মহান আল্লাহর এই পৃথিবীতে ঋতু বৈচিত্র এনে একদিকে যেমন তাঁর নি’আমতের বিচিত্রতা এনে দিয়েছেন তেমনি মানুষের মাঝে একঘেয়েমিতাও দূর করে দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ কত সুন্দর তা কিঞ্চিৎ উপলব্ধি করা যায়। আমরা প্রত্যেকেই নতুনত্বকে ভালোবাসি এটা আমাদের অনেকটা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ আমাদের জীবনের প্রতিদিনের উত্থান পতনের মাধ্যমে, হাসি দুঃখ দিয়ে এই ধারা বজায় রাখেন। এর মাধ্যমেই মুমিন নিজেকে মহান রবের অনুগত জীবনে প্রবেশের আরো উদ্দীপনা লাভ করে থাকে যারা জ্ঞানী ও চিন্তাশীল। জীবনের প্রতিটি অধ্যায় কিছু না কিছু শিক্ষা কল্যান নিয়ে এসে থাকে।
তিনিই রাত-দিনের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন ৷ দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য এর মধ্যে রয়েছে একটি শিক্ষা ৷ সূরা আন নূরঃ৪৪
এই পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহাবা আযমাঈন রা. ইবাদাতের জীবন চলার পথকে পরিবর্তন করে নিতেন পরিকল্পিতভাবে। আর এই শীতের সময়কে যেভাবে মূল্যায়ন করতেন তা জেনে মনে হয় আমরা একাডেমিক জ্ঞানে জ্ঞানী হয়েও এইভাবে চিন্তা বা পরিকল্পনা করতে বুদ্ধিকে কাজে লাগাই না কিন্তু সম্মানীত সাহাবাগন অহীর জ্ঞানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে গিয়েছেন।
কারন উনারা জীবনকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন মহান আল্লাহ যেভাবে চান ও রাসূল স.যেভাবে বলে গিয়েছেন সেইভাবেই। ক্ষনস্থায়ী এই জীবন থেকে স্থায়ী জীবনের রশদ নিতে হবে তা উনারা দিবালোকের মতই সত্য বুঝেই সময়কে কাজে লাগিয়ে গিয়েছিলেন। সহজ কঠিন যেকোন অবস্থাতেই যেন সময়ের অবহেলা বা অপব্যবহার না হয় সেইদিকে সজাগ থাকতেন যা রাসূল স.এর দেয়া শিক্ষা। শীতের কনকনে হাওয়ায় আমাদের অনেকেই শুধু বারবিকিউ, পিঠা উৎসব ও খেজুরের রস খেতে দূরে গ্রামে কোথাও যাওয়া বা একটু দূরে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা পৃথিবীকে দেখার জন্য ছুটে কোথাও যাওয়া নিয়েই যেন ব্যস্থ। সেখানে এই সময়ের শীতের দিনে সাহাবা আযমাইন রা.দের মনে কি আসতো চলুন দেখি।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘শীতকাল সুস্বাগত, এতে বরকত নাজিল হয়। এ রাতগুলো যেমন ইবাদতে দণ্ডায়মান
হওয়ার জন্য দীর্ঘ, দিনগুলো তেমনি সংক্ষিপ্তরোজা রাখার জন্য।’
আবু সাইদ খুদরি (রা.) এর বর্ণনায় নবীজি (সা.) বলেন, ‘শীতল গনিমত হলো শীতকালে রোজা।’ (বাইহাকি)।
ওমর (রা.) বলেন, ‘শীতকাল হলো ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ।’ শীত তো এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা বা কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে।
শীতকাল প্রবেশ করলে উবাইদ বিন উমাইর বলতেন, ‘হে কোরআনের ধারক, তোমাদের রাতগুলো তেলাওয়াতের জন্য প্রলম্বিত করা হয়েছে, অতএব তা পড়তে থাক। আর রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনগুলো সংক্ষেপিত করা হয়েছে, তাই বেশি বেশি রোজা রাখো।’
আলী ইবনু আবদুল্লাহ মাদ্বীনী (রহঃ)…… আবূ হূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন তোমরা তা কমে এলে (যুহরের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করো। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ। (তারপর তিনি বলেন), জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ্তা’আলা তাকে দু’টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দু’টি হল, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ঠ উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই। সহীহ বুখারীঃ ৫১০ (ইফাঃ)
শীত আমাদের যেন বারবিকিউ খাবার খেয়ে আনন্দ উল্লাসে, পিঠা উৎসবে মেতে ও দূরে কোথাও বেড়াতে যেয়ে হৈ হুল্লুর করে সময় পার করে দেয়া বা এরই মাধ্যমে যেন মহান রবের নাফরমানি না হয় যা নারী পুরুষ সম্মিলিতভাবে/যুবক যুবতিরা করে থাকেন বরং মহান রবের আনুগত্যে যেন আনন্দ হয়,থাকে সুস্থ বিনোদন,আর যেন স্মরনে থাকে বেশী বেশী সময়ের জবাবদিহীতার কথা, যেকোন সময়েই চলে আসতে পারে এই জীবনের শেষ ঘণ্টা তার প্রস্তুতি।
একনজরে এই শীতে আমরা কি করতে পারি—
১। কুর’আন তেলাওয়াত বাড়িয়ে দেয়া
২। নফল সালাতে রাত জাগরন
৩। কাজা সাওম আদায়/ নফল সাওম রাখা
৪। দু’আ করা-জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
৫। সাদাকা করাঃ আশপাশের বস্ত্রহীন, শীতার্ত মানুষের সহযোগীতা করা। আত্মীয় স্বজনদের শীত নিবারন ব্যবস্থা আছে কি না?
৬। ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই চুলা নেভানো বা আগুন জালানো থাকলে নেভানো বা রুম হিটার চালালে সতর্ক থাকা
মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।