যারা মহান আল্লাহর পথে চলার চেষ্টা করছেন নারী ও পুরুষ উভয়ে কিন্তু কোন এক কারনে এখনও পর্দার বিধানকে বাস্তবে রুপায়িত করেননি তাদের জন্য বলছি—
আপনি সালাতকে যেভাবে ফরয মানতে পেরে মুসলিম আছেন তেমনি পর্দার বিধানকেও গুরুত্ব দিয়েই বুঝতে হবে। সালাত ৫ ওয়াক্তের ফরয কিন্তু পর্দা প্রতিটা সময়ের ফরয ইবাদাত। সালাতের ত্রুটির জন্য মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন, কারন সালাত ব্যক্তির একান্ত এমন একটি ইবাদাত যা আল্লাহর সাথেই সম্পর্কিত। কিন্তু পর্দা শুধুমাত্র একান্ত নয় এটা একটা সামাজিক বিধান। আপনার পর্দার ত্রুটির জন্য অন্যজন ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, হচ্ছে। আপনার পর্দার ত্রুটির জন্য যদি কোন একজন পুরুষ বা নারীর জীবনে সমস্যা নিয়ে এসে থাকে তাহলে হাসরের মাঠে সেই লেন দেন করতে যেয়ে আপনার আমলের নেক অংশটুকু দিয়ে দিতে হতে পারে। তখন জান্নাত ছেড়ে জাহান্নামের বাসিন্দা হওয়ার দরজা খোলা হয়ে যেতে পারে।
পর্দা সম্পর্কে আপনারা অনেক তথ্য জানেন, তাই সেই বিষয়ে না যেয়ে কিছু বাস্তবমুখী দিক তুলে ধরছি। মনে রাখা প্রয়োজন পর্দা মহান রবের বিধানের আনুগত্যের জন্য যা শারিরীক, আত্মীক, সামাজিক সমন্বয় করে একটি বিধান এবং যে বিধান প্রতিটি মানুষকে নিরাপদ পবিত্র ও সফল জীবনের গ্যারান্টী দেয়।
কিন্তু শয়তান আজ বিভিন্নভাবে নারীকে প্রবোধ দেয় যে –
মনের পর্দাইতো বড়, যারা পর্দা করে তারাতো সংকীর্ন মন, মনটাকে বড় করেন।
আমিতো এতো সুন্দর নই কেউ আমাকে এতো তাকিয়ে দেখে না।
পর্দা করেও যারা প্রেম করে বা অন্য গুনাহের কাজে জড়িয়ে আছে, তার থেকে অনেক ভালো আমি।
এইযুগে এতো কড়াকড়ি করার কথা আসেনি।
বিয়ে হোক বা বয়স হলে হজ্জ করে এসে পর্দা শুরু করবো।
পর্দা করলেতো আমার সাথে কেউ মিশতে চাইবে না, জংগী বলে কটাক্ষ করবে।
সমাজে চলতে গেলেতো এই সমাজের স্রোতের সাথে থাকতে হবে।
আমার ক্যারীয়ারকেতো বাদ দিতে পারি না।
আমার নিজের একটা ষ্ট্যাটাস আছে না।
আমার সংগী পর্দা করে না, আমিও করবো না।
অনেকে আবার সংগীর সাথে জিদ বা রাগ করেও পর্দা থেকে দূরে থাকে।
এতো সুন্দর ড্রেস,শাড়ি, গলার হাড়, কানের দুল, হাতের ব্রেসলেট, বড় বড় নখ রেখে নেইল পলিশ দিয়ে আংটি পড়া ইত্যাদি বাদ কেমন করে দিবো? তাহলে আর এগুলো কেন কিনলাম? মানুষ দেখে যদি বাহবা নাই দিলো!
ঠোঁটে লিপষ্টিক দিয়ে রাংগানো, চোখে সেড, গালে কত রকমের রংগের ছোয়া, স্কীন কত সুন্দর চির যৌবনায় না দেখালে ভাল লাগে?
শয়তান আজ বিভিন্নভাবে পুরুষকে প্রবোধ দেয় যে—
পর্দাতো নারীর জন্য, বেপর্দা নারীর দিকে তাকালে আমার কোন দোষ নেই।
একবার তাকালে গুনাহ নেই, ছোট গুনাহ, সালাত আদায় করলে গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
বিয়ে করার জন্যতো একটু যাচাই করে নিতে হবে, তাই একটু সম্পর্ক করে নেই।
টাইট প্যান্ট না পড়লে ফিগার বুঝা যাবে না, মেয়েরা আকৃষ্ট হবে কেমন করে?
বেশী করে সুগন্ধি দিলে মেয়েরা কাছে আসবে বেশী, পছন্দ করবে।
স্মার্ট হওয়ার জন্যতো চুল কাটা,প্যান্ট মাটিতে লেগে যায়, ফিগার বুঝাতে টাইট গ্যাঞ্জি পড়া, কানে দুল হাতে ব্র্যাসলেট লাগবেই,
অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর এই জীবনের লক্ষ্যই যেন একজন নারীকে বা পুরুষকে আকর্ষন করতে হবে, শয়তান এইভাবেই প্রবোধ দিয়ে চলেছে যুবসমাজকে।
হায়! এই সকল সাময়িক উত্তেজনায় নিয়ে শয়তান কত সহজে একজন ব্যক্তিকে কুপোকাত করে ফেলছে। আর নারী বা পুরুষ একাডেমিক বিভিন্ন রেজাল্ট ভালো করে মনে করছে, আমার অনেক বুদ্ধি, আমি অনেক চালাক, আমি অনেক স্মার্ট। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন- আপনার এই বুদ্ধি দিয়ে শয়তানের চক্রান্ত ধরতে পারছেন না, আপনি আরো সুন্দর পবিত্র স্মার্ট হতে পারতেন যদি মহান রবের পর্দার বিধানে আসতে পারতেন, দুনিয়া ও আখেরাতে মহান রবের পছন্দনীয় ও ভালোবাসার বান্দা হতে পারতেন! অথচ তা না করে আপনি শয়তানের আনুগত্যে, তাকে খুশি করে চলেছেন ও নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছেন যে আমিতো অন্য ভালো কাজ করি, আমিতো শালিনভাবে চলি বা আমিতো চুল একটি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ঢেকে রাখি। কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুনতো, যেই পর্দা মানছেন বলে দাবী করছেন বা যেভাবে শালিনভাবে চলছেন, তা কি মহান রবের আদেশের আনুগত্য করা হচ্ছে? কাকে দেখানোর জন্য, কার চোখে ভালো লাগানোর জন্য, কার কাছে নিজেকে সুন্দরী/সুন্দর আখ্যায়িত হওয়ার জন্য, নিজের সম্মান বিকিয়ে দেহ উপস্থাপন – বলতে পারেন? শয়তানও নারী/পুরুষের এই বেহায়াপনা দেখে হাসে দূর থেকে। খারাপ ছেলেরা/মায়েরাও বন্ধু সেজে মজা করে কিন্তু আড়ালে নোংরা কথা বলে থাকে তা কি জানেন?
যে সমস্ত মডেলি, সিনেমা ও কল্পজগতের মেয়েরা ঠোটে লিপষ্টিক লাগিয়ে, মেক আপ করে বিভিন্ন ভংগিতে নিজেকে স্মার্ট ও অন্যের কাছে মূল্যায়িত হওয়ার জন্য দেহের অনেকাংশ স্পষ্ট করে তুলে ধরে চলে কিন্তু সভ্য পরিবারের মেয়েরাও যদি সেই একই উদ্দেশ্যে একটু অন্যভাবে তুলে ধরে স্মার্ট হতে চায়, তাহলে কি এক কাতারে ফেলা ভুল হবে?
একবারও কি ঐ(শয়তানের ধোকাগুলো) কথাগুলো মনে আসেনা? সাথে সাথে মহান আল্লাহর দেয়া এই সৌন্দর্য ও যোগ্যতা বুদ্ধিমত্তা নেয়ামত নিয়ে কোন পথে চলছি তা মনে আসেনা?
মহান রবের কাছে ফিরে যেতেই হবে, সেটা আবার যেকোন সময়- মনে আসে না?
মহান আল্লাহ আমাদের জন্যই কল্যানের বিধান দিয়ে রেখেছেন, আমাদের ঈমান কি জাগ্রত হয় না? প্রযুক্তি দিয়ে সমাজ উন্নয়ন হবে মহান রব কি জানেন না? মহান রবইতো একই কুরআন ও তাঁর বিধান দিয়ে রেখেছেন কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেকের জন্য, স্থান কাল নির্বিশেষে। নিজের কবরেতো একাই যেতে হবে তাই না। নিজের আমলের শাস্তি বা পুরস্কার নিজেকেই পেতে হবে । কারো সাথে রাগ করে বা কেউ পর্দা না করলেও কি আপনি নিজে আগুনে পুড়ে শাস্তি পেতে চান চিরস্থায়ী জীবনের জন্য!! একটু দুনিয়াতে মানুষের ভালোবাসা না পেয়ে, একটু অবহেলা না পেয়েই অস্থির হয়ে যাচ্ছেন, যিঁনি সব নিয়ামত উজার করে দিয়েছেন তাঁর আনুগত্যে নিজের সুখের জন্য প্রস্তুত হতে পারছেন না?
সম্মান, রিযিক, ভালোবাসা, শান্তি সকল কিছুই মহান আল্লাহই একমাত্র দেয়ার মালিক, তাহলে নিজ রবকে খুশি না রেখে কার জন্য ছুটছেন? দুনিয়াতে মহান আল্লাহ সবাইকেই রিযিক দিবেন কিন্তু মৃত্যুর সময় থেকে চিরস্থায়ী ফয়সালা পর্যন্ত ব্যক্তির একান্তই নিজের আমলের অবস্থায় উপর নির্ভর করেই কঠিন ও সহজ কোন একটি অবস্থা হবে।
সমাজ সংসার কি কবরের জীবনে আমাকে মুক্তি দিতে পারবে?
শুধুমাত্র বাংলা ইংরেজী ও বিজ্ঞানে ভালো করলাম কিন্তু অংকে ফেল তাহলে কি পরীক্ষায় পাশ হবে? যদি না হয় তাহলে কিভাবে ফরয ইবাদাত পর্দা বাদ দিয়ে অন্য ফরয আদায় করে জীবন পরীক্ষায় পাশ হবে?
যারা আখেরাতকে ভুলে যেয়ে শুধুমাত্র দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সকল প্রচেষ্টার পরও দুনিয়ার ক্যারীয়ার অর্জন করতে পারেনি তাদের দেখে কি মনে হয়?
রাসূল স.মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু হয়েও পরীক্ষা দিয়েই নিজ জীবনের দিনগুলো পার করেছেন, তাহলে উম্মত হয়ে দীনের পথে থাকার জন্য সামান্য মুখের কথা ও দুনিয়ার সাময়িক কষ্ট সহ্য করতে পারবো না?
শয়তানের মূল চ্যালেঞ্জ হলো জাহান্নামে যাওয়ার জন্য ব্যক্তির যেকোন একটি আমল করতে সহযোগীতা করা। বাকী কাজগুলো সুন্দর করে রাখে। শয়তানের চক্রান্ত বুঝতে হবে। মহান আল্লাহতো পরীক্ষা করবেনই। কোন সময় প্রতিকূল অবস্থা কখনো অনুকূল অবস্থা দিয়ে। সকল কিছুর উর্ধ্বে মহান রবের আনুগত্যেই নিজেকে সার্বক্ষনিক রাখাই বান্দার কাজ। শয়তান যেন প্রবঞ্চিত করতে না পারে সে ব্যপারে সচেতন থাকতে হবে।
এমন যেন না হয় জান্নাতের উপযোগী হওয়ার এক হাত বাকী তখনি যেকোন কারনেই হোক জাহান্নামের পথে চলে যাওয়ার কাজে জড়িয়ে গেলেন, তাই এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ক্ষনস্থায়ী এই দুনিয়ার জীবনে নিজের কবর ও আখেরাতের কথাই অগ্রা্ধিকার দিতে হবে। যার যার আমল নিয়ে সে কবরে যাবে। কেউ কারো বোঝা বহন বা সাফাই পর্যন্ত গাইবে না। অন্যকে দোষারোপ করেও নিজ আমল না করার অন্যায় থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। তাহলে কেনো সময় নষ্ট করা?
আবার আত্মাটা যখন দেহ থেকে বের হয়ে যাবে তখন কিন্তু লাশ নামে অভিহিত হয়ে পর্দায় (সাদা কাফনের কাপড়ে) জড়িয়ে কবরে নামানো হবে, জীবিত অবস্থায় আমল করলে নিজের জন্য ফরয ইবাদাত করার ও মহান রবের আনুগত্য করার রেকর্ড থাকতো কিন্তু লাশ হয়ে যাবার পর সেই শরীরকে ঢেকে রাখার আমল অন্যদের উপর যারা জীবিত। সুতরাং কবরের জীবনে ও আখেরাতে জীবনের সেই সময়গুলোতে কিন্তু পিতা –মাতা, স্বামী- সন্তান, ভাই -বোন বা দুনিয়ার অনেক তথাকথিত শুভাকাঙ্খীরা যারা পর্দা করতে নিষেধ করতো বা নানা কথা দিয়ে উত্যক্ত করতো বা আমল করা থেকে দূরে রাখতো, দুনিয়ার কোন সার্টিফিকেট বা সেলিব্রেটির উদ্যোক্তা এরা কেউ আর আপনার হয়ে সাফাই গাবে না বা জবাবদিহী করবে না, তাহলে কেনো আমরা মহান আল্লাহর দেয়া বিধানকে, রবের খুশির জন্য, নিজের মুক্তির জন্য এখনই নিজের জীবনে প্রতিফলন করবো না!!! এই রামাদান আসার আগে চলুন আমরা নিজেদের এই অবস্থানকে উন্নত করি। তাওবা করে নিজে পর্দার সঠিক আমলে প্রবেশ করি। আল্লাহ আমাদের শক্তিশালী মুমিন/মুমিনা হওয়ার তাওফিক দান করুন।