আত্মউপলব্ধি-৭(প্রেক্ষাপট-৬)

প্রেক্ষাপট

কর্মজীবী দম্পত্তির কর্মক্ষেত্রে ও পরিবারের অবস্থাঃ

“একদিন  এক কলিগ  বলছিলেন যে, এতো কষ্ট করে পড়াশুনা করে ডাক্তার হলাম, বিশেষজ্ঞ লাভ হলো কিন্তু এখন স্বামী বলছে চাকরী করা লাগবে না, ছেড়ে দাও, বাসায় থাকো। টাকা পয়সা আমিইতো উপার্জন করি। তোমার বাইরে যাওয়া লাগবে না”

আরেকজন কলিগ বলছেন, বিয়ের আগেইতো স্বামী জানেন যে আমি শিক্ষিত একজন স্ত্রী, আমিতো ঘরে বসে থাকবো না, আমার যোগ্যতাকে কাজে লাগাবো না? আমি কলেজের প্রফেসর হবো, দীনের শিক্ষাও দেবো—।

আরেকজন স্ত্রী বলেন, নিজের বোনকে ঠিকই পড়া শুনা চাকরীর সুযোগ করে দিচ্ছে, আর আমার বেলায় বলবে ঘরে দায়িত্ব পালন করো,বাইরে যেতে হবে না। ছেলে মেয়েকে কে দেখবে, অথচ বোনের বাচ্চাকে নিজের মায়ের কাছে রেখে চাকরিতে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছেন।

দেখা যায় কোন কোন স্ত্রী স্বামীর ডিগ্রী অর্জনে সাহায্য করেন যেন আগে স্বামী প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান এরপর স্বামীর সহযোগীতায় স্ত্রী ডিগ্রী অর্জন করতে উদ্যোগী হোন। কিন্তু দেখা যায় স্বামী ঠিকই নিজের কাজ আদায় হলে আর স্ত্রীর ব্যাপারে কোন রকম সহযোগীতা করতে নারাজ, অথচ এই লোকটি আবার কর্মক্ষেত্রে অন্য নারী কলিগকে খুব সহযোগীতা করছেন সেই নারীর ডিগ্রী নিতে।

অনেক স্ত্রী আছেন কোনভাবেই নিজের ক্যারীয়ারের ব্যাপারে পিছ পা হবেনই না। সংসারের যে কোন অবস্থা হোক না কেনো।

অনেকগুলো বাস্তব অবস্থা তুলে ধরলাম। এই ধরনের সহ আরো অনেকগুলো ঘটনা আমাদের সামনে দেখা যায়। দুপক্ষের বা কোন এক পক্ষের সহযোগীতার অভাবে সংসার জীবন দূর্বিসহ হয়ে পড়ে।

মহান আল্লাহতা’আলা আমাদের জানিয়েছেনঃ

না, হে মুহাম্মাদ! তোমার রবের কসম, এরা কখনো মু’মিন হতে পারে না যতক্ষণ এদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর তুমি যা ফায়সালা করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্য কোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে। সূরা আন-নিসা: ৬৫

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:

নিজেদের গৃহের মধ্যে অবস্থান করো এবং পূর্বের জাহেলী যুগের মতো সাজসজ্জা দেখিয়ে বেড়িও না। নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। আল্লাহ তো চান, তোমাদের নবী-পরিবার থেকে ময়লা দূর করতে এবং তোমাদের পুরোপুরি পাক-পবিত্র করে দিতে।

আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের যেসব কথা তোমাদের গৃহে শুনানো হয়, তা মনে রেখো। অবশ্যই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও সর্ব অবহিত।সূরা আহযাব: ৩২-৩৪

এই আয়াতে নিশ্চিন্তে ও স্থির হয়ে ঘরে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। নারীর আসল কর্মক্ষেত্র হচ্ছে তার গৃহ। নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, সৌন্দর্য ও প্রশান্তি আসে এই গৃহে অবস্থানের মাধ্যমে কারণ মহান আল্লাহ তা’য়ালা সৃষ্টিগতভাবেই তাকে এই পরিবেশের উপযোগী করেছেন। এই বৃত্তের মধ্যে অবস্থান করে সে নিশ্চিন্তে নিজের দায়িত্ব সম্পাদন করে যেতে পারবে। কেবলমাত্র প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সে গৃহের বাইরে যাবে এবং এ কারণেই পর্দার বিধান এসেছে। নারী যেন প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারে সেজন্যেই পর্দার নির্দেশনা এসেছে। নারী শিক্ষাঙ্গনে, কর্মক্ষেত্রে, সফরে, বেড়াতে যাবে আর তার জন্যই প্রয়োজন মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা, যা নারীকে সম্মানিত করবে, হেফাজত করবে।

আমাদের দেশে এখনও সরকারী কোন  নারীদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই। একজন পরহেজগার ডাক্তার বলছিলেন নিজের কথা যে, আমি যখন প্রথম সহশিক্ষাতে মেডিকেলে গিয়েছিলাম তখন মহান আল্লাহর কাছে এটা ভেবে ক্ষমা চেয়েছিলাম যে, হে আল্লাহ আজ বৃহত্তর স্বার্থ( মহিলা রোগীর জন্য নারী ডাক্তার, নারীদের জন্য আলাদা মেডিকেল করতে নারী ডাক্তার প্রয়োজন ) কে সামনে রেখেই এই সহশিক্ষায় এসেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো।

শুধু চাকরীর জন্য নয় একজন নারী শিক্ষিত হলে তার সন্তানকে সঠিক উন্নত পদ্ধতিতে গড়ে তোলা সহজ হয়। একজন মায়ের কাছ থেকেই আসে সমাজের সকল স্তরের নেতা যারা সমাজ পরিচালনা করে থাকেন।

অথচ আজ অনেক অভিভাবকরা সঠিক শিক্ষার অভাবেই তাদের সন্তানদের ভালো লেখাপড়ার নামে সহশিক্ষা কার্যক্রমে দিয়ে দিচ্ছেন যদিও সুযোগ থাকে আলাদা ব্যবস্থায় পড়াশুনা করার। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক মেধা যারা পূত পবিত্র চরিত্র নিয়ে এগিয়ে আসতে পারতো।

আজ আমি আপনি মহিলা চিকিৎসক, শিক্ষিকা খুজি যেন বেপর্দার অবস্থা থেকে নিজেরা সহ পরিবারের নারী সদস্যা ও মেয়ে সন্তানটিকে হেফাজত করতে পারি, আল্লাহ সাহায্যকারী। আর তাই সমাজে যেমন নারীর শিক্ষা ও যোগ্যতার সুন্দর বিকাশের সুযোগ প্রয়োজন তেমনি পরিবারকেও সুন্দর সঠিক অবস্থায় রাখাটা আরো জরুরী প্রয়োজন। কবরের জীবনে যাওয়ার পর নারী পুরুষ প্রত্যেককেই নিজ পরিবারের দায়িত্ব পালন কতটুকু কি করেছেন তা জিজ্ঞেস করা হবে, কি ডিগ্রী নিয়েছেন তা করা হবে না। তবে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছেন তার সঠিক হক আদায় করেছেন কি না সেটাও প্রশ্ন।

নারী তার যোগ্যতাকে কাজে লাগাবে তবে অবশ্যই শরীয়তের সীমানা রক্ষা করেই করতে হবে। পরিবারে নারী পুরুষের সম সহযোগীতায় পারে ভারসাম্য জীবনে প্রবেশ করতে। নারী বা পুরুষ কেউই যদি চরম অবস্থায় না যেয়ে দীনের শরীয়তে শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় চলার চেষ্টা করেন তবেই দুজনের পক্ষেই সম্ভব যোগ্যতার সঠিক বিকাশ করা যার উদ্দেশ্য হবে মহান রবের সন্তুষ্টি।

আজ অনেক পরিবারেই বাস্তবতায় বাধ্য করে নারীকে চাকরী করতে। হালাল ভাবে থাকতে হলে, চলতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই এটা জরুরত হয়ে যায়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে স্বামী ও নিজ পরিবারের হক নষ্ট করে করতে হবে।

আবার কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পর শুরু হয়ে পারস্পরিক সন্দেহ, হিংসা ও প্রতিযোগীতামূলক ছুটতে থাকা যা যার যার দায়িত্ব পালন থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। কমে যায় পরিবারের বন্ধন।

কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষ ব্যক্তিটি শরীয়াকে উপেক্ষা করে নারী কলিগদের সাথে ফ্রি মেলা মেশা, জায়েজ নাজায়েয কোন পরওয়া না করে চলা ইত্যাদি নিজের প্রতিষ্ঠিত জীবনের উচু র‍্যাঙ্কে যাবার জন্য যা প্রয়োজন তা করে যেতে দ্বিধা করেন না। পরিবারের খোঁজ খবর নেয়ার সময় থাকে না, স্ত্রী সন্তানদের সাথে মতবিনিময় করার সময় নেই, বাসায় আসেন শুধুমাত্র খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য।

অনেক স্বামী আছেন যারা স্ত্রীর সামনে এমন ভূমিকা রাখে যেন খুব ভদ্র একজন লোক, শরীয়া মেনে চলেন নারী কলিগদের সাথে যেন কথাই হয় না কখনো-আস্তাগফিরুল্লাহ। স্ত্রী না থাকলে আবার আগের মতোই চলে গল্প গুজব বা ফান করা। আর এখনতো নেটে মুবাইলে সহজ উপায় হয়ে গিয়েছে যোগাযোগের। মুনাফেকী নীতি নিয়ে কখনোই দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য লাভ হয় নি, হবেও না। সত্য প্রকাশ হবেই। আর এইভাবে পরিবারের স্থায়ী ভালোবাসা বিশ্বাসের জায়গাটি দূর্বল হয়ে একসময় বিলীন হয়ে যায় সংসার ভাংগার অবস্থায় নিয়ে।

অনেক ক্ষেত্রে নারীও এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় যে অন্য পুরুষের চোখে নিজেকে আকর্ষনীয় করে একটু সুরেলা কমেন্ট শুনে ভালো লাগানো বা কিছু সময় গল্পে মেতে থাকা বা ক্যরীয়ার টপে যাওয়ার জন্য যা করা দরকার সেও তা করে থাকে ফলে এই নারী পরুষের পারস্পরিক আকর্ষন বা ভালোবাসার ধরন পরিবর্তন হয়ে যায় সংসার জীবনে, একজনের প্রতি অপরজন সন্দেহের আচরন বা কথা দিয়ে শুরু হয় অশান্তি। এরপর পুরু পরিবার হয়ে যায় আগুনের একটি খন্ড। সন্তানেরাও হাঁপিয়ে উঠে এখানে থাকতে,তখন তারাও শান্তির জন্য খুঁজে একজন বিপরীত লিংগের সংগীকে। অথবা পরিবারের এই অশান্তিকে ভুলে থাকতে চায় ঠিক তখনই শয়তান এদের নেশার দিকে, মদ গান বাজনার দিকে নিয়ে যায়। এইভাবেই পরিবারগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে, সমাজ ভালো কিছু উপহার পায়না এই শিক্ষিত পরিবার থেকে।

ইবনে উমার(রা) থেকে বর্ণিত। নবী সা: বলেন: তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল (অভিভাবক) এবং নিজ অধীনস্থ লোকদের ব্যপারে সে দায়ী। শাসক একজন অভিভাবক এবং কোন ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের অভিভাবক (দায়িত্বশীল)। কোন মহিলা তার স্বামী, গৃহের ও তার সন্তানদের অভিভাবক(রক্ষক)। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ অধীনস্থ লোকদের ব্যপারে তোমাদের প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। বুখারী: ৪৮১৮