ছবি ব্লগ (জুমআ বারের আসর)-১০

      জুমুআর দিনের বিদআত

এক- শরীয়ত নিষিদ্ধ বিষয়গুলো দ্বারা সাজ-সজ্জা অবলম্বন করা: যেমন দাড়ি সেভ করা, স্বর্ণ-অলংকার পরিধান করা, রেশমি কাপড় পরিধান করা, কালো খেজাব ব্যবহার করা ইত্যাদি।

দুই- জুমআর দিন মসজিদে যাওয়ার পূর্বে কাউকে দিয়ে স্থান দখল করার জন্য জায়নামায পাঠিয়ে দেয়া।

তিন- খুতবার মাঝখানে অথবা দ্বিতীয় খুতবার সময় নফল সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া।

চার- অনেক মানুষকে দেখা যায় ইমামের খুতবা দেয়ার সময় মসজিদে প্রবেশ করলে, তখন তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকআত সালাত আদায় না করে বসে পড়ে। এটি সম্পূর্ণ সুন্নাহ পরিপন্থী। সুন্নত হল, ইমামের 

        খুতবা অবস্থায়ও দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করে নেবে।

পাঁচ- দু‌আর সময় ইমামের হাত উঠানো এবং ইমামের দুআর সময় মুক্তাদিদের হাত উঠানো।

ছয়- জামাআতে জুমুআর সালাত আদায়ের পর এককভাবে আবার জুমুআর সালাত আদায় করা।

সাত- সালাতের সালাম ফিরানোর একে অপরের সাথে মুসাফাহা করা এবং কোলাকুলি করা।

         মাতৃভাষায় খুতবা

আমি সব নবীকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। (সূরা ইবরাহীম: ৪)

রসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা যেহেতু আরবী ছিল এবং সাহাবীদেরও ভাষা আরবী ছিল, তাই তিনি আরবীতেই তাদেরকে নসীহত করতেন। এখন যারা নবীজির নায়েব হয়ে জুমার খুতবা দিবেন তাদেরকেও উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ অনুসারে তাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়াটা শরীয়ত সম্মত এবং যুক্তি সংগত।

  • এই কারণেই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন: প্রত্যেক খতীবকে জুমার সময় তাঁর মাতৃভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। (তানক্বীহুর রুওয়াত ১/২৬৪)
  • আল্লামা তাহাভী হানাফী বলেন: জুমার খুতবা আরবী জানলেও ফারসী ভাষায় ও চলবে। (হাশিয়া তাহতাবী আলা মারাক্বিল ফালাহ ২৭)
  • আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী হানাফী (রহ) বলেন: শ্রোতাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা বুঝিয়ে দেয়া জায়েজ। (মাজমূআহ ফাতাওয়া ১/২৪৫)
  • হানাফী ফিক্বহ গ্রন্থ নিহায়া, মুজতাবা, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, মুহীত প্রভৃতি গ্রন্থে আছে যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে ফারসী ভাষাতে জুমার খুতবা দেয়া জায়েজ।
  • হানাফী ফতোয়ার কিতাব শামীতে আছে, আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া শর্ত নয়।
  • হানাফী ফিকহ গ্রন্থ হিদায়ায় আছে, প্রত্যেক ভাষায় খুতবার নছীহত চলতে পারে। (কিতাবুল জুমআহ ৫৫-৫৬) (আলোচনা দ্র: আইনী তোহফা সলাতে মুস্তফা১/৯৮-৯৯)

জুমআর আগে ও পরে সুন্নত

জুমআর খুতবার পূর্বে কাবলাল জুমুআহ বলে কোন নির্দিষ্ট রাকআত সুন্নত নেই। অতএব নামাযী মসজিদে এলে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ২ রাকআত সুন্নত পড়ে বসে যেতে পারে এবং দুআ, দরুদ তাসবীহ- যিকর বা তেলাওয়াত করতে পারে। আবার ইচ্ছা হলে নামাযও পড়তে পারে। তবে এ নামায হবে নফল এবং অনির্দিষ্ট সংখ্যায়।

প্রকাশ থাকে যে, “প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায আছে। (বুখারী, মুসলিমমিশকাত ৬৬২নং) এই হাদীস দ্বারা কাবলাল জুমআর সুন্নত প্রমাণ হয় না। কারণ, বিদিত যে, জুমআর আযান ও ইকামতের মাঝে থাকে খুতবা। আর মহানবী (সাঃ)-এর যুগে পূর্বের আর একটি আযান ছিল না। আর সুন্নত প্রমাণ হলেও মুআক্কাদাহ ও নির্দিষ্ট সংখ্যক নয়।

তদনুরুপ এমন কোন ফরয নামায নেই, যার পূর্বে ২ রাকআত নামায নেই। (ইবনে হিব্বান, সহীহ, ত্বাবারানীরানী, মুজাম, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩২, জামে ৫৭৩০নং)  এ হাদীস দ্বারাও জুমআর পূর্বে ২ রাকআত সুন্নত প্রমাণ হয় না। কারণ, জুমআর ফরয নামাযের পূর্বে খুতবা হয়। আর খুতবার পূর্বে ২ রাকআত নামায এ দ্বারা প্রমাণিত হয় না। (দ্র: সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩২নং)

সতর্কতার বিষয় যে, ইমামের খুতবা চলাকালে কেউ মসজিদে উপস্থিত হলে তাকে সেই অবস্থায় হাল্কা করে যে ২ রাকআত পড়তে হয়, তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ নয়; বরং তা হল তাহিয়্যাতুল মাসজিদ।

 

জুমআর পরে বা বাদাল জুমআর ৪ অথবা ২ রাকআত সুন্নত

জুমআর পর মসজিদে সুন্নত পড়লে একটু সরে গিয়ে বা কারো সাথে কোন কথা বলার পরে ৪ রাকআত নামায সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়তে হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমআর পর নামায পড়ে, সে যেন ৪ রাকআত পড়ে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, জামে ৬৪৯৯নং)

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমআর নামায পড়ে সে যেন তার পর ৪ রাকআত নামায পড়ে। (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিমনাসাঈ, সুনান, জামে ৬৪০নং)

তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমুআহ পড়ে, সে যেন তার পর কোন কথা না বলা অথবা বের হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত কোন নামায না পড়ে। (ত্বাবারানী, মুজাম,সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৩২৯নং)

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) জুমআর নামায পড়ে বাসায় ফিরে ২ রাকআত নামায পড়তেন। (বুখারী ৯৩৭নং, মুসলিমসুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌))

অবশ্য যদি কেউ মসজিদে ২ রাকআত পড়ে তাও বৈধ। পরন্তু যদি কেউ ২ অথবা ৪ রাকআত বাসায় পড়ে তাহলে সেটাই উত্তম। কারণ, মহানবী (সাঃ) বলেন, “ ফরয নামায ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম নামায হল তার স্বগৃহে পড়া নামায। (নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সহিহ তারগিব ৪৩৭নং, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৪১-৩৪২পৃ:)

প্রকাশ থাকে যে, জুমআর পরে যোহরের নিয়তে ৪ রাকআত এহ্‌তিয়াতী যোহ্‌র পড়া বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৭৪পৃ:, মুজামুল বিদা ১২০, ৩২৭পৃ:) যেমন বিদআত রমযানের শেষ জুমআকে জুমআতুল বিদা নাম দিয়ে কোন খাস মসজিদে ঐ জুমুআহ পড়তে যাওয়া।