মৃত্যু ভীতি ও শেষ পরিণতি ভাল করার কিছু উপায়-২৪

 

আমাদের মাঝে বেশীরভাগ মানুষই মৃত্যুকে ভয় করে থাকেন। অথচ মৃত্যুকে ভয় করলেও এ থেকে মুক্ত থাকা যাবে না কিন্তু জাহান্নামে আল্লাহর শাস্তির ভয় করে চললে, শাস্তি থেকে মুক্ত থাকার সুযোগ আছে।  জীবন চিরস্থায়ী নয়।

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমার কাঁধ ধরে বললেন : ‘দুনিয়াতে তুমি এমনভাবে বসবাস করবে যে তুমি একজন অপরিচিত লোক অথবা পথিক।” ইবনু উমার রা. সর্বদা বলতেন, যখন তুমি রাতে উপনীত হও তখন ভোর হওয়ার অপেক্ষা করবে না। যখন সকালে উঠবে তখন বিকালের অপেক্ষা করবে না। অসুস্থতার জন্য সুস্থ অবস্থায় কিছু করে নাও, মৃত্যুর জন্য জীবন থাকতে কিছু করে নাও।’বোখারি : ৬৪১৬।

এই পৃথিবীতে কোন প্রানই চিরস্থায়ী নয়। প্রতিটি প্রানের দুনিয়া থেকে বিদায়ের সুনির্দিষ্ট সময় ও স্থান মহান আল্লাহ নির্ধারন করে রেখেছেন। সেই অন্তিম সময়টি যখন আসবে তখন একমুহুর্ত আগে বা পরে হবে না। মহান আল্লাহ বলেছেন,

আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই। সূরা ওয়াকিয়া: ৬০

নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না। সূরা আন নহল:৬১

বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে। সূরা জুমু’আ: ৮

প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। সূরা আম্বিয়া: ৩৫চ

সুতরাং এই বিধি চিরন্তন করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ। এর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনের অবসান ঘটিয়ে একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র স্থানান্তর হোন কর্মজীবন থেকে ফলাফল লাভের জীবনে, যেন পর্দার এইপাশ ও অপর পাশ। এই মরনকে ভয় না করে আমাদের ভয় করা প্রয়োজন, আমি কি কাজ করেছি যা নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে ফিরে যাবো। দুনিয়ার জীবনে বিশ্বাস ও কাজের অবস্থার উপর নির্ভর করে মৃত্যুর পদ্ধতি ( সহজ বা কঠিন) ও কবরের জীবনের পরিনতি এবং সর্বোপরি আখেরাতে বিচারের পর চূড়ান্ত ফয়সালা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এমন অনেক রোগ আছে, যখন ডাক্তার বলেন বেশীদিন বাঁচবে না। ডাক্তার বা যে কেউ এইভাবে বলা ঠিক নয় যে, সেতো আর বেশী দিন বাচবে না, খুব বেশী হলে ৬ মাস ইত্যাদি। কারন কতদিন হায়াত আছে এবং অন্তিম সময় কখন তা মহান আল্লাহই একমাত্র জানেন। অনেক ব্যক্তিকে এইরকম বলার পর দেখা গিয়েছে আরো ৫-১০ বছর বেঁচে ছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান রোগের পরিনতি জ্ঞানের ও অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারে কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

কোন সুস্থ ব্যক্তিকে ডাক্তার বা কেউ বলে না যে আপনি আর বাঁচবেন না, তাহলেই কি এটা নির্দিষ্ট যে, সে এখন মারা যাবে না। সুস্থ্য ব্যক্তিটিও বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যেতে পারেন। যার যখন সময় আসবে, সে যেখানে যে অবস্থায় থাকুন না কেনো, দুনিয়া ছেড়ে যেতেই হবে, মহান আল্লাহ মানুষের মনে সহনীয় ও সহজ করার জন্য, জীবন শেষ হওয়ার একটি কারন রেখে দেন। দুনিয়া থেকে বিদায়ের পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার সচেতনতা লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন সেই ব্যক্তি, যাকে বলা হয় আপনার ক রোগ হয়েছে, এর পরিনতি ভালো না।।। এই সুযোগের যারা সঠিক ব্যবহার করতে পারেন তারাই স্বার্থক হোন।

ইবনে তাইমিয়া র. বলেন, মানুষের আয়ূ দুই ধরনের: এক ধরনের আয়ূ অনড়, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। দ্বিতীয় প্রকারের আয়ূ কোন শর্তের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে। এর আলোকে রাসূল সা.-এর নিম্নোক্ত হাদীসটির অর্থ স্পষ্ট হয়ে উঠে,

মহান আল্লাহ ফেরেশতাকে বান্দার আয়ূ লেখার নির্দেশ দেন এবং তাঁকে বলে দেন, বান্দা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে তুমি তার বয়স এত বছর বাড়িয়ে দিও। কিন্তু তার বয়স বাড়বে কি বাড়বে না সে বিষয়ে ফেরেশতা কিছুই জানেন না। কেবল আল্লাহই তার সুনির্দিষ্ট বয়স সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। তারপর তার মৃত্যু এসে গেলে আর সময় দেওয়া হয় না। ফাতাওয়া ইবনে তায়মিইয়াহ, ৮/৫১৭।

কোন এক ব্যক্তির হায়াত আল্লাহ ঠিক করেছেন যে ৮০ বছর বাঁচবে,তবে যদি সে চিকিৎসা না করলে বাঁচবে ৭০ বছর আর চিকিৎসার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ও দোয়া  থাকলে বাচবে ৭৫ বছর। এইভাবে সব প্রচেষ্টা করার পরও মহান আল্লাহ যেটা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তার এক মুহুর্ত দেরী হবে না। তাহলে দেখা যায় ব্যক্তি ৭০/৭৫ বছরেও মারা যাতে পারতো কিন্তু ৮০ বছরের বেশী যেতে পারবে না। এটাই তাকদীর। আল্লাহই ভালো জানেন।

আসলে আমাদের মৃত্যু নিয়ে ভয় বা চিন্তা করার কোন কারন নেই বরং চিন্তা করা প্রয়োজন যে, আমার পরিক্ষার খাতায় লেখার সময় চলে যাচ্ছে,আমার পাশ বা ভালো রেজাল্টের জন্য পর্যাপ্ত উত্তর লেখা হয়েছে কিনা?

যখন  শুনি যে অমুক ব্যক্তির ভয়ানক এক অসুখ সনাক্ত হয়েছে, সে বাঁচবে না বেশী দিন, তখন মনে হয় আলহামদুলিল্লাহ সেই ব্যক্তিটি কত সৌভাগ্য যে, মহান আল্লাহ দরদ দিয়ে তাকে পরীক্ষায় পাশের জন্য একটা এস.এম.এস আলাদা করে তাকে  দিয়েছেন যে, তুমি কাজগুলো করে তৈ্রী হয়ে যাও। আর আমরা ভাবছি, আমার অনেক সময় কারন সুস্থ্য আছি, না- আসলে এটা আমাকে ধোঁকা দিয়ে রেখেছে, আমার কাছ থেকে সময়গুলো গোপনে নিয়ে চলে যাচ্ছে অথচ আমাকে বুঝতে দিচ্ছে না। আসলে আমি বুঝতে পারছি না। আমি ধোঁকায় ফেলে রেখেছি নিজেকে। মহান আল্লাহ আমাদের এই অবস্থা থেকে হেফাজত করুন। সুস্থ্যতা ও সময়কে সুন্দর করে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিন।

প্রকৃ্ত কথা এই যে, আমাদের সকল অবস্থায়ই প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে যেন, মহান রবের সাথে ঈমান ও আমলের সুন্দর সঠিক অবস্থা নিয়ে সাক্ষাত হয়, যা মহান রবের দয়া ও ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে সেই কঠিন বিচারের দিনে। বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে আমৃত্যু তাকওয়া ও আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীর মধ্যে সময় কাটিয়েছে।

রাসূল সা. বলেন:

“আল্লাহ তাআলা যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন সে বান্দাকে ‘আসাল’ করেন। সাহাবায়ে কেরাম বলেন: আসাল কি? তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিশেষ একটি ভাল কাজ করার তাওফিক দেন এবং এই আমলের উপর তার মৃত্যু ঘটান।(সহিহ আহমাদ: ১৭৩৩০), আলবানি সিলসিলা সহিহা গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ ঘোষণা করেছেন (১১১৪)।

মৃত্যুকালে বান্দার নিকট তার ভাল মৃত্যুর যে আলামত প্রকাশ পায় সেটা হচ্ছে- বান্দাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়। এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় পেও না, চিন্তিত হইও না এবং তোমরা প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর।”(সূরা ফুসসিলত: ৩০)

মৃত্যুকালে মুমিন বান্দাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়া হয়।  তাফসিরে সাদী, পৃষ্ঠা- ১২৫৬।

  সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে এসেছে- যা আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন। যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর সাক্ষাত প্রিয়, আল্লাহর নিকটও তার সাক্ষাত প্রিয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি কি মৃত্যুর কথা বুঝাতে চাচ্ছেন? আমরা তো সবাই মৃত্যুকে অপছন্দ করি। রাসূল সা. বললেন: না, সেটা না। মুমিন বান্দাকে যখন আল্লাহর রহমত, তাঁর সন্তুষ্টি, তাঁর জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর কাফের বান্দাকে যখন আল্লাহর শাস্তি, তাঁর অসন্তুষ্টির সংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।”

ইমাম নববী রহ. বলেন: “হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যখন মানুষের মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হয়ে যায়, যে অবস্থায় আর তওবা কবুল হয় না, সে অবস্থার পছন্দ-অপছন্দকে এখানে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে পড়ে, তার পরিণতি  কী হতে যাচ্ছে সেটা তার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন,

 

অতঃপর যখন কারও প্রাণ কন্ঠাগত হয়। এবং তোমরা তাকিয়ে থাক,তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না। যদি তোমাদের হিসাব-কিতাব না হওয়াই ঠিক হয়,তবে তোমরা এই আত্মাকে ফিরাও না কেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয়;তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিযিক এবং নেয়ামতে ভরা উদ্যান। আর যদি সে ডান পার্শ্বস্থদের একজন হয়, তবে তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্যে ডানপার্শ্বস্থদের পক্ষ থেকে সালাম। আর যদি সে পথভ্রষ্ট মিথ্যারোপকারীদের একজন হয়, তবে তার আপ্যায়ন হবে উত্তপ্ত পানি দ্বারা। এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে অগ্নিতে। এটা ধ্রুব সত্য। সূরা ওয়াকিয়া: ৮৩-৮৫

অনেক মানুষ এমন আছেন যারা আল্লাহর সীমাহীন দয়া ও ক্ষমা লাভের আশায় পাপ করতে থাকেন, তা থেকে ফিরে আসা যে প্রয়োজন তা অনুধাবন করতে চান না। এটা এক ধরনের মুর্খতা। আল্লাহ তাআলা বলেন :

‘আমার বান্দাদের বলে দাও যে, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, এবং আমার শাস্তি- সে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি। সূরা আল-হিজর : ৪৯-৫০

তিনি আরো বলেন,

‘হা-মীম এ কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে- যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তাওবা কবুল করেন, যিনি শাস্তি দানে কঠোর শক্তিশালী। সূরা আল-গাফির : ১-৩।

অতএব আল্লাহ শুধু ক্ষমাশীল এ ধারনার ভিত্তিতে নিজের আমলগুলো দেখলে হবে না বরং তিনি যে কঠোর শাস্তিদাতা এটা সর্বদা মনে রাখতে হবে। মহান আল্লাহ ন্যায়বিচারক, আখেরাতে বিচারেও সেটা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।

 

 

শেষ পরিণতি ভাল করার কিছু উপায়

হুসনুল খাতিমা বা ভাল মৃত্যু

ভাল মৃত্যু মানে- মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারা, পাপ হতে তওবা করতে পারা, নেকীর কাজ ও ভাল কাজ বেশি বেশি করার তাওফিক পাওয়া এবং এ অবস্থায় মৃত্যু হওয়া।

১. আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়া অবলম্বন করা :

আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়ার মুল হল সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ তথা একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। এটা হল; সকল প্রকার ফরজ ওয়াজিব আদায়, সব ধরণের পাপাচার থেকে সাবধান থাকা, অবিলম্বে তাওবা করা ও সকল প্রকার ছোট-বড় শিরক থেকে মুক্ত থাকা।

‘নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে, যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না, এবং যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী। সূরা আল-মুমিনূন : ৫৭-৬১

২. বাহ্যিক ও আধ্যাতিক অবস্থা উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা:

প্রথমে নিজেকে সংশোধন করার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। যে নিজেকে সংশোধন করার জন্য চেষ্টা করবে আল্লাহ তার নীতি অনুযায়ী তাকে সংশোধনের সামর্থ দান করবেন। এর জন্যে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করা অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করা। এটাই মুক্তির পথ। আল্লাহ তাআলা বলেন :

‘হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা।’ সূরা নিসা : ১০২

আল্লাহ আরো বলেন,

‘তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের এবাদত কর।’ সূরা আল-হিজর : ৯৯।

ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য হল সর্বদা পাপ থেকে সাবধান থাকবে। কবীরা গুনাহকে বলা হয় মুবিকাত বা ধ্বংসকারী। আর অব্যাহত সগীরা গুনাহ কবীরা গুনাহতে পরিণত হয়ে থাকে। বার বার সগীরা করলে অন্তরে জং ধরে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান থাকবে। ছোট গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত হল সেই পর্যটক দলের মত যারা একটি উপত্যকায় অবস্থান করল। অত:পর একজন একজন করে তাদের জ্বালানী কাঠগুলো অল্প অল্প করে জালিয়ে তাপ নিতে থাকল, পরিনতিতে তাদের রুটি তৈরী করার জন্য কিছুই অবশিষ্ট রইল না।’ আহমদ : ২২৮০৮।

কখনো কোন ধরণের পাপকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। প্রখ্যাত সাহাবী আনাস রা. বলেন,

‘তোমরা অনেক কাজকে নিজেদের চোখে চুলের চেয়েও ছোট দেখ অথচ তা আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ধ্বংসাত্নক কাজ মনে করতাম।’ বোখারি : ৬৪৯২।

৩. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সর্বদা কান্নাকাটি করে তার কাছে ঈমান ও তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক প্রার্থনা করা। তিনি যেন তার সন্তুষ্টির সাথে মৃত্যুর তাওফীক দেন।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই এ দোয়া করতেন,

يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك. رواه الترمذي(

‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখেন।’ তিরমিজি : ২১৪০। সহিহ আল-জামে : ৭৯৮৮।

ইউসূফ (আ:) দোয়া করতেন :

تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ ﴿يوسف :

‘তুমি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দাও এবং সৎকর্মপরায়নদের অন্তর্ভূক্ত কর।’ সূরা ইউসূফ : ১০১

৪. আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকা

যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকে ও সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণের সাথে সম্পন্ন হবে তার শেষ পরিণতি শুভ হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি কোন একটি সদকা করল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (মুসনাদে আহমাদ: ২২৮১৩), আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন।

৫। মহান আল্লাহর প্রতি সুধারনা রাখা

যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হয় তার জন্য উচিত হবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে এ আশা পোষণ করা। যেমন রাসূলে কারীম সা. বলেছেন,

‘আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা না নিয়ে তোমাদের মধ্যে কেহ যেন মৃত্যু বরণ না করে।’মুসলিম : ২৮৭৭

সহায়ক গ্রন্থ সমূহঃ

ইসলামের আলোকে চিকিৎসা বিজ্ঞান-ডক্টর মুহাম্মদ মুশাররফ হুসাইন

মানত সম্পর্কে আমরা কি জানি-আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

চেয়ারে বসে সালাত-লেখক: শাইখ ফাহদ ইবন আবদুর রহমান আশ-শুওয়াইব

অনুবাদ ও সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া