. If any of these things has a known effect then that is valid and real; if any of them is imagined to have an effect, then that is invalid and false. Thus the hadeeth demonstrates that if there is a valid effect, it cannot be attributed to that thing itself (rather the One Who causes it to happen is Allaah). If the effect is merely imagined, then this hadeeth is stating that it has no effect in the first place.
With regard to the words “no contagion (‘adwa)”: contagion is something that happens, as is indicated by the words of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him), “Do not put a sick one with a healthy one” i.e., the owner of a sick camel should not bring it to the owner of a healthy camel, lest the contagion be transmitted.
And the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “Flee from the leper as you would flee from a lion.” Leprosy is a serious disease that is transmitted quickly and kills the one who catches it. It was even said that it is a plague. Hence the command to flee from the leper so that the disease will not be transmitted from him to you. This is an affirmation of the effect of contagion, but its effect is not inevitable in such a way that it affects people by itself. The command of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) to flee and not to bring sick camels to where healthy camels are comes under the heading of avoiding the means (that lead to sickness), not attributing the effect to the means themselves. The means do not affect anything themselves, but we should avoid the things that may be a cause of calamity, because Allaah says (interpretation of the meaning):
“and do not throw yourselves into destruction”
[al-Baqarah 2:195]
We cannot say that the Messenger (peace and blessings of Allaah be upon him) was denying the effect of contagion, because contagion is something that is proven to exist in real life and is mentioned in other ahaadeeth.
When the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said “there is no ‘adwa”, a man said: “O Messenger of Allaah, the camels may be healthy like deer, then a mangy camel comes and mixes with them and they all get the mange.” The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “And who infected the first one?” meaning that the disease came to the first one with no contagion, rather it came from Allaah. By the same token, if it was transmitted by contagion, then it was transmitted by the command of Allaah. A thing may have a known cause or it may not have a known cause. The mange of the first one does not have a known cause, apart from the fact that it happened by the will and decree of Allaah, and the mange that came after it does have a known cause. But if Allaah wills the camel will not become mangy. Hence sometimes a camel may get the mange but then it recovers and does not die. The same happens with the plague and cholera; they may enter a house and some may get sick and die, while others are not affected at all.
We have to put our trust in Allaah and depend on Him. It was narrated that a leper came to the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) and he took him by the hand and said, “Eat,” i.e., eat of the food that the Messenger (peace and blessings of Allaah be upon him) was eating– because of the strength of his trust in Allaah. This trust counteracts the causes of contagion.
What we have referred to above is the best way of reconciling between the ahaadeeth.
End quote from Sharh Kitaab al-Tawheed, 2/80
Based on this, what is meant by the words of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) “no ‘adwa (contagion)” is that disease is not transmitted from a sick person to a healthy one by itself, rather it is transmitted by the will and decree of Allaah. If a sick person mixes with healthy ones this is one of the causes of the transmission of disease. But this does not mean that it will inevitably happen, rather it only happens if Allaah wills it. Hence we often see a sick mother give birth to a healthy child, but the disease is not transmitted to the infant.
And Allaah knows best.
Source: Islam Q&A