ধৈর্য্য ধারন করার শক্তির একটি ভিত্তি – তাকদীরে বিশ্বাস-৪

তাকদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপন সঠিক মানে থাকা।

ধৈর্য্য ধারন করার শক্তি আসার জন্য একটি উপায় হলো নিজের তাকদিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন সঠিক মানে থাকা।তাকদিরে বিশ্বাস আমাদের ইমানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংগ।

ঈমান হচ্ছে: আল্লাহ তা’আলা, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং বিশ্বাস স্থাপন করা তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি।

তাক্বদীরের পারিভাষিক অর্থঃ

সবকিছু ঘটার আগেই সে সম্পর্কে আল্লাহর সম্যক জ্ঞান, সেগুলি লাউহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করণ, তদ্বিষয়ে তাঁর পূর্ণ ইচ্ছার সমন্বয় এবং অবশেষে সেগুলিকে সৃষ্টি করাকে তাক্বদীর বলে। ছালেহ ইবনে আব্দুল আযীয ইবনে মুহাম্মাদ আলুশ্-শায়খ, জামে‘উ শুরূহিল আক্বীদাতিত্-ত্বহাবিইয়াহ, (কায়রো: দারু ইবনিল জাউযী

ঈমানের ছয়টি রুকনের মধ্যে তাক্বদীর অন্যতম। ঈমানের এ গুরুত্বপূর্ণ রুকনটির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত কেউ মুমিন হতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

 ‘নিশ্চয় প্রত্যেকটি জিনিসকে আমরা ‘ক্বাদর’ তথা পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি  সূরা আল-ক্বামার: ৪৯

ইবনু কাছীর (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, আহলে সুন্নাতের আলেমগণ এই আয়াত দ্বারা তাক্বদীর সাব্যস্ত হওয়ার দলীল গ্রহণ করেন। তাফসীর ইবনে কাছীর

 অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আর আল্লাহর বিধান সুনির্দিষ্ট, অবধারিত’  সূরা আল-আহযাব: ৩৮

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর (রহ) বলেন, অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয় অবশ্যই ঘটবে, এর সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হবে না। তিনি যা চান, তা ঘটে। আর যা তিনি চান না, তা ঘটে না। হাদীসে জিবরীলে ঈমানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে,

‘আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলী, আসমানী কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, শেষ দিবস এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের নাম ঈমান’। সহিহ মুসলিম, হা/৮, ‘ঈমান’ অধ্যায়

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনিল আস রা. বলেন, ‘আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি,

 ‘আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে আল্লাহ সবকিছুর তাক্বদীর লিখে রেখেছেন। তিনি বলেন, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে’। সহিহ মুসলিম, হা/২৬৫৩।

তাক্বদীরের স্তর চারটি। মূলতঃ এই চারটি স্তরের উপর তাক্বদীরের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত বলে অনেকেই এগুলিকে তাক্বদীরের রুকন বা স্তম্ভ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।

ড. ওমর সুলায়মান আশক্বার, আল-ক্বাযা ওয়াল-ক্বাদার, (কুয়েত: মাকতাবাতুল ফালাহ

 

প্রথম স্তর: সবকিছু সম্পর্কে আল্লাহ্র চিরন্তন জ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনঃ

দ্বিতীয় স্তর: আল্লাহ তাঁর চিরন্তন জ্ঞান অনুযায়ী লাউহে মাহ্ফূযে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তার সবই লিখে রেখেছেন এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা।

তৃতীয় স্তরঃ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোন কিছুই হয় না একথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করাঃ

চতুর্থ স্তরঃ আল্লাহর রাজ্যের সবকিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন একথার প্রতি ঈমান আনা

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আল্লাহ যদি তাঁর চিরন্তন জ্ঞান অনুযায়ী সবকিছু লিখে থাকেন, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটির অর্থ কি? এরশাদ হচ্ছে,

‘আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন’ (রা‘দ ৩৯)।

অনুরূপভাবে মানুষের হায়াত-মউত, রিযিক্ব যদি সুনির্ধারিত হয়ে থাকে, তবে নিম্নোক্ত হাদীসের অর্থ কি?

রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি তার রূযীর প্রশস্ততা এবং আয়ূ বৃদ্ধি কামনা করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে’।  সহিহ মুসলিম, হা/২৫৫৭,

তাকদীর সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে পৃথক একটি বই লেখা প্রয়োজন হয়ে পড়বে। এখানে সবরকে বুঝার জন্য যতটুকু দরকার তা নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

 তাক্বদীর দুই প্রকার:

এক. অনড় তাক্বদীর: উম্মুল কিতাব বা লাউহে মাহফূযে লিখিত তাক্বদীর এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। এই প্রকারের তাক্বদীরে কোন পরিবর্তন হয় না।

দুই. ঝুলন্ত তাক্বদীর: ফেরেশতামণ্ডলীর নিকট লিখিত তাক্বদীর এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই প্রকার তাক্বদীরে পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং রিযিক্ব, আয়ূ লাউহে মাহফূযে অনড় রয়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র কোন পরিবর্তন হয় না। তবে ফেরেশতামণ্ডলীর দফতরে লিখিত রিযিক্ব, আয়ূ ইত্যাদিতে পরিবর্তন হতে পারে।

আল-ঈমান বিল ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/১২৫।

ইবনে তাইমিয়া র. বলেন, মানুষের আয়ূ দুই ধরনের: এক ধরনের আয়ূ অনড়, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। দ্বিতীয় প্রকারের আয়ূ কোন শর্তের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে। এর আলোকে রাসূল সা.-এর নিম্নোক্ত হাদীসটির অর্থ স্পষ্ট হয়ে উঠে,

মহান আল্লাহ ফেরেশতাকে বান্দার আয়ূ লেখার নির্দেশ দেন এবং তাঁকে বলে দেন, বান্দা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে তুমি তার বয়স এত বছর বাড়িয়ে দিও। কিন্তু তার বয়স বাড়বে কি বাড়বে না সে বিষয়ে ফেরেশতা কিছুই জানেন না। কেবল আল্লাহই তার সুনির্দিষ্ট বয়স সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। তারপর তার মৃত্যু এসে গেলে আর সময় দেওয়া হয় না। ফাতাওয়া ইবনে তায়মিইয়াহ, ৮/৫১৭।

তাঁকে মানুষের রিযিক্ব কম-বেশী হয় কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রিযিক্ব দুই প্রকার: এক প্রকারের রিযিক্ব সম্পর্কে কেবলমাত্র আল্লাহই জ্ঞান রাখেন এবং এই প্রকারের রিযিক্বে কোন পরিবর্তন হয় না। দ্বিতীয় প্রকারের রিযিক্ব সম্পর্কে আল্লাহ ফেরেশতামণ্ডলীকে অবহিত করান। এই প্রকারের রিযিক্ব কম-বেশী হওয়ার বিষয়টি বান্দার কর্মের উপর নির্ভর করে। প্রাগুক্ত, ৮/৫৪০।

বিষয়টির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাফেয ইবনে হাজার র. বলেন,

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ফেরেশতাকে বলা হয় যে, অমুক আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে তার বয়স হবে ১০০ বছর। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলে তার বয়স হবে ৬০ বছর। কিন্তু আল্লাহ তাঁর চিরন্তন জ্ঞানের মাধ্যমে জানেন যে, সে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে নাকি ছিন্ন করবে। সেজন্য আল্লাহর জ্ঞানে যা রয়েছে, তার কোন পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু ফেরেশতার জ্ঞানে যা রয়েছে, তাতে পরিবর্তন ঘটতে পারে। এই দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন’ (রা‘দ ৩৯)।

সুতরাং মিটিয়ে দেওয়া বা বহাল রাখার বিষয়টি ঘটে ফেরেশতার জ্ঞানের ক্ষেত্রে। কিন্তু উম্মুল কিতাব বা লাউহে মাহফূযে যা রয়েছে, তাতে তেমনটি ঘটে না। আর লাউহে মাহফূযের সবকিছুই আল্লাহর জ্ঞানে রয়েছে।

প্রথম প্রকারকে বলা হয়, অনড় তাক্বদীর এবং দ্বিতীয় প্রকার হল, ঝুলন্ত তাক্বদীর।  ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী, ১০/৪৩০।

সেজন্য ‘ঝুলন্ত তাক্বদীর’ও মূলতঃ আল্লাহর চিরন্তন জ্ঞানের ক্ষেত্রে ঝুলন্ত নয়; বরং সেটিও অনড়। মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ২/২৪০।

তাকদীরকে বুঝার জন্য এইভাবে চিন্তা করুন যে, কোন এক ব্যক্তির হায়াত আল্লাহ ঠিক করেছেন যে ৮০ বছর বাঁচবে, তবে যদি সে চিকিৎসা না করলে বাঁচবে ৭০ বছর আর চিকিৎসার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ও দোয়া  থাকলে বাচবে ৭৫ বছর। এইভাবে সব প্রচেষ্টা করার পরও মহান আল্লাহ যেটা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তার এক মুহুর্ত দেরী হবে না। তাহলে দেখা যায় ব্যক্তি ৭০/৭৫ বছরেও মারা যাতে পারতো কিন্তু ৮০ বছরের বেশী যেতে পারবে না। এটাই তাকদীর।

আসলে আমাদের মৃত্যু নিয়ে ভয় বা চিন্তা করার কোন কারন নেই বরং চিন্তা করা প্রয়োজন যে, আমার পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় চলে যাচ্ছে,আমার পাশ বা ভালো রেজাল্টের জন্য পর্যাপ্ত উত্তর লেখা হয়েছে কিনা?

যখন কোন ব্যক্তির ভয়ানক এক অসুখ সনাক্ত হয়, সে বাঁচবে না বেশী দিন, তখন মনে হয় আলহামদুলিল্লাহ সেই ব্যক্তিটি কত সৌভাগ্য যে, মহান আল্লাহ দরদ দিয়ে তাকে পরীক্ষায় পাশের জন্য একটা এস.এম.এস আলাদা করে তাকে  দিয়েছেন যে, তুমি কাজগুলো করে তৈ্রী হয়ে যাও। আর আমরা ভাবছি, আমার জীবনে অনেক সময় কারন সুস্থ্য আছি, না- আসলে এই ভাবনাটা  আমাদের ধোঁকা দিয়ে রেখেছে, আমাদের কাছ থেকে সময়গুলো গোপনে নিয়ে চলে যাচ্ছে অথচ আমাদের বুঝতে দিচ্ছে না। আসলে আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা ধোঁকায় ফেলে রেখেছি নিজেদের। মহান আল্লাহ আমাদের এই অবস্থা থেকে হেফাজত করুন। সুস্থ্যতা ও সময়কে সুন্দর করে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিন।

 ‘তাঁর কাছেই গায়েবী বিষয়ের চাবিসমূহ রয়েছে; এগুলি তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা কিছু আছে, তিনিই জানেন। তাঁর জানার বাইরে (গাছের) কোন পাতাও ঝরে না। তাক্বদীরের লিখন ব্যতীত কোন শস্যকণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুষ্ক দ্রব্যও পতিত হয় না’ (সূরা আন‘আম:৫৯)।

মহান আল্লাহ, তাঁর মর্যাদা সর্বাধিক, তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং এই সৃষ্টিজগতে কোন কিছুই তাঁর ইচ্ছা ব্যতীরেকে সংঘটিত হয় না। তিনি জানেন অনাগত বিষয় সম্পর্কে , জানেন সামনে কি ঘটতে চলেছে এবং তিনি তাকদীরে সবকিছু নির্ধারিত করেছেন এবং কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন আসমান ও জমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে।

নিশ্চয় আল্লাহ্র কাছেই ক্বিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোথায় সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত’ (লুক্বমান ৩৪)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

‘তিনি জানেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে যমীনে বিচরণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত হবে’ (সূরা মুযযাম্মিল: ২০)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

‘তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। তিনি অদৃশ্য এবং দৃশ্য সম্পর্কে সম্যক অবগত’ (সূরা আল হাশর:২২)

 রাসূল সা. কে যখন মুশরিকদের ছেলে-মেয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘তারা বেঁচে থাকলে কি আমল করত, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত’।সহীহ মুসলিম:২৬৫৮

ইমরান ইবনে হুসাইন রা. বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সা. কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী তা কি পরিজ্ঞাত বিষয়? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। লোকটি বললেন, তাহলে মানুষ কেন আমল করবে? তিনি বললেন,‘যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে বা যার জন্য যা সহজ করা হয়েছে, সে তা-ই করবে’। সহীহ বুখারী:৪/২০৯,৬৫৯৬

তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস থাকলেই মানুষ তার অন্তর শান্ত রেখে সবর নিতে পারবে। মানুষ তার ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে যাবে এবং এরপর যা পরিনতি হবে সেটাই তাকদীর, তাহলে পাওয়া বা না পাওয়ার ফলে যে অতিরিক্ত উদ্ধত বা হতাশ হওয়ার যে অবস্থা আসতে পারে তা থেকে মুমিন এই তাকদীরে বিশ্বাসের দরুনই সবর নিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই দুনিয়ার জীবনে সবকিছু পাওয়ার ভোগের জন্য মানুষকে পাঠানো হয় নাই, আগামীতে এই সবরের বিনিময় মহান আল্লাহর কাছ থেকে পাবে। তাকদীরে বিশ্বাসকে তাই ঈমানের একটি শর্ত হিসেবে দেয়া হয়েছে যেন মানুষ আশার আলো নিয়ে চলতে পারে।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

“যমীনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। যাতে তোমরা আফসোস না কর তার উপর যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তোমরা উৎফুল্ল না হও তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে। আর আল্লাহ কোন উদ্ধত ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।” হাদীদ : ২২-২৩

তাক্বদীর লিপিবদ্ধের পাঁচটি পর্যায়ঃ

প্রথম পর্যায়ঃ রাসূল সা. বলেনঃ

“আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়তি (তাকদীর) লাওহে-মাহফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।”(মুসলিমঃ ২৬৫৩)

আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে আল্লাহ লাউহে মাহ্ফূযে সবকিছুর তাক্বদীর লিখে রাখেন। লাউহে মাহ্ফূযে বান্দার ভাগ্যে ভাল বা মন্দ যা-ই লিখে রাখা হয়েছে, তা-ই সে পাবে। (সহিহ বুখারী, ৪/৩৮৭,৭৪১৮)

‘যমীনে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর এমন কোন মুসিবত আসে না, যা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই। নিশ্চয়ই এটি আল্লাহর পক্ষে সহজ’ (সূরা আল-হাদীদ ২২)

 দ্বিতীয় পর্যায়ঃ  আল্লাহ বনী আদমকে তাদের পিতা আদম আ-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করে তাদের নিকট থেকে এমর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তারা যেন তাঁর সাথে শিরক না করে। এসময় তিনি তাদের সবাইকে দু’বার দু’মুষ্টিতে নিয়েছিলেন এবং এক মুষ্টিকে জান্নাতবাসী আর অপর মুষ্টিকে জাহান্নামবাসী হিসাবে লিখে রেখেছিলেন। এই লিখন ছিল লাউহে মাহ্ফূযে লিখনের পরের স্তরে। সুনানে আবূ দাঊদ:৪৭০৩,

মহান আল্লাহ বলেন,  ‘আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি; যাতে ক্বিয়ামতের দিন এ কথা না বলতে পার যে, আমরা তো ছিলাম এ বিষয়ে বেখবর। সূরা আল-আ‘রাফ: ১৭২

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ অন্ধকারে তাঁর সৃষ্টিকে সৃষ্টি করে স্বীয় নূরের আলোচ্ছটা দিলেন। ঐদিন যাকে আল্লাহর নূরের আলোচ্ছটা স্পর্শ করেছে, সে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে, যাকে স্পর্শ করেনি, সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। সেজন্যই তো আমি বলি, কলম শুকিয়ে গেছে’। জামে তিরমিযী:২৬৪২

মনে রাখতে হবে, একদলকে জান্নাতী এবং অপর দলকে জাহান্নামী হিসাবে লিখে দেওয়া অথবা একদলকে আল্লাহর নূরের আলোচ্ছটা স্পর্শ করা এবং আরেক দলকে স্পর্শ না করার বিষয়টি এলোপাতাড়ি কোন বিষয় নয়; বরং আল্লাহর চিরন্তন জ্ঞান, ইচ্ছা এবং তাঁর পরিপূর্ণ ন্যায় ও ইনসাফের উপর ভিত্তি করেই তা সংঘটিত হয়েছে।

তৃতীয় পর্যায়ঃ মানুষ মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা এসে তার আয়ূ, কর্ম, রিযিক্ব এবং সে সৌভাগ্যবান নাকি দুর্ভাগা, তা লিখে দেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,

‘তোমাদের যে কাউকে চল্লিশ দিন ধরে তার মায়ের পেটে একত্রিত করা হয়, তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে জমাটবদ্ধ রক্ত হয় এবং তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। অতঃপর চারটি বিষয়ের নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তার কাছে ফেরেশতা পাঠান এবং তার রিযিক্ব, দুনিয়াতে তার অবস্থানকাল, তার আমলনামা এবং সে দুর্ভাগা হবে না সৌভাগ্যবান হবে তা লিখে দেওয়ার জন্য তাঁকে বলা হয়’। সহিহ বুখারী: ৪২৪, ৩২০৮

লাউহে মাহ্ফূযের লিখন ছিল সমগ্র সৃষ্টিকুলের; কিন্তু মায়ের পেটের এই লিখন শুধুমাত্র মানুষ জাতির জন্য নির্দিষ্ট। জামে‘উ শুরূহিল আক্বীদাতিত্-ত্বহাবিইয়াহ, ১/৫৬৯-৫৭০

চতুর্থ পর্যায়ঃ প্রত্যেক ক্বদরের রাতে ঐ বছরের সবকিছু লেখা হয়। লাউহে মাহফূযের লিখন অনুযায়ী আল্লাহ ফেরেশতামণ্ডলীকে ঐ বছরের সবকিছু লিখতে নির্দেশ দেন। ইহাকে বাৎসরিক তাক্বদীর বলা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,

আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’ সূরা আদ দুখান: ৩-৪

ইবনে আব্বাস বলেন, ক্বদরের রাতে লাউহে মাহফূযের লিখন অনুযায়ী ঐ বছরের জন্ম, মৃত্যু, রিযিক্ব, বৃষ্টি ইত্যাদি সবকিছু আবার লেখা হয়। এমনকি ঐ বছর কে হজ্জ করবে আর কে করবে না, তাও লিখে রাখা হয়।      ইমাম ক্বুরত্বুবী, আল-জামে‘ লিআহকামিল ক্বুরআন,

পঞ্চম পর্যায়ঃ পূর্বের লিখিত তাক্বদীর অনুযায়ী প্রত্যেক দিন সবকিছুকে নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করা হয়। ইহাকে প্রাত্যহিক তাক্বদীর বলে। মহান আল্লাহ বলেন,

 ‘তিনি প্রতিদিন কোন না কোন কাজে রত আছেন’ সূরা আর রহমান: ২৯

রাসূল সা. উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলে সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, প্রত্যেক দিন তিনি কি করেন? রাসূল সা. বললেন, কাউকে ক্ষমা করেন, কারো বিপদাপদ দূর করেন, কারো মর্যাদা বৃদ্ধি করেন আবার কারো মর্যাদার হানি করেন।

ইবনে জারীর ত্ববারী, তাফসীরে ত্ববারী (জামেউল বায়ান ফী তা’বীলিল ক্বুরআন), তাহক্বীক্ব: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুহসিন তুর্কী,

তাকদিরের বিষয়টি আমরা সহজ করে ততটুকুই বুঝার চেষ্টা করি যতটুকু মহান আল্লাহ ও রাসূল স.জানিয়েছেন। একজন মুমিনকে তাক্বদীরের চারটি স্তরের উপর বিশ্বাস করতে হবে। সে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে, আল্লাহর জ্ঞান, লিখন, ইচ্ছা এবং সৃষ্টির বাইরে কোন কিছুই ঘটে না। সে আরো বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তাকে তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। ফলে সে সৎকাজ করে যাবে এবং পাপাচার বর্জন করে চলবে। আল্লাহ তাকে সৎকাজ করার এবং অসৎকাজ বর্জন করার তওফীক্ব দিলে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। পক্ষান্তরে সৎকাজ সম্পাদন এবং অসৎকাজ বর্জনের তওফীক্বপ্রাপ্ত না হলে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা এবং তওবা করবে।

ইহলৌকিক সুযোগ-সুবিধা অর্জনেও বান্দাকে প্রচেষ্টা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সঠিক এবং বৈধ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। সে তার কাঙ্খিত বস্তুটি অর্জন করতে পারলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। আর না পারলে তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। সাথে সাথে তাকে বিশ্বাস করতে হবে, তাক্বদীরে যদি লেখা থাকে, সে সঠিক কিছু করবে, তাহলে তা কখনই ভুল হওয়ার নয়। পক্ষান্তরে তাক্বদীরে যদি লেখা থাকে, সে ভুল করবে, তাহলে তা কখনই সঠিক হওয়ার নয়।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

যিনি পৃথিবী ও আকাশের রাজত্বের মালিক, যিনি কাউকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি, যাঁর সাথে রাজত্বে কেউ শরীক নেই, যিনি প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন তারপর তার একটি তাকদীর নির্ধারিত করে দিয়েছেন।

সূরা ফুরকান:০২

যিনি তাকদীর গড়েছেন তারপর পথ দেখিয়েছেন। সূরা আলা:০৩

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন:

বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক”। (সূরা কাহাফ ১৮;২৯)

আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়। (সূরা ইনসান ৩)

অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল ৭-৮)

আওয়াজ আসবেঃ এটি জান্নাত। তোমরা এর উত্তরাধিকারী হলে তোমাদের কর্মের প্রতিদানে। সূরা আরাফ: ৪৩

তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে স্থায়ী আযাব ভোগ কর। সুরা সাজদা: ১৪

সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। মানুষ সকল কাজই আল্লাহর ইচ্ছায় করে ঠিকই কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক করে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক কাজ করার জন্য সে জান্নাতে যাবে আর সন্তুষ্টি মোতাবেক কাজ না করার জন্য সে জাহান্নামে যাবে।

কোন কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর কোন কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন তা বুঝা যাবে কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা। কোন কাজ সংঘটিত হয়ে গেলেই সাধারণভাবে বুঝে নেয়া হবে যে এটা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় হয়েছে। তা অবশ্যই বলতে হবে। কিন্তু তা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে হয়েছে কিনা তা বুঝা যাবে না কুরআন বা হাদীসের মাধ্যম ব্যতীত। কুরআন বা হাদীসে উক্ত বিষয়টির সমর্থন থাকলে বুঝা যাবে সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে সম্পন্ন হয়েছে। আর যদি কাজটি কুরআন বা হাদীসের পরিপন্থী হয় তাহলে ধরে নেয়া হবে কাজটি আল্লাহর সমন্তুষ্টির খেলাফ হয়েছে। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করলে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যাবে। আর তার সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ না করলে জাহান্নামে যেতে হবে।

 ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির মধ্যে পার্থক্য আছে যেমন এক ব্যক্তির ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লো, চিকিৎসক বললেন তার পেটে অপারেশন করতে হবে। অপারেশন ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।

এখন বেচারা অপারেশন করাতে রাজী নয়। এ কাজে সে সন্তুষ্ট নয়, তবুও সে অপারেশন করিয়ে থাকে। এমন কি এ কাজের জন্য ডাক্তারকে অর্থ দিতে হয়। অতএব, দেখা গেল এ অপারেশনে তার ইচ্ছা পাওয়া গেল, কিন্তু তার সন্তুষ্টি পাওয়া যায়নি। অপারেশন করাতে সে ইচ্ছুক কিন্তু সন্তুষ্ট মনে নয়। দেখা গেল ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি দুটো আলাদা বিষয়।

অনেক সময় ইচ্ছা পাওয়া যায়, কিন্তু সেখানে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। কিন্তু যেখানে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় সেখানে ইচ্ছা অবশ্যই থাকে।

গভীর রাতে চোর চুরি করতে চাইলে আল্লাহর ইচ্ছায় বা অনুমতিতে চুরি করে, আল্লাহর সন্তুষ্টিতে নয়। আবার তাহাজ্জুদ নামাজে রাত জাগতে চাইলে আল্লাহর ইচ্ছায় বা অনুমতিতে জাগতে পারে এবং তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে। তাই সকল কাজ মানুষ আল্লাহর ইচ্ছায় করে ঠিকই কিন্তু তার সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি অনুযায়ী করে না। তাই যখন ইচ্ছা দ্বারা সন্তুষ্টি বুঝার কোন সুযোগ নেই। তাই জান্নাতে যেতে হলে তাঁর ইচ্ছায় কাজ করলে হবে না। তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন বলে প্রমাণ আছে সে সকল কাজ করতে হবে।

ভাল করে মনে রাখতে হবে সব কাজ আল্লাহর ইচ্ছায় হয় ঠিকই কিন্তু সব কাজ তার সন্তুষ্টি মোতাবেক হয় না। আরো মনে রাখতে হবে ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি এক বিষয় নয়। দুটো আলাদা বিষয়।

তাক্বদীরে বিশ্বাস স্থাপনের ফলে ব্যক্তি যেভাবে উপকৃত হয়–

১. ঈমান পূর্ণতা পায়।

২. যেহেতু তাক্বদীর আল্লাহ্র কর্মসমূহের অন্যতম। তাই তাক্বদীরের প্রতি ঈমান না আনলে ‘রুবূবিইয়াত’ বা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করার বিষয়টি পূর্ণতা পায় না।

৩. তাক্বদীরে বিশ্বাস করলে বান্দা তার বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্টে আল্লাহ্র শরণাপন্ন হতে পারবে। পক্ষান্তরে কল্যাণকর কিছু ঘটলে সে তা আল্লাহর দিকে সম্বন্ধিত করতে শিখবে এবং সে জানবে যে, তার প্রতি আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহেই এটি সম্ভব হয়েছে। রাসূল সা. বলেন,

 মুমিনের বিষয়টি অনেক মজার, তার সবকিছুই কল্যাণকর; মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। কারণ খুশীর কিছু ঘটলে সে আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করে। ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। পক্ষান্তরে কষ্টের কিছু ঘটলে সে ধৈর্য্যধারণ করে। ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়।  সহিহ মুসলিম:২৯৯৯

সুখে-দুঃখে সর্বদা সঠিক পথের উপরে টিকে থাকা সম্ভব হবে। ভাল কিছু পেলে সে আনন্দে আত্মহারা হবে না। পক্ষান্তরে বালা-মুসীবত তাকে আশাহত করতে পারবে না। সে জানবে, তার জীবনে কল্যাণকর যা কিছুই অর্জিত হয়, সবই আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়; তার বিচক্ষণতা এবং কর্মের পারদর্শিতার বিনিময়ে নয়। মহান আল্লাহ বলেন,তোমাদের নিকট যে সমস্ত নেয়ামত আসে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে’ সূরা আন নাহল: ৫৩

পক্ষান্তরে বিপদাপদ এলে সে জানবে, এটিই তার তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ ছিল এবং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। ফলে সে ধৈর্য্যহারা হবে না, আশাহত হবে না; বরং সে ধৈর্য্যধারণ করবে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াবের প্রত্যাশী হবে।

বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ, ‘রাসূল’ নামক গ্রন্থের লেখক বোডলি (BODLEY) বলেন, ‘আমি মরুর আরবদের কাছ থেকে দুশ্চিন্তাকে পরাজিত করতে শিখেছি। কারণ মুসলিম হিসাবে তাক্বদীরের প্রতি তাদের ঈমান অটুট। আর এই ঈমান তাদেরকে যেমন নিরাপদে জীবন যাপন করতে সহযোগিতা করেছে, তেমনি তা তাদেরকে সহজ এবং সাবলীল জীবন যাপন করতে শিখিয়েছে। সেজন্য কোন বিষয়ে তারা তাড়াহুড়াও করে না, দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হয় না। কেননা তারা বিশ্বাস করে, তাক্বদীরে যা লেখা আছে, তা হবেই।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকে।…আমার আরব মরুভূমি ছেড়ে আসা ১৭ বছর হয়ে গেল, কিন্তু আজও আল্লাহ নির্ধারিত তাক্বদীরের ক্ষেত্রে আমি আরবদের সেই পরিচিত অবস্থান গ্রহণ করি। ফলে যেকোন বিপদাপদকে আমি ঠাণ্ডা মাথায় বরণ করে নিতে পারি। আরবদের কাছ থেকে শেখা এই স্বভাব আমার স্নায়ুবিক চাপ নিয়ন্ত্রণে উপশমকারী নানা ট্যাবলেট-ক্যাপসুলের চেয়ে বহুগুণ বেশী সফল হয়েছে।

ডেল কার্নেগী, দা‘ইল ক্বালাক্ব ওয়াব্দাইল হায়াত, আরবী অনুবাদ: আব্দুল মুন‘ইম, (কায়রো: মাকতাবাতুল খানজী, তা. বি.), পৃ: ৩০৩-৩০৫।

 

তাক্বদীরে বিশ্বাস স্থাপন করলে বান্দা যে কোন বিপদাপদকে হালকা মনে করতে শিখবে। কারণ যখন সে জানবে যে, তার বিপদাপদ আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, তখন তা তার কাছে কিছুই মনে হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। সূরা আত তাগাবুন: ১১

আলক্বামা র. বলেন, এখানে ঐ ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যার বিপদাপদ আসলে সে বিশ্বাস করে যে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়েছে। ফলে সে তাতে সন্তুষ্ট থাকে এবং তাকে অকপটে গ্রহণ করে নেয়।

তাফসীরে ত্ববারী, ২৩/১১।

ইবনুল কায়্যিম বলেন: আল্লাহ তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা রহমত স্বরূপ। যদিও তা প্রদাণ বন্ধ করে হতে পারে; পরীক্ষা হলেও সেটি কল্যাণকর। আর তাঁর নির্ধারিত দূর্যোগও মঙ্গলজনক। যদিও তা পীড়াদায়ক হয়। (মাদারিজ আল-সালেকীন, ৪/২১৫)

মুগীরা ইবনে শু’বার(আযাদ করা) গোলাম ওয়াররাদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মুয়াবিয়া রা. মুগীরা ইবনে শু’বাকে লিখে পাঠালেন-নবী করীম স.কে নামাযের পরে যা পাঠ করতে শুনেছেন তা আমাকে লিখে পাঠাবেন। অতঃপর মুগীরা আমার দ্বারা লিখালেন এবং বললেন,আমি নবী করীম স.কে নামাযের পরে পাঠ করতে শুনেছি,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ

اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ

(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, আল্লা-হুম্মা লা মানি‘আ লিমা আ‘তাইতা, ওয়ালা মু‘তিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা ইয়ানফা‘উ যালজাদ্দি মিনকাল জাদ্দু)।

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই,

হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করেছেন তা রোধ ও বারন করার কেউ নেই, আর আপনি যা বারণ করবেন ও রোধ করবেন, তা প্রদান করার কেউ নেই। আর কোনো ক্ষমতা-প্রতিপত্তির অধিকারীর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনার কাছে কোনো উপকারে আসবে না। সহিহ বুখারী: ৬১৫৪

এই বিশ্বাসের প্রভাব এতো গভীর যে একজন মুমিনের জীবনকে শান্ত,স্থীর,সুন্দর ও দূর্নিতিমুক্ত রাখে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন অনেক ঘটনাই নিরব সাক্ষী হয়ে রয়েছে।

দেখা যায় একজন মানুষ নিজের জন্য কোন একটা জিনিষ পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রচেষ্টাটা তাকদীরের ভিতরেই অবস্থান করে,তবে কোন্ পথে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা হলো দেখার ও আমলনামায় লেখার বিষয়। আর এই কোন পথের প্রচেষ্টার ধরন হাদীসের বক্তব্যের বিষয়ের উপর বিশ্বাসের ধরনের উপর নির্ভর করে। কেউ যখন পুরোপুরি মহান আল্লাহর ক্ষমতার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে এবং প্রচেষ্টা চালায় তখন সে আর তার কাংখিত জিনিষ পেতে দেরী দেখে বা না পেলেও অন্যায় ও হারাম পথে চেষ্টা করবে না। সে সব ধরনের নীতিগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছেই চাইবে। তারপর যা আসবে, তার উপর পূর্ণ আস্থা রাখবে যে এটাই ব্যক্তির তাকদীর, এটাই ব্যক্তির কল্যানের জন্য,আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-  হতে পারে কোন জিনিস তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর অথচ তা তোমাদের জন্য ভালো। আবার হতে পারে কোন জিনিস তোমরা পছন্দ করো অথচ তা তোমাদের জন্য খারাপ। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। (আল-বাকারা ২:২১৬)

রাসূলুল্লাহ সা. ইবন আব্বাসকে রা. উদ্দেশ্য করে বলেন-

(হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শেখাব। যদি তুমি সেগুলো হিফাযত কর, তাহলে আল্লাহ তোমাকে হিফাযত করবেন। আল্লাহর হুকুম আহকামের হিফাযত কর, তাঁকে শিরক, কুফর থেকে মুক্ত রাখবে, তবেই একমাত্র সাহায্যকারী হিসাবে তাঁকে তোমার কাছে পাবে। আর যখন কোন কিছু যাচ্ঞা করবে, তখন আল্লাহর কাছে যাচ্ঞা কর, আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, একমাত্র তাঁর কাছেই করবে। এবং জেনে রেখো- তোমার উপকার করার জন্য পৃথিবীর সকল মানুষ একত্রিত হলেও আল্লাহ তোমার জন্য তাক্বদীরে যে মঙ্গল লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোন প্রকার মঙ্গলই তারা করতে পারবে না। আর যদি তারা তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে তাক্বদীরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমার জন্য যে ক্ষতি লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত অন্য কোন ক্ষতিই তারা করতে পারবে না। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, আর দফতর বন্ধ করে ফেলা হয়েছে)। (মুসনাদে আহমদ, প্রথম খণ্ড)

আলী রা. হতে, তিনি বলেন: বাকী আল গারকাদে (কবরস্থান) আমরা একটি জানাযায় শরীক হলাম, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) এসে বসলেন, আমরাও তাঁর পাশে বসলাম। তাঁর নিকট একটি লাঠি ছিল এটি দ্বারা তিনি মাটিতে দাগ কাটতেছিলেন, অতঃপর তিনি বললেন: (তোমাদের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, এমন কোনো নাফস নেই কিন্তু তার ঠিকানা জান্নাত বা জাহান্নামে লিখা হয়েছে, দূর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যশালী লিখা হয়েছে) অতঃপর তিনি পাঠ করলেন: সূতরাং যে ব্যক্তি দান করবে এবং সংযত হবে এবং সৎ বিষয়কে সত্য জানবে; অচিরেই আমি তার জন্যে সুগম করে দেব সহজ পথ, পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কার্পণ্য করবে ও নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করবে; অচিরেই আমি তার জন্যে সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ।  সূরা লাইল:৫-১০

হাদীসে এসেছে, তোমরা আমল করে যাও কেননা প্রত্যেকেই পরিচালিত, অতঃপর মন্দলোকগণ মন্দ কাজের জন্য পরিচালিত এবং সৎলোকগণ সৎ কাজের জন্য পরিচালিত। তারপর তিনি পাঠ করলেন: সূতরাং যে ব্যক্তি দান করবে এবং সংযত হবে এবং সৎ বিষয়কে সত্য জানবে।

মহান আল্লাহ বলেন, আর স্মরণ কর যুন-নূন এর কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম। অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। সূরা আম্বিয়া: ৮৭-৮৮

কিন্তু আমাদের সমাজে দেখা যায় মহান আল্লাহ বিপদ থেকে উদ্ধার করে দেন, আর সেই ব্যক্তি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে দুনিয়ার উপায় উপাদান বা মাজার বা কোন ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায়, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। মহান আল্লাহ এই চরিত্রটাও তুলে ধরেছেন-

তোমরা যে সমস্ত অনুগ্রহ ভোগ কর, তা তো আল্লাহরই নিকট হতে; আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুল ভাবে আহ্বান কর। আর যখন আল্লাহ তোমাদের দুঃখ- দৈন্য দূরীভূত করেন, তখন তোমাদের এক দল তাদের প্রতিপালকের সাথে শরিক করে। সুরা নহল: ৫৩-৫৪

লানত মানুষের প্রতি, সে কত বড় সত্য অস্বীকারকারী! কোন্ জিনিস থেকে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন?

এক বিন্দু শুত্রু থেকে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন, পরে তার তকদীর নির্দিষ্ট করেছেন, তারপর তার জন্য জীবনের পথ সহজ করেছেন। সূরা আবাসা:১৯

যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনিই আমাকে পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমাকে খাওয়ান ও পান করান এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। সূরা শোয়ারা: ৮০

আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,

 ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন। (তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮)

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী উম্মে হাবিবা রাদিআল্লাহু আনহা মুনাজাতে বলেন, “হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূল, আমার পিতা আবু সুফিয়ান এবং আমার ভাই মুয়াবিয়ার দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন।” রাসূলুল্লাহ সা. বলেন :

“তুমি নির্ধারিত হায়াত, নির্দিষ্ট কিছু দিন ও বণ্টনকৃত রিযিকের প্রাথর্না করেছ। যাতে আল্লাহ তাআলা আগ-পাছ কিংবা কম-বেশী করবেন না। এরচেয়ে বরং তুমি যদি জাহান্নামের আগুন ও কবরের আযাব থেকে নাজাত প্রার্থনা করতে, তাহলে তোমার জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক হত।” মুসলিম শরীফ : ৪৮১৪

ইবনে দায়লামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উবাই ইবনে কাব রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট আসেন এবং বলেন, আমার অন্তরে তাকদির সম্পর্কে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমাকে কিছু বর্ণনা করে শোনান। হতে পারে আল্লাহ আমার অন্তর থেকে তা দূর করে দিবেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ আসমান এবং জমিনবাসীদের শাস্তি দিলে, জালেম হিসেবে গণ্য হবেন না। আর তিনি তাদের সকলের উপর রহম করলে, তার রহম-ই তাদের আমলের তুলনায় বেশী হবে। তাকদিরের প্রতি ঈমান ব্যতীত ওহুদ পরিমান স্বর্ণ দান করলেও কবুল হবে না। স্মরণ রেখ, যা তোমার হস্তগত হওয়ার তা কোনভাবেই হস্তচ্যুত হওয়ার সাধ্য রাখে না। এতদ্ভিন্ন অন্য আকিদা নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে জাহান্নাম অবধারিত। তিনি বলেন, অতঃপর আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর কাছে আসি। তিনিও তদ্রূপ শোনালেন। হুযাইফাতুল য়ামান এর কাছে আসি, তিনিও তদ্রুপ বললেন। যায়েদ বিন ছাবেত এর কাছে আসি, তিনিও রসূলুল্লাহ সা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করে শোনালেন।”আবু দাউদ: ৪০৭৭, আহমাদ: ২০৬০৭

আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ, ভালোবাসার কথা বেশী বেশী স্মরণ করা ও কৃতজ্ঞ অন্তর রাখা প্রয়োজন।

সত্যিকার মুমিন আপন প্রভুর প্রতি সুধারণা পোষণ করে। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন :

“আমার ব্যাপারে আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী, আমি ব্যবহার করি।” বুখারী : ৬৭৫৬ মুসলিম : ৪৮২২

মুসিবত দৃশ্যত অসহ্য-কষ্টদায়ক হলেও পশ্চাতে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তাই বান্দার কর্তব্য আল্লাহর সুপ্রসস্ত রহমতের উপর আস্থাবান থাকা।