যখন কোন ব্যক্তি বা রোগী মারা যান তখন যিনি কাছে থাকেন, তিনি মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করে দিবেন সাথে সাথে এবং দু’আটি পড়বেন।
মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করানোর দো‘আ
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِفُلاَنٍ (بِاسْمِهِ) وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ
يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ».
(আল্লা-হুম্মাগফির লি ফুলা-নিন (মৃতের নাম বলবে) ওয়ারফা‘ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যীন, ওয়াখলুফহু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীন, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রব্বাল আ-লামীন। ওয়াফসাহ্ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাউইর লাহু ফী-হি)।
“হে আল্লাহ! আপনি অমুককে (মৃত ব্যক্তির নাম ধরে) ক্ষমা করুন; যারা হেদায়াত লাভ করেছে, তাদের মাঝে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন; যারা রয়ে গেছে তাদের মাঝে তার বংশধরদের ক্ষেত্রে আপনি তার প্রতিনিধি হোন। হে সৃষ্টিকুলের রব! আমাদের ও তার গুনাহ মাফ করে দিন। তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং তার জন্য তা আলোকময় করে দিন।” মুসলিম ২/৬৩৪, নং ৯২০।
দূর-দুরান্ত থেকে নিকটাত্মীয়দের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে বিলম্ব করার বিধান কি?
মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে দ্রুত দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা। কেননা নবী সা. বলেন,
“তোমরা জানাযা বহণ করার সময় দ্রুত গতিতে চল। কেননা সে যদি নেক হয় তবে তাকে কল্যাণের দিকে এগিয়ে দিলে। আর যদি অন্য কিছু হয়, তবে খারাপ লোককে তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলে।”
কোন কোন নিকটাত্মীয়ের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় বিলম্ব করা উচিত নয়। তবে অল্প কিছু সময় দেরী করাতে কোন দোষ নেই। তারপরও দ্রুত জানাযার ব্যবস্থা করাই উত্তম। নিকটাত্মীয়গণ বিলম্বে পৌঁছলেও কোন অসুবিধা নেই। তারা মৃতের কবরের উপর জানাযা নামায আদায় করতে পারবে। যেমনটি করেছিলেন নবী (সা.)। জনৈক মহিলা মসজিদে নববী ঝাড়- দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল। সে মৃত্যু বরণ করলে লোকেরা বিষয়টি নবী সা.কে না জানিয়েই তাকে দাফন করে দেয়। তখন নবী সা. বলেন, “তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের উপর জানাযা নামায আদায় করেন।”
(ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে) মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
কোন মুসলিম মৃত্যু বরণ করলে তার জন্য জীবিতদের কতিপয় করণীয় রয়েছে। সেগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
১) মৃত্যুর সংবাদ শুনে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করে নিজেকে স্মরন করিয়ে দেয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা।
“যখন তারা বিপদে পতিত হয়,তখন বলে, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” (নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো) তারা সে সমস্ত লোক,যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। “সূরা বাকারা: ১৫৬ ও ১৫৭
২) শোকার্ত পরিবারকে সান্তনা দান করা।
মানুষ মারা গেলে নীরবে চোখের পানি ফেলা অথবা নিচু আওয়াজে ক্রন্দন করা বৈধ। রাসূল সা. এর ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যায় তিনি তাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। আর তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
“চক্ষু অশ্রু সজল হয়,অন্তর ব্যথিত হয়। তবে আমরা কেবল সে কথাই বলব যা আমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করে। আল্লাহর কসম,হে ইবরাহীম,তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত। “ সহীহ মুসলিম
আপনজনের এই দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ায় পরিবারের লোকেরা ধৈর্য্য ধরবেন এবং তাদেরকে সবরের পুরষ্কার ও দু’আগুলো স্মরন করে দেয়া।
“আল্লাহ তায়ালা যখন কোন মুমিন ব্যক্তির কোন প্রিয় মানুষকে দুনিয়া থেকে নিয়ে যান তখন সে যদি সবর করে এবং আল্লাহর নিকট প্রতিদান আশা করে তবে তিনি তার জন্য জান্নাতের আদেশ ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হন না। ” নাসাঈ ও দারেমী। আল্লামা আলবানী রাহ.উক্ত হাদীসটিকে সহীহ লি গাইরিহী বলেছেন।
. কোনো মুসিবতে পতিত ব্যক্তির দো‘আ
«إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرَاً مِنْهَا».
(ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন। আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লী খাইরাম মিনহা)।
“আমরা তো আল্লাহ্রই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দিন এবং আমার জন্য তার চেয়েও উত্তম কিছু স্থলাভিষিক্ত করে দিন।”
মুসলিম ২/৬৩২, নং ৯১৮।
শোকার্তদের সান্ত্বনা দেওয়ার দো‘আ
রাসূল সা. তাঁর এক মেয়েকে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে সান্ত্বনা দেওয়া উত্তম। রাসূল সা.-এর মেয়ের সন্তান মারা গেলে তিনি তাঁকে আহ্বান জানিয়ে তাঁর নিকট একজন দূত প্রেরণ করেন। এই দূতকে রাসূল সা. বলেছিলেন,
‘তাকে তুমি ধৈর্য্য ধরতে এবং এর বিনিময়ে নেকীর আশা করতে বল। কেননা আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন, তা যেমন তাঁর, তেমনি যা তিনি রেখে গেছেন, তাও তাঁর। প্রত্যেকটি বস্তু একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত টিকে থাকবে।
বুখারী: হা/১২৮৪; মুসলিম: হা/৯২৩।
তবে ‘আল্লাহ আপনার নেকী বৃদ্ধি করে দিন,‘আল্লাহ আপনাকে উত্তম সান্ত্বনা দান করুন’, আল্লাহ আপনার মৃতকে ক্ষমা করুন’ ইত্যাদি যেসব দোআ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে, তা কিছু কিছু আলেম পছন্দ করেছেন। তবে হাদীস মোতাবেক আমল করাই উত্তম।
«إِنَّ للَّهِ مَا أَخَذَ، وَلَهُ مَا أَعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمَّى… فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ».
(ইন্না লিল্লা-হি মা আখাযা, ওয়ালাহু মা আ‘তা, ওয়া কুল্লু শাই’ইন ‘ইনদাহু বিআজালিম মুসাম্মা, ফালতাসবির ওয়াল তাহতাসিব) “নিশ্চয় যা নিয়ে গেছেন আল্লাহ্ তা তাঁরই, আর যা কিছু প্রদান করেছেন তাও তাঁর। তাঁর কাছে সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কাজেই সবর করা এবং সওয়াবের আশা করা উচিত।”
বুখারী, ২/৮০, নং ১২৮৪; মুসলিম, ২/৬৩৬, নং ৯২৩।
আর নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়াও ভালো:
«أَعْظَمَ اللَّهُ أَجْرَكَ، وَأَحْسَنَ عَزَاءَكَ، وَغَفَرَ لِمَيِّتِكَ».
(আ‘যামাল্লাহু আজরাকা, ওয়া আহসানা ‘আযা-’আকা, ওয়াগাফারা লিমাইয়্যিতিকা)
“আল্লাহ আপনার সওয়াব বর্ধিত করুন, আপনার (শোকার্ত মনে) সুন্দর ধৈর্য ধরার তাওফীক দিন, আর আপনার মৃতকে ক্ষমা করে দিন।” আল-আযকার লিন নাওয়াওয়ী, পৃ. ১২৬।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আর রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। সূরা হাশরঃ ৭
রাসূল স. বলেছেনঃ “যে এমন কাজ করল যার ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশ নেই তা পরিত্যাজ্য”। মুত্তাফাকুন আলাইহ
রাসূল স. আরও বলেছেনঃ “সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল, (দ্বীনের মধ্যে) নতুন উদ্ভাবিত বিষয় সমূহ। আর প্রতিটি নতুন উদ্ভাবিত জিনিসই বিদয়াত। আর প্রতিটি বিদয়াতই গুমরাহী। ” সুনান আবু দাউদ, সহীহ
মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ। এখানে প্রাসংগিক মনে করিয়ে দেই যে, আমাদের জন্মের সময় প্রত্যেকের কানের কাছে আজান ও ইকামত দেয়া হয়েছে, শুধু সালাতটা বাকী। জানাযার সালাতের মাধ্যমে ব্যক্তির জন্য দু’আ করা হয়।
৩। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া, কাফন, জানাযা এবং দাফন সম্পন্ন করা:
মৃত ব্যক্তির গোসলের বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছেঃ
গোসল দেয়ার সুন্নাত হল, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেঁকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অতঃপর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আস্তে– করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়। এরপর বেশী করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (নযর না দিয়ে) ধৌত করবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং ছালাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে উভয় ঠোঁটের ভিতরের অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে।
পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। প্রথমে ডান সাইডের সামনের দিক ও পিছন দিক ধৌত করবে। তারপর বাম দিক ধৌত করবে। এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে। গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশী সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পূর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। কেননা নবী (সা.) তাঁর কন্যা যায়নাবের (রাঃ) শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তাঁকে প্রয়োজন মনে করলে তিনবার বা পাঁচবার বা তার চেয়ে অধিকবার গোসল দিতে বলেছেন। (ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে) মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
কোন মুসলিম মৃত্যু বরণ করলে জীবিত মানুষদের উপর আবশ্যক হল, তার গোসল, কাফন, জানাযা এবং দাফন কার্য সম্পন্ন করা। এটি ফরযে কেফায়া। কিছু সংখ্যক মুসলিম এটি সম্পন্ন করলে সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। এ বিষয়টি মুসলিমদের পারস্পারিক অধিকারের মধ্যে একটি এবং তা অনেক সওয়াবের কাজ। যেমন আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন:
“যে ব্যক্তি জানাযার নামাযে উপস্থিত হবে তার জন্য রয়েছে এক কিরাত সমপরিমাণ সওয়াব আর যে দাফনেও উপস্থিত হবে তার জন্য দু কিরাত সমপরিমাণ সওয়াব। জিজ্ঞাসা করা হল, কিরাত কী? তিনি বললেন: দুটি বড় বড় পাহাড় সমপরিমাণ। “ বুখারী ও মুসলিম
মৃত ব্যক্তির জন্য জানাযার সালাতে দো‘আ
(আল্লা–হুম্মাগফির লাহু, ওয়ারহামহু, ওয়া ‘আ–ফিহি, ওয়া‘ফু ‘আনহু, ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়াওয়াসসি‘ মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমা–য়ি ওয়াস্সালজি ওয়ালবারাদি, ওয়ানাক্বক্বিহি মিনাল খাতা–ইয়া কামা নাক্কাইতাস সাওবাল আবইয়াদা মিনাদদানাসি, ওয়া আবদিলহু দা–রান খাইরাম মিন দা–রিহি, ওয়া আহলান খাইরাম মিন আহলিহি, ওয়া যাওজান খাইরাম মিন যাওজিহি, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আ‘য়িযহু মিন ‘আযা–বিল ক্বাবরি [ওয়া ‘আযাবিন্না–র])।
“হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার প্রবেশস্থান কবরকে প্রশস্ত করে দিন। আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছেন। আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের (স্ত্রী/স্বামীর) চেয়ে উত্তম জোড় প্রদান করুন। আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব [ও জাহান্নামের আযাব] থেকে রক্ষা করুন”
মুসলিম ২/৬৬৩, নং ৯৬৩।
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، وَصَغِيرِنَا وَكَبيرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا. اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ، اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلاَ تُضِلَّنَا بَعْدَهُ».
(আল্লা–হুম্মাগফির লিহায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শা–হিদিনা ওয়া গা–য়িবিনা ওয়া সগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসা–না। আল্লা–হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফা’আহয়িহি ‘আলাল–ইসলাম। ওয়ামান তাওয়াফ্ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু ‘আলাল ঈমান। আল্লা–হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়ালা তুদ্বিল্লান্না বা‘দাহু)।
“হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যে যাদের আপনি জীবিত রাখবেন তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করবেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার (মৃত্যুতে ধৈয্যধারণের) সওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না এবং তার (মৃত্যুর) পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না।”আবূ দাঊদ, নং ৩২০১; তিরমিযী, নং ১০২৪
(আল্লা–হুম্মা ইন্না ফুলানাবনা ফুলা–নিন ফী যিম্মাতিকা, ওয়া হাবলি জিওয়ারিকা, ফাক্বিহি মিন ফিতনাতিল ক্বাবরি ওয়া আযা–বিন না–রি, ওয়া আনতা আহলুল ওয়াফাই ওয়াল হাক্ক, ফাগফির লাহু ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম)।
“হে আল্লাহ, অমুকের পুত্র অমুক আপনার যিম্মাদারীতে, আপনার প্রতিবেশিত্বের নিরাপত্তায়; সুতরাং আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা থেকে এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আর আপনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণকারী এবং প্রকৃত সত্যের অধিকারী। অতএব, আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং তার উপর দয়া করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।”
সহীহ ইবন মাজাহ ১/২৫১। তাছাড়া হাদীসটি আবূ দাউদও বর্ণনা করেছেন, ৩/২১১, নং ৩২০২।
. মৃতকে কবরে প্রবেশ করানোর দো‘আ
«بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ».
(বিসমিল্লা-হি ওয়া আলা সুন্নাতি রাসুলিল্লা-হি)।
“আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়মে।”
আবূ দাউদ ৩/৩১৪, নং ৩২১৫ সহীহ সনদে; অনুরূপভাবে আহমাদ, নং ৫২৩৪; আর ৪৮১২ এর শব্দ হচ্ছে, ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহর মিল্লাতের উপর।’ তার সনদও বিশুদ্ধ।
.মৃতকে দাফন করার পর দো‘আ
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ».
(আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, আল্লা-হুম্মা সাববিতহু)।
“হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ্ আপনি তাকে (প্রশ্নোত্তরের সময়) স্থির রাখুন।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তার জন্য দৃঢ়তা চাও। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে’। আবু্দাউদ ৩/৩১৫, নং ৩২২৩; হাকেম এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী সমর্থন করেছেন, ১/৩৭০।
এখানে খেয়াল করতে হবে যে, নবী স. সবাইকে নিয়ে একসাথে হাত তুলে দু’আ করেন নি। সবাইকে নিজস্বভাবে দু’আ করার কথা বলেছেন।
কবর যিয়ারতের দো‘আ
«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ، مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، [وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتأْخِرِينَ] أَسْاَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ».
(আস্সালা-মু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়াইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হিকুনা, ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুসতা’খিরীনা, নাসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ)।
“হে গৃহসমূহের অধিবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আর নিশ্চয় আমরা ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হবো। [আল্লাহ আমাদের পুর্ববর্তীদের এবং পরবর্তীদের প্রতি দয়া করুন।] আমি আল্লাহ্র নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করি।” মুসলিম ২/৬৭১, নং ৯৭৫; ইবন মাজাহ্, ১/৪৯৪,
মহিলাদের কবর যিয়ারত করা বৈধ নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক কবর যিয়ারতকারীনী নারীদের উপর লানত (অভিশাপ) করেছেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ) কেননা তারা একধরণের ফিতনা, তাদের ধৈর্য কম। তাই আল্লাহ্ করুণা এবং অনুগ্রহ করে কবর যিয়ারত করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন। যাতে করে তারা ফিতনায় না পড়ে এবং তাদের দ্বারা অন্যরা ফিতনায় না পড়ে। আল্লাহ্ সকলের অবস্থা সংশোধন করুন। -(শায়খ বিন বায)