রজব থেকে রামাদান ডায়েরী-৭ (রামাদান আত্মশুদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের মাস)

আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করি।

রামাদান মাসে তাকওয়ার মাধ্যমেই নিজেকে সংশোধন করে মহান আল্লাহ তা’লার কাছে প্রিয় বান্দা হিসেবে চিহ্নিত লাভের সুযোগ লাভ।

আল্লাহ তা’লা বলেছেন:

কিন্তু তিনি সকলকেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। পরে যখন সেই সময় এসে উপস্থিত হয় তখন তার একমুহুর্ত আগে পরে হতে পারে না।   সূরা আন নাহল: ৬১

আমাদের জীবনের যে কোন সময় ‘সেই সময়’ অর্থাৎ মৃত্যুর ফেরেশতা চলে আসবেন এবং একটু সময়ও এদিক সেদিক হবে না। তাই তাড়াতাড়ি আমাদের আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন। অবকাশকে আমরা যেন হেলা করে নষ্ট না করে ফেলি, এই সুযোগ আমাদের আমল সুন্দর করার জন্য। অনেকে আগামী দিন করবো, আস্তে আস্তে আল্লাহর দিকে এগুবো ইত্যাদি অনেক কথা বলি যা নিজের জন্য খুব সংকটপূর্ণ, আগামী দিন বা পরে এই সময়টুকু নাও পেতে পারি!!

তোমার আল্লাহকে ডাকো, কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে, চুপে চুপে। নিশ্চিতই তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, যখন তার সংশোধন ও সুস্থতা বিধান করা হয়েছে। এবং আল্লাহকে ডাকো ভয় সহকারে এবং আশান্বিত হয়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত নেক চরিত্রের লোকদের অতি নিকটে।     সূরা আল আরাফ: ৫৫-৫৬

আমাদের আত্মশুদ্ধি কতটা প্রয়োজন উপরের আয়াত থেকে বুঝা যায়। এই মাসগুলো আমাদের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ। রামাদান মাস শুরুর আগেই যদি নিজেদের সাওম নষ্ট করে এমন কাজগুলো থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারি, তাহলে আমাদের এই সময়ে ইবাদাতগুলো আরো সুন্দর হবে ইনশা’আল্লাহ।

আর সফলকাম হবে ঐ সব লোক যারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম পালন করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী হতে দূরে থাকে।   সূরা আন নূর: ৫২

রামাদান মাস সারা বিশ্বের মুসলমানদের একযোগে ভালো কাজের প্রতিযোগিতার মাস। এই সময়ে বুঝা যায় যে সকল মুসলিম জাতি এক মহান আল্লাহ তা’লার রজ্জুকে একসাথে ধারন করেছে। এই শিক্ষাকেও আমাদের মাঝে নিয়ে আসতে হবে যে রামাদান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসেও আমরা সারা বিশ্বের মুসলিমরা সবাই একসাথে  অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে এবং সমাজ সংস্কারের কাজে সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ভূমিকা রাখবো ইনশা’আল্লাহ।

মহান আল্লাহ তা’লার যমীনে এইভাবে একসাথে ইসলামের সৌন্দর্য ও শান্তির ছোঁয়া মুসলিম অমুসলিম সবাইকেই জানতে ও বুঝতে দিবো।

মানুষের মাঝে ৩টি জিনিসের দাবী থাকে —

১। ক্ষুন্নিবৃত্তির দাবী (জীবন রক্ষার জন্য)

২। যৌন আবেগের দাবী

৩। শান্তি ও বিশ্রাম গ্রহণের দাবী

ইসলাম হলো মুসলমানের ৫ স্তম্ভ বিশিষ্ট ঘর। রোযা বা সাওম হলো ৩য় স্তম্ভ।

সিয়াম বা রোযার আভিধানিক অর্থ – বিরত রাখা, আবদ্ধ রাখা।

পারিভাষিক অর্থ – নিয়তের সাথে সুব্‌হে সাদেক (ফজরের ওয়াক্তের প্রথম) হতে সুর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সব ধরনের রোযা ভংগকারী যেমন পানাহার, জৈবিক ও শারীরিক কোনো কিছু ভোগ করা থেকে বিরত থাকা।

রামাদান অর্থ পুড়িয়ে ফেলা অর্থাৎ রোযা গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়।

রোযা মানুষের আত্ম-সংযমের শক্তি সৃষ্টি করে, মানুষের খুদী বা আত্মজ্ঞান যখন দেহ ও অন্যান্য শক্তিসমূহকে পরিপুর্ণভাবে আয়ত্তাধীন করে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিজের রুহের অধীন করে তখনই আত্মসংযম হয়। রোযার মাস আমাদের ট্রেনিং দেয় কিভাবে এই আত্মসংযম লাভ করা যায়। এই মাসে আমরা প্রত্যেকের অন্তরের অবস্থান যাচাই করতে পারি। কিভাবে! চলুন জানার ও বুঝার চেষ্টা করি।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. বলেছেন, রমযান মাস শুরু হলে আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শিকলে বন্দী করা হয়।

সহীহ আল বুখারী: ১৭৬৪

এখানে অনেকে বলেন, তাহলে মানুষ রামাদান মাসে খারাপ কাজ করে কেন? এখানেই অন্তর যাচাই করার উত্তর চলে আসে।

মানুষ খারাপ কাজ করে কারণ:

  • জীন শয়তান ওয়াদা করেছে মানুষকে জাহান্নামে নিবেই আর তাই সে নানা ভাবে প্রলুদ্ধ করে।
  • অথবা মানুষের ভেতর নফ্‌সে আম্মারা (সব সময় খারাপ দিকে যেতে চায়) ও নফসে লাওয়ামা (দ্বিধাগ্রস্ত অন্তর) খারাপ কাজের দিকে আহবান করে
  • অথবা মানুষের মধ্যেও প্ররোচনাকারী আছে যারা খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

আর তাই আল্লাহ তা’লা সুরা নাসের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার জন্য।

বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রতিপালক,  মানুষের মালিক,  মানুষের প্রকৃত উপাস্যের কাছে। এমন প্ররোচনা দানকারীর অনিষ্ট থেকে  যে বারবার ফিরে আসে, যে মানুষের মনে প্ররোচনা দান করে, সে জিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে ৷           সূরা আন নাস

তাহলে দেখা যাচ্ছে রামাদান মাসের চাঁদ দেখার পর শয়তান কাছে আসে না, আসে বাকী দু’টি মাধ্যম যারা খারাপ কাজ করায়। আর আমার আপনার মন যদি রাজী না হয় কেউ জোর করে খারাপ কাজ কতটুক করাতে পারবে?

তাহলে এই মন বা অন্তর (নফ্‌স) আমাদের কোন অবস্থানে আছে তা এই রামাদান মাসে সহজে বুঝা যায়। নফ্‌সে মুতমায়ীন (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে অন্তর সর্বক্ষণ প্রস্তুত) নাকি নফ্‌সে লাওয়ামা (দ্বিধাগ্রস্ত অন্তর) নাকি নফ্‌সে আম্মারা (সব সময় খারাপ দিকে যেতে চায়) এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে ট্রেনিং দেয়ার উপযুক্ত সময় হলো এই রামাদান মাস এবং এই ট্রেনিং নিয়ে বাকী এগারো মাস বাস্তব অনুশীলন করতে হবে।

এই অন্তর ঠিক রাখতে পারলে অর্থাৎ মুতমায়ীন অবস্থায় যাওয়াটা হলো রোযার স্বার্থকতা। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:

হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এসো (তোমার ভালো পরিণতির জন্য) সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে; আমার বান্দাহদের মধ্যে শামিল হও এবং প্রবেশ করো জান্নাতে।   সূরা আল ফজর: ২৭-৩০

সাওম কিভাবে আত্মশুদ্ধি এনে দেয়

রোযা রেখে আমরা ভালো কাজ করবো, নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকবো আল্লাহর ভয়ে ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার লক্ষ্যে। একটি ছোট সন্তানও রোযা রেখে  লুকিয়ে কিছু খেয়ে ফেলে না, পানি দিয়ে কুলি করলে, খুব সাবধানে করে যেন রোযা নষ্ট না হয়ে যায় – এইটি হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। অন্যান্য খারাপ কাজ থেকেও দূরে থাকতে হবে – তা না হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে, এইভাবেই আত্মশুদ্ধি এনে দিতে পারে একজন ঈমানদারকে।

রাসূল সা. বলেছেন:

(রোযা থেকেও) কেউ যদি মিথ্যা কথা বলা ও তদনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় (রোযা রাখায়) আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।  সহীহ আল বুখারী: ১৭৬৮

রাসূল সা. বলেছেন: তোমরা অবশ্যই সত্য অবলম্বন করবে। কেননা সততা মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোন মানুষ সদা সত্য কথা বলতে থাকলে এবং সত্যের প্রতি মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। তোমরা অবশ্যই মিথ্যা পরিহার করবে। কেননা মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কোন বান্দা সদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুঁকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর দরবারে ডাহা মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। 

আল জামে আত তিরমিযী: ১৯২১

কোন বান্দা যখন মিথ্যা কথা বলে তখন তার মিথ্যা কথনের দুর্গন্ধের কারনে ফেরেশতা একমাইল (বা দৃষ্টিসীমার বাইরে) দূরে সরে যায়।  আল জামে আত তিরমিযী: ১৯২২

তাই সাওম রেখে এইভাবে হাদীসের অনুসরনের মাধ্যমে মানুষের মাঝ থেকে মিথ্যা চলে গেলেই সে নিজেকে সুন্দরের দিকে এগিয়ে নিলো।  সমাজে এতো প্রতারনাও থাকতো না। সুস্থ ও সুন্দর একটি সমাজ আমরা লাভ করতে পারি।

  • প্রত্যেক জিনিষের যাকাত বা পরিশুদ্ধি আছে। শরীরের পরিশুদ্ধি হচ্ছে রোযা। রোযা সবরের অর্ধেক।  ইবনে মাজা

সাওম বা রোযা হলো আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য অবলম্বন,আল্লাহ কর্তৃক হারাম বস্তুসমূহ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে  ধৈর্য অবলম্বন, দেহ ও মনের দুর্বলতা এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মতো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান পালনে ধৈর্য ধারন করা।

  • পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রামাদান থেকে আরেক রামাদান মধ্যবর্তী সময়ের সগীরাহ গুনাহের ক্ষতিপূরন হবে যদি কবীরা গুনাহ না করা হয়।  সহীহ মুসলিম
  • রাসূল সা. বলেছেন, সিয়াম ঢাল স্বরূপ যার দ্বারা সিয়াম পালনকারী নিজেকে জাহান্নাম হতে বাঁচাতে পারে।   মুসনাদে আহমাদ: ১৫২৬৫
  • তোমাদের কেউ রোযা রাখলে সে যেন গুনাহ, অজ্ঞতা ও জাহেলিয়াতের কাজ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে লড়তে আসে সে যেন বলে দেয়, আমি রোযা রেখেছি, আমি রোযাদার।
  • সহীহ আল বুখারী
  • গীবত বা পরচর্চা থেকে দূরে রাখে

হে ঈমানদাগণ! বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো, কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গুনাহ। দোষ অন্বেষন করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশ্‌ত খাওয়া পছন্দ করবে?  দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু।    সূরা আল হুজুরাত: ১২

  • কাউকে উপহাস করা থেকে বিরত থাকা

হে ঈমানদারগণ! পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে বিদ্রূপ করো না। এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর গুনাহর কাজে প্রসিদ্ধি লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার। যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই জালেম।       সূরা আল হুজুরাত: ১১

  • বেহুদা কাজ বা কোন কল্যান নেই এমন কাজে সময় দেয়া থেকে বিরত রাখে –

নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা – যারা নিজেদের নামাযে বিনয়াবনত হয়,বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে, যাকাতের পথে সক্রিয় থাকে।

সূরা আল মু’মিনুন: ১-৪

মানুষের মধ্যে সারাদিন না খেয়ে থাকা আত্মসংযমের মূল্যবান গুণ সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে যে কল্যাণ আসে তা হলো:

  • অতি ভোজন থেকে দূরে রাখা।
  • ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট অনুভব করা।
  • পেটের গোলযোগ ও কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর হয় ও হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়।
  • ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • পেপ্টিক আলসারের ব্যাথা কমায় ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
  • বিভিন্ন রোগ থেকে হেফাজত করে: এলার্জি ও চর্মরোগ, সর্দি-কাশি হাপানি, বাত রোগ।
  • অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হয়।
  • কোলেষ্টেরল কমায়ঃ স্নায়ু সতেজ ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।

রাসূল সা. বলেছেন: মানুষ পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোন পাত্র ভর্তি করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখার জন্য কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও যদি বেশী দরকার হয় তবে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।              আল জামে আত তিরমিযী: ২৩২১

জনৈক ব্যক্তি রাসূল সা.এর সামনে ঢেকুর (belching) তুলল। তিনি বলেন: আমাদের থেকে তোমার ঢেকুর বন্ধ কর। কেননা দুনিয়াতে যারা বেশী পরিতৃপ্ত হবে কিয়ামতের দিন তারাই সবচেয়ে বেশী ক্ষুধার্ত থাকবে।

আল জামে আত তিরমিযী: ২৪২০

রাসূল সা. বলেছেন: মুসলমান একটি উদরপূর্ণ করে খায়। আর কাফের খায় সাতটি উদরপূর্ণ করে।          সহীহ আল বুখারী: ৪৯৯৫

  • যেনার কাজের গুনাহ থেকে দূরে রাখে

রাসূল সা. বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তার বিয়ে করা উচিত। কেননা বিয়ে চোখকে অবনতকারী ও গুপ্তাঙ্গের হেফাযতকারী। আর যে বিয়ে করতে সামর্থ নয় তার রোযা রাখা অবশ্য কর্তব্য। কেননা রোযা যৌন তাড়নাকে অবদমিত রাখে।          সহীহ আল বুখারী: ১৭৭০

এখানে এই হাদীস থেকে বুঝা যায় রোযা মানুষের জৈবিক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রন করে।

জৈবিক চাহিদাকে আজকের সমাজে শয়তান একটি বড় অস্ত্র হিসাবে নিয়েছে যা দ্বারা আমাদের যুবক-যুবতী এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অর্থাৎ সববয়সের মানুষদের নানাভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এরই মাধ্যমে মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবেই – শয়তানের এই ওয়াদার বাস্তবায়ন করছে।  অনেকে না বুঝে এই ফাঁদে পড়ে হিমসিম খাচ্ছে। আর এই অবস্থায় দেখা যায় ব্যক্তিগত ইবাদতেও স্বাদ পায় না এবং মনযোগ দিতে পারে না। কোরআনের কথা মনকে স্পর্শ করে না।

নবী সা. বলেছেন: আল্লাহ তা’লা আদম সন্তানের জন্য যেনার একটি অংশ লিখে দিয়েছেন যা সে অনিবার্যরূপে করে থাকে। সুতরাং চোখের যেনা হলো দর্শন এবং মুখের যেনা হলো বাক্যালাপ। অতঃপর মন আকাঙ্ক্ষা করে এবং যৌনাংগ তা সত্য বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।         সহীহ আল বুখারী: ৫৮০১

হে নবী! আপনি মু’মিন পুরুষদেরকে বলুন: তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং  নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।        সূরা আন নূর: ৩০

হে নবী! আপনি মু’মিন নারীদেরকে বলুন: তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।           সূরা আন নূর: ৩১

আজকাল কম্পিউটারে ও মোবাইলে যেভাবে অশ্লীল ছবি গান, মুভিসহ ফেসবুকে বসে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলছে গায়ের মাহরামদের সাথে  যা আজ আমাদের যুব সমাজ সহ বয়স্ক অনেকেই হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ছেন ফলে এই দুনিয়ার জীবনেও সংসার ও সমাজ ব্যবস্থাকে কলুসিত করছে এবং এদের জন্য আখেরাতে রয়েছে ভয়ানক আযাব। অনেকে ঘরে বসে টিভিতে যেভাবে অশ্লীল ছবি গান নাচ দেখে অভ্যস্ত, তাতে এই চোখ হাশরের মাঠে কি সাক্ষী দিবে তা চিন্তা করা উচিত। আর এই গুনাহের কাজে থাকা অবস্থায় যদি মৃত্যুর ফেরেশতা আসেন জান কবয করতে তাহলে তার অবস্থা কোথায় হবে যা ভাবলেই গা ভয়ে শিউরে উঠে। এই জীবনের পরিধি যেখানে নির্দিষ্ট করা নেই, যে কোন অবস্থায় আমার-আপনার কবরে যাওয়ার ঘন্টা বেজে উঠতে পারে সেখানে প্রতিটা সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

আবার অনেকে ইসলামের দাওয়াতের কাজ করার নিয়্যতে বিভিন্ন ব্লগ বা ফেসবুকে সময় দেন কিন্তু দেখা যায় শরীয়তের নিয়ম না মানার কারণে বিপরীত লিংগের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে অবাধ যোগাযোগ করছেন। ফলে দেখা যায় এরা মত প্রকাশের বিভিন্ন ভঙ্গিমা নিয়েই আনন্দ লাভে ব্যস্ত হয়ে যান। ফলে এরা যেনার কাছেও চলে যাচ্ছেন যা নিজেরাও বুঝতে অক্ষম। এইভাবে শয়তান অনেককেই ফাঁদে ফেলে জাহান্নামী বানানোর সুযোগ নিচ্ছে। শরীয়তের সীমার বাইরে কখনোই দীনের কাজ হয় না এবং সেটা মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য না। সাওম সেই তাকওয়া এনে দেয় যা এইসব গুনাহ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে ব্যক্তিকে। আমাদের রাসূল সা.এর জীবনকে আদর্শ হিসেবে নিতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেছেন:

নিশ্চয়ই শ্রবণ, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।         সূরা বনী ইসরাঈল: ৩৬

চোখের চুরি ও অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন।                   সূরা আল মু’মিন: ১৯

উপরের হাদীস ও কুরআনের আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারছি আল্লাহ কত সুন্দরভাবে মানুষ, পরিবার তথা সমাজ গড়ার পথ দেখিয়েছেন। এইভাবে প্রত্যেক নারী-পুরুষ যদি যার যার অবস্থানে থেকে শরীয়াত মেনে চলেন তবে কত সুন্দর হতো এক একটি পরিবার!