সম্মানিত মাস মুহাররম-৮( আশুরায় উদযাপিত কিছু বিদআত )

আশুরায় উদযাপিত কিছু বিদআত

 

আশুরার দিন লোকেরা সুরমা লাগানো, গোসল করা, মেহেদি লাগানো, মুসাফাহা করা, খিচুড়ি রান্না করা, আনন্দ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকে এ সম্বন্ধে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. কে প্রশ্ন করা হল, এর কোনো ভিত্তি আছে কি না?

জবাবে তিনি বললেন, এসব অনুষ্ঠানাদি উদযাপন প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি এবং সাহাবাদের থেকেও না। চার ইমামসহ নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমও এসব কাজকে সমর্থন করেননি। কোনো মুহাদ্দিস এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ও সাহাবাদের থেকে কোনো সহিহ কিংবা জয়িফ হাদিসও বর্ণনা করেননি। তাবিয়ীদের থেকেও কোনো আছর পাওয়া যায়নি।

যদি আমাদের আমলগুলো শরীয়ত সম্মত হয় তা হলে তা দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সওয়াব লাভ করতে পারব। আর যদি আমলগুলো শরীয়ত সমর্থিত না হয়, বিদ’আত হয়, তাহলে তা পালন করার কারণে আমরা গুনাহগার হবো। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পরিবর্তে তার থেকে দূরে সরে পড়ব।

আমাদের সর্বদা ভাল করে মনে রাখতে হবে যে, যে কোন আমল আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হওয়ার জন্য দুটো শর্ত রয়েছে।

একটি হল : আমলটি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করতে হবে।

দ্বিতীয়টি হল : আমলটি অবশ্যই আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে হতে হবে। সোজা কথায় রাসূলের তরীকায় হতে হবে।

 

দি আমরা আশুরার অতীত ও বর্তমানের প্রচলিত কাজ-কর্মের দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, এ সকল কার্যাবলী ও অনুষ্ঠানাদি দু ভাগে বিভক্ত।

 

১। প্রচলিত আমলগুলো ইবাদত হিসেবে স্বীকৃত কিন্তু সেগুলো এ দিনের সাথে খাছ (যুক্ত বা সংশ্লিষ্ট) নয়। যেমন  রাতে জাগ্রত থেকে নফল সালাত আদায় করা, কবর যিয়ারত করা, দান-ছদকাহ করা, ফরজ যাকাত আদায় করা, খিচুরী বা বিরিয়ানী পাক করে মানুষদের মাঝে বিলি করা, রাস্তা-ঘাটে মানুষকে পানী পান করতে দেয়া ইত্যাদি। যদিও এ কাজগুলো স্বতন্ত্রভাবে বিদ’আত নয় কিন্তু এগুলো আশুরার দিনের সাথে খাছ করা বিদ’আত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বা তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অথবা সাহাবায়ে কেরাম রা. এ কাজগুলো আশুরার দিনের সাথে খাছ করেননি।

২। যে সকল কাজ ইবাদত নয়, মানুষের অভ্যাসের অন্তর্গত। যেমন এ দিনে গোসল করা,সুরমা ব্যবহার করা, উন্নত মানের খাবার-দাবার আয়োজন করা, গরু-ছাগল জবেহ করা, মেলার আয়োজন করা ইত্যাদি। এগুলো শিয়া ও রাফেজী সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ থেকে এসেছে। তারা হুসাইন রা. এর শাহাদাত স্মরণে শোক প্রকাশ ও মাতম করে থাকে।

তারা আশুরা উপলক্ষে এমন কিছু আচার অনুষ্ঠান যোগ করেছে যা ইসলাম ধর্মে নেই। বরং এগুলো ইহুদী ও মুশরিকদের উৎসবের অনুকরণ।

ইসলাম হল মধ্য পন্থার ধর্ম। তার দৃষ্টিভংগি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি নিবদ্ধ। তাই অমুসলিমরা ভাল কিছু করলে শুধু বিরোধীতার খাতিরে তার বিরোধীতা করতে হবে এমন শিক্ষা কিন্তু ইসলাম দেয় না।

কথা ছিল আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের ছাড়িয়ে যাবো। যেমন রসূলুল্লাহ স. বলেছেন,

“জ্ঞান-বিজ্ঞান হল মুসলিমদের হারিয়ে যাওয়া সম্পদ। তাই যেখানেই তা পাবে সেখান থেকেই তা লুফে নেয়ার অধিকার থাকবে অন্যের চেয়ে তার বেশী। জামে আত তিরমিযী

কিন্তু আমরা কি তা পেরেছি? আমরা অবশ্য তাদের থেকে কিছু শিখেছি। যা শিখেছি তা আমাদের উন্নতির দিকে নিয়ে যায় না, অবনতির দিকে নিয়ে যায়। তাদের থেকে আমরা পার্টি দেয়া শিখেছি। কাউকে সাহায্য করার নামে কনসার্ট করতে শিখেছি। কবরে ও প্রতিকৃতিতে পূষ্পমাল্য দিতে শিখেছি। সন্তানদের জন্ম দিবস পালন করতে শিখেছি। মৃতের সম্মানে নীরবতা পালন করতে শিখেছি। নব-বর্ষ ও থার্টি ফাষ্ট নাইট উদযাপন করতে শিখেছি। আরো শিখেছি উচ্ছৃংখল নোংড়া বিনোদন সহ অনেক কিছু। যত অনর্থক ও বেহুদা কাজ আছে সবগুলোই আমরা তাদের থেকে রপ্ত করে নিয়েছি। আর যা কিছু কল্যাণকর ও অগ্রগতির উপাদান তা আমরা রপ্ত করতে পারিনি। না পারার ব্যর্থতার দায়ভার অনেকে ধর্মীয় নেতাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যা সম্পূর্ন অযৌক্তিক। কেননা বহু যুগ থেকেই মুসলিম সমাজ ও রাষট্র পরিচালনায় ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা নেই ও কোন ভূমিকা নিতে দেয়া হচ্ছেনা। যখন তাদের ভূমিকা ছিল তখন মুসলিম উম্মাহর অবস্থা এমন ছিল না।

আমরা কেন ওদের থেকে এমন আচার-আচরণ অনুকরণ করব যা একবারে অনর্থক। সকল অনর্থক কাজ পরিহার ও অর্থবহ কাজ করার জন্য কি আমাদের ধর্ম নির্দেশ দেয়নি? কেন তাদের ভাল কাজগুলোকে বাদ দিয়ে তাদের অনর্থক কাজগুলোকে আমরা অনুসরণ করে যাচ্ছি? কেউ আমাদের এতে বাধা দিতে গেলে আমরা তাদের বিভিন্ন ভাষায় গালি-গালাজ করি। আর নিজেদের খুব প্রগতিশীল ভাবি।

আমাদের অবস্থা যেন তাদের মত হয়েছে যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

তারা সৎপথ দেখলে উহাকে অনুসরণীয় পথ বলে গ্রহণ করে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তাকে তারা অনুসরণীয় পথ হিসেবে গ্রহণ করে। সূরা আরাফ : ১৪৬

আচ্ছা ওরা কি আমাদের কোন ভাল আচার-আচরণ গ্রহণ করে? না আমাদের ধর্মে ভাল বলতে কিছুই নেই। তাদের আনুগত্য ও অনুকরণ করার এ পরাজিত মানসিকতা কখনো আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে না। বরং আমাদের পিছনেই নিয়ে যাবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:

হে মু’মিনগন! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর তবে তারা তোমাদেরকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।সূরা আলে ইমরান : ১৪৯

আমাদের হতে হবে-

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মাঝেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। সূরা আল-আহযাব: ২১

কুরআনে মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

আর রাসূল তোমাদের জন্য যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।সূরা হাশর: ৭