আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, ‘‘যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের) শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেবেন।’’ নবী সা. আরো বলেন, ‘‘বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো জাতিকে ভালবাসেন, তখন তার পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট (ধৈর্য) প্রকাশ করবে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’’ মুসলিম ২৩৯৬, ইবনু মাজাহ ৪০৩১
জীবনে যে কষ্ট বা দুঃখই আসুক, আপনি আমি চাইলেই সাথে সাথে তা দূর করতে পারবো না। অস্থির হয়ে বিভিন্ন রকম ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো বা করাতে কখনোই সমস্যা দূর হবে না। তাহলে কেনো আমরা নিজেদের ক্ষতির(শারিরীক ও মানসিক) দিকে নিয়ে যাবো এবং শয়তানের পথকে সুগম করে দিবো? কেনোইবা আমরা সবরের প্রাপ্তি থেকে নিজেদের বঞ্চিত করবো! আল্লাহ আমাদের বুঝার দরজা খুলে দিন।
শায়খ উসাইমীন র.বলেন, অনাকাঙ্খিত বালা-মুসীবতের ক্ষেত্রে বান্দার নিম্নোক্ত চার ধরনের অবস্থান হয়ে থাকেঃ
এক. অসন্তোষ প্রকাশ:
এই প্রকারের অবস্থান হারাম; বরং তা কবীরাহ গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। গালে আঘাত করা, চুল উপড়ানো, জামা ছেড়া, নিজের ধ্বংস কামনা করা ইত্যাদি বালা-মুসীবতে অসন্তোষ প্রকাশের অন্যতম নিদর্শন।
দুই. ধৈর্য্যধারণ:
আর ধৈর্য্যধারণের অর্থ হচ্ছে নিজের মন, মুখ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অসন্তোষ প্রকাশের নিদর্শনসমূহ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা। বালা-মুসীবতের ক্ষেত্রে এই প্রকারের অবস্থান অপরিহার্য।
তিন. সন্তুষ্ট হওয়া:
ধৈর্য্যধারণ করা এবং সন্তুষ্ট হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ধৈর্য্যধারণকারী বালা-মুসীবতকে হযম করে নেয় ঠিকই, কিন্তু তার মনের ভেতরে সেটি কঠিন এবং কষ্টদায়ক হিসাবেই গণ্য হয়। পক্ষান্তরে সন্তুষ্ট প্রকাশকারী সেটিকে কষ্টদায়কই মনে করে না; বরং সে মানসিকভাবে খুশী এবং প্রশান্ত হয়। সে মনে করে, তার কিছুই হয়নি। ইবনে তায়মিয়া র.সহ বেশীরভাগ বিদ্বানের নিকট বালা-মুসীবতে সন্তুষ্ট হওয়া যরূরী নয়, বরং উত্তম।
চার. শুকরিয়া আদায় করা:
অর্থাৎ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করা এবং বিপদটিকে নেয়ামত মনে করা। কেউ বলতে পারে, কিন্তু এটি কিভাবে সম্ভব? আল্লাহ কাউকে তাওফীক্ব দিলে সেটি অসম্ভব কিছু নয়। কারণ:
প্রথমত: যখন সে জানবে যে, এই বিপদ তার পাপের কাফফারাহ স্বরূপ এবং পরকাল পর্যন্ত পাপের শাস্তিকে বিলম্বিত করার চেয়ে ইহকালে শাস্তি হয়ে যাওয়া উত্তম, তখন তার জন্য এই বিপদ নিয়ামতে পরিণত হবে এবং এর কারণে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে।
দ্বিতীয়ত: মুসীবতে ধৈর্য্যধারণ করলে বান্দাকে উত্তম প্রতিদান দেওয়া হয়। এরশাদ হচ্ছে,
‘ধৈর্য্যধারণকারীদেরকে অগণিত পুরষ্কার প্রদান করা হয়’ (সূরা যুমার ১০)। সুতরাং এই কথা স্মরণ করে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে।
জীবনের বিভিন্ন পরিবেশে দুঃখ কষ্টকে সহজ করে নেয়া তখনই সম্ভব যখন এই দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের স্থায়ী জীবনের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিতে পারবো এবং মহান আল্লাহকে ভালোবেসে নির্ভর করতে পারবো।