রোগ ও রোগী-ইসলাম কি বলে!-১৬ সাদাকা

 কিছু অতিরিক্ত ভালো কাজ বা নফল ইবাদাত যা অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থ্যতার জন্য সহায়ক

এই অতিরিক্ত ভালো কাজ বা নফল ইবাদাত তারাই করতে চাবে, যারা বিশ্বাস রাখে মহান আল্লাহর উপর, নির্ভর করে ও মুখাপেক্ষি থাকে মহান রবের দিকে। যেমন নফল সালাত,তাহাজ্জুদ,নফল সাওম এবং সাদাকা বা দান।

দান এমন একটি ইবাদাত যা বহুমুখী কল্যান এনে দেয় দুনিয়া ও আখেরাতে। সর্বাবস্থায় দান করাটা উত্তম বলে বিবেচিত হয়।

উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“আমাকে বলা হয়েছে যে, আমলগুলো পরস্পর গর্ব করবে। তখন সদকা বলবে, আমি তোমাদের সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ”। সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব: ৮৭৮

 

“(হে রাসূল!) তুমি আমার মু’মিন বান্দাহদেরকে বলে দাও, যেন তারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) ব্যয় করে, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন ক্রয়-বিক্রয় এবং বন্ধুত্ব বলতে কিছুই থাকবে না”। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩১)

“তোমরা কখনোই কল্যাণের নাগাল পাবে না যতক্ষণ না তোমরা নিজের পছন্দনীয় বস্তু সদকা করো। তোমরা যা কিছুই আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করো তা সবই তিনি ভালোভাবে জানেন”। (সূরা আলে ‘ইমরান: ৯২)

“মানব শরীরের প্রত্যেকটি জোড়ার জন্য প্রত্যেক দিন একটি করে সদকা দিতে হবে। দু’ জনের মাঝে ইনসাফপূর্ণ ফায়সালা করে দিবে তাতেও সদকার সাওয়াব। কোনো মানুষ অথবা তার আসবাবপত্র তার আরোহণে উঠিয়ে দিতে সহযোগিতা করবে তাতেও সদকার সাওয়াব। ভালো কথা তথা কুরআন-হাদীসের কথা কাউকে শুনাবে তাতেও সদকার সাওয়াব। সালাত পড়ার জন্য মসজিদ অভিমুখে কদম ফেলবে তাতেও সদকার সাওয়াব। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলবে তাতেও সদকার সাওয়াব”। সহীহ মুসলিম: ১০০৯

দান বা সাদাকা  শুধুমাত্র টাকা দিয়ে নয় যেকোন ভালো, প্রয়োজনীয় জিনিষ দিয়েও হতে পারে। এমনকি একটি ভালো কথাও সাদাকা।

হাসান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,

“তোমরা রুগ্নদের চিকিৎসা করো সদকা দিয়ে”। সহীহুত তারগীবি ওয়াত-তারহীব: ৭৪৪

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,  প্রত্যহ ভোরেই দুই জন ফেরেশতা আসমান থেকে নেমে আসে। তাদের একজন বলে,  হে আল্লাহ!  ব্যয়কারীকে দানকর । অপরজন বলে, হে আল্লাহ! ব্যয় না করে যে ধরে রাখে (তার সম্পদ) ধবংস করে দাও। (সহিহ বোখারি)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি (অভাবীকে) দান কর, আল্লাহ তোমাকে দান করবেন।’ (বুখারী-মুসলিম)

এই হাদীসের আলোকে অসুস্থ ব্যক্তি দান করলে মহান আল্লাহ তাকে দুনিয়াতেই প্রতিদান দিবেন ইন শা আল্লাহ।

”যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার দু’নিয়া ও আখিরাতের সকল বিষয় সহজ করে দিবেন।” (মুসলিম)

“দান-সাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।” সুনান তিরমিযী: ৪১৪; সুনান ইবন মাজাহ: ৪২১০

একদিকে দানের মাধ্যমে গুনাহ মিটিয়ে ফেলা যাচ্ছে অপরদিকে মহান আল্লাহ দুনিয়ার জীবনেও সকল কাজ সহজ করে দিচ্ছেন। অসুস্থ ব্যক্তির কষ্ট বা সমস্যা মহান আল্লাহ এই অসিলায় লাঘব বা দূর করে দিতে পারেন।

আবু উমামাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“ভালো কাজ তথা সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সমূহ বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে”। সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৮৯

আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সকল প্রকারের গুনাহ্ ও পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“(হে নবী!) তুমি তাদের সম্পদ থেকে সদকা-খয়রাত নিয়ে তাদেরকে পাক ও পবিত্র করো এবং তাদের জন্য দো‘আ করো। নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য শান্তিস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা তো সবই শোনেন এবং সবই জানেন। তারা কি এ ব্যাপারে অবগত নয় যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের দান-খয়রাত গ্রহণ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাওবা কবুলকারী অতীব দয়ালু”।

সূরা আত-তাওবা: ১০৩-১০৪