ব্যক্তির জীবনে কুরবানী ও কুরবানীর আহকামঃ ২০২২

ব্যক্তির জীবনে কুরবানী ও কুরবানীর আহকামঃ ২০২২

Power Point Presentation

ব্যক্তির জীবনে কুরবানী ও কুরবানীর আহকামঃ২০২২

 

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহীল হামদ.

 

কুরবানীর ইতিহাস আমরা সকলেই কম বেশী জানি। প্রতি বছর যখনই যিলহজ্জ মাস আসে,তখন হজ্জ ও কুরবানী নিয়ে আলোচিত হয় সমাজ। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমাদের সমাজে মুসলিম পরিবারে সঠিক জ্ঞান আহরনের সুযোগ অনেক বেশী সহজ হয়েছে। কিন্তু তারপরেও আমাদের মাঝে মুসলিম হিসেবে যে আদর্শ থাকার কথা বাস্তবে তা অনেক কম।

আমরা পশু কুরবানীর জন্য কোন পশু,কত দাম, সস্তা না দামী ইত্যাদি নিয়ে আলোচিত হই,হজ্জের আনুষ্ঠানিকতার জন্য কি কি লাগবে তা নিয়ে অনেক ব্যস্থ থাকা হয় কিন্তু হজ্জ ও কুরবানীর পিছনে যে ইতিহাস রয়েছে এবং এই ইতিহাসের মূল চেতনা কি তা নিয়ে খুব কমই আলোচিত হই। আমরা ভেবে দেখেছি কি—

–কেনো ইবরাহীম আ বৃদ্ধ বয়সে শিশু সন্তানকে মরুভূমিতে প্রিয়তমা স্ত্রীকেসহ রেখে আসতে বিচলিত হননি!

–কেনো মা হাযেরা আ স্বামীর এই রবের আনুগত্যের বাস্তবায়ন সিদ্ধান্তে অস্থির বা সবরহীন হননি!

–কেনো ইবরাহীম আ আদরে লালিত পালিত ছেলেকে কুরবানী করার রবের নির্দেশনাকেও বাস্তবায়নে দ্বিধান্বীত হননি!

–পিতার স্বপ্নে কুরবানী হওয়ার নির্দেশকে সানন্দে গ্রহন করে কিশোর ছেলে ইসমাইল আ কেনো সবরনীতি গ্রহন করেছিলো!

আজ এই সকল ঘটনার মূলে কি সেই উপলব্ধি ছিলো যে একটি পরিবারের সকলেই একই এতো ত্যাগ তিতিক্ষা,আনুগত্যের উচ্চতম নমুনা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন!

আমরা এই বিষয়গুলো যদি কুর’আন সুন্নাহ, ইসলামের ইতিহাস নিয়ে একটু পড়াশুনা করে পর্যালোচনা করি তাহলেই এর উত্তর পেয়ে যাবো ইন শা আল্লাহ, এর মাঝেই বুঝতে পারবো এই হজ্জ ও কুরবানীর পিছনে আমাদের নিজেদের চিন্তা চেতনা কেমন হওয়া প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী বাস্তব কর্মপদ্ধতিও সঠিক রুপায়ন হবে ইন শা আল্লাহ।

ইতিহাসে কুরবানীঃ—

নারীর জীবনে কুরবানী শব্দটি প্রযোজ্য কিভাবে?

 

ইবরাহীম আ এর সুন্নাহ কি ছিলো যা সর্বশেষ রাসূল সা এরও সুন্নাহঃ

১। মহান রবের কাছে আনুগত্যের পরম নিষ্ঠা পেশ ও ইবলিশের বিরুদ্ধে জয়লাভ।

২। সর্বোচ্চ কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া

৩। সবর ও তাওয়াক্কুলের সঠিক বাস্তব চিত্র।

৪। বাস্তব জীবনে মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে সর্বোচ্চ ত্যাগের নমুনা।

৫। মূল লক্ষ্য রবের ভালোবাসা, সন্তুষ্টি, ক্ষমা ও আখেরাতের পুরস্কার।

ইবরাহীম আ এর জীবন চরিতে যা দেখতে পাই সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণ। যাকে বলা হয় ‘মুসলিম’। আল কুর’আনে ইরশাদ হয়েছে—

 

إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُ- (البقرة ১৩১-১৩২)

‘স্মরণ কর যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেন, তুমি আত্মসমর্পণ কর। তখন সে বলল, আমি আত্মসমর্পণ করলাম বিশ্ব চরাচরের প্রতিপালকের নিকট। ‘এবং একই বিষয়ে সন্তানদেরকে অছিয়ত করে যান ইবরাহীম ও ইয়াকূব। বাক্বারাহঃ ১৩১-১৩২

ইবরাহীমা এর মিল্লাতে ছিলেন আমাদের প্রিয় রাসূল সা, মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন—

মুহাম্মাদ! বলো, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একদম সঠিক নির্ভুল দীন, যার মধ্যে কোন বত্রুতা নেই, ইবরাহীমের পদ্ধতি, যাকে সে একাগ্রচিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।

বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান,আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য যার কোন শরীক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী। সূরা আল আনআম: ১৬১-১৬৩

কুরবানীর মাধ্যমে কি ঘটেঃ

১। হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাহ জীবিত হয়। ইসলামের একটি

প্রতীকের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

২। কুরবানী নবী (সা.)-এর সুন্নাহ এবং সমগ্র মুসলিম জাতির ত্যাগের এক আমল।

৩। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের খাতে (জান ও মাল) অর্থব্যয় (ও স্বার্থত্যাগ) হয়।

৪। শয়তানের বিরুদ্ধে মুমিনের জয়লাভ

৫। পরিবার ও দরিদ্রজনের উপর খরচ করা হয় এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য হাদিয়া ও উপঢৌকন পেশ করা হয়।

৬। যবেহ হল আল্লাহর তা’যীম-সম্বলিত একটি ইবাদত এবং তাঁর দ্বীনের এক নিদর্শন ও প্রতীক।

মহান আল্লাহ তাআলার দেয়া নির্দেশ শুনলাম ও মানলাম-এই নীতিতে ইব্রাহীম আ. জীবনের প্রতিটা পর্ব পার করে এসেছেন। আবার একই নীতিতে আমাদের প্রিয় নবী স. ও তাঁর সাহাবারাও দুনিয়ার জীবনে কাজ করে গিয়েছেন। কখনো কোন নির্দেশ আসলে পরে প্রশ্ন তুলতেন না যে আমার জন্য কতটুকু, কেন, না করলে কি হবে, পরে করলে হবে কি না ইত্যাদি। তাই দুনিয়ার জীবনেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন অনেক সাহাবা রা.।

আল কুরআনে এসেছে,

হে মুহাম্মাদ! বলো, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একদম সঠিক নির্ভুল দীন, যার মধ্যে কোন বত্রুতা নেই, ইবরাহীমের পদ্ধতি, যাকে সে একাগ্রচিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।

বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান,আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য

যার কোন শরীক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী।সূরা আল আনআম: ১৬১-১৬৩

কুরবানীর ইতিহাস একদম সৃষ্টির শুরুতেই যা আমরা জানতে পারি আল কুর’আন থেকেই।

মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন,

আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল, তখন একজনের কুরবানী কবুল হলো এবং অন্যজনের কুরবানী কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ তো সংযমীদের কুরবানীই কবূল করে থাকেন।সূরা আল মায়িদা: ২৭

আল্লাহ তাআলা বলেন,

প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। সূরা আল হাজ্জ: ৩৪

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা তার নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছেন। (তাফসীরে নাসাফী ৩/৭৯; কাশশাফ, ২/৩৩)।

আদম আ. এর যুগে তারই পুত্র কাবীল ও হাবীলের কুরবানীর পর থেকে ইবরাহীম আ. পর্যন্ত কুরবানী চলতে থাকে।

ইবরাহীম আ ছিলেনে একনিষ্ঠ মুসলিম। আল কুরআনে এসেছে-

ইবরাহীম বললো,আমি আমার রবের দিকে যাচ্ছি, তিনিই আমাকে পথ দেখাবেন।সূরা আস সাফফাত: ৯৯

আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত-বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। সূরা আল আন’আম: ৭৯

আসলে কুরবানীর ইতিহাস থেকে আমরা যা বুঝতে পারলাম তা আমাদের অন্তরে ধারণ করে আমল করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। মহান আল্লাহর পথে অটল অবিচল থাকার জন্য ও মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য আমাদের জান ও মালকে সেভাবে কাজে লাগাতে হবে যেভাবে আমার প্রতিপালক তাঁর রাসূলের মাধ্যমে আমাদের কাছে বাস্তব নমুনা দেখিয়েছেন, যা আমরা আল কুর’আন ও সহিহ হাদীস ও রাসূলের স. জীবনী থেকে জানতে পারি।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইনজীল ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।সূরা আত তাওবা: ১১১

“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই: মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও”। সূরা বাক্বারাহঃ ১৫৫

মানুষ কি একথা মনে করে আছে যে, আমরা ঈমান এনেছি–এতটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং ঈমান এনেছে কি তা পরীক্ষা করে দেখা হবেনা? সূরা আনকাবুতঃ ২

তোমরা কি মনে করেছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি ৷ তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল ৷ এমনকি সমকালীন রসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চীৎকার করে বলে উঠেছিল, অবশ্যিই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।সূরা বাকারাঃ ২১৪

ছ‘আব ইবনু সা‘দ (রাহঃ) হ’তে তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেছেন,

তিনি (সা‘দ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন, নবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশী ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের  ক্ষে ত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহ’লে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে যমীনে চলাফেরা করে

    অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না’। তিরমিযী হা/২৩৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৪০২৩; মিশকাত হা/

এই শিক্ষাগুলো সামনে রেখে যদি আমরা আমাদের জীবনের চলার পথ পর্যালোচনা করি,তাহলে কে কোন মানে আছি বুঝা কি সহজ নয়!

শুধু যিলহজ্জ মাসেই নয় সারা বছর জুড়েই কেনো কুরবানীর মূল শিক্ষাকে সামনে রাখি না। ইবরাহীম আ ও রাসুল সা সারা জীবনেই মহান আল্লাহর আনুগত্যে অবিচল ছিলেন। সাহাবা আযমাঈন রাও অহীর জ্ঞানের কাছে  “আমরা শুনলাম ও মানলাম” নীতিতেই পরিচালিত হয়েছেন।

আজ আমরা সামাজিকতা, স্ট্যাটাস,ভোগ-বিলাস ও আমিত্বের কাছে যিম্মি হয়ে থাকি, আবার কুরবানীর সময় বড় বড় পশু কিনে জবাই করার প্রতিযোগীতাও লাগি। ধনী পরিবারে আস্ত রান কেটে পাঠিয়ে না দিলে যেনো সম্মান থাকেনা -এইভাবেই প্রতি বছর চলে কুরবানী।

মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করুন। নিজেদের কুর’আনের আলোকে সাজানো কি এখনও সময় হয়নি! মৃত্যুর খুব কাছেই চলছি প্রতি নিয়ত, খুব শীঘ্রই ফিরে যেতে হবে রবের কাছে, পরিস্কার হয়ে যাবে আখেরাতের পরিনত কোন দিকে যাচ্ছে। এটাতো একমুখী রাস্তা, আর ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই।

 শব্দ কুরবান আল কুর’আনে এসেছে।

﴿الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ عَهِدَ إِلَيْنَا أَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُولٍ حَتَّىٰ يَأْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ تَأْكُلُهُ النَّارُ

যারা বলেঃ আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা কাউকে রসূল বলে স্বীকার করবো না যতক্ষণ না তিনি আমাদের সামনে এমন কুরবানী করবেন যাকে আগুন ( অদৃশ্য থেকে এসে) খেয়ে ফেলবে—আলে ইমরানঃ১৮৩

﴿وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ ۖ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ

আর তাদেরকে আদমের দু-ছেলের সঠিক কাহিনী ও শুনিয়ে দাও৷ তারা দুজন কুরবানী করলে তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হলো, অন্য জনেরটা কবুল করা হলো না৷ সে বললো, আমি তোমাকে মেরে ফেলবো৷ সে জবাব দিল, আল্লাহ তো মুত্তাকিদের নজরানা কবুল করে থাকে ৷মায়েদাঃ ২৭

﴿فَلَوْلَا نَصَرَهُمُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ قُرْبَانًا آلِهَةً

কিন্তু আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব সত্তাকে কারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিলো। আহকাফঃ ২৮

অনুরূপভাবে হাদীসেও ‘কুরবানী’ শন্দটি ব্যবহৃত না হয়ে তার পরিবর্তে ‘উযহিয়্যাহ এবং ‘যাহিয়্যাহ’ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। উযহিয়্যাহ কুরবানীর দিনসমূহে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে যবেহ যোগ্য উট, গরু, ছাগল বা ভেড়াকে বলা হয়। এ শব্দটি ‘যুহা’ শব্দ থেকে গৃহীত যার অর্থ ‘পূর্বাহ্ণ’।

যেহেতু কুরবানী যবেহ করার উত্তম সময় হলো ১০ যিলহজ্জের (ঈদের দিনের) পূর্বাহ্ণকাল, তাই ঐ সামঞ্জস্যের জন্য তাকে ‘উযহিয়্যাহ’ বলা হয়েছে। এটিকে আবার ‘যাহিয়্যাহ’ বা ‘আযহা’ও বলা হয়। আর আযহাহ এর বহুবচন হলো আযহা, যার সাথে সম্পর্ক জুড়ে ঈদের নাম হয়েছে ঈদুল আযহা। মূলত ফারসী, হিন্দী, উর্দূ ও বাংলা ভাষায় আরবি ‘কুরবান’ শব্দটি ‘কুরবানী’ অর্থে ব্যহৃত হয়। বাংলার মুসলিমরাও ‘কুরবানী’ শব্দটির সাথে বেশ পরিচিত।

পরিশেষে ঐ যবেহকৃত পশুকেই ‘কুরবান’ বলা হয়, যা লোকেরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পেশ করে থাকে (তাফসীরে মাযহারী, ২/১৮৮)।

কুরবানীর প্রকারভেদ

আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা তিন প্রকার হতে পারে:

১. হাদী

২. কুরবানী

৩. আক্বীকাহ

তাই ঈদুল আযহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়।

ইসলামী শরীয়তে এটি ইবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কুরআন, হাদীস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমানিত। কুরআন মজীদে যেমন এসেছে,

তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর। সূরা আল কাওসার: ২

বল, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নেই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩

আল্লাহর রাসূল সা. সে আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন। সুতরাং তিনি সা. ছিলেন অধিক সালাত ক্বায়েমকারী ও অধিক কুরবানীদাতা।

বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ঈদের সালাতের পর কুরবানীর পশু যবেহ করল তার কুরবানী পরিপূর্ণ হলো ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল। বুখারী: ৫৫৪৫, সহিহ মুসলিম: ১৯৬১

আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা. নিজ হতে দুটি সাদা-কালো বর্ণের দুম্বা কুরবানী করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন। বুখারী: ৫৫৬৫, সহিহ মুসলিম: ১৯৬৬

তবে বুখারীতে ‘সাদা-কালো’ শব্দের পূর্বে ‘শিংওয়ালা’ কথাটি উল্লেখ আছে।

ইবনু উমর রা. বলেন, নবী সা. দশ বছর মদীনায় অবস্থানকলে কুরবানী করেছেন। মুসনাদ আহমাদ, তিরমিযী

যেমন তিনি তার কর্ম দ্বারা কুরবান করতে উম্মতকে অনুপ্রাণীত করেছেন, তেমনি তিনি তার বাক দ্বারাও উদ্বুদ্ধ ও তাকীদ করেছেন।

কুরবানীর উদ্দেশ্য

১। খালেস ও নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদাত:

পশু নিবেদন (বা যবেহ) করা হবে এক আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য।

যেমন তিনি বলেছেন-আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার ইবাদত করবে। সূরা আয-যারিয়াত:৫৬

কুরআন মজীদে যেমন এসেছে, তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর। সূরা আল কাওসার: ২

আলী রা বলেন-

১. যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন।

২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু যবেহ করে আল্লাহ তার উপর লা‘নত করেন।

৩. ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ লা‘নত করেন যে ব্যক্তি কোন বিদ’আতীকে প্রশ্রয় দেয়।

৪. যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লা‘নত করেন।                 সহিহ মুসলিম

২। শর্তহীন আনুগত্য:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন-

বল, আমার সালাত, আমার কুরবাণী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম। সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩

৩। তাকওয়া অর্জন:

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

আল্লাহর নিকট পৌছায় না উহার গোশত এবং রক্ত, বরং পৌছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এ ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন, সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়নদেরকে। সূরা আল হজ্জ্ব: ৩৭

৪। মহান আল্লাহর স্মরণ ও বড়ত্ব ঘোষনা:

আল কুর’আনে এসেছে,

প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন।সূরা আল হাজ্জ: ৩৪

৫। ঈমানের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া ও উত্তীর্ণ হওয়া:

মহান আল্লাহ জানিয়েছেন,

তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো আল্লাহ দেখেননি যে, তোমাদের মধ্য থেকে কে আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গকারী এবং কে সবরকারী ৷আলে ইমরান: ১৪২

৬। নেতৃত্বের যোগ্যতা দান:

কুরবানীর বিধান

কুরবানী বিধেয় হওয়ার ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। (ফতহুল বারী, ১০/৩)

কোরবানীকারী হওয়ার জন্য শর্তঃ ধনী হওয়া শর্ত।

অর্থাৎ তার নিজের খরচপাতি ও সে যাদের খরচ চালায় তাদের খরচপাতির অতিরিক্ত তার কাছে কোরবানী করার অর্থ থাকা।

অতএব, কোন মুসলমানের যদি মাসিক বেতন বা আয় থাকে এবং এ বেতন দিয়ে তার খরচ চলে যায়, এর অতিরিক্ত তার কাছে কোরবানীর পশু কেনার অর্থ থাকে তাহলে সে ব্যক্তি কর্তৃক কোরবানী দেয়ার শরয়ি বিধান রয়েছে।আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (৫/৭৯-৮১)]

তবে, কুরবানীর হুকুম কি? ওয়জিব না সুন্নাত ? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে।

জমহুর আলেমের মতে, কোরবানী করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি ইমাম শাফেয়ির মাযহাব এবং প্রসিদ্ধ বর্ণনানুযায়ী ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদের মাযহাব।

অপর একদল আলেমের মতে, কোরবানী করা ওয়াজিব। এটি ইমাম আবু হানিফার মাযহাব এবং এক বর্ণনাতে ইমাম আহমাদের মত হিসেবেও উল্লেখ আছে। ইবনে তাইমিয়া এই মতটিকে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন: এ মতটি ইমাম মালেকের মাযহাবের দুইটি অভিমতের একটি কিংবা তাঁর মাযহাবের সুস্পষ্ট অভিমত এটাই।[শাইখ উছাইমীনের ‘আহকামুল উদহিয়্যাহ ওয়ায যাকাত’ পুস্তিকা থেকে সমাপ্ত]

শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন বলেন: “সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কোরবানী করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অতএব, প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের পক্ষ থেকে ও পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দিবে।[ফাতাওয়াস শাইখ ইবনে উছাইমীন (২/৬৬১)]

প্রথম মত: কুরবানী ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।

দ্বিতীয় মত: কুরবানী সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। ইমাম মালেক ও শাফেয়ী (রহ.) এর প্রসিদ্ধ মত।

কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন, সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কুরবানী পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সমর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভবে কুরবানী পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কুরবানী হলো ইসলামের একটি মহান নিদর্শন। (মুহাম্মদ বিন উসাইমীন, আহকামুল উযহিয়্যাহ, পৃ. ২৬)

যারা কুরবানী ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল:

১। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন-

তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর ।সূরা কাওসার: ২

আর আল্লাহ রাববুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।

২। রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন-

‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’(মুসনাদ আহমাদ: ২/৩২১, ইবনে মাজাহ: ৩১২, হাদিসটি হাসান)

যারা কুরবানী পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্কবাণী। তাই কুরবানী ওয়াজিব।

৩। রাসূলে কারীম সা. বলেছেন-

হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হলো প্রতি বছর কুরবানী দেয়া। (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজাহ: ৩১২৫, হাদিসটি হাসান)

যারা কুরবানী সুন্নাত বলেন তাদের দলিল:

১। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন-

তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করতে চায়, যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানী সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে। সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭

এ হাদিসে রাসূল (সা.) এর ‘যে কুরবানী করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝা যায় এটা ওয়াজিব নয়।

২। রাসূল সা. তার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করেনি তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে, কুরবানী ওয়াজিব নয়।

শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন, এ সকল দলিল প্রমান পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। তাছাড়া, দু-মতেরই দলীল প্রায় সমানভাবে বলিষ্ঠ। যাতে কোন একটার প্রতি পক্ষপাতিত্ব সহজ নয়। এ কারণে কিছু সস্কারক ও চিন্তাবিদ উলামা কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষ সমর্থন করেন। তাদের মধ্যে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ অন্যতম। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবা, তাবেঈন এবং ফকীহগণের মতে কুরবানী সুন্নাতে মুআক্কাদাহ (তাকীদপ্রাপ্ত সুন্নাত)। অবশ্য মুসলিমের জন্য মধ্যপন্হা হচ্ছে, সামর্থ্য থাকতে কুরবানী ত্যাগ না করাই উচিত। উচিত নিজের ও পরিবার-পরিজনের তরফ থেকে কুরবানী করা। যাতে আল্লাহর আদেশ পালনে এবং মহানবী সা. এর অনুকরণে বিরাট সওয়াবের অধিকারী হতে পারে।

কুরবানীর উদ্দেশ্য

১। খালেস ও নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদাত:

পশু নিবেদন (বা যবেহ) করা হবে এক আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। তিনি বলেছেন-

আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার ইবাদত করবে। সূরা আয-যারিয়াত:৫৬

তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর। সূরা কাওসার: ২

২। শর্তহীন আনুগত্য:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন- বল, আমার সালাত, আমার কুরবাণী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।  সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩

৩। তাকওয়া অর্জন:   আল্লাহ তা’আলা বলেন,

আল্লাহর নিকট পৌছায় না উহার গোশত এবং রক্ত, বরং পৌছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এ ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন, সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়নদেরকে। সূরা আল হজ্জ্ব: ৩৭

৪।  মহান আল্লাহর স্মরণ ও বড়ত্ব ঘোষনা:

আল কুর’আনে এসেছে, প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। সূরা আল হাজ্জ: ৩৪

৫। ঈমানের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া ও উত্তীর্ণ হওয়া:

মহান আল্লাহ জানিয়েছেন, তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো আল্লাহ দেখেননি যে, তোমাদের মধ্য থেকে কে আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গকারী এবং কে সবরকারী ৷আলে ইমরান: ১৪২

কুরবানী বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলি

প্রথমত:

ইখলাস অর্থাৎ তা যেন খাটি আল্লাহরই উদ্দেশ্যে হয়।

দ্বিতীয়ত:

তা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.এর নির্দেশিত বিধি-বিধান অনুযায়ী হয়।

তৃতীয়ত:

হালাল আয়ের অর্থ দিয়ে কুরবানী দিতে হবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আল্লাহ তা‘আলা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না, আর হারাম উপার্জনের দানও  আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না।সহিহ ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১০

 

বাহ্যিকভাবে কুরবানী শুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে:

১। এমন পশু দ্বারা কুরবানী দিতে হবে যা শরীয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে।

অর্থাৎ কুরবানীর পশু যেন সেই শ্রেণী বা বয়সের হয় যে শ্রেনী ও বয়স শরীয়ত নির্ধারিত করেছে। সেগুলো হলো উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এগুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় বাহীমাতুল আনআম।

একটি উট ও গরু-মহিষে সাত ব্যক্তি কুরবানীর জন্য শরীক হতে পারে। সহিহ মুসলিম: ১৩১৮

অন্য এক বর্ণনামতে, উট কুরবানীতেও দশ ব্যক্তি শরীক হতে পারে। ইমাম শাওকানী বলেন, হজ্জের কুরবানীতে দশ এবং সাধারণ কুরবানীতে সাত ব্যক্তি শরীক হওয়াটাই সঠিক। (নায়লুল আওত্বার: ৮/১২৬)

২। শরীয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি।

উট পাঁচ বছরের হতে হবে।

গরু বা মহিষ দু‘বছরের হতে হবে।

ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। অবশ্য অসুবিধার ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী মেষ কুরবানী করা যায়।

প্রিয় নবী সা. বলেন, দাতালো ছাড়া যবেহ করো না। তবে তা দুর্বল হলে ছয় মাসের মেষ যবেহ কর। সহিহ মুসলিম: ১৯৬৩

কিন্তু উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, ছয়মাস বয়সী মেষের কুরবানী সিদ্ধ হবে, তা ছাড়া অন্য পশু পাওয়া যাক অথবা না যাক। অধিকাংশ উলামাগণ ঐ হাদীসের আদেশকে ‘ইস্তিহবাব’ (উত্তম) বলে গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন যে, ঐ হাদীসের মর্মার্থ এটা নয় যে, অন্য কুরবানীর পশু পাওয়া গেলে তবেই ছ‘মাস বয়সের মেশশাবকের কুরবানী বৈধ

৩। কুরবানীর পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে।

সাহাবী বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানী জায়েয হবে না-

অন্ধ, যার অন্ধত্ব স্পষ্ট; রোগাক্রান্ত, যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু, যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত, যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসাঈ‘র বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে। তিরমিজি: ১৫৪৬; নাসাঈ: ৪৩৭১; আবূ দাউদ, হাদিসটি সহিহ

অতএব এ চারের কোন এক ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী সিদ্ধ হয় না। ইবনে কুদামাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন মতভেদ আছে কিনা তা আমরা জানি না।’ (মুগনী, ১৩/৩৬৯)

কুরবানীর ওয়াক্ত বা সময়

কুরবানী নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কুরবানী আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না।

যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কুরবানীর সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে। যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কুরবানীর পশু যবেহ করা হয় তাহলে কুরবানী আদায় হবে না। যেমন হাদিসে এসেছে-

আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সা. খুতবাতে বলেছেন,

এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অত:পর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানী করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে যবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কুরবানীর কিছু আদায় হলো না।সহিহ বুখারী: ৯৬৫, ৫২২৬

সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কুরবানীর পশু যবেহ না করে সালাতের খুতবা দুটি শেষ হওয়ার পর যবেহ করা ভাল। কেননা, রাসূলুল্লাহ সা. এ রকম করেছেন। হাদিসে এসেছে-

সাহাবি জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী রা. বলেছেন, নবী কারীম সা. কুরবানীর দিন সালাত আদায় করলেন অত:পর খুতবা দিলেন তারপর পশু যবেহ করলেন।সহিহ বুখারী:  ৯৮৫

জুনদাব ইবনে সুফিয়ান বলেন, আমি কুরবানীর দিন নবী কারীম সা. এর সাথে ছিলাম । তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে যবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে যবেহ করে। আর যে যবেহ করেনি সে যেন যবেহ করে। সহিহ বুখারী: ৫৫৬২

আর কুরবনীর সময় শেষ হবে যিলহজ্জ মাসের তেরো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে। অতএর কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় হলো চার দিন। যিলহজ্জ মাসের দশ, এগারো, বারো ও তেরো তারিখে। এটাই উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।

যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান কারেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।সূরা আল হজ্জ্ব: ২৮

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ইবনে আববাস রা. বলেছেন: এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কুরবানীর দিন ও তার পরবর্তী তিনদিন। (ফাতহুল বারী, ২/৫৬১)

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন-

আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন যবেহ করা যায়।  (আহমদ: ৪/৪২, হাদিসটি সহিহ)।

আইয়ামে তাশরীক বলতে কুরবানীর পরবর্তী তিন দিনকে বুঝায় (১১, ১২, ১৩ই যিলহজ্জ)।

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, আলী ইবনে আবি তালেব রা. বলেছেন, কুরবানীর দিন হলো ঈদুল আযহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন। অধিকাংশ ইমাম ও আলেমদের এটাই মত। যারা বলেন, কুরবানীর দিন হলো মোট তিন দিন-যিলহজ্জ মাসের দশ, এগারো ও বার তারিখ এবং বার তারিখের পর যবেহ করলে কুরবানী হবে না, তাদের কথার সমর্থনে কোন প্রমাণ নেই ও মুসলিমদের ঐক্যমত (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত হয়নি। (যাদুল মা‘আদ, ২/৩১৯)

প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে।

শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন বলেন: “সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কোরবানী করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অতএব, প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের পক্ষ থেকে ও পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দিবে। ফাতাওয়াস শাইখ ইবনে উছাইমীন (২/৬৬১)

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সা. কুরবানীর দুম্বা যবেহ করার সময় বললেন-

আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ, আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবূল করে নিন।  সহিহ মুসলিম: ১৯৬৭

 

নবী সা এর বাণী: “প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর একটি কোরবানী দেয়া ওয়াজিব”  [মুসনাদে আহমাদ (২০২০৭)]

ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন: হাদিসটির সনদ মজবুত। আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (২৭৮৮) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।

এ বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারীর কোন ভেদ নেই। অতএব, কোন নারী যদি একাকী বসবাস করেন কিংবা তাঁর সন্তানদেরকে নিয়ে থাকেন তাহলে তাদেরকে কোরবানী করতে হবে। আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে (৫/৮১) এসেছে-

“কোরবানী ওয়াজিব হওয়া কিংবা সুন্নত হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। কোরবানী পুরুষদের উপর যেমন ওয়াজিব হয় তেমনি নারীদের উপরও ওয়াজিব হয়। কারণ ওয়াজিব হওয়ার দলিলগুলো নর-নারী সবাইকে সমানভাবে শামিল করে।”[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]  আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (৫/৭৯-৮১)]সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

যে কুরবানী করতে চায় সে কোন কাজ থেকে বিরত থাকবে?

উম্মু সালামাহ রা. বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

অন্য একটি বর্ণনায় আছে, সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে, কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে। সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭, মিশকাত: ১৪৫৯

এর পেছনে হেকমত হল, হাজীদের সাথে কুরবানী কারীর কিছু ক্ষেত্রে বৈশিষ্টগত মিল থাকা। অর্থাৎ হাজীগণ যেমন কুরবানী করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে থাকে তেমনি কুরবানীকারীও কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে থাকে। ঠিক তদ্রূপ হাজী সাহেবগণ যেমন এহরাম অবস্থায় নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকে কুরবানীকারীগণও নখ-চুল ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থেকে তাদের এই অবস্থার সাথে শামিল হয়। বলিষ্ঠ মতানুসারে এখানে এ নির্দেশ ওয়াজিবের অর্থে এবং নিষেধ হারামের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ, তা ব্যাপক আদেশ এবং অনির্দিষ্ট নিষেধ, যার কোন প্রত্যাহতকারীও নেই। কিন্তু যদি কেউ জেনে-শুনে ইচ্ছা করেই চুল-নখ কাটে, তবে তার জন্য জরুরী যে, সে যেন আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে। আর তার জন্য কোন কাফফারা নেই।

কুরবানীর পশু যবেহ করার নিয়মাবলী

, রাসূলুল্লাহ সা. নিজে যবেহ করেছেন। আর যবেহ করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম। তাই প্রত্যেকের নিজের কুরবানী নিজে যবেহ করার চেষ্টা করা উচিত।

ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, সাহাবি আবু মুসা আশআরী রা. নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কুরবানীর পশু যবেহ করেন। (ফাতহুল বারী, ১০/১৯)

তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মেয়েরা কুরবানীর পশু যবেহ করতে পারেন। তবে কুরবানীর পশু যবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েয আছে।

কেননা, হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সা. তেষট্টিটি কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করে বাকিগুলো যবেহ করা দায়িত্ব আলী রা. কে অর্পণ করেছেন।সহিহ মুসলিম: ১২১৮

যবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয়:

১. পশুর প্রতি দয়া করা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা।

  • এমন ব্যবস্থা নিয়ে যবেহ করা,যাতে পশুর অধিক কষ্ট না হয় এবং সহজেই প্রাণ ত্যাগ করতে পারে।
  • যবেহ যেন খুব তীক্ষ্ম ধারালো ছুরি দ্বারা করা হয় এবং তা খুবই শীঘ্রতা ও শক্তির সাথে যবেহ স্থলে (গলায়) পোঁচানো হয়।

মূলত; পশুর বিনা কষ্টে খুবই শীঘ্রতার সাথে যবেহ করা। হাদীসে এসেছে-

সাহাবি শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. বলেছেন: আল্লাহ রাববুল আলামীন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন যবেহ করবে তখনও তা সুন্দর ভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা যবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়। সহিহ মুসলিম: ১৯৫৫

পশুর সম্মুখেই ছুরি শান দেওয়া উচিত নয় (মাকরূহ)। যেহেতু নবী সা. ছুরি শান দিতে এবং তা পশু থেকে গোপন করতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ যবেহ করবে, তখন সে যেন তাড়াতাড়ি করে। মুসনাদে আহমদ: ২/১০৮, ইবনু মাজাহ: ৩১৭২

আর যেহেতু পশুর চোখের সামনেই ছুরি ধার দেওয়া যা বাঞ্ছিত অনুগ্রহ ও দয়াশীলতার প্রতিকূল। একইভাবে, একটি পশুকে অন্য একটি পশুর সামনে যবেহ করা এবং ছেচরে যবেহ স্থানে টেনে নিয়ে যাওয়াও মাকরূহ।

২. কুরবানীর পশু যদি উট হয়

অথবা এমন কোন পশু হয় যাকে আয়ত্ব করা সম্ভব নয়, তাহলে তাকে বাম পা বাধা অবস্থায় দাঁড় করিয়ে নহর করা হবে। কেননা আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেছেন-

সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। সূরা আল হজ্জ : ৩৬

ইবনে আববাস রা. বলেন, এর অর্থ হলো তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাঁধা থাকবে। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

যদি উট ছাড়া অন্যপশু হয় তাহলে তা বামকাতে শয়নাবস্থায় যবেহ করা হবে। যেহেতু তা সহজ এবং ডান কাতে ছুরি নিয়ে বাম হাত দ্বারা মাথায় চাপ দিয়ে ধরতে সুবিধা হবে। সম্ভব হলে পশুকে ডানকাতে শুইয়ে যবেহ করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে পশুকে আরাম দেওয়াই উদ্দেশ্যে।

পশুর গর্দানের এক প্রান্তে পা রেখে যবেহ করা মুস্তাহাব। যাতে পশুকে অনায়াসে কাবু করা যায়। কিন্তু গর্দানের পিছনদিকে পা মুচড়ে ধরা বৈধ নয়। কারণ, তাতে পশু অধিক কষ্ট পায়। যেমন ইতোপূর্বে আনাস রা. বর্ণিত বুখারীর হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।

৩. যবেহকালে পশুকে কিবলামুখী করে শয়ন করাতে হবে

(আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ, ২/১০৪৩; তবে এ হাদীসটির সনদ নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।) অন্যমুখে শুইয়েও যবেহ করা সিদ্ধ হবে। যেহেতু কিবলামুখ করে শুইয়ে যবেহ করা ওয়াজিব হওয়ার কোন শুদ্ধ প্রমাণ নেই। (আহকামুল উযহিয়্যাহ, পৃ. ৮৮, ৯৫)।

৪. যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে

এটা বলা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন-

যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর। সূরা আনআম: ১১৮

এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা হতে তোমরা আহার কারো না, এটা অবশ্যই পাপ।সূরা আনআম: ১২১

আর নবী সা. বলেছেন, যা খুন বহায় এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ করো। সহিহ বুখারী: ২৩৫৬; সহিহ মুসলিম: ১৯৬৮

যবেহকালীন সময়ে বিসমিল্লাহর সাথে আল্লাহু আকবার যুক্ত করা মুস্তাহাব। অবশ্য এর সঙ্গে কবূল করার দুআ ছাড়া অন্য কিছু অতিরিক্ত করা বিধেয় নয়। যেমন হাদিসে এসেছে-

জাবির রা. থেকে বর্ণিত, ….. একটি দুম্বা আনা হলো। রাসূলুল্লাহ সা. নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং বললেন, বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ, এটা আমার পক্ষ থেকে। এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে। (আবু দাউদ)

প্রশ্ন: কোরবানীর পশু জবাই করার সময় পড়তে পারি এমন কোন সুনির্দিষ্ট দোয়া আছে কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

যে ব্যক্তি কোরবানীর পশু জবাই করতে চান তার জন্য নিম্নোক্ত দোয়া পড়া সুন্নত:

بسم الله ، والله أكبر ، اللهم هذا منك ولك ، هذا عني اللهم تقبل من فلان وآل فلان

(বিসমিল্লাহ্‌। ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহুম্মা হাযা মিনকা, ওয়া লাকা। হাযা আন্নি। আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন … ওয়া আলি …)[ডট দেয়া স্থানদ্বয়ে কোরবানীকারীর নাম উল্লেখ করবে]

(অর্থ- আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি। আল্লাহ্‌ই মহান। হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে; আপনারই জন্য। এটি আমার পক্ষ থেকে উৎসর্গিত (আর অপরের পক্ষ থেকে হলে বলবে: অমুকের পক্ষ থেকে)। হে আল্লাহ্‌, অমুকের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কবুল করুন।)

এই দোয়ার মধ্যে শুধু ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলা ওয়াজিব। বিসমিল্লাহ্‌ এর অতিরিক্ত যে কথাগুলো আছে সেগুলো বলা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়।

ইমাম বুখারী (৫৫৬৫) ও ইমাম মুসলিম (১৯৬৬) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকালো ডোরাকাটা লম্বা শিংওয়ালা দুইটি দুম্বা দিয়ে কোরবানী দিয়েছেন। তিনি দুম্বার ঘাড়ের পার্শ্বদেশের উপর পা রেখে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিজ হাতে জবাই করেছেন।”

সহিহ মুসলিমে (১৯৬৭) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি লম্বা শিংওয়ালা দুম্বা আনার নির্দেশ দিলেন। কোরবানী করার জন্য দুম্বাটি আনা হল। তখন তিনি আয়েশাকে বললেন: আয়েশা, ছুরিটি নিয়ে আস। এরপর বললেন: পাথর দিয়ে ছুরিটি ধার দাও। আয়েশা ধার দিলেন। এরপর তিনি ছুরিটি নিলেন এবং দুম্বাটিকে ধরে শোয়ালেন। এরপর ‘বিস্‌মিল্লাহ্‌; আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন মুহাম্মদ, ওয়া আলে মুহাম্মদ, ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মদ’ বলে পশুটিকে জবাই্ করা শুরু করলেন এবং কোরবানী দিলেন”।

ইমাম তিরমিযি (১৫২১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। তিনি খোতবা শেষ করে মিম্বর থেকে নেমে আসলেন। এরপর দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে পশুটিকে জবাই্ করলেন। তিনি বললেন: বিসমিল্লাহ্‌, ওয়া আল্লাহু আকবার, হাযা আন্নি ওয়া আম্মান লাম ইউযাহ্‌হি মিন উম্মাতি’ (অর্থ- আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি। আল্লাহ্‌ই মহান। এটি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মধ্যে যারা কোরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে)।[আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

কোন কোন রেওয়ায়েতে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়া লাকা’ (হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনারই জন্য) অতিরিক্ত এসেছে।[দেখুন: ইরওয়াউল গালিল (১১৩৮ ও ১১৫২)]

“আল্লাহুম্মা মিনকা” (অর্থ- হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে): এ কথার অর্থ হচ্ছে এ কোরবানীর পশুটি আপনারই দান। এ রিযিক আপনার পক্ষ থেকে আমার কাছে পৌঁছেছে।

“ওয়া লাক” (অর্থ- আপনার জন্য): এ কথার অর্থ হচ্ছে- এটি একনিষ্ঠভাবে আপনারই জন্য।[দেখুন: ‘আল-শারহুল মুমতি’ (৭/৪৯২)]

যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর ‘হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে তোমারই জন্য’ বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দু’আ করা জায়েয আছে। এ ভাবে বলা হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবূল করে নাও। যেমন হাদিসে এসেছে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সা. কুরবানীর দুম্বা যবেহ করার সময় বললেন-

আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ, আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবূল করে নিন। সহিহ মুসলিম: ১৯৬৭

১। কুরবানী কেবল নিজের তরফ থেকে হলে বলবে, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়ালাক, আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী।     (হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনারই জন্য)

২। নিজের এবং পরিবারের তরফ থেকে হলে বলবে, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়ালাক, আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী ওয়ামিন আহলি বাইতি।

৩। অপরের নামে হলে বলবে, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়ালাক, আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন (এখানে যার তরফ থেকে কুরবানী তার নাম নেবে।

(আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ, পৃ. ৩৬)।এ সময় নবী সা: এর উপর দরূদ পাঠ করা বিধেয় নয়, বরং তা বিদআত।আল-মুমতে, ৭/৪৯২

বিসমিল্লাহর সাথে আর-রাহমানির রাহীম যোগ করাও সুন্নাত নয়। যেহেতু এ সম্বন্ধে কোন দলীল নেই। যেমন যবেহ করার লম্বা দুআ ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহতু…’ এর হাদীস যঈফ। (যঈফ আবূ দাইদ, হাদীস নং ৫৯৭)।

যবেহের ঠিক পূর্বে বিসমিল্লাহ পাঠ জরুরী। এর পর যদি লম্বা ব্যবধান পড়ে যায়, তাহলে পুনরায় তা ফিরিয়ে বলতে হবে। তবে ছুরি ইত্যাদি হাতে নিয়ে প্রস্ত্ততি নেওয়ায় যেটুকু ব্যবধান পড়ে তাতে বিসমিল্লাহ পড়ে অপর পশু যবেহ বৈধ নয়। বরং অন্য পশুর জন্য পুনরায় বিসমিল্লাহ পরা জরুরী। অবশ্য বিসমিল্লাহ বলার পর অস্ত্র পরিবর্তন করাতে আর পুনবায় পড়তে হয় না। উল্লেখ্য যে, পশু যবেহর পর পাঠ্য কোন দু’আ নেই।

৫. যবেহতে রক্ত প্রবাহিত হওয়া জরুরী

আর তা দুই শাহরগ (কণ্ঠনালীর দুপাশে দুটি মোটা আকারের শিরা) কাটলে অধিকরূপে সম্ভব হয়। প্রিয় নবী সা. বলেন, যা রক্ত প্রবাহিত করে, যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তা তোমরা খাও। তবে যেন (যবেহ করার অস্ত্র) দাত বা নখ না হয়।

(আহমাদ, বুখারী, মুসলিম সহীহুল জামে: ৫৫৬৫)

সুতরাং রক্ত প্রবাহিত ও শুদ্ধ যবেহ হওয়ার জন্য চারটি অঙ্গ কাটা জরুরী, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী এবং পার্শ্বস্থ দুটি মোটা শিরা।

৬. প্রাণ ত্যাগ করার পূর্বে পশুর অন্য কোন অঙ্গ কেটে কষ্ট দেওয়া হারাম

ঘাড় মটকানো, পায়ের শিরা কাটা, চামড়া ছাড়ানো ইত্যাদি কাজ পশুর প্রাণ যাওয়ার আগে বৈধ নয়। একইভাবে, দেহ আড়ষ্ট হয়ে এলে চামড়া ছাড়াতে শুরু করার পর যদি পুনরায় লাফিয়ে ওঠে, তাহলে আরো কিছুক্ষণ প্রাণ ত্যাগ করার কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যেহেতু পশুকে কষ্ট দেয়া আদৌ বৈধ নয়।

পশু পালিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলেও ঘাড় মটকানো যাবে না। বরং তার বদলে কিছুক্ষণ ধরে রাখা অথবা (হাঁস-মুরগীকে ঝুড়ি ইত্যাদি দিয়ে) চেপে রাখা যায়।

যবেহ করার সময় পশুর মাথা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় তার খেয়াল করা উচিত। তা সত্ত্বেও যদি কেটে বিচ্ছিন্ন হয়েই যায়, তাহলে তা হালাল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

যবেহ ছেড়ে দেওয়ার পর (অসম্পূর্ণ হওয়ার ফলে) কোনো পশু উঠে পালিয়ে গেলে তাকে ধরে পুনরায় যবাই করা যায়। নইলে কিছু পরেই সে এমনিতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আর তা হালাল।

প্রকাশ থাকে যে, যবেহ করার জন্য পবিত্রতা বা যবেহকারীকে পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। যেমন-মাথায় টুপী রাখা বা মাথা ঢাকাও বিধিবদ্ধ নয়। অবশ্য বিশ্বাস ও ঈমানের পবিত্রতা জরুরী। সুতরাং কাফির, মুশরিক ও বেনামাযীর হাতে যবেহ শুদ্ধ নয়।

যবেহ করার আগে কুরবানীর পশুকে গোসল দেওয়া, তার খুর ও শিঙে তেল দেওয়া অথবা তার অন্য কোন প্রকার তোয়ায করা বিদআত।

উল্লেখ্য, যবেহকৃত পশুর রক্ত হারাম। অতএব তা কোন ফল লাভের উদ্দেশ্যে পায়ে মাখা, দেওয়ালে ছাপ দেওয়া বা তা নিয়ে ছুড়াছুড়ি করে খেলা করা বৈধ নয়।

 

কুরবানীর গোশত বন্টননীতি

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন-

অত:পর তোমরা তা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাব গ্রস্থকে আহার করাও। সূরা হজ্জ্ব: ২৮

রাসূলুল্লাহ সা. কুরবানীর গোশত সম্পর্কে বলেছেন-

তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।সহিহ বুখারী: ৫৫৬৯, সহিহ মুসলিম: ১৯৭১

‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এব পরিমাণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি।

কুরবানীর মাংস যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এমনকি এক যিলহজ্জ থেকে আরেক যিলহজ্জ পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যাবে।

আহমাদ: ২৬৪৫৮, সনদ হাসান, তাফসীরে কুরতুবী: ৪৪১৩

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রা. তার ইহুদী প্রতিবেশীকে দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন। বুখারী, আদাবুল মুফরাদঃ ১২৮, সনদ সহিহ

কুরবানী হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ও আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়। তাই তা আদায় করতে হবে সময়, সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরীয়ত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ বা শুধু সদকা (দান) নয়।। কুরবানীর উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কুরবানীর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা। সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

কুরবানীর মাহাত্ম্য সংক্রান্ত প্রচলিত কতিপয় অচল হাদীস

আবদুল হামীদ ফাইযী

কুরবানীর জানোয়ার কিয়ামতের দিন তার শিং ও পশম এবং খুরসহ অবশ্যই হাজির হবে—।(যয়ীফ, যয়ীফ তারগীব ৬৭১নং)

কুরবানী তোমাদের পিতা ইবরাহীমের সুন্নত। তার প্রত্যেকটি লোমের পরিবর্তে রয়েছে একটি করে নেকী।(হাদীসটি জাল, যয়ীফ তারগীব ৬৭২নং)

কুরবানীর প্রথম বিন্দু রক্তের সাথে পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। পশুটিকে তার রক্ত ও গোশতসহ দাঁড়িপাল্লাতে ৭০ গুণ ভারী করে দেওয়া হবে। (হাদীসটি জাল, যয়ীফ তারগীব ৬৭৪-৬৭৫নং)

ভালো মনে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করলে তা জাহান্নাম থেকে পর্দার মত হবে (হাদীসটি জাল, যয়ীফ তারগীব ৬৭৭নং)

তোমরা তোমাদের কুরবানীকে মোটা-তাজা কর। কারণ তা তোমাদের পুলসিরাত পারের সওয়ারী। (অতি দুর্বল, সিলসিলাহ যয়ীফাহ ১২৫৫নং)

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে রাসূল সা এর উম্মত হিসেবে ভূমিকা পালনের তাওফিক দান করুন।