রোগ প্রতিরোধে ও প্রতিকারে ইসলামের শিক্ষা
১। সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য দু’আ
আমরা জানি যে Prevention is better than cure. রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে শ্রেয়।
আবার এটাও ঠিক যে A stitch in time saves nine অর্থাৎ সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়ের সমান।
সুস্বাস্থ্যের প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল স. গুরুত্ব দিয়েছেন বেশী। আর তাই এটাকে বিরাট নি’আমত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আর তাই দেখা যায় রাসূল স. বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দু’আ শিখিয়ে দিয়েছেন সুস্থ্য থাকার জন্য।
রাসূল স.তাঁর চাচা আব্বাস রা.কে বলেন, হে আব্বাস! হে আল্লাহর রাসূলের চাচা! আপনি আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দু’আ করুন। আত তিরমিযী: ৩৪৪৬
রাসূল স. আরো বলেছেন, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দু’আই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়। আত তিরমিযী: ৩৪৭৮
হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, এক সাহাবী এসে রাসূল স.এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন,হে আল্লাহর রাসূল! কোন দু’আ সর্বোত্তম? রাসূল স. বলেন, তোমার প্রতিপালকের নিকট সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কামনা করো। লোকটি ২য় ও ৩য় দিন এসে একই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে রাসুল স.অনুরুপ জবাব দিলেন এবং বললেন, তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করলেই সফলকাম হবে। আত তিরমিযী: ৩৪৪৪ ও ইবনে মাজাহ: ৩৮৪৮
রাসূল স. বলেছেন,আল্লাহর নিকট ক্ষমা,স্বাস্থ্য ও সুস্থ্যতার জন্য দু’আ করো। নিশ্চয়ই ঈমান আনার পর স্বাস্থ্যের চেয়ে আর কোন অর্জন মানুষের নিকট উত্তম নয়। আত তিরমিযী: ৩৬২৯, আন নাসাঈ: ১০৭১৭
রাসূল স. আল্লাহর দরবারে স্বাস্থ্য, সুস্থ্যতা, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অসংখ্য দু’আ করেছেন।
( رَبِّ اغْفِرْلِيْ؛ رَبِّ اغْفِرْلِيْ؛ رَبِّ اغْفِرْلِيْ؛ اَللَّهُمَ اغْفِرْلِيْ، وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَارْزُقْنِيْ وَعَافِنِيْ وَاجْبُرْنِيْ )
রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী, আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী ওয়া আ’ফিনী ওয়াজবুরনী।
অর্থঃ”হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে রহম কর, আমাকে হিদায়েত দান কর, আমাকে রিযিক দান কর, আমাকে সুস্থ্যতা দান কর এবং আমার ক্ষয়ক্ষতি পূরণ কর।”
আরো বলতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আস’আলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের সুস্বাস্থ্য ও কল্যান কামনা করছি। মুসনাদে আহমাদ: ৪৭৮৫ আবু দাউদ: ৫০৭৪
হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন,আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে আরোগ্য দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। আবু দাউদ: ৩৮৪৫
হে আল্লাহ! আমাকে শারীরিক সুস্থ্যতা দান করুন, আমার দৃষ্টিশক্তির সুস্থ্যতা দান করুন এবং আমার মৃত্যু পর্যন্ত তাকে (দেহকে) সুস্থ্য রাখুন। আল্লাহ ভিন্ন কোন উপাস্য নেই। তিনি অতি সহনশীল ও দয়ালু। মহান আরশের মালিক আল্লাহ অতি পবিত্র। জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা। আত তিরমিযী: ৩৪১৩
কত সুন্দর ও অর্থবহ বাস্তবধর্মী আমাদের এই ইসলাম, সুবহানাল্লাহ। দেহ ও মনের সুস্থ্যতার উপর মানুষের জীবনের কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই নির্ভর করে। মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কাঠামোর সুস্থ্যতা ও সুন্দর ভারসাম্য রক্ষার জন্য যা প্রয়োজন তা মহান আল্লাহ কুর’আন ও রাসূল স. এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সংক্ষিপ্তভাবে কিছুদিক তুলে ধরা হলো।
২। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা—— সুস্বাস্থ্য রাখার অন্যতম শর্ত
ইসলাম এ ব্যপারে সর্বোচ্চ উন্নত বাস্তবমুখী শিক্ষা দিয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে-
পবিত্রতা ঈমানের অংগ বা ঈমানের অর্ধেক। সহিহ মুসলিম: ৪২৭
এই পবিত্রতা হলো মানসিকভাবে শারীরিক ভাবে ও পোষাক পরিচ্ছেদেও পরিষ্কারের সাথে পবিত্র থাকতে হবে।
অপবিত্র পানি যেমন ড্রেনের পানি বা প্রস্রাব পায়খানা ইত্যাদি দিয়ে কখনোই পবিত্র হওয়া যাবে না। পবিত্রতার পূর্ব শর্ত হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।
মহান আল্লাহ রাসূল স.কে ডেকে বলেছেন-
হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। সূরা আল মুদ্দাসসীর:১-৫
মহান আল্লাহ এইভাবে জানিয়েছেন যে,আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা অতিমাত্রায় পবিত্র থাকে তাদেরকেও। সূরা আল বাকারা:২২২
রাসূল স.পরিবেশ পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দিয়েছেন যা অনেক ধরনের জীবানু আক্রমন থেকে ব্যক্তিকে সুস্থ্য ও হেফাজত রাখে।
রাসূল স. আরো বলেছেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র, তাই তিনি পবিত্রতা ভালোবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন, অতএব তিনি পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন। তিনি দয়াময় দানশীলতা ও বদান্যতা পছন্দ করেন। সুতরাং তোমরা বাড়ীর আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখো। কিন্তু ইয়াহুদীদের অনুসরন করো না। আত তিরমিযী: ৩০২৯
তোমরা দুটো বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থেকো, যা আল্লাহর অভিসম্পাদের কারন স্বরুপ। উপস্থিত সাহাবীরা বলে উঠলেন, সে দুটো জিনিষ কি হে আল্লাহর রাসূল স.! যা অভিসম্পাতের কারন? তিনি উত্তর দেন, জনসাধারনের চলাচলের রাস্তায় এবং ছায়াপ্রদানকারী গাছের নীচে যেখানে লোকজন বিশ্রাম গ্রহন করে ও আশ্রয় নেয়, সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করা। সহিহ মুসলিম: ৫১১
যখন তোমরা কোন রাস্তার ব্যপারে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হবে তখন তোমরা রাস্তা বা গলি সাত হাত প্রশস্ত রাখো। আবু দাউদ: ৩৫৯৪ ও ইবনে মাজাহ: ২৩৩৮
সাত হাত হলো সাড়ে দশ ফুট। কি সুন্দর নির্দেশনা। যে কোন গলি বা রাস্তা কমপক্ষে সাড়ে দশ ফুট হলে কত সুন্দর ও পরিষ্কার পরিবেশ থাকবে।
রাসূল স. শিক্ষা সম্বলিত হাদীসগুলো পাঠ্যসূচিতে বিষয় ভিত্তিকভাবে নিয়ে আসলে ছোট বেলা থেকেই প্রতিটি মানুষ এই সুন্নতা অনুসরনের মাধ্যমে সুস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে নিতে পারতো। ক্ষুদ্র ক্ষদ্র পরিবার নিয়ে সমাজ এবং এই সমাজই রাষ্ট্র। সুস্থ্য সুন্দর রাষ্ট্র উপহার পেতে চাইলে ক্ষুদ্র পরিবারকে সুন্নাতের অনুসরন করা প্রয়োজন।
হাত ধৌত করা দিয়ে পরিষ্কার থাকা–
নবীজি (সাঃ) অন্যতম সাহাবী বুসর ইবনে আরতাতের বংশধর আবুল ওয়ালীদ আহমাদ ইবনে বাক্কার আদ্-দিমাশকী (রাযি.) থেকে- আব হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যদি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে তবে সে হাতে দুই বা তিনবার পানি ঢেলে তা পাত্রে ঢুকাবে, কারণ সে জানে না তার হাত কোন কোন স্থানে রাত কাটিয়েছে। (তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসাঈ)
আমাদের প্রিয় নবি (সাঃ) খাবার আগে এবং পরে হাত ধৌত করতে বলেছেন।
* খাদ্য খাওয়ার আগে হাত ধোয়া ও কুলি করা (তিরমিযি)
* উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া (আবু দাউদ. তিরমিযি)
* হাতে চর্বি লেগে থাকলে (হাত ধোয়ার আগে) তা বাহুতে বা পায়ে মুছে নেয়া। (ইবনে মাজাহ)
* খাদ্য খাওয়া শেষে আঙ্গুলসমূহ যথাক্রমে মধ্যমা, তর্জনী, বৃদ্ধা, অনামিকা ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল চেটে খাওয়া। (তিরমিযি, সামায়েলে তিরমিযি)
* খাদ্য খাওয়ার পর উভয় হাত ধোয়া। (তিরমিযি, আবু দাউদ)
* সালমান ফারসী (রাযি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি তাওরাত কিতাবে পড়েছি যে, খাওয়া দাওয়ার পর অজু করলে বরকত হয়। এ বিষয়ে আমি নবিজির সাথে আলাপ করলাম, নবিজি (সাঃ) বললেন, খাওয়ার আগে ও পরে অজু করলে আহারে বরকত হয়। (শামায়িলে তিরমিযি, তিরমিযি, আবু দাউদ, আহমাদ, হাকেম)
* আনাস ইবনে মালিক (রাযি,) রাসুল সাঃ হতে নকল করেন, যে ব্যক্তি নিজ ঘরে বরকত বৃদ্ধি আকাঙ্খা করে সে যেন তার সামনে খাবার উপস্থিত হলে হাত ধুয়ে নেয় এবং তা তুলে নেওয়ার পরেও হাত ধুয়ে নেয়। (আখলাকুন নবি সাঃ, ইফাবা, হাদিস নং ৬৫৪, )
* আহমদ ইবনে মানী (রহ.) আবু হুরায়রা রাঃ, রাসুল সাঃ হতে বর্ণনা করেন, শয়তান অত্যন্ত অনুভুতি সম্পন্ন এবং খুবই লোলুপ। নিজেদের ব্যাপারে তোমরা একে ভয় করবে। হাতে চর্বির গন্ধ নিয়ে কেউ যদি রাত যাপন করে আর হাতের যদি কোন ক্ষতি হয় তবে সে যেন, নিজেকেই মালামত করে।(মানে সে যেন নিজেকেই এর দায়িত্ব নেয়। (তিরমিযি)
(খাদ্য খাওয়ার পরে যদি হাত ভালভাবে পরিস্কার না করা হয় তাহলে খাদ্যের গন্ধে পোকামাকড়, পিপড়া, ইঁদুর এসে দংশন করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেক সময় অনেকে নখকে উঁইপোকা কামড়ে চামড়া তুলে নিয়েছে বলে অনেক ঘটনা আমরা দেখেছি। তাছাড়া সে খাদ্যে অনেক সময় এমন কোন স্থানে লেগে থাকে যেখান থেকে পঁচে আরও রোগজীবাণুর আখড়া তৈরি করে। আবার হাত ধোয়ার পরে কাপড়ে হাত মুছে নেয়াকেও ইসলাম সমর্থন করে।
রোগ ঠেকাতে হাত ধোয়ার প্রচলন খুব বেশি দিনের নয়। উনবিংশ শতকে প্রথম সচেতনতা তৈরি হয়। সদ্য প্রসূতি এবং আহত সৈনিকদের ক্ষেত্রে হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রথম চোখে পড়ে কিছু মানুষের। তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন হাঙ্গেরির চিকিৎসক ইগনাস সেমেলউইজ। ভিয়েনা, অস্ট্রিয়ায় কাজ করতে গিয়ে তাঁর এই অভিজ্ঞতা হয়। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলেরও এ বিষয়ে অবদান রয়েছে। তার আগে দুর্গন্ধকেই রোগ ছড়ানোর কারণ বলে মনে করতেন উন্নত দেশগুলির মানুষ। ১৯৮০-র দশকে এসে হাত ধোয়ার মতো জরুরি স্বাস্থ্যবিধি যে বহু রোগ প্রতিরোধে সক্ষম, তা নিয়ে সচেতন হয় মানুষ। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ছড়ানোর পর সচেতনতা বাড়ে বিশ্ব জুড়ে। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া। অথচ আমাদের রাসূল স. সেই কবে এই শিক্ষাকে জানিয়ে দিয়েছেন সুবহানাল্লাহ।
কেন হাত ধোয়া জরুরি
সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জার হাত থেকে রেহাই মেলে।
শ্বাসকষ্টজনিত সংক্রমণ রোখা যায়।
ডায়েরিয়া সংক্রমণ কমে।
শিশু মৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করে মা ও শিশুর হাত ধোয়ার অভ্যাস।
পাঁচ বছরের নীচের শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
হাত ধোয়ার সঠিক উপায়
খাবার আগে ও পরে উষ্ণ গরম পানিতে সাবান দিয়ে হাত ধুলে ভাল।
শৌচকর্মের পরে সাবান ব্যবহার অবশ্যই উচিত।
সাবানের বদলে মাটি বা ছাই ব্যবহার করা যায়।
হাতের কাছে আর কিছু না পেলে স্রেফ ঠান্ডা পানিতে ভাল করে হাত ধুয়ে তবেই খাবার মুখে তোলা উচিত।
নিরাপদ ও সুন্দর থাকতে হাত ধোয়া জরুরীঃ
অনেকে হাত ধোয়াকে এতই নগন্য ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মনে করে যে এটাকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করাতো দূরের কথা এটাকে বিরক্তি ও অযথা কাজ মনে করে। অথচ এই সুঅভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের সবার জন্য অবশ্যক। এতে জীবন হবে সুন্দর ও স্বাস্থ্য থাকবে নিরাপদ।
শুধু খাবার পূর্বে এবং বাথরুম ব্যবহারের পর হাত ধোয়া জরুরী নয় বরং সবসময়ই হাত ধোয়া প্রয়োজন। সবজি, মাছ গোস্ত কাটাকাটি ও ধরার পূর্বে, খাবার রান্না করার পূর্বে, খাবার পরিবেশন করার পূর্বে যেমন হাত ধোয়া প্রয়োজন তেমনি ভ্রমণ করার পর, অফিসে আসার পর, বাসায় যাওয়ার পর, বাহির থেকে ঘরে ফেরার পর, কোন কাজ করার পর অর্থাৎ প্রতি ক্ষত্রেই এটা অভ্যাসে পরিণত করা দরকার।
অনেকে হাত ধোয়া মানে পানি দিয়ে অল্প করে হাত ভেজানো মনে করেন। হোটেল রেস্তোরাঁয় প্রায়ই দেখা যায় খুব দ্রুত পানি দিয়ে এক হাত একটু ভিজিয়ে খেতে বসে যায়। এতে হাতের ময়লা আরো বেশী নরম হয়ে এবং খাবারে মিশে যেতে সহজ হয়। হাত ধুতে সাবান, লিকুয়িড বা পরিষ্কারক এন্টিসেপটিক জাতীয় তরল পদার্থ ব্যবহার করতে হবে। এক হাত নয় বরং দুই হাতে ভাল করে সাবান মাখিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে, নখে, হাতের সামনে-পিছনে ও কবজিতে ভালভাবে ঘষে পরিস্কার করা উচিত। ১০-১৫ সেকেন্ডের কম সময়ে নয় বরং ময়লা ও সাবানের পিচ্ছিল ভাব ভালভাবে দূর না হওয়া পর্যন্ত পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। হাতে বেশী ময়লা থাকলে একাধিকবার সাবান লাগাতে হবে।
আদরের সন্তান, ছোট ভাই বোন, ইত্যাদি পরিবার পরিজনকে একদম ছোট বয়স থেকে এই অভ্যাস গড়ে দেয়া গেলে এটা নিয়মিত কাজের মতোই মনে হবে, কঠিন বা বিরক্তি লাগবে না। তবে আমরা বড়রাই যদি গাফলতি করি তাহলে ছোটরা কি শিখবে? তাই সবাইকে হাত ধোয়ার ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। ইসলামের নির্দেশনায় চললে অনেক রোগ থেকে হেফাজতে থাকা যায়, ভাল একটি অভ্যাস জীবনে গড়তে পারলে দেখবেন জীবন আসলেই খুব সুন্দর।
৩। প্রতিটি ব্যক্তির শারিরীক সুস্থ্যতার জন্য আরো কিছু স্বভাবজনিত নির্দেশনা
রাসূল স. বলেছেন, মানুষের ফিতরাত বা স্বভাব মোট পাঁচটি। অর্থাৎ পাঁচটি মৌ্লিক বিষয় বা কাজ মানুষের স্বভাব জাতের অন্তর্ভূক্ত।
১। খৎনা করা,
২। নখ কাটা,
৩। নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করা,
৪। বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং
৫। গোঁফ ছাঁটা। সহিহ আল বুখারী: ৫৪৬১,৫৪৬৩
আমরা প্রত্যেকেই যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখি তাহলে প্রতিটি কাজই একজন মানুষকে অনেক ধরনের রোগের সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করে থাকে।
এছাড়া ৫টি কাজের সাথে আরো কিছু কাজের কথা অপর হাদীসে এসেছে তা হলো—
৬। মিসওয়াক করা,
৭। নাকে পানি দেয়া,
৮। আংগুলের জোড়াগুলো ধোয়া,
৯। ইস্তেঞ্জা করা,
১০।দাড়ি লম্বা করা এবং হাদীসটি বর্ণনাকারী বলেছেন আরেকটি ভুলে গিয়েছেন সম্ভবত সেটা হবে কুলি করা। সহিহ মুসলিম: ৪৯৭,৪৯৮
রাসূল স. বলেছেন, গোঁফ ছোট করতে, নখ কাটতে এবং নাভি অ বগলের লোম পরিষ্কারের জন্য সর্বোচ্চ চল্লিশ দিন সময় নির্ধারন করেছেন। মুসলিম: ৪৯২ আবু দাউদ: ৪১৫২
এছাড়া প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত অযু করার মাধ্যমে যে জায়গাগুলোতে ময়লা জমতে পারে সেজায়গাগুলো বাধ্যতামূলক পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি অনেক ধরনের মহামারি থেকে সুরক্ষিত থাকে।
৪। রোগ বিস্তার রোধে অসুস্থ ব্যক্তিকে কিছু সময়ের জন্য আলাদা রাখা—
অসুস্থ ব্যক্তি থেকে যেন মহামারি আকারে রোগ ছড়িয়ে না পড়ে সেই ব্যপারে সতর্কতার শিক্ষাও ইসলাম দিয়েছে। যেমন—
সুস্থ ব্যক্তি যেকোন জায়গায় বা আলোচনা সভায় অংশগ্রহন করতে পারে। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ্য ব্যক্তির মাঝে আনা উচিত নয়। মুয়াত্তা ইমাম মালিক: ৩৪৮৩, ইবনে মাজা: ৩৫৪১
যখন কোনো কুষ্ঠরোগীর সাথে কথা বলার প্রয়োজন হয়,তখন তাদের মাঝে এক ধনুকের দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলবে। মুসনাদে আবি ইয়ালা: ৬৭৪১
রাসূল স. যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি তাঁর হাত বা কাপড় মুখে রাখতেন এবং যথাসম্ভব আস্তে শব্দ করে হাঁচি দিতেন। আবু দাউদ: ৪৯৪৫
একজন ইউরোপীয়ান গবেষক ডাক্তার হাঁচির উপর গবেষনা করে দেখেছেন যে, একবার হাঁচি দিলে শরীর থেকে প্রায় তিন হাজার জীবানু বের হয়ে যায়। সাধারনত হাঁচি দুবার দিয়ে থাকে।
রাসূল স. মহান আল্লাহ হাঁচি আসাকে পছন্দ করেন কিন্তু হাই তোলা পছন্দ করেন না। সহিহ আল বুখারী: ৫৭৮২
হাঁচিদাতার উওত্তর দিতে হবে তিনবার। এর অধিকবার কেউ হাঁচি দিলে সে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত। আত তিরমিযী: ৩৭১৪
এই রকম আরো অনেক রোগের ব্যপারে সাবধানতা রক্ষা করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন যেন পরিবেশ ও সুস্থ্য ব্যক্তিরা ভালো থাকেন।
৫। কিছু বাধ্যতামূলক আনুষ্ঠানিকতা যা সুস্থ্য থাকার জন্য অত্যাবশ্যক
মহান আল্লাহ বান্দাহকে এতো ভালোবাসেন যে, যে কাজগুলো দিয়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য ও কল্যান লাভ করতে পারবে মানুষ, তিনি সেই কাজগুলোকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন কারন, মানুষ তা না হলে কাজগুলো সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে করবে না এবং এর কল্যান থেকে বঞ্চিত হবে। সুবহানাল্লাহ।