বিভিন্ন প্রকার সদকায়ে জারিয়ার উদাহরন-১১

*** যেকোন মুসলিম মৃত ব্যক্তি কেবল ঐ সকল জিনিস দ্বারাই উপকার লাভ করতে পারে যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত যেমন:

১। রাসূল স. বলেনঃ

“মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার আমলের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতীতঃ সদকায়ে জারিয়া,এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন নেককার সন্তান যে তার জন্য দু’আ করে”। মুসলিম:৩০৮৪

  • সদকায়ে জারিয়া,
  • এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং
  • এমন নেককার সন্তান যে তার জন্য দু’আ করে”।

২।  আনাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেনঃ

“সাত প্রকার কাজের সওয়াব মারা যাওয়ার পরও বান্দার কবরে পৌঁছতে থাকে। যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেয়, নদী-নালায় পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করে, কুপ খনন করে, খেজুর গাছ রোপন করে, মসজিদ তৈরী করে, কুরআনের উত্তরাধিকারী রেখে যায় অথবা এমন সুসন্তান রেখে যায় যে তার মারা যাওয়ার পরও তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমার জন্য দুয়া করে।

আল্লামা আলবানী (রাহ:) কর্তৃক রচিত সহীহুত তারগীব ওয়াত্ তারহীব:৭৩

  • দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেয়া
  • নদী-নালায় পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা,
  • কুপ খনন করা,
  • ফলবান গাছ রোপন করা,
  • মসজিদ তৈরী করা,
  • কুরআনের উত্তরাধিকারী রেখে যাওয়া অথবা
  • এমন সুসন্তান রেখে যাওয়া যে তার মারা যাওয়ার পরও তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমার জন্য দু’আ করে।

৩) নবী সা. বলেনঃ

“যে ব্যক্তি ইসলামে কোন সুন্নত চালু করল সে ব্যক্তি এই সুন্নাত চালু করার বিনিময়ে সওয়াব পাবে এবং তার মারা যাওয়ার পর যত মানুষ উক্ত সুন্নাতের উপর আমল করবে তাদেরও সওয়াব সে পেতে থাকবে। অথচ যারা আমল করবে তাদের সওয়াব কিছুই হ্রাস করা হবে না। ”সহীহ মুসলিম: ১০১৭

মৃত ব্যক্তি যদি তার জীবদ্দশায় কোন পরিত্যক্ত সুন্নতকে আমলের মাধ্যমে পূণর্জীবিত করে এবং তার মৃত্যুর পরেও উক্ত আমল চালু থাকে।

৪) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোন দান-সদকা করা হলে মৃত ব্যক্তি তার সওয়াব লাভ করে।

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি নবী সা. কে বললেন,আমার পিতা-মাতা অর্থ-সম্পদ রেখে মারা গেছেন। এ ব্যাপারে তারা আমাকে কোন ওসিয়ত করে যাননি। এখন আমি তাদের উদ্দেশ্যে দান-সদকা করলে তা তাদের জন্যে কি যথেষ্ট হবে? তিনি সা. বললেন,“হ্যাঁ”।

৫)  জীবিত মুসলিমগণ মৃত মানুষের জন্য দু’আ ও ইস্তেগফার করলে তাদের নিকট এর সওয়াব পৌঁছে।

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

“যারা তাদের পরবর্তীতে আগমণ করেছে (অর্থাৎ পরে ইসলাম গ্রহণ করেছে) তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যে সকল ঈমানদার ভাই অতিবাহিত হয়ে গেছেন তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মুমিনদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ বদ্ধমূল রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তো পরম দয়ালু, অতি মেহেরবান। ” সূরা হাশর: ১০

উপকারী এবং স্থায়ী দান কয়েক প্রকার: (বিভিন্ন প্রকার সদকায়ে জারিয়ার উদাহরন)

১) পানির ব্যবস্থা করা (বিশুদ্ধ পানির জন্য ফিল্টার দিতে পারেন)

২) এতিমের/ বিধবার প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা

৩) অসহায় মানুষের বাসস্থান/কর্ম সংস্থান তৈরি করা

৪) গরীব তালিবে ইলমকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। কুর’আনের হাফেজ হতে সহায়তা করা।

৫) দাতব্য চিকিৎসালয় বা হাসপাতাল নির্মান, একটি হুইল চেয়ার বা বেড বা চেয়ার দান করা

৬) মসজিদ নির্মান। মসজিদে ফ্যান,বই, ইত্যাদি হাদিয়া হিসেবে দেয়া।

৭। জ্ঞান অর্জনের জন্য সঠিক বই হাদিয়া দেয়া ( বেসিক জ্ঞানের জন্য সহিহ ঈমান, সালাত, অজু, গোসল ফরয ওয়াজিব, শিরক বিদয়াত ইত্যাদি)

৮। রক্ত দান করা/ চিকিৎসায় সহযোগীতা করা

৯। ফলদায়ক গাছ লাগানো ( আপনি দূরে কোথাও সফরে যাচ্ছেন, রাস্তার পাশের পড়ে থাকা জমিতে ফলের বীজ ছিটিয়ে দিতে পারেন)

১০। কল্যানমূলক কাজ যা মানুষের মৌ্লিক চাহিদাকে পূর্ণ করে সেটা শরীয়ত মুতাবিক ব্যবস্থা করে দেয়া।

১১। কল্যানমূলক জ্ঞান বিতরন ও পাঠাগার গঠন করে দেয়া।

জীবিত মানুষের পক্ষ থেকে মৃত মানুষের নিকট সওয়াব পৌঁছানোর ব্যাপারে উপরোল্লোখিত হাদীস সমূহ দ্বারা আমাদের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।