রোগ ও রোগী-ইসলাম কি বলে!-১০

মৃত পিতা মাতা/ মুসলিম ভাইয়ের জন্য করনীয়

 

**** কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবার জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলো:

১. বেশী বেশী দু‘আ করা  

আল-কুরআনে এসেছে,

رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا

‘‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪)

رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١﴾ [ابراهيم: ٤١]

‘‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’’ (সুরা ইবরাহীমঃ ৪১)

এছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ

رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨

‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।(সূরা নুহ: ২৮)

মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-

ক. সদকায়ে জারিয়া

খ. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়

গ. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে সহিহ মুসলিম: ৪৩১০

২. দান-সাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করা

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেছেন। তাই কোন অসিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-সাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে সাদকা করলে তিনি কি এর সাওয়াব পাবেন? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’সহীহ মুসলিম: ২৩৭৩

৩. মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে’’  সহীহ বুখারী: ১৯৫২

৪. হজ্জ বা উমরাহ করা

জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ সহীহ বুখারী: ১৮৫২

তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে।

৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করা

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন।  সহীহ মুসলিম: ৫২০৩

৬. মা-বাবার অসিয়ত পূর্ণ করা

রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রা. বলেন,

আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য অসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তাকে ডাকো, সে আসলো, রাসূলুল্লাহ সা. তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে ? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে ? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা।                                                                        (সহীহ ইবন হিববান :১৮৯)

৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা

আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রা. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রা. এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন, যে গাধায় আব্দুল্লাহ রা. উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পড়া ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ: সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়-(এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রা. বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রা. এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ’’                        (সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭)

৮. মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ সহীহ ইবন হিববান:৪৩২

৯. ঋণ পরিশোধ করা

মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সা. ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,

‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ না তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। (সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩)

১০. কাফফারা আদায় করা

মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা, ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’’।          (সহিহ মুসলিম: ৪৩৬০)

এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।

১১. ক্ষমা প্রার্থনা করা

মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কিভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’’ ।       (আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬)

১২. মান্নত পূরণ করা

কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট আসলে তিনি বললেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর।

  (সহীহ ইবন হিববান:২৮০)

১৩. মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা

মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ, কাউকে মাসিক বা বছরে নির্দিষ্ট দান করে যেতেন, এই ধরনের কাজগুলো  সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে।

যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ (সহীহ মুসলিম:২৩৯৮)

১৪. কবর যিয়ারত করা  

সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,

আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় ।

সুনান তিরমীযি : ১০৫৪

যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।  সুনান তিরমীযি :১০৫৪

কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না।

১৫. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা

মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেঁচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে।

আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।     সূরা বনী ইসরাঈল: ৩৪

১৬. কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না।’’  সহিহ মুসলিম: ৬৯৮০

১৭. মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।                                                                            (সুনান আত তিরমিজি :২৪২৮)

সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন!

*** যেকোন মুসলিম মৃত ব্যক্তি কেবল ঐ সকল জিনিস দ্বারাই উপকার লাভ করতে পারে যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত যেমন:

১। রাসূল স. বলেনঃ

“মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার আমলের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতীতঃ সদকায়ে জারিয়া,এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন নেককার সন্তান যে তার জন্য দু’আ করে”। মুসলিম:৩০৮৪

  • সদকায়ে জারিয়া,
  • এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং
  • এমন নেককার সন্তান যে তার জন্য দু’আ করে”।

২।  আনাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেনঃ

“সাত প্রকার কাজের সওয়াব মারা যাওয়ার পরও বান্দার কবরে পৌঁছতে থাকে। যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেয়, নদী-নালায় পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করে, কুপ খনন করে, খেজুর গাছ রোপন করে, মসজিদ তৈরী করে, কুরআনের উত্তরাধিকারী রেখে যায় অথবা এমন সুসন্তান রেখে যায় যে তার মারা যাওয়ার পরও তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমার জন্য দুয়া করে।

আল্লামা আলবানী (রাহ:) কর্তৃক রচিত সহীহুত তারগীব ওয়াত্ তারহীব:৭৩

  • দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেয়া
  • নদী-নালায় পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা,
  • কুপ খনন করা,
  • ফলবান গাছ রোপন করা,
  • মসজিদ তৈরী করা,
  • কুরআনের উত্তরাধিকারী রেখে যাওয়া অথবা
  • এমন সুসন্তান রেখে যাওয়া যে তার মারা যাওয়ার পরও তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমার জন্য দু’আ করে।

৩) নবী সা. বলেনঃ

“যে ব্যক্তি ইসলামে কোন সুন্নত চালু করল সে ব্যক্তি এই সুন্নাত চালু করার বিনিময়ে সওয়াব পাবে এবং তার মারা যাওয়ার পর যত মানুষ উক্ত সুন্নাতের উপর আমল করবে তাদেরও সওয়াব সে পেতে থাকবে। অথচ যারা আমল করবে তাদের সওয়াব কিছুই হ্রাস করা হবে না। ”সহীহ মুসলিম: ১০১৭

মৃত ব্যক্তি যদি তার জীবদ্দশায় কোন পরিত্যক্ত সুন্নতকে আমলের মাধ্যমে পূণর্জীবিত করে এবং তার মৃত্যুর পরেও উক্ত আমল চালু থাকে।

৪) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোন দান-সদকা করা হলে মৃত ব্যক্তি তার সওয়াব লাভ করে।

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি নবী সা. কে বললেন,আমার পিতা-মাতা অর্থ-সম্পদ রেখে মারা গেছেন। এ ব্যাপারে তারা আমাকে কোন ওসিয়ত করে যাননি। এখন আমি তাদের উদ্দেশ্যে দান-সদকা করলে তা তাদের জন্যে কি যথেষ্ট হবে? তিনি সা. বললেন,“হ্যাঁ”।

৫)  জীবিত মুসলিমগণ মৃত মানুষের জন্য দু’আ ও ইস্তেগফার করলে তাদের নিকট এর সওয়াব পৌঁছে।

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

“যারা তাদের পরবর্তীতে আগমণ করেছে (অর্থাৎ পরে ইসলাম গ্রহণ করেছে) তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যে সকল ঈমানদার ভাই অতিবাহিত হয়ে গেছেন তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মুমিনদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ বদ্ধমূল রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তো পরম দয়ালু, অতি মেহেরবান। ” সূরা হাশর: ১০

উপকারী এবং স্থায়ী দান কয়েক প্রকার: (বিভিন্ন প্রকার সদকায়ে জারিয়ার উদাহরন)

১) পানির ব্যবস্থা করা (বিশুদ্ধ পানির জন্য ফিল্টার দিতে পারেন)

২) এতিমের/ বিধবার প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা

৩) অসহায় মানুষের বাসস্থান/কর্ম সংস্থান তৈরি করা

৪) গরীব তালিবে ইলমকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। কুর’আনের হাফেজ হতে সহায়তা করা।

৫) দাতব্য চিকিৎসালয় বা হাসপাতাল নির্মান, একটি হুইল চেয়ার বা বেড বা চেয়ার দান করা

৬) মসজিদ নির্মান। মসজিদে ফ্যান,বই, ইত্যাদি হাদিয়া হিসেবে দেয়া।

৭। জ্ঞান অর্জনের জন্য সঠিক বই হাদিয়া দেয়া ( বেসিক জ্ঞানের জন্য সহিহ ঈমান, সালাত, অজু, গোসল ফরয ওয়াজিব, শিরক বিদয়াত ইত্যাদি)

৮। রক্ত দান করা/ চিকিৎসায় সহযোগীতা করা

৯। ফলদায়ক গাছ লাগানো ( আপনি দূরে কোথাও সফরে যাচ্ছেন, রাস্তার পাশের পড়ে থাকা জমিতে ফলের বীজ ছিটিয়ে দিতে পারেন)

১০। কল্যানমূলক কাজ যা মানুষের মৌ্লিক চাহিদাকে পূর্ণ করে সেটা শরীয়ত মুতাবিক ব্যবস্থা করে দেয়া।

১১। কল্যানমূলক জ্ঞান বিতরন ও পাঠাগার গঠন করে দেয়া।

জীবিত মানুষের পক্ষ থেকে মৃত মানুষের নিকট সওয়াব পৌঁছানোর ব্যাপারে উপরোল্লোখিত হাদীস সমূহ দ্বারা আমাদের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।