কোন রোগী দেখতে গেলে আমাদের কিছু করনীয় থাকা দরকার। রোগীর ভালো ও কাজে লাগবে এমন কিছু নিয়ে যাওয়া (হাদিয়া) সুন্নাত। কিন্তু শুধুমাত্র ফল বা কোন খাবার নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ নয়। এই কাজটিও যেন আমার ইবাদাত হয় তার জন্য সচেতন থাকা প্রয়োজন। রোগী দেখতে যাওয়া সেটা আত্মীয় অনাত্মীয়, মুসলিম অমুসলিম যে কারোর জন্যই হতে পারে। আমাদের সমাজে দেখা যায় কে কি মনে করবে এই চিন্তাটা সামনে রেখে রোগী দেখতে যায়, যা ইবাদত কবুল হওয়ার অন্তরায়। আবার অনেকে রোগী দেখতে যেয়ে শুধুমাত্র কিছু অপ্রয়োজনীয় গল্প গুজব করে চলে আসেন।
সাধারন ভাবে একজন ব্যক্তিকে নিজের অবস্থান মানুষ > মুসলিম > আত্মীয়/অনাত্মীয় হিসেবে দায়িত্ব পালন বা ভূমিকা রাখতে হয়।
একজন ডাক্তার হলে দুটি অবস্থান নিয়ে সচেতন হতে হবে।
১- ডাক্তার হিসেবে রোগীর প্রতি ভূমিকা
২- মুসলিম হিসেবে রোগীর প্রতি ভুমিকা
প্রতিটি ভুমিকার পিছনে যে শর্ত থাকা দরকার তা হলো
১-একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়্যত থাকা।
২-মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহীতার অনুভূতি রাখা.
৩-শরীয়তের সীমারেখার ব্যপারেও সচেতন থাকা।
রাসূল স. শিখিয়ে দিয়েছেন কোনো রোগী দেখতে গেলে কি করতে হবে। রোগীর অবস্থা বুঝেই রোগীকে দেখতে যেতে হবে।
১। প্রথমেই মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহর খুশি বা সন্তুষ্টির জন্য রোগী দেখতে যাওয়া।
যেমন একটি বড় হাদীসের(সহিহ মুসলিম: ৬৩২৪ এর কিয়দংশ)- রাসূল স.বলেছেন-
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা (কোন কোন বান্দাকে) বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার সেবা-শুশ্রুষা করোনি। তখন বান্দা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনিতো সমগ্র জাহানের মালিক! আমি কি করে আপনার সেবা শুশ্রুষা করতে পারি? তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দাহ অসুস্থ হয়েছিল? কিন্তু তুমি তার সেবা করোনি। যদি তুমি তার সেবা করতে, তাহলে তুমি আমারই সেবা-শুশ্রুষা করতে, অর্থাৎ আমাকেই পেতে”।
২। রোগীর মানসিক শান্তির দিকে নজর দিতে হবে।
রোগীকে অভয় দান, সান্ত্বনা দান, সাহস যোগানো মূলক কথা বলতেন রাসূল স.। রোগীর সামনে ভালো কথা বলা ও হালকা কথা বলতেন। রোগী যেন মানসিকভাবে সুস্থ ও চিন্তামুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রেখে কথা বলতেন।
রাসূল স. আবু সাঈদ খুদরী রা.কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তুমি যখন কোন রুগ্ন ব্যক্তির কাছে তার সেবা করতে যাবে, তখন তার জীবনের ব্যপারে শংকামুক্ত করো। অর্থাৎ তার দীর্ঘ জীবন(হায়াত) সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করবে। এটা অবশ্য তকদীরকে রদ করতে পারবে না। তবে এতে রোগীর মন অবশ্যই খুশী হবে। আত তিরমিযী: ২০৩৬ ও ইবনে মাজাহ: ১৪৩৮
রাসূল স. যখন রোগী দেখতে যেতেন, তখন তাকে বলতেন, চিন্তার কোন কারন নেই, সবকিছু ভালো হয়ে ও ঠিক আছে ইন শা আল্লাহ। আপনি সমস্ত গুনাহ থেকে পাক পবিত্র হয়ে সুস্থ হয়ে উওঠবেন।
সহিহ বুখারি: ৫২৫১
৩। রোগীর সাথে ভালো ও পজিটিভ কথা বলতে হবে ও মহান রবের প্রতি সন্তুষ্টিমূলক কথা স্মরন করিয়ে দিতে হবে।
রাসূল স. বলেছেন, তোমরা যখন কোনো রুগ্ন ব্যক্তির নিকট যাবে, তখন তার সাথে ভালো ভালো কথা বলবে। কারন তোমরা যা কিছু বলো ফেরেশতারা তা শুনে আমীন বলে থাকে। সহিহ মুসলিম: ২০০০
৪। মাহরাম ব্যক্তির কপালে বা হাত ধরে সুন্দর করে কুশলাদি জানবে।
হযরত আবূ উমামা রা.বর্ণনা করেন, রোগীকে শুশ্রুষা করার উত্তম নিয়ম হলো তুমি যখন রোগীর কপাল বা হাতে হাত রাখবে, তখন জিজ্ঞেস করবে, আপনি কেমন আছেন?
অনেকে বয়স্ক গায়ের মাহরামের কপালে/গায়ে/ হাতে হাত দিয়ে ফেলেন যা পর্দার ফরয লংঘন হয়ে থাকে।
এখানে সুন্নাত পালন করতে গিয়ে যেন ফরয পর্দার লংঘন না হয় তা অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।
৫। রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় পথ্য অর্থাৎ এমন খাবার নিয়ে যাওয়া বা পাঠানো প্রয়োজন যা রোগীর পছন্দ ও শক্তিবর্ধক এবং অবশ্যই তা ডাক্তারের অনুমতি থাকতে হবে।
রাসুল স. জনৈক রোগী দেখতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কিছু খেতে চাও? রোগী উত্তর দিলো, যবের রুটি। তখন রাসূল স. বললেন, যার কাছে যবের রুটি আছে সে যেন তার এই ভাইয়ের(মুসলমান) কাছে পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর বললেন, যদি তোমার কাছে কোন রোগী কোন কিছু খেতে চায়, তাহলে( তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেনো) তাকে তা আহার করায়। ইবন মাজাহ: ৩৪৪০
৬। রোগীকে খাবার খাওয়াতে বল প্রয়োগ বা জোরাজুরি করা উচিত নয়।
রোগীকে বুঝিয়ে রুচি করে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে বমি করে ফেলতে পারেন বা হজম করতে অসুবিধা হতে পারে।
তোমরা তোমাদের রোগীকে পানাহার করতে পীড়াপীড়ি করবেনা। কেননা আল্লাহ তাদের পানাহার করান। ইবনে মাজাহ: ৩৪৪৪
৭। রোগীর কাছে কম সময় অবস্থান করা।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, রোগীর নিকট কম সময় বসা এবং শোরগোল কম করা সুন্নাত।
অনেক বেশী সময় দর্শনার্থীর অবস্থানে রোগীর বিশ্রাম বা শুশ্রুষাকারীর কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
৮। রোগীর সুস্থ্যতার জন্য মহান রবের কাছে কায়মনোবাক্যে দু’আ করা।
হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল স. এর রীতি ছিলো, যখনই তিনি পীড়িত ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন তখন তার জন্য এভাবে দু’আ করতেন, আল্লাহুম্মা রব্বান্নাস, আযহিবিল বা’সা ইশফি ওয়া আনতাশ শাফী,লা শিফাআ ইল্লা শিফায়ুকা শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।
হে আল্লাহ! আপনি অসুস্থ্যতা দূর করে দিন। আরোগ্য দান করুন। আর মানব জাতির প্রতিপালক! আপনিই আরোগ্যদানকারী। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোন নিরাময় নেই। আপনি এমন নিরাময় দান করুন যাতে অসুস্থ্যতার কোন চিহ্ন না থাকে। সহিহ বুখারি: ৫২৬৪ ও সহিহ মুসলিম: ৫৫২১
৯। মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা যিনি দর্শনার্থীকে সুস্থ্য রেখেছেন।
যে ব্যক্তি কোন ব্যাধিগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত লোককে দেখে বলে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি তোমাকে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তাঁর বহু সংখ্যক সৃষ্টির উপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন, সে কখনো উক্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না। আত তিরমিযী: ৩৩৬৬
১০। দর্শনার্থী মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করবে
কেউ যখন কোন বিপদগ্রস্ত লোক দেখবে তখন সে প্রার্থনা করবে। তবে বিপদগ্রস্ত লোকটি যেনো তা শুনতে না পায়। আত তিরমিযী: ৩৩৬৪
বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি মনে যেন কষ্ট না পান সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
আরো কতগুলো বিষয় একজন মুসলিম হিসেবে খেয়াল রাখা দরকার যা রোগীকে বা রোগীর সাথে অবস্থানকারীকে স্মরন করিয়ে দেয়া প্রয়োজন—
১। রোগীর পবিত্রতার সহজদিক বজায় রাখা। জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষনীয়-
তার শারীরিক পবিত্রতা। এইক্ষেত্রে তার প্রাইভেট অংগের পরিচ্ছন্নতা আছে কি না লোম কাটা/নখ কাটা আছে কি না তা স্মরন রাখা।
২। সালাত,সাওম ও পর্দার ব্যবস্থাপনার কথা স্মরন করিয়ে দেয়া
৩। সবর ও দুয়া যিকিরের কথা স্মরন করিয়ে দেয়া
৪। মানসিক দুশ্চিন্তার লাঘবের জন্য পরামর্শ দেয়া
৫। কোন ধরনের সহযোগীতা করার আগ্রহ পোষন করে প্রস্তাব করা
৬। আর্থিক সহযোগীতার প্রয়োজন থাকলে সাহায্য করা।
৭। নিজ অক্ষমতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং রোগীর কাছে দু’আ চাওয়া।
৮। রোগীর জন্য দু’আ করা
মৃত্যু আসন্ন নয় এমন কোনো রোগীর ক্ষেত্রে দু’আ
أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفيَكَ»
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন রুগ্ন মানুষকে সাক্ষাৎ করবে, যার এখন মরার সময় উপস্থিত হয়নি এবং তার নিকট সাতবার এই দো‘আটি বলবে, ‘আসআলুল্লাহাল আযীম, রাব্বাল আরশিল আযীম, আঁই য়্যাশ্ফিয়াক’ (অর্থাৎ আমি সুমহান আল্লাহ, মহা আরশের প্রভুর নিকট তোমার আরোগ্য প্রার্থনা করছি), আল্লাহ তাকে সে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান সূত্রে, হাকেম, বুখারীর শর্তে সহীহ সূত্রে)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেউ মৃত্যু আসন্ন নয় এমন কোনো রোগীকে দেখতে গেলে, সে তার সামনে এই দোআ সাতবার পাঠ করবে, এর ফলে আল্লাহ তাকে (মৃত্যু আসন্ন না হলে) রোগমুক্ত করবেন। এ দো‘আ সাতবার পড়বে। তিরমিযী, নং ২০৮৩; আবূ দাউদ, নং ৩১০৬।
لاَ بأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّه
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পীড়িত বেদুঈনের সাক্ষাতে গেলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগীকেই সাক্ষাৎ করতে যেতেন, তাকে বলতেন, ‘‘লা-বা’স, ত্বাহুরুন ইনশাআল্লাহ।’’ অর্থাৎ কোন ক্ষতি নেই, (গোনাহ থেকে) পবিত্র হবে ইন শাআল্লাহ। (বুখারী)
আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, জিবরীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ জিবরীল তখন এই দো‘আটি পড়লেন, ‘বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীকা, অমিন শার্রি কুল্লি নাফসিন আউ ‘আইনি হা-সিদ, আল্লা-হু য়্যাশফীকা, বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা।’
অর্থাৎ আমি তোমাকে আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু থেকে এবং প্রত্যেক আত্মা অথবা বদনজরের অনিষ্ট থেকে মুক্তি পেতে ঝাড়ছি। আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাকে ঝাড়ছি। (মুসলিম)
জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া রোগীর দো‘আ
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الْأَعْلَى».
(আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া আলহিক্বনী বির রফীক্বিল আ‘লা)।
“হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন এবং আমাকে সর্বোচ্চ বন্ধুর সঙ্গ পাইয়ে দিন।” বুখারী ৭/১০, নং ৪৪৩৫; মুসলিম ৪/১৮৯৩, নং ২৪৪৪।
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সময় তাঁর দু’হাত পানিতে প্রবেশ করিয়ে তা দিয়ে তাঁর চেহারা মুছছিলেন এবং বলছিলেন,
« لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَاتٍ».
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, ইন্না লিল মাওতি সাকারা-তিন)
“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, নিশ্চয় মৃত্যুর রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ভয়াবহ কষ্ট।
বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ), ৮/১৪৪, নং ৪৪৪৯; তবে হাদীসে মিসওয়াকের উল্লেখও এসেছে।
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, আল্লা-হু আকবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ)
“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, যাবতীয় রাজত্ব তাঁরই, তার জন্যই সকল প্রশংসা, আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি নেই।”
সহীহুত তিরমিযী ৩/১৫২; সহীহ ইবন মাজাহ ২/৩১৭।
মরণাপন্ন ব্যক্তিকে তালক্বীন (কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া)
সাধারনত এই ধরনের রোগীরা হাসপাতালে আই সি ইউ বা সি সি ইউ তে থাকেন, ফলে একান্ত আপনজনেরা সব সময় কাছে যেতে বা থাকতে পারেন না। এই সময়ে বিশেষ করে ডাক্তার ও নার্সরাই কাছে থাকেন বেশী। তাই এদের অবশ্যই জানা থাকা প্রয়োজন। একজন ডাক্তার বা নার্স হিসেবে চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা নেয়ার পাশাপাশি মুসলিম হিসেবে যে ব্যবস্থাপনা নেয়ার কথা, তা স্মরন রাখা ও সেইভাবে কাজ করা প্রয়োজন। ডাক্তার বা নার্স বা ওয়ার্ড বয় প্রত্যেকের মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই সময়টি একদিন তার জীবনেও আসবে, সেই সময় যেনো তার ভাগ্যে এই কলেমা পড়ার অবস্থা থাকে, সেই অনুভূতি নিয়েও মরনাপন্ন রোগীর সাথে আচরন করা প্রয়োজন।
আবার যখনই আপনজনেরা কাছে যাবেন তখন কলেমার তালকীন করা অবশ্য কর্তব্য। রাসূল স. বলেছেন- “যার শেষ কথা হবে-
« لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ».
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ)
‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই’— সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
আবূ দাউদ: ৩/১৯০, নং ৩১১৬; সহীহুল জামে: ৫/৪৩২।
রোগী যদি মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তার কাছে উপস্থিত ব্যক্তি যদি নিশ্চিত হয় যে, তার মৃত্যু এসে গেছে, তাহলে তার উচিৎ তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ার কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়া, যেমনটি রাসূল সা. আদেশ করেছেন।
ইমাম মুসলিম আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু রোগীদেরকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাও’
(সহিহ মুসলিম: অধ্যায়, হা/৯১৬)।
সে শুনতে পায় এমন শব্দে তার নিকট আল্লাহর যিকর করবে। ফলে সে স্মরণ করবে এবং আল্লাহর যিকর করবে। মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ার জন্য আদেশ করা উচিৎ নয়। কেননা তার মনটা ছোট হয়ে যাওয়া এবং তার এই কঠিন অবস্থার কারণে সে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলতে অস্বীকার করে বসতে পারে। আর অস্বীকার করে বসলেই তার শেষ ভাল হবে না। সেজন্য তার শয্যাপাশে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ে তাকে এই কালিমা স্বরণ করাবে। অর্থাৎ তাকে বলবেনা যে, হে অমুক! লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়]।
যদি তাকে স্বরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে স্বরণ করে এবং ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ে, তাহলে তখন চুপ হয়ে যাবে এবং তার সাথে আর কোনো কথা বলবে না- যাতে দুনিয়াতে তার সর্বশেষ কথাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। কিন্তু মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি তারপর আবার অন্য কোন কথা বলে ফেলে, তাহলে আবার তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাবে- যাতে তার শেষ কালেমাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।
আমাদের সমাজে একটি হাদীস সূরা ইয়াসীন পড়ার ব্যপারে প্রচলন আছে সেতা কতটুকু সহিহ তা চলুন জানি।
আর মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতকে অনেক বিদ্বান সুন্নত বলেছেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়’।
আবু দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১; ইবনু মাজাহ: হা/১৪৪৮; আহমাদ, ৫/২৬, ২৭।
তবে কেউ কেউ হাদীসটি যঈফ বলেছেন। সুতরাং যার দৃষ্টিতে হাদীসটি সহীহ, তার নিকট সুরা ইয়াসীন পড়া সুন্নাত। পক্ষান্তরে যার দৃষ্টিতে হাদীসটি যঈফ, তার নিকট সূরাটি পড়া সুন্নাত নয়।
অনুরূপভাবে হাদীসটিকে ইমাম আলবানী ‘যঈফ’ বলেছেন (আলবানী, সুনানে আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১)।
তিনি ‘ইরওয়াউল গালীল’-এ বলেছেন, হাদীসটিতে তিনটি ত্রুটি রয়েছে:
১. (হাদীছটির একজন বর্ণনাকরী) আবূ উছমান ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত,
২. তার পিতাও ‘মাজহূল এবং
৩. হাদীছটিতে ‘ইযত্বিরাব’ রয়েছে (৩/১৫১, হা/৬৮৮)।
সেজন্য শায়খ ইবনে বায (রহেমাহুল্লাহ)কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, হাদীসটিতে যেহেতু একজন ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছে, সেহেতু মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা উত্তম নয়।
অবশ্য তার নিকট পবিত্র ক্বুরআন পড়া ভাল। কিন্তু সূরা ইয়াসীনকে নির্দিষ্ট করে নেওয়ার কোন যুক্তি নেই (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৩/৯৫)।
আলেমগণ মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কেবলামুখী করা মুস্তাহাব বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ
“বায়তুল্লাহু তোমাদের জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় কিবলা”।
ইমাম আবু দাউদ ওসিয়ত অধ্যায়ে বর্ণনা করেন, “বায়তুল হারাম তোমাদের জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় কিবলা”।