আহবান
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন।
আসসালামু আ’লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা যেমন স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও মিলিত সমাজ জীবনের জন্য প্রযোজ্য, সমষ্টিগত সামাজিক জীবনের পূর্ণতা লাভের জন্য নারী ও পুরুষ উভয়ের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের আবেদন সমভাবে নারী ও পুরুষ উভয়ের কাছে। আল্লাহ তা’লার বান্দাহ হবার, তাঁর সামনে জবাবদিহি করার এবং নিজ নিজ কাজের প্রতিফল পাওয়ার দিক থেকে নারী ও পুরুষের কোন পার্থক্য নেই। তাই আল্লাহ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আখিরাতে সাফল্য লাভের উপযুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
যা কিছু পুরুষেরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সে অনুযায়ী, আর যা কিছু নারীরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ সে অনুযায়ী। সূরা আন নিসা: ৩২
আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী ৷সূরা বাকারাঃ১৪৩
‘মধ্যপন্থী উম্মাত’ শব্দটি অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক তাৎপর্যের অধিকারী ৷ এর অর্থ হচ্ছে, এমন একটি উৎকৃষ্ট ও উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন জাতি, যারা নিজেরা ইনসাফ, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ভারসাম্যের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর এর কারন হিসেবে মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে,
আখেরাতে যখন সমগ্র মানবজাতিকে একত্র করে তাদের হিসেব নেয়া হবে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল প্রতিনিধি হিসেবে রসূল তোমাদের ব্যাপারে এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, সুস্থ ও সঠিক চিন্তা এবং সৎকাজ ও সুবিচারের যে শিক্ষা দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল তা তিনি তোমাদের কাছে হুবহু এবং পুরোপুরি পৌছিয়ে দিয়েছেন আর বাস্তবে সেই অনুযায়ী নিজে কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন৷ এরপর রসূলের স. স্থলাভিষিক্ত হিসেবে সাধারণ মানুষদের ব্যাপারে তোমাদের এই মর্মে সাক্ষ্য দিতে হবে যে, রসূল তোমাদের কাছে যা কিছু কার্যকর করে দেখিয়ে ছিলেন তা তাদের কাছে কার্যকর করে দেখাবার ব্যাপার তোমরা মোটেই গড়িমসি করোনি৷
এই জাতি যেমন পূর্বের নবীদের সাক্ষী তেমনি শেষ নবীর স.এরও সাক্ষী।
কিয়ামত দিবসে নূহ আ.কে ডাকা হবে, তিনি বলবেন, হে প্রভু! আমি উপস্থিত। আল্লাহ তা’আলা বলবেন তুমি কি তোমার দায়িত্ব পৌছে দিয়েছিলে? তিনি বলবেনঃ হ্যা পৌছে দিয়েছিলাম। তখন তাঁর উম্মতকে জিজ্ঞেস করা হবে। নূহ তোমাদের নিকট(নবুয়্যতের বাণী) পৌছে দিয়েছে কি? তারা বলবে আমাদের কাছে কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার সাক্ষী কে? নূহ আ. বলবেন মুহাম্মদ স. ও তাঁর উম্মত। তখন (উম্মতে মুহাম্মদী) সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তিনি(নূহ আ.) দায়িত্ব পৌছে দিয়েছেন। তখন রাসূল স. এই আয়াত পাঠ করলেন(ওয়া কাযালিকা জায়ালাকুম উম্মাতাও ওয়াসাতোয়া)। বুখারীঃ ৪৪৮৭
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে এ উম্মাতের জন্য আল্লাহভীতি , সত্য-সঠিক পথ অবলম্বন, সুবিচার, ন্যায়-নিষ্ঠা ও সত্যপ্রীতির জীবন্ত সাক্ষী হয়েছেন তেমনিভাবে এ উম্মাতকেও সারা দুনিয়াবাসীদের জন্য জীবন্ত সাক্ষীতে পরিণত হতে হবে ৷ এমন কি তাদের কথা, কর্ম, আচরণ ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয় দেখে দুনিয়াবাসী আল্লাহভীতি, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও সত্যপ্রীতির শিক্ষা গ্রহণ করবে।
সুতরাং প্রবৃত্তির অনুগত হয়ে দুনিয়ার ভোগ বিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে নয়, মুনাফেকী নীতি দিয়ে দুইদিকে নয় বরং সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে একমুখী হয়ে প্রতিটি কাজেই সততা ও ভারসাম্যপূর্ন নীতি অবলম্বন করার মাধ্যমে নিজেদের সাক্ষী হিসেবে উপযুক্ত করে নিতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি তোমাদের মনোনিত করেছেন। তিনি দীনের ব্যপারে তোমাদের উপরে কোন কঠোরতা আরোপ করেন নি। এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরন করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও, যেন রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা সাক্ষী হও মানব জাতির জন্য। সূরা হজ্জঃ ৭৮
উম্মতে মুহাম্মদী হিসেবে এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠত্ব দান যা মহান আল্লাহ দিয়েছেন। আর পিছনে মূল কারন হলো রাসূল স.এর উত্তরসূরী হওয়া যা একমাত্র রাসূল স.এর সঠিক পূর্ন অনুসরন করেই হতে পারে।
দিন চলে যায় এবং যাবেই, সময় থাকতেই আমাদের সংশোধন হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের পরে যেন আফসোস না করতে হয় সেই ধরনের ব্যক্তির চরিত্রও তুলে ধরেছেন কুর’আনে। কুর’আনের কাছে না গেলে আমরা কিভাবে এই সত্য নির্দেশনাগুলো আমরা জানতে পারবো? যেই নির্দেশনা আমাদের জীবনকে সুন্দর সফল করে দিবে দুনিয়া ও আখেরাতে সেই নির্দেশনা জানার জন্য আমরা কি সচেষ্ট হবো না! আর কত গাফেল হয়ে থাকবো? মৃত্যুর ফেরেশতাতো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন -সময় হলেই চলে আসবে শিয়রে, তখনতো আর কোন লাভ হবে না।
মহান আল্লাহ বলেছেন-
(এরা নিজেদের কৃতকর্ম থেকে বিরত হবে না) এমনকি যখন এদের কারোর মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন বলতে থাকবে, ‘‘হে আমার রব ! যে দুনিয়াটা আমি ছেড়ে চলে এসেছি সেখানেই আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দাও,
আশা করি এখন আমি সৎকাজ করবো৷কখনোই নয়, এটা তার প্রলাপ ছাড়া আর কিছু আর নয়৷ এখন এ মৃতদের পেছনে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে একটি অন্তরবর্তীকালীন যুগ—বরযখ যা পরবর্তী জীবনের দিন পর্যন্ত থাকবে ৷
তারপর যখনই শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তাদের মধ্যে আর কোন আত্মীয়তা বা সম্পর্কে থাকবে না এবং তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেসও করবে না ৷
সময় যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে ৷আর যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই হবে এমন সব লোক যারা নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে ৷ তারা জাহান্নামে থাকবে চিরকাল৷
আগুন তাদের মুখের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে এবং তাদের চোয়াল বাইরে বের হয়ে আসবে ৷
তোমরা কি সেসব লোক নও যাদের কাছে আমার আয়াত শুনানো হলেই বলতে এটা মিথ্যা?’’
তারা বলবে, ‘‘হে আমাদের রব ! আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের ওপর ছেয়ে গিয়েছিল,আমরা সত্যিই ছিলাম বিভ্রান্ত সম্প্রদায়৷
হে পরওয়ারদিগার ! এখন আমাদের এখান থেকে বের করে দাও, আমরা যদি আবার এ ধরনের অপরাধ করি তাহলে আমরা জালেম হবো ৷
আল্লাহ জবাব দেবেন, দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে,পড়ে থাকো ওরি মধ্যে এবং কথা বলো না আমার সাথে৷
তোমরা হচ্ছো তারাই, যখন আমার কিছু বান্দা বলতো, হে আমাদের রব ! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের প্রতি করুনা করো, তুমি সকল করুণাশীলের চাইতে বড় করুণাশীল,
তখন তোমরা তাদেরকে বিদ্রুপ করতে, এমনকি তাদের প্রতি জিদ তোমাদের আমার কথাও ভুলিয়ে দেয় এবং তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে থাকতে ৷
আজ তাদের সে সবের ফল আমি এই দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম ৷
তারপর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, বলো,পৃথিবীতে তোমরা কত বছর থাকলে?
তারা বলবে, ‘‘এক দিন বা দিনেরও কিছু অংশে আমরা সেখানে অবস্থান করেছিলাম, গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে নিন৷’’
বলবেন, ‘‘অল্পক্ষণই অবস্থান করেছিলে,হায়!যদি তোমরা একথা সে সময় জানতে ৷
তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না?’’ কাজেই প্রকৃত বাদশাহ আল্লাহ হচ্ছেন উচ্চতর ও উন্নততর, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, সম্মানিত আরশের তিনিই মালিক সূরা মু’মিনুনঃ ৯৯-১১৬
মহান আল্লাহ আমাদের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে মুসলিম হিসেবে প্রশান্ত আত্মা নিয়ে তাঁর সামনে যাওয়ার সুযোগ করে দিন। আমীন