অমুসলিমদের সাথে মুসলিমের বন্ধুত্ব সম্পর্কে জরুরি কথা

প্রশ্ন: হিন্দুর বিয়েতে গিফট দিতে চাই। ইসলাম কী বলে?
উত্তর:
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনাদর্শের নাম। এটি সামাজিকতা ও মানতাবাদী এক মহান ধর্ম। সুতরাং ইসলামের উদারতা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ করার উদ্দেশ্যে অমুসলিমদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং বিয়েশাদি বা সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপহার লেনদেন করায় কোন আপত্তি নেই- যদি তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র ও শত্রুতায় লিপ্ত না হয় বা ইসলামের শত্রুদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা না করে।
তাআলা বলেন,
لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّـهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
“দ্বীন-ইসলামের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করে নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মুমতাহিনা: ৮)
তবে এমন জিনিস উপহার দেয়া জায়েজ নাই যা মূলত: হারাম অথবা যা অমুসলিমরা তাদের ধর্মীয় উপকরণ ও প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন: মদ, শুকরের গোস্ত, বাদ্যযন্ত্র, তাদের ধর্মীয় বই, হিন্দু-খৃষ্টানদের ধর্মীয় রীতি হিসেবে ব্যবহার্য সামগ্রী যেমন: শাখা, পৈতা, ক্রুশ বা অন্য কোনো ধর্মীয় প্রতীক ইত্যাদি।

➤ অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে জরুরি কথা:

আমাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, মুসলিমরা অমুসলিমদের সাথে যতই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুক না কেন, যতই তাদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা ও সদাচার করুক না কেন তারা কখনো মুসলিমদেরকে ‘অন্তরঙ্গ বন্ধু’ মনে করে না। বরং তারা কতটা মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তা আল্লাহ তাআলা ফাঁস করে দিয়েছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ রূপে গ্রহণ করো না। তারা (কাফিররা) তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও “ (সূরা আলে ইমরান: ১৮)
অত্র আয়াতে আমরা দেখতে পেলাম যে, কাফিরগোষ্ঠি ঈমানদারদের প্রতি চরম বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে। যদিও তারা অনেক সময় বাহ্যিকভাবে তা প্রকাশ করে না কিন্তু সুযোগ পেলেই তাদের আসল চেহারা প্রকাশিত হয়ে যায়। ভারত, বার্মা, আমেরিকা, রাশিয়া, চিন সহ পৃথিবীর দিকে দিকে তা দিবালোকের মত পরিষ্কার। আল্লাহ কত সত্য কথাই না বলেছেন!!
সে কারণে আল্লাহ তাদেরকে ‘আন্তরিক বন্ধু’ হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ ۙ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّـهِ رَبِّكُمْ
“হে মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বহিষ্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ।” (সূরা মুমতাহিনাহ: ১)

কিন্তু তাই বলে তাদের সাথে কোনও ধরণের সম্পর্ক রাখা যাবে না তা ঠিক নয়। বরং তাদের মধ্যে যারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করে না অথবা যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত শত্রুদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে না তাদের সাথে সদাচরণ, উপহার লেনদেন (তাদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে উপহার দেয়া ছাড়া), অভাবীকে সাহায্য করা, খাবার খাওয়ানো, বিপদাপদে এগিয়ে আসা, ধার-কর্জ দেওয়া বা নেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, কথাবার্তা বলা, প্রতিবেশী সুলভ ভালো আচরণ করা ইত্যাদি জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ।
সেই সাথে দাওয়াতি স্বার্থে, তাদের ক্ষতি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে অথবা বিশেষ কারণে যেমন: ব্যবসা, কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কারণে সম্পর্ক রাখা দোষণীয় নয়। বরং এটাই ইসলামের সৌন্দর্য ও উদারতার প্রমাণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবীদের জীবন থেকে এর ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে।

কিন্তু তাদের ধর্মীয় বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ বা তাদেরকে ‘অন্তরঙ্গ বন্ধু’ হিসেবে গ্রহণ সম্পূর্ণ হারাম এবং ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ তথা ‘আল্লাহর জন্যই বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্যই সম্পর্কচ্ছেদ’ এই মূলনীতির পরিপন্থী।

আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে দ্বীন বুঝার তওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল,
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

 

প্রশ্ন: আমি পড়া-শোনার জন্য একটি ম্যাচে উঠেছি। তো আমার রুমমেট হিন্দু। তার সাথে একই পাতিলে খাবার খেতে হচ্ছে। এতে কি কোন সমস্যা হবে? মানে ইসলাম কি এটা অনুমোদন করে?
উত্তর:
খাবারটা যদি হালাল হয়-যেমন: শাক-সবজি, মাছ, ডাল, ডিম ইত্যাদি তাহলে এক পাতিলে রান্না করেে একসাথে খাওয়া জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ।
তবে তার হাতের জবাই করা কোন প্রাণীর গোস্ত খাওয়া জায়েজ নয়, অনুরূপভাবে তাদের পূজা বা ধর্মীয় উপলক্ষে বিশেষ কিছু রান্নাবান্না করা বা তা খাওয়া জায়েজ হবে না।
قال قتادة : ” لا بأس بأكل طعام المجوسي ، ما خلا ذبيحته “. انتهى من ” مصنف عبد الرزاق” (6/109)
◈ কাতাদা রহ. বলেন: “অগ্নীপূজক এর খাবার খেতে অসুবিধা নেই-তার জবেহকৃত প্রাণীর গোস্ত ছাড়া।” (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬/১০৯)
وقال القرطبي : ” ولا بأس بأكل طعام من لا كتاب له ، كالمشركين ، وعبدة الأوثان ، ما لم يكن من ذبائحهم “. انتهى من ” الجامع لأحكام القرآن” (6/77)
◈ কুরতুবী বলেন: “যারা কিতাবধারী নয় (আহলে কিতাব নয়) যেমন: মুশরিক, মূর্তীপূজারী-তাদের খাবার খাওয়ায় কোন দোষ নেই যদি তাদের তাদের জবেহকৃত প্রাণীর গোস্ত না হয়।” (আল জামে লি আহকামিল কুরআন-তাফসিরে কুরতুবী ৬/৭৭)
◈ প্রশ্ন: কোন মুসলিমের জন্য কি কোন কাফেরের সাথে খাওয়া-দাওয়া করা সম্ভব?
” إذا كان الطعام حلالا جاز الأكل معه ، ولا سيما إذا دعت الحاجة إلى ذلك ؛ لكونه ضيفاً ، ولقصد دعوته إلى الإسلام ، ونحو ذلك ، مع بقاء بغضه في الله حتى يُسلم “. انتهى من ” فتاوى اللجنة الدائمة ” (22/413).
“খাবারটা যদি হালাল হয় তাহলে কাফেরের সাথে খাবার খাওয়া জায়েজ আছে। বিশেষ করে যদি প্রয়োজন দেখা যায়। যেমন: হয়ত সে মেহমান এসেছে অথবা তাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে আছে ইত্যাদি। তবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার প্রতি মনের মধ্যে বিদ্বেষ পোষণ হবে যতক্ষণ না সে মুসলিম হয়।” (সৌদি স্থায়ী ফতোয়া কমিটি ২২/৪১৩)
➧ মনে রাখা কর্তব্য যে, মুসলিমদের জন্য যথাসম্ভব মুসলিম দ্বীনদার ও সৎচরিত্রবান রুমমেটের সাথে থাকার চেষ্টা করা উচিৎ। এটা উভয়ের জন্যেই মানসিক প্রশান্তি ও দ্বীন পালন ও চরিত্র রক্ষার ক্ষেত্রে অধিক নিরাপদ।
তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে অমুসলিমর সাথে একই রুমে থাকতে হয় তাহলে একজন মুসলিমের দায়িত্ব হল, তার সঙ্গীকে দ্বীনের পথে নিয়ে এসে আখিরাতের নিশ্চিত জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা। এ জন্য তার কাছে ইসলামের সৌন্দর্য, উদারতা ও মহত্ম প্রকাশ করে তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে।
কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় বরং উল্টো মনে হয় যে, সে নিজেই তার সাথে থাকার ফলে দ্বীনদারী ও চারিত্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাহলে অনতিবিলম্বে তার জন্য রুম পরিবর্তন করার চেষ্টা করা জরুরি-যদি সম্ভব হয়।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬◖◯◗▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রশ্ন: আমার এক মুসলিম ফ্রেন্ড ক্লাস ১২ এ থাকা অবস্থায় নাস্তিক হয়ে যায়। সে আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিল যে, আমি যেন কাউকে না বলি যে, সে নাস্তিক হয়ে গেছে। আমি সেই ওয়াদা রক্ষা করেছি। প্রশ্ন হল, সে নাস্তিক হয়ে যাওয়ায় আমার কি কোন গুনাহ হবে?
বি.দ্র: সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।
উত্তর:
কোন ব্যক্তি মহান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অথবা কোনও ধর্মকে অস্বীকার করে তাকেই নাস্তিক (Atheist ) বলা হয়। কিন্তু এরা বাস্তবে হয় প্রবৃত্তি পূজারী। অর্থাৎ আল্লাহর উপাসনাকে অস্বীকার করে কিন্তু নিজের প্রবৃত্তির পূজা করে। তার প্রবৃত্তি তাকে যা নির্দেশ দেয় সে তাই করে।
এদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا
“আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার জিম্মাদার হবেন?” [সূরা ফুরকান: ৪৩]
তিনি আরও বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ
“অত:এব জেনে নিন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর দিক নির্দেশনার পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে?” [সূরা কাসাস: ৫০]
এরা অন্য দিকে শয়তানের অনুসারীও। কারণ শয়তান তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তারা শয়তানের পথে জীবন পরিচালনা করে।
বলা হয়, তারা কোনও ধর্মকে স্বীকার করে না। এটাও ভুল। ধর্ম তো সেটাই যা মানুষ অন্তরে ধারণ বা বিশ্বাস করে। পৃথিবীতে ধর্মহীন কোনও মানুষ নাই। এমনকি প্রতিটি জীব-জন্তু এবং জড় পদার্থের একেকটি ধর্ম আছে। সুতরাং এ অর্থে নাস্তিকতাও একটি ধর্ম। ওরা নাস্তিকতা নামক ধর্মের অনুসারী। কিছু নাস্তিক ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু ধর্মের দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ, প্রকৃতিবাদ, বস্তুবাদ ইত্যাদি দর্শনে বিশ্বাস করে। সুতরাং তাদেরকে ‘ধর্মহীন’ বলা সমীচীন নয়।
যাহোক, এটি নিশ্চিতভাবেই শয়তানের একটি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। এটাই জাহান্নামে যাওয়ার সহজ-সরল পথ। এই পথের উপর কেউ জীবন অতিবাহিত করলে নিশ্চিতভাবেই তা তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবে। (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমিন)
অত:এব কোন বন্ধু বা আত্মীয় যদি জাহান্নামে দিকে এগিয়ে যায় তাহলে কল্যাণকামী বন্ধুর করণীয় হল, তাকে বাঁচানোর জন্য ছুটে আসা, তার পথ আগলে দাঁড়ানো। কিন্তু কেউ তার বন্ধুর নিশ্চিত ধ্বংসাত্মক পরিণতি দেখেও চুপ থাকলে বা তা গোপন করলে তা তার বন্ধুত্বের পরিচায়ক নয়।
বরং তার কর্তব্য, তাকে দীনের দাওয়াত দেয়া, বুঝানো, সংশোধন করা, তার সংশয়-সন্দেহগুলো দূর করা এবং তার নিকট ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা। নিজে না পারলে বিজ্ঞ আলেমের সাথে যোগাযোগ করে তার প্রশ্ন ও সংশয়ের জবাব দেয়া। নাস্তিকতার জবাবে লিখিত বই-পুস্তক, Video clips ইত্যাদি প্রদান করা। তার মূল সমস্যাগুলো কী তা চিহ্নিত করে সে আলোকে সমাধানের চেষ্টা করা। এটা ওয়াজিব।
ঐ ব্যক্তির নাস্তিকতার বিষয়টি গোপন রাখার ওয়াদা করা এবং এ বিষয়ে নীরব থাকা কোনটাই আপনার ঠিক হয় নি। এজন্য আপনার উচিৎ আল্লাহ কাছে তওবা করা।
কারণ সাধ্যানুযায়ী দাওয়াতি কাজ করা এবং অন্যায়ে বাধা দেয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। কেউ তা না করলে গুনাহগার হবে।
❑ ইসলামের প্রতি মানুষকে আহ্বান, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎকাজে বাধা প্রসঙ্গে কতিপয় আয়াত ও হাদিস তুলে ধরা হল:
✪ ১) আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কার্য থেকে নিষেধ করবে। আর এ সকল লোকই হবে সফলকাম। [সূরা আলে ইমরান: ১০৪]
✪ ২. তিনি আরও বলেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَر
“তোমরাই শ্রেষ্ঠতম জাতি। মানবমণ্ডলীর জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, আর অসৎ কার্য (করা থেকে) নিষেধ কর, আর আল্লাহতে বিশ্বাস কর।” [সূরা আলে ইমরান ১১০]
✪ ৩. তিনি আরও বলেন,
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
“তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।” [সূরা আ’রাফ: ১৯৯]
✪ ৪) তিনি অন্যত্রে বলেছেন,
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
“আর বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসী নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে।” [সূরা তওবা: ৭১]
✪ ৫) তিনি আরও বলেছেন,
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ
“আর বলে দাও, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সমাগত; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান করুক।” [সূরা কাহফ: ২৯]
✪ ৬) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ.
“তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনও অন্যায় দেখে, তাহলে সে যেন তা হাতের দ্বারা বন্ধ করে। যদি এতে সমর্থ না হয়, তাহলে যেন জিহ্বার দ্বারা বন্ধ করে। যদি এতেও সমর্থ না হয়, তাহলে যেন অন্তর দ্বারা প্রতিহত করে।“ [সহিহ মুসলিম-আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত।]
আল্লাহু আলাম।
– আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল-
https://www.youtube.com/watch?v=1LWhcLbyEIE
https://www.youtube.com/watch?v=HNCaYXyoZ7I
https://www.youtube.com/watch?v=QmT3pfCtz-c