যিলহজ্জের প্রথম দশদিনের আমলগুলো কি কি হতে পারে?

 

সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. বলেছেন, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোন আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল স. আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি তার চেয়েও প্রিয় নয়? রাসূল স. বললেন, না আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়ে গেলো অতঃপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এলো না। সহিহ আল বুখারী: ২/৪৫৭

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, এই দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তোমরা এই সময় তাহলীল(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর(আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ(আলহামদুলিল্লাহ) বেশী করে পাঠ কর।  আহমাদ: ১৩২

মহান আল্লাহর পাঠানো নি’আমতসমূহের অন্যতম একটি যিলহজ্জ মাস। আমরা সেই মাসের দ্বা্রপ্রান্তে।
চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করছে যিলহজ্জ মাসের শুরু।

কুর’আন হাদীসের আলোকে এই যিলহজ্জের প্রথম দশদিনের ইবাদাত অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আর তাই আমরা রমাদানের শেষ দশকের মতই এই দশদিনের আমল নিয়ে আমরা সচেষ্ট হই।

কুরবানী যারা করবেন তারা ১লা যিলহজ্জ থেকে চুল নখ না কাটা মুস্তাহাব পশু কুরবানীর আগ পর্যন্ত।

১।   তাহলীল(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর(আল্লাহু আকবার) ও
তাহমীদ(আলহামদুলিল্লাহ) বেশী করে পাঠ ।
তাওবা ইস্তিগফার বেশী করে করা।

২। ফরয ওয়াজিব আমলগুলো আরো বেশী যত্ন ও গুরুত্বের সাথে আদায় করার
জন্য সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

৩। ভালো আমলের মধ্যে অন্যতম হলো সওম ।১-৯ দিনই সওম রাখতে পারেন।

৪। নফল সালাত বাড়িয়ে দেয়া—–ইশরাক, চাশত, তাহাজ্জুদ(প্রতিদিনই পড়া)

৫। ইতিকাফ কিছু সময়ের জন্য করা যেতে পারে। মসজিদে প্রবেশে নিয়্যত করে
অবস্থানকালীন পুরু সময় রবের ইবাদাতে কাটানো।

৬। দান সাদাকা করা প্রতিদিনই কিছু হলেও।

৭। ফকির, মিসকিন, এতিমদের খাদ্য দেয়া

৮। রোগীর সেবা করা, পরিদর্শন করা।

৯। যেকোন ধরনের কল্যান কাজের পরিকল্পনা ও প্রতিযোগীতা করা। যেমনঃ কোথাও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা,কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা, ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেয়া,

১০। আত্মীয়তার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষার ব্যবস্থা রাখা।

১১। নিজের পরিশুদ্ধির জন্য নিজ পর্যালোচনা করা। কুর’আনের সাথে নিজ চরিত্রকে মিলানো,তাই কুর’আন এর হক আদায় করে অধ্যয়ন করা।

১২। পরিবার ও আত্মীয় প্রতিবেশীর মাঝে সুসম্পর্ক ও দ্বীনের দাওয়া দেয়া।

১৩। যারা হজ্জ পালনে অবস্থান করছেন, তারা হজ্জের কাজগুলো সঠিক খালেস ও সুন্দরভাবে আদায় করা।

১৪। কুরবানীর মূল শিক্ষাকে ধারন করে কুরবানী আদায় করা।

১৫। ঈদের সালাত আদায় ও ঈদের দিনের সুন্নাহ আমল করা

এই যিলহজ্জের দশদিনের আমল যেনো আমাদের অন্তরকে আরো পরিশুদ্ধ পরিমার্জিত করে,রবের নিকট ক্ষমা করুনা লাভে সন্তুষ্টিয় বান্দা হওয়ার সুযোগ করে দিক। মহান আল্লাহ আমাদের কবুল করে নিন।

সাওমের ব্যপারে একটু বলতে ইচ্ছে করলো যেনো একটু গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ আসেএবং আগ্রহ বেড়ে যায় সাওম রাখার ব্যপারে।

লক্ষ্য করা যাক সাওমের ব্যপারে হাদীসে কদসীতে এসেছে–
আদম সন্তানের প্রতিটি আমলই নিজের জন্য কিন্তু সওম শুধুমাত্র আমার জন্য এবং আমিই এটার পুরস্কার দিবো। সহিহ আল বুখারী: ১৮০৫

সাহাবী আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে রাসূ্লুল্লাহ স., আমাকে এমন একটি আমল করার নির্দেশ দিন যা শুধু আমি আপনার নিকট থেকে পাওয়ার অধিকারী হব। রাসূল স. বলেন, তুমি সওম পালন করবে। আর এর কোন নজির নেই। সহিহ সূনানে নাসায়ী: ২১০০

হাশরের মাঠে যখন মিযান কায়েম হবে, তখন বান্দার আমল (শুধুমাত্র সাওম ছাড়া )ওজন করা হবে, সব আমল( গুনাহ ও নেকী) ওজন করার পর যখন আর কোন কিছু বাকী নেই, তখন মহান আল্লাহ যে বান্দাহকে চাইবেন সাওমের আমলটি নেকের পাল্লায় দিয়ে নিজ ইচ্ছে মত ওজন বাড়িয়ে দিবেন যার ওয়াদা মহান আল্লাহ করেছেন,তখন এই সাওমের আমলের ওজন দিয়ে নেকীর পাল্লায় বেড়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। এমন হতে পারে যার গুনাহ অনেক ছিল কিন্তু সে সাওম করেছিল আল্লাহর জন্য, আল্লাহ চাইলেই ( যেহেতু আল্লাহ বলেছেন নিজে দিবেন)সেই সাওমের ওজন সেই পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারেন যা গুনাহের তুলনায় অনেক বেশী। সুবহান আল্লাহ।

তাই আপুরা, আমরা এই সাওমের ব্যপারে সচেষ্ট ও যত্নশীল হই। এই যিলহজ্জের ৯টি সাওম রাখতে কার্পন্য না করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।
আর কেউ যদি না পারেন যে কয়দিন পারেন রাখেন,সেটাই জমা থাকবে, অন্তত ৮ই ও ৯ই যিলহজ্জ রাখাটা নির্দিষ্ট করে নিন, যদিও এটা নফল সাওম।

রাসূল স. বলেছেন, আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহন করে থাকেন। সহিহ মুসলিম: ১১৬৩
যাদের ফরয সাওম কাজা রয়ে গিয়েছে, তারা ফরয কাজা আদায়ের নিয়তে সাওম রাখবেন,তাতে নফলের সাওয়াবও পাবেন ইন শা আল্লাহ(স্কলার্স মত)।
কিন্তু ফরয কাজা আদায়ের নিয়ত না করলে কাজা আদায় হবে না।

https://islamqa.info/en/192428

প্রশ্ন :
শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা ও হায়েযজনিত কারণে রমজানের ভঙ্গ হওয়া দিনগুলোর কাযা রোযা এক নিয়্যতে পালন করা কি জায়েয হবে?

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

না,তা শুদ্ধ নয়। কারণ রমজানের না-রাখা রোযার কাযা পালন সম্পূর্ণ শেষ না করা পর্যন্ত শাওয়ালের ছয় রোযা রাখা যাবে না।

শাইখ ইবনে উছাইমীন  ‘ফাতাওয়াস্‌ সিয়াম’ (৪৩৮) এ বলেছেন  :

যে ব্যক্তি আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিনে রোযা পালন করে এবং তাঁর উপর রমজানের কাযা রোযা অনাদায় থাকে তবে তাঁর রোযা রাখাটা সহীহ। তবে তিনি যদি এই রোযার মাধ্যমে রমজানের কাযা রোযা পালনেরও নিয়্যত করে তবে তাঁর দুটি সাওয়াব হবেআরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিন রোযা পালনের সাওয়াব ও কাযা রোযা আদায়ের সওয়াব। এটি সাধারণ নফল রোযার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য রমজানের রোযার সাথে যে নফল রোযার কোন সম্পর্ক নেই। তবে শায়ালের ছয় রোযা রমজানের সাথে সম্পৃক্ত সে রোযা রমজানের কাযা রোযা আদায়ের পরেই রাখতে হবে। তাই যদি কেউ কাযা আদায়ের আগে তা পালন করে তবে তিনি এর সওয়াব পাবেন না কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন :  

(من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر)

যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোযা পালন করল,এর সাথে শাওয়াল মাসেও ছয়দিন রোযা পালন করল, সে যেন গোটা বছর রোযা রাখল।”

আর এটি জানা বিষয় যে, যার উপর কাযা রোযা রয়ে গেছে সে রমজান মাসে রোযা পালন করেছে বলে ধরা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার কাযা রোযা আদায় সম্পূর্ণ করে।” সমাপ্ত।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

https://islamqa.info/en/192428