প্রেক্ষাপটঃ ২
কবি সাহিত্যিক শিল্পিদের অবস্থান
এবার উল্লেখ করবো কবি সাহিত্যিক শিল্পিদের জীবনের আমলগুলো কিভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং অনেক ক্ষেত্রে হারাম পথে পরিচালিত হয়। সাধারন যারা ইসলামের আলোকে চলেন না বা আখেরাতের প্রতি সজ্ঞানেই উদাসীন তাদের দিকে যাচ্ছি না। যারা মহান আল্লাহতা’আলাকে ভয় পান ও ভালোবাসেন এবং আখেরাতের জীবনের ফলাফলটাই যাদের মূল বিষয় সেইসব ব্যক্তিদেরসহ নিজেকে সংশোধনের জন্যই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
জীবনের সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে চলার ক্ষেত্রে মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষ সহযোগী। এর অর্থ এই নয় যে গায়ের মাহরাম মুমিন নারী পুরুষেরা একসাথে ফ্রী মিক্সিং এর মতোই দীনের কাজ করে যাবে। এই সহযোগীতা করার জন্য মহান আল্লাহতা’আলা পারিবারিকভাবে কিছু সম্পর্ক মাহরাম তৈরী করার মাধ্যমে দায়িত্ব দিয়ে এবং সামাজিকভাবে শরীয়তে নিয়ম নীতি দিয়েই জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আবার সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য শরীয়তে মুমিন নারী ও পুরুষের মাঝেও কিছু কাজ নিষিদ্ধ বা হারাম করে দিয়েছেন। অনেকে কুর’আনের শিক্ষাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দেখা যায় দীনের কাজের অসিলা দিয়ে গায়ের মাহরামদের সাথে নির্বিবাদে শরীয়া উপেক্ষা করে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন ও তথাকথিত ভালো সম্পর্কের নামে অনেক ক্ষেত্রেই অবৈধ প্রেমেও জড়িয়ে পড়েন।
সাহাবী আজমাঈনদের জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তাঁরা আখিরাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস এবং মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানা ওয়াতা’লা ও রাসূল সা: এর প্রতি আনুগত্যের উত্তম উদাহরণ রেখে গিয়েছেন। যার ফলে এই দুনিয়াতে থাকা অবস্থায়ই মহান আল্লাহ তা’লা তাঁদের জান্নাত প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুবহানআল্লাহ। সাহাবী রা:গণ কিন্তু এত ব্যাখ্যা জানতে চাননি। যখনই কোন বিধান নাযিল হয়েছে তাঁরা “আমরা শুনলাম এবং মানলাম” এই মনোভাব নিয়ে আমল করে গিয়েছেন। মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই – যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই কৃতকার্য। সূরা আন-নূর: ৫১-৫২
অনেকেই ইসলামের পথে আহবান করতে সাহিত্যের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। আবার অনেকের মাঝে সাহিত্যের যোগ্যতা ছোটবেলা থেকেই দেখা যায়। যদিও সাহিত্যের ব্যাপারে রাসুল স. খুব বেশী সবাইকে উৎসাহিত করেন নি। মুমিনের জীবন সবসময় অর্থবহ সময়ের সমষ্টি হবে।
অনেক লেখক লেখিকা এই কাজ শুরুতে নিজের ভালো লাগা, সমাজের কল্যানের জন্য ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করে থাকেন। কিন্তু শয়তান যখন বুঝতে পারে যে এই লেখার ও জ্ঞান বিতরনের ফলে অনেকের মাঝে কল্যানকর কাজের ইচ্ছা ও আল্লাহর পথে চলার সাড়া পড়ে যাবে, তখন শয়তান সেই লেখক বা লেখিকার পেছনে উঠে পরে লেগে যায়। শয়তান ভালো ভাবেই জানে যে, তাকে দিয়ে লেখা বন্ধ করা যাবে না, তবে কোন ভাবে যদি এই কাজটাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে একসময় হারাম পথে নেয়া যায় সেই লেখক বা লেখিকার অজান্তেই তাহলেই সে(শয়তান) উদ্দেশ্য হাসিলে জয়ী হয়ে গেলো। হযরত আদম(আ) ও বিবি হাওয়াকে দিয়ে যেভাবে ধীরে ধীরে মহান আল্লাহর নিষেধকেই বাস্তবায়ন করাতে পেরেছিল।
দেখা যায় লেখার কাজ করতে যেয়ে অনেকেই সময় মতো সালাতে উপস্থিত হতে পারেন না। আবার কুর’আন হাদীস নিয়ে চর্চা করার সময় পান না। অনেক ফরয ওয়াজিব ও দায়িত্ব লঙ্ঘন করে ফেলেন লেখার কাজে সময় দেয়ার জন্য। ব্যক্তির নিজের ও পরিবারের জীবনে ভারসাম্যহীনতা ও সম্পর্কের টানাপোরন শুরু হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে।
আবার দেখা যায় অনেকে শুধুমাত্র বাহবা/ প্রশংসা ও সমাজে প্রশংসিত নামের একটি স্থান নিতে হবে এই দিকে ঝুঁকে যেয়ে মহান আল্লাহর নিষিদ্ধ পথে চলে যান, অশালীন নোংরা ও মানুষের গোপন বিষয়ের উন্মুক্ত করেন বিভিন্নভাবে। পর্ণগ্রাফী আসক্ত করে তোলেন সমাজের অনেক তরুন তরুনীসহ বিভিন্ন বয়সের লোককে।
অনেকে নিজের আবেগকে বিভিন্ন রংগে ঢঙ্গে সাজিয়ে প্রেম ভালোবাসার কথা লেখনীতে প্রকাশ করেন। অথচ এই ব্যক্তিটির নিজ পরিবারে ঠিক বিপরীতমুখী চিত্র দেখা যায় যেখানে কোন ভালোবাসার আবেগ দূরে থাক, সুন্দর করে কথা যেন বের হয় না। অনেকক্ষেত্রে এই সাহিত্যিকদের বাস্তব পারিবারিক জীবনের সাথে লেখার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান দেখা যায়, যা একজন মুমিনের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আবার অনেকে শুধুমাত্র একটু আনন্দ পাওয়ার জন্য অন্যকেও আনন্দ দেয়ার জন্য অশালীন সাহিত্য রচনায় সময় দিয়ে থাকেন। যা পুরু সমাজকেই কলুষিত করে।
কিছু কিছু গল্প ও উপন্যাসের বিষয়ই থাকে প্রেম ও যৌনতা নিয়ে, এই দিয়ে খুব প্রসিদ্ধ হয়ে যান লেখক বা লেখিকা এটাই তাদের উদ্দেশ্য-কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি অশ্লীলতা প্রচারের দায়ে মহান রবের সামনে অপরাধী হয়ে দাঁড়াতে হবে,তখন কি ভক্তরা উদ্ধার করতে আসবে?
কিছু লেখক/লেখিকা আছেন যারা ধর্মীয় শিক্ষাকে বর্তমান সমাজে অচল বা শরীয়ার শিক্ষা সঠিক নয় যুক্তি দিয়ে তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ও যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরে ভক্ত বাড়াতে চান, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এরা একই মন মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ যে আখেরাতকে মানতে চায় না দুনিয়াই আসল ঠিকানা বলে জীবনকে পার করে দিতে চায়, কিন্তু যখন মৃত্যুর বার্তা চলে আসে তখন কি ভক্তরা তাকে ফেরাতে পারে?
মনে রাখা প্রয়োজন প্রতিটি মানুষের যোগ্যতা ও সময়ের পূর্ণ হিসেব মহান রবের কাছে দিতে হবে কারন এর পুরুটি জিনিষই মহান রবের দেয়া আমানত। কে কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন তার পূর্ণ রেকর্ড করে যাচ্ছেন সম্মানিত ফেরেশতারা মহান রবের নির্দেশে।
বিশেষ করে আজ সামাজিক মিডিয়াতে বিভিন্ন ব্লগ/ ফেইস বুকে ষ্ট্যাটাস ইত্যাদিতে নারী পুরুষ সকল বয়সের যেভাবে খোলা মেলামেশা করছেন এই লেখা ও কমেন্টের মাধ্যমে এবং সম্পর্ক গড়ে উঠছে অনৈতিকভাবে যা লুকিয়ে প্রেম করার চেয়ে ভয়ানক হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে আবার এইভাবে ভাই বোনের সম্পর্কের দাবী তুলেন এবং ঠাট্টা ও জোকস/ গল্পে প্রচুর সময় কাটান ডিভাইস দিয়ে। অথচ এরাই পরিবারের অধিকার আদায়ে সম্পর্কে সুন্দর আচরন বা ভূমিকা থাকে না। কারন ব্যক্তি যখন অবৈধভাবে আনন্দ পাওয়ার সুযোগ করে নেয় তখন পরিবারের হালাল পবিত্র আনন্দ ভালো লাগে না। এইভাবেই শয়তান অনেক পরহেজগার নারী পুরুষকেও জাহান্নামের দিকে ঘুড়িয়ে দিচ্ছে তার লেখনির এই যোগ্যতাকে কেন্দ্র করে।
নাটক ও সিনেমার জগতের কথাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ময়দানে যারা কাজ করছেন তাদের বাস্তব জীবন ও পরিনতি অত্যন্ত ভয়াবহ যা সমাজের দিকে তাকালেই বুঝা যায়,তবে যারা তাওবা করে সুন্দর জীবনে ফিরে এসেছেন তাদের কথা ভিন্ন।
রাসূলের (সঃ) জীবদ্দশায় মক্কায় সাহিত্য/ কবিতার মাধ্যমে ইসলামের সুন্দর আদর্শ তুলে ধরা ও ইসলামের শত্রুদের জবাব দেয়ার জন্য ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু এখানেও শালীনতা ও শরীয়তের নিয়ম মেনে চলেই তা করতে বলেছেন। নারী পুরুষের একসাথে কাব্যিক চর্চার কোন স্থান শরীয়ত দেয়নি।
একটি পরিবারের একজন স্ত্রী একদিন অনেক দুঃখ নিয়ে বলছিল যে “আমার স্বামী একটু সাহিত্যিকমনা, সে সামাজিক মিডিয়াতে লেখা লেখি করে, এরই মাধ্যমে কয়েকজন সাহিত্যিকমনা নারীর সাথে মতবিনিময় হয়, প্রায়ই লেখার বিনিময় ঘটে, আস্তে আস্তে ভাইয়া আপু ইত্যাদি বিভিন্নভাবে সম্বোধনে ব্যক্তিগত আলাপে চ্যাট হয়, এখন স্বামী আমাকে বলে তুমিতো কিছু বুঝনা, তোমার মধ্যে সাহিত্যের কিছু নাই, সে ঘন্টার পর ঘন্টা লেপটপে সময় দিয়ে যাচ্ছে, আমার সংসারের কাজ আমাকে সামাল দিতে হয়। অফিসে বসে কাজের ফাঁকে লেপটপে সেই সাহিত্যিকমনা নারীর সাথে যোগাযোগে সময় দিচ্ছে অথচ বাসায় খবর নেয়ার জন্য ফোন দিতে পারে না। সে খুব নামাজী ও কুর’আন পড়ে প্রতিদিন। আমি তাকে বলতে গেলে বলে, তুমি মনটাকে বড় কর, আমিতো প্রেম করছি না। এটা শুধুমাত্র বন্ধুত্ব। এই বলে সেই স্ত্রী কাঁদতে শুরু করে দিলো”।
হায়রে সাহিত্যিক, কি হবে এই সাহিত্যের ঝুড়ি দিয়ে অন্যের মনোরঞ্জন করে বা শরীয়া উপেক্ষা করে দীনের দাওয়াত দিয়ে- যেখানে মহান রবের নিষিদ্ধ পথে পা বাড়িয়ে, পরিবারের হক নষ্ট হচ্ছে ও গায়ের মাহরামের সাথে হারাম ভাবে সময় দিচ্ছে? যিনি সৃষ্টি করে দিলেন এই মনটা, যিনি সাহিত্যের ভাব দিলেন এই মাথায়, যা দিয়ে এতো অনুভূতির প্রকাশ করতে পারছে, সেই মহান আল্লাহই বিধান দিয়ে দিয়েছেন অথচ সেটা উপেক্ষা করে মন বড় করার উদাহরন টানছে। মন কোথায় বড় হয় তা আল্লাহই জানিয়ে দিয়েছেন আর তার সর্বোত্তম উদাহরন রাসূল স. এর জীবন। অমুসলিমরাই যেখানে সাক্ষী দেন রাসূল স.এর উন্নত ব্যক্তিত্বকে সেখানে আমাদের কিছু ভাই ও বোনেরা প্রবৃত্তির মজাকে, ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিয়ে শয়তানের আনুগত্য করে যাচ্ছে।
আমরা অনেকেই মনটাকে বড় ঊদার করার নামে শরীয়তে নিষেধ কাজটা অকপটে করে যাচ্ছি। অথচ মহান আল্লাহ কি জানেন না যে বিজ্ঞান এতো উন্নত হবে যে, যোগাযোগ মাধ্যম এতো সহজ হয়ে যাবে? মহান আল্লাহ কি জানেন না যে, মানুষের সাহিত্য চর্চা অনেকদূর এগিয়ে যাবে? সেই মহান আল্লাহই শরীয়তের নিয়ম দিয়ে দিয়েছেন যা কিয়ামত পর্যন্ত সকল স্থান ও লোকের জন্য। সেই নিয়ম অনুসরন না করার কারনেই আজ অনেক পরিবারে ভালো কাজের নামে অনেক ব্যক্তি বিভ্রান্ত হচ্ছে।
কুর’আনে মহান আল্লাহ বলেছেন—তোমরা যেনার নিকটবর্তীও হইওনা। উহা অত্যন্ত খারাপ কাজ, আর উহা অতি নিকৃষ্ট পথ। সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২
মহান আল্লাহ সেই সকল আচরন বা কাজ বা পরিবেশ যা যেনার দিকে উৎসাহিত করে তার নিকটেই যেতে নিষেধ করেছেন। আর তাই চোখ,কান, মুখ, ও অন্তরকে সম্পূর্ণ মুসলিম বানাতে হবে। আর তা লেখনীতেও হোক না কেনো।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সা: বলেছেন, আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ নির্ধারিত করা হয়েছে। সে তা অবশ্যই করবে। দু’চোখ-তাদের ব্যভিচার দেখা, দু’কান-তাদের ব্যভিচার শোনা। জিহবা-তার ব্যভিচার কথা বলা। হাত-তার ব্যভিচার ধরা। পা-তার ব্যভিচার চলা। মন-তা চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে। আর গুপ্ত অংগ তাকে সত্য বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। মুসলিম: ৬৫৬৪
আল্লাহর রাসূলের পত্নীরা কত উচ্চ মানের চরিত্রের অধিকারী ছিলেন; রাসূল সা: হলেন তাঁদের সরাসরি অভিভাবক, উঁনারা প্রত্যেকেই আখিরাতের জন্য দুনিয়ার জীবনের ভোগ-বিলাস, চাওয়া-পাওয়াকে সীমিত করে রেখেছিলেন; সেই পরিপূর্ণ ঈমানদার, পবিত্রতার অধিকারী ও অতি উন্নত তাকওয়া সম্পন্ন মু’মিনাদেরকেও আল্লাহ কিভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন-
হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। সূরা আহযাব: ৩২
এই আয়াতে “তোমরা সাধারণ নারীদের মতো নও” দ্বারা এ অর্থ বুঝায় না যে, সাধারণ নারীদের সাজসজ্জা করে বাইরে বের হওয়া ও ভিন পুরুষদের সাথে মুক্তভাবে মেলামেশা করা উচিত। বরং এভাবে বুঝার চেষ্টা করুন। এক ব্যক্তি নিজের সন্তানদের বললেন, তোমরা বাজারের ছেলে মেয়েদের মত নও। তোমাদের মুখ দিয়ে গালাগালি করা উচিত নয়। এ থেকে আপনি এটা বুঝবেন না যে, সে কেবল মাত্র নিজের ছেলে-মেয়েদের গালি দেয়াকে খারাপ মনে করে এবং অন্য ছেলে মেয়েদের মধ্যে এ দোষ থাকলে তাতে কোন আপত্তি নেই।
কণ্ঠস্বর হলো হৃদয়ের ভাষ্যকার। গায়ের মাহরামদের(পরপুরুষ) সাথে নরম স্বরে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ কারো অন্তর যদি ব্যধিগ্রস্ত হয় তাহলে সেই (আকর্ষণীয়) কণ্ঠস্বর শুনেও যিনার কামনা-বাসনা জাগ্রত হতে পারে।
কত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশনা, আজ অনেকে লেখা লেখির মাধ্যমে, নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে গায়ের মাহরামদের সাথে যেভাবে যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি করে চলেছেন, দেখা যায় বিপরিত লিঙ্গের অবস্থান থাকলেই সেখানে একটা আনন্দ অনুভূত হয়। আর তাই শয়তান পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন অবস্থায় নারী পুরুষের একসাথে অবস্থানকে মামুলি ব্যপার বা কোন কোন ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করে নিচ্ছে। দেখা যায় মাথায় একটি হিজাব পড়ে ও দাঁড়ী(বিভিন্ন ষ্টাইলের) রেখে নারী পুরুষেরা অবাধে একসাথে বহুর্মূখী সামাজিক কাজেই ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন, অথচ নারী ও পুরুষের আলাদা অবস্থানে শরীয়ার আনুগত্য করেও এই কাজ করা যেতো বা আরো বেশী উপযোগী ও কল্যানমূলক হতো। একই কাজ কিন্তু পদ্ধতিগত ভুলের জন্য গোনাহের খাতায় চলে যায়।
বর্তমানের এই ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে সাবধান থাকা প্রয়োজন যেন মন যেনার কাছে না নিয়ে যায়। আবার অন্যরা যারা শরিয়তের বিধান জানে না তারা উদাহরন হিসেবে(পরহেজগার ব্যক্তির বিপরীত লিংগের সাথে শরীয়ার বাইরের আচরনকে) এটাকে জায়েয মনে করে অনুসরন করতে থাকে। ফলে একব্যক্তি নিজে ভালো হলেও তাকে অনুসরন করে অনেকেই খারাপ দিকে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে যেহেতু সেই ভালো ব্যক্তিটিও শরীয়ত উপেক্ষা করে যাচ্ছে। শরীয়তের বাইরে চলে কখনো কোন ভালো জিনিষ প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। নারী পুরুষের আলাদা অভিব্যক্তি প্রকাশের জায়গা থাকা দরকার। আর অভিব্যক্তি মহান রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও ইসলামের শিক্ষা তুলে ধরার জন্য হওয়া প্রয়োজন। একান্ত নিজের প্রেম ভালোবাসার আবেগের অনুভূতিগুলো পরিবারের মাঝে বিতরন করা প্রয়োজন তাহলে পরিবারে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আজকের সমাজের পরিবারের বন্ধন শিথীল হওয়ার পিছনে এটা একটি অন্যতম কারন যে নিজেদের মাঝে সুন্দর অভিব্যক্তিগুলো পরিবারের সদস্যদের মাঝে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কার্পন্য বা লজ্জা থাকে অথচ এরাই বাইরে লেখনীতে আবেগের প্রকাশের ভাষার ছড়াছড়ি যা মোটেও একটি সুস্থ সমাজের জন্য ভালো নয়।
আজকাল মোবাইলে এই কথা বলার ফিতনায় পড়ে কত ছেলে-মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়েছে তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক পরিবারের স্বামী বেচারা স্ত্রীকে হারাচ্ছে অথবা অসহায় স্ত্রী স্বামীকে হারাচ্ছে শুধুমাত্র ফোনে নরম স্বরে কথা বলা বা কোন অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় কথা বলা বিপরীত লিঙ্গের যেনার দিকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে।
তাই মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জীবনে সুন্দর স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্যই নরম স্বরে/ইনিয়ে-বিনিয়ে/স্বাভাবিক থেকে একটু ভিন্ন আকর্ষণীয় করে বিপরীত লিংগের সাথে যোগাযোগ নিষেধ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নারীরাই অধিক অগ্রগামী বলেই তাদেরকেই সাবধান করা হয়েছে। তাই দেখা যায় মসজিদে জামায়াতে নামায আদায়কালে ইমামের ভুল হলে নারীকে মুখে কোন কথা না বলে শব্দ (এক হাতের উপর অন্য হাত মেরে) দিয়ে ভুল ধরিয়ে দেয়ার নির্দেশনা এসেছে যেখানে পুরুষদেরকে সুবহানাল্লাহ বলে ইমামকে সতর্ক করতে বলা হয়েছে।
রাসূল সা: বলেছেন, আমি আমার পরে এমন কোন মারাত্মক ফিৎনাহ রেখে যাইনি যা পুরুষের জন্যে অধিকতর ক্ষতিকর হতে পারে নারীদের ফিৎনাহ অপেক্ষা। অর্থাৎ আমার পরে সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকর ফিৎনাই হচ্ছে নারীদের থেকে। মুসলিম: ৬৭৪৮
রাসুল সা: বলেছেন: কোন ব্যক্তি পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় যে সব কাজে গুনাহ নেই তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহভীরু লোকদের শ্রেণীভুক্ত হতে পারে না। তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ
রাসুল সা: বলেছেন: হে আয়েশা! ছোট-খাটো গুনাহর ব্যাপারেও সতর্ক হও। কেননা এজন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।ইবনে মাজাহ
মহান আল্লাহ আমাদের সংশোধিত হয়ে তাঁর পথে সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করার সুযোগ করে দিন।