দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ তা’আলার নামে শুরু
আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
মানবজীবন প্রতিনিয়তই কোন না কোন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। কোন সফলতাই পরীক্ষা ও পরিশ্রম ছাড়া অর্জন সম্ভব নয়। দুনিয়ার জীবনেও কিছু পেতে চাইলে অনেক পরিশ্রম, চড়াই উৎড়াই পার হয়েই সাফল্যের মুখ দেখতে পায়। প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু রোগ শোক, সমস্যা, বিপদ এসে থাকে যা ব্যক্তিকে অস্থিরতা এনে দেয় বা অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু যে ব্যক্তি জীবনের এই সকল অবস্থা কেনো আসে, তা জানেন, সেই ব্যক্তি কখনো হতাশ হয় না। বরং এই সকল অবস্থায় কি করনীয় যা তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে, তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।
মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। সূরা আল বাকারা: ১৫৫
হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। সূরা ইউনুস: ৫৭
আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। সূরা বনী ইসরাঈল:৮২
যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। সূরা আশ শুয়ারা: ৮০
বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। সূরা হামীম আস সাজদাহ: ৪৪
সহজ ভাবে জীবনের রোগ শোকের অবস্থা কেনো ও কি করনীয় তা সংক্ষেপে উল্লেখ করার চেষ্টা রইলো। মহান আল্লাহর দয়া ও করুনায় যেনো রোগ শোকে কাতর ব্যক্তির জীবনে সবর ও সবরের বিনিময় লাভের উপযুক্ততা আনতে পারেন –তারই ক্ষুদ্র প্রয়াস। মহান আল্লাহ আমাদের জানার, বুঝার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমাদের প্রত্যেককে সবরকারী হিসেবে তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়ার সুযোগ করে দিন। আমীন।
রোগ কি ও রোগের প্রকারভেদ
রোগ বা অসুস্থ্যতা হলো সুস্থ্যতার বিপরীত।
রাসূল স: বলেছেন, নিশ্চয়ই মানুষকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন নিয়ামত প্রদান করা হয় নাই। আন নাসাঈ: ১০৭২২
আর এই সুস্থতা হলো শারিরীক ও মানসিক সুস্থ্যতা।
রাসূল স: বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যুষে সুস্থতা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে, বাসায় নিরাপদে থাকে, সারা দিনের খাদ্য সামগ্রী তার নিকট মজুদ থাকে, তাহলে তাকে এ পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ দেয়া হয়েছে। আত তিরমিযী: ২৩৪৬
স্বাস্থ্য ও অবসর মহান আল্লাহর নিয়ামতসমূহের মধ্যে দুটি বিশেষ নিয়ামত। অধিকাংশ লোক এ দুটি নিয়ামতের ব্যপারে ক্ষতি ও ধোঁকায় পতিত রয়েছে। মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪০
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে নেয়া–
“রোগ/ব্যাধি/অসুস্থতা হল কোন জীবের দেহের (বা মনের) কোনো অস্বাভাবিকতা, অক্ষমতা বা স্বাস্থ্যহানি। রোগের বিপরীত বা সুস্বাস্থ্য মানে শুধু নির্ধারণযোগ্য নামওয়ালা কোন রোগের অভাবই নয়, নীরোগ অটুট ভাল স্বাস্থের সঙ্গে উৎকৃষ্ট জীবনযাপনের অন্য সব উপাদান (যেমন আনন্দময় কর্মসংস্থান, মনঃসংযোগ ইত্যাদি যেগুলিকে কোয়ালিটি অফ লাইফ বা জীবন উৎকর্ষের মাত্রা দ্বারা পরিমাপের চেষ্টা হয়েছে)। যে ব্যক্তি বা জীব রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে সে হল রোগী বা অসুস্থ।
রোগ বা অসুস্থতা ব্যাপ্ত অর্থে যে কোন শারীরিক অসুবিধা, বেদনা, দুঃখ বা দুস্থতা বোঝাতে পারে। এই ব্যাপ্ত অর্থের মধ্যে কখনো কখনো চোট, আঘাত, পঙ্গুত্ব, বিকলাঙ্গতা, নানা সিন্ড্রোম, সংক্রমণ, রোগ ব্যতিরেকে কেবল মৃদু উপসর্গ (যেমন সাব ক্লিনিকাল ডিজিজ), অস্বাভাবিক ব্যবহার, অঙ্গসংস্থানিক গাঠনিক পরিবর্তন বা শারীরবৃত্তীয় অস্বাভাবিকতা ইত্যাদিকেও কোনরকম রোগ বলে গণ্য করা যেতে পারে। শারিরীক ছাড়াও মনন, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব ও জীবনযাপনের অনেক কিছুর অসংগতিকেও এর আওতায় ফেলা যেতে পারে”।
বিভিন্ন গোষ্ঠী বা ধর্মে রোগ সম্পর্কে না না অভিমত ব্যক্ত করা আছে। এমনকি কিছু মুসলিম অজ্ঞতার কারনে রোগ সম্পর্কে ভুল ধারনা করে থাকেন। বেশীরভাগ মনে করেন যে, রোগ বা অসুস্থতা পাপাচারের ফলাফল বা আল্লাহর শাস্তিস্বরুপ। কিন্তু প্রকৃ্ত অবস্থা এটা নয়। রোগ কল্যান ও সফলতার সোপান এবং সাফল্যের কষ্টিপাথর।
মহান আল্লাহ এমন কোন রোগ বা ব্যাধি সৃষ্টি করেননি, যার ঔষধ বা প্রতিষেধক তিনি পাঠাননি বা সৃষ্টি করেননি। সহিহ বুখারি: ৫২৬৭
প্রত্যেক রোগেরই ঔষধ আছে। সুতরাং যখন রোগ অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করা হয়,তখন আল্লাহর হুকুমে রোগী আরোগ্য লাভ করে থাকে। সহিহ মুসলিম: ৫৫৫৫
মহান আল্লাহ বলেছেন-
যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। সূরা আশ শুয়ারা: ৮০
রোগের প্রকারভেদ
মুলত দুই ধরনের রোগ রয়েছে।
১। মানসিক ও ২। শারীরিক
এছাড়া মানসিক অসুস্থতা যখন অবহেলায় বা বুঝতে না পারার কারনে চিকিৎসা করানো হয় না, তখন তা প্রকট আকার ধারন করে সাইকোসোমাটিক ডিজওর্ডারে রুপ নেয়।