সূরা আন নাযিয়াত-২ সংক্ষিপ্ত তাফসীর

পবিত্র কুর’আনের ৭৯তম সূরা যেখানে আয়াত ৪৬ ও রুকু-২টি। নাযিয়াত শব্দের অর্থ কঠোরভাবে উৎপাটনকারী। রাসূল স.এর মক্কী জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে নাযিল হয়েছে।

সূরা নাবাতে শেষ হয়েছে যে বিষয়কে স্মরন করিয়ে দিয়ে, এখানে সেই বিষয় দিয়েই শুরু করা হয়েছে। অর্থাৎ পরকাল ও আখেরাতের বিষয়ের প্রমানাদি উল্লেখ পূর্বক মহান আল্লাহর পাঠানো রাসূলদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা ও মিথ্যা সাব্যস্থ করার কঠোর পরিনতি উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও তাফসিরকারদের মাঝে অনেক মতামত পাওয়া যায় তবু বেশী গ্রহনযোগ্য হলো মহান আল্লাহ এখানে বিভিন্ন রকম কর্মে নিয়োজিত ফেরেশতাদের কাজের কসম করে বলেছেন যা প্রথম সারির কিছু সাহাবা ও তাবেঈনদের বর্ননার আলোকে উল্লেখ হয়েছে।

কাফেররা ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করতো তবে বলতো আল্লাহর কন্যা(নায়যুবিল্লাহ)। যেই ফেরেশতারা রুহ বের করার কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে মহান রবের আনুগত্যে সদা অটল থাকেন,তারাই মহান রবের হুকুমে এই দুনিয়া ধ্বংস করার শিংগা ফু দিবেন এবং আবার আখেরাতে রুহ ফুঁকে দিবেন প্রতিটি ব্যক্তিকেই। মোট ৫ ধরনের কাজের সাথে নিয়োজিত ফেরেশতাদের কসম করা হয়েছে।

এখানে প্রথম ও ২য় শিংগা ফুকের উল্লেখ এসেছে। মহান আল্লাহ জানিয়েছেন–

তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে। পৃথিবী তার পালনকর্তার নূরে উদ্ভাসিত হবে, আমলনামা স্থাপন করা হবে, পয়গম্বরগণ ও সাক্ষীগণকে আনা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে-তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। প্রত্যেকে যা করেছে, তার পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। তারা যা কিছু করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। সূরা যুমারঃ ৬৭-৭০

আখেরাতের সেই ভয়াবহ অবস্থায় কাফের, নাফরমান, মুনাফিক,ফাসেকরা অস্থির হয়ে যাবে কিন্তু কিছ অন্তর পেরেশান হবেনা তারা হলেন সৎ মুমিন ব্যক্তিরা কারন মহান আল্লাহ বলেছেন-

মহা ত্রাস তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা করবেঃ আজ তোমাদের দিন, যে দিনের ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে। সূরা আম্বিয়াঃ১০৩-১০৪

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে। এমনকি এর দুরত্ব এক মাইল পরিমাণ হবে। এ সম্পর্কে সুলাইম ইবনে আমের বলেন, আল্লাহর শপথ! মাইল বলতে এখানে কোন মাইল তিনি বুঝিয়েছেন আমি তা জানি না। জমির দূরত্ব পরিমাপের মাইল বুঝিয়েছেন, না সুরমাদানির মাইল (শলাকা) বুঝিয়েছেন? মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে থাকবে। কারো ঘাম হবে পায়ের গিরা বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে হাটু বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে কোমর বরাবর। আবার কারো ঘামের পরিমাণ হবে তার মুখ বরাবর। (বর্ণনায়: মুসলিম ২১৯৬)

কেয়ামতের এ কঠিন দিনের মুখোমুখী হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ-কে ভয় করা দরকার। সকল বিষয়ে আল্লাহ-কে ভয় করে সাবধানতার সাথে পথ চলি আপুরা। দুনিয়ার জীবনে একবার ব্যর্থ হলে তা কাটিয়ে উঠা যায়। কিন্তু কেয়ামতের সময়ের ব্যর্থতার কোন প্রতিকার নেই। কাজেই এখন থেকেই নিজের আমলের হিসাব নিজে করতে থাকি।

 

সূরা নাযিয়াতে হযরত মূসা আ. ও ফেরাউনের কাহিনীর কিছু তুলে ধরেছেন যেন কাফের মুশরিক ও সংশয়বাদীদেরকে রাসূল স.এর সাথে তাদের আচরন ও আল্লাহদ্রোহীতার পরিণাম সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।

এখানে পবিত্র তুওয়া (طُوًى) উপত্যকায় মহান আল্লাহ মূসা আ.কে সম্বোধন করেছিলেন।

এখানে তুওয়া শব্দটি দিয়ে কয়েকটি অর্থ হতে পারে বলে মুফাসসিররা বর্ননা করেছেন।

১। সেই উপত্যকাটি যা দুবার পবিত্র করা হয়েছে কারন মূসা আ. কে দুবার এখানে পবিত্রতার মর্যাদায় ভূষিত করেন।

২। আল্লাহ তা’আলা রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করার পর মূসা আ.কে সম্বোধন করেন।

মূসা আ.কে নবুয়্যতের দায়িত্ব দেয়ার সময় মহান আল্লাহর সাথে যে কথোপকথন হয়েছে তা এই সূরা সহ বিভিন্ন সূরায় উল্লেখ আছে। আমরা একটু দেখি কিভাবে মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধিকে দায়িত্ব দেয়ার প্রাক্কালে উপস্থাপন করেছেন-

 

“অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌছলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মূসা,

আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ।     এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক। আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।

কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে।সুতরাং যে ব্যক্তি কেয়ামতে বিশ্বাস রাখে না এবং নিজ খাহেশের অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তা থেকে নিবৃত্ত না করে। নিবৃত্ত হলে তুমি ধবংস হয়ে যাবে।

হে মূসা, তোমার ডানহাতে ওটা কি?

তিনি বললেনঃ এটা আমার লাঠি, আমি এর উপর ভর দেই এবং এর দ্বারা আমার ছাগপালের জন্যে বৃক্ষপত্র ঝেড়ে ফেলি এবং এতে আমার অন্যান্য কাজ ও চলে।

আল্লাহ বললেনঃ হে মূসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর।

অতঃপর তিনি তা নিক্ষেপ করলেন, অমনি তা সাপ হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগল।

আল্লাহ বললেনঃ তুমি তাকে ধর এবং ভয় করো না, আমি এখনি একে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব।    তোমার হাত বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অন্য এক নিদর্শন রূপে; কোন দোষ ছাড়াই।এটা এজন্যে যে, আমি আমার বিরাট নিদর্শনাবলীর কিছু তোমাকে দেখাই। ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে।

قَالَ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي

وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي

وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي

يَفْقَهُوا قَوْلِي

وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي

মূসা বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন।

এবং আমার কাজ সহজ করে দিন।

এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন।

যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।

এবং আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে আমার একজন সাহায্যকারী করে দিন।

আমার ভাই হারুনকে। তার মাধ্যমে আমার কোমর মজবুত করুন।এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন।যাতে আমরা বেশী করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করতে পারি।    এবং বেশী পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি। আপনি তো আমাদের অবস্থা সবই দেখছেন।

আল্লাহ বললেনঃ হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হল।

আমি তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।

যখন আমি তোমার মাতাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যা অতঃপর বর্ণিত হচ্ছে।

যে, তুমি (মূসাকে) সিন্দুকে রাখ, অতঃপর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, অতঃপর দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেবে। তাকে আমার শক্র ও তার শক্র উঠিয়ে নেবে। আমি তোমার প্রতি মহব্বত সঞ্চারিত করেছিলাম আমার নিজের পক্ষ থেকে, যাতে তুমি আমার দৃষ্টির সামনে প্রতি পালিত হও। যখন তোমার ভগিনী এসে বললঃ আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব কে তাকে লালন পালন করবে। অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মাতার কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু শীতল হয় এবং দুঃখ না পায়। তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, অতঃপর আমি তোমাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেই; আমি তোমাকে অনেক পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ান বাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছিলে; হে মূসা, অতঃপর তুমি নির্ধারিত সময়ে এসেছ।

এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য তৈরী করে নিয়েছি। তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলীসহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না। তোমরা উভয়ে ফেরআউনের কাছে যাও সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে।       অতঃপর তোমরা তাকে নম্র কথা বল, হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে।

তারা বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আশঙ্কা করি যে, সে আমাদের প্রতি জুলুম করবে কিংবা উত্তেজিত হয়ে উঠবে।

আল্লাহ বললেনঃ তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি শুনি ও দেখি।অতএব তোমরা তার কাছে যাও এবং বলঃ আমরা উভয়েই তোমার পালনকর্তার প্রেরিত রসূল, অতএব আমাদের সাথে বনী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে নিপীড়ন করো না। আমরা তোমার পালনকর্তার কাছ থেকে নিদর্শন নিয়ে তোমার কাছে আগমন করেছি। এবং যে সৎপথ অনুসরণ করে, তার প্রতি শান্তি। আমরা ওহী লাভ করেছি যে, যে ব্যক্তি মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার উপর আযাব পড়বে।     সূরা তোয়াহাঃ ৯-৪৮

আরো জানতে যেতে পারেন সূরা শূয়ারা (১০-১৭), সূরা নমল(৭-১২) কাসাস(২৯-৩৫) নং আয়াতে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

একজন পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে কিভাবে সত্যের পথে দাওয়াত দিতে হয় তার পদ্ধতি জানা যায়। যেমন—

১।  নিজে আগে মহান রবের জন্য তৈরী হয়ে যেতে হবে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য আমরা যখন গ্রহন করা ও ত্যাগ করাকে নির্দিষ্ট করে হকের পথে ইস্তিকামাত হতে পারবো তখনই  আমাদের আহবানে, যাকে চাচ্ছি সঠিক পথে আসার,তার অন্তরেগ্রহনীয় ভাব আসতে পারবে মহান আল্লাহর ইচ্ছায়। এবং এরপর খুব নম্র ভাষায় বলতে হবে। আমরা অনেকেই বাইরের মানুষকে বলার ক্ষেত্রে যদিও নম্রতা অবলম্বন করে থাকি কিন্তু দেখা যায় খুব আপনজন পরিবারের সদস্যদের বেলায় সেই পরিমান সবরের সাথে নম্র আচরন থাকে না, অথচ পরিবারের হক আরো বেশী। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে রাসূলের স.চরিত্রের আদর্শের অনুসরনের মাধ্যমে।

“এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য তৈরী করে নিয়েছি। তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলীসহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না। তোমরা উভয়ে ফেরআউনের কাছে যাও সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে।       অতঃপর তোমরা তাকে নম্র কথা বল, হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে”। সূরা তোয়াহাঃ ৪৪

২।  এই পর্যায়ে দাওয়াতের প্রথম কথাই হবে মহান রবকে পরিচয় করে দেয়া অর্থাৎ তাওহীদের দাওয়াত। এখানেও আমরা ব্যক্তি ও সমাজে দাওয়ার ক্ষেত্রে  ভুল পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। যেমন আমরা তাওহীদের মূল পরিচয় না তুলে ধরে সালাত বা পর্দা বা দাঁড়ি রাখা ইত্যাদি নিয়ে জোর-জবরদস্তি শুরু করে দেই। মহান রবের পরিচয় যত বেশী তুলে ধরতে পারবো ততবেশী তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও শাস্তির ভয় আসবে যা হুকুম আহকাম মানতে ও নিষেধ থেকে দূরে রাখতে সহজ করে দিবে। তাই বাস্তবতায় মহান রবের পরিচয় তুলে ধরাই হবে আমাদের প্রাথমিক ও মূল কাজ।

“ ফেরাউন বলল, বিশ্বজগতের পালনকর্তা আবার কি?

মূসা বলল, তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।

ফেরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, তোমরা কি শুনছ না?

মূসা বলল, তিনি তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরও পালনকর্তা।

ফেরাউন বলল, তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের রসূলটি নিশ্চয়ই বদ্ধ পাগল।

মূসা বলল, তিনি পূর্ব, পশ্চিম ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর পালনকর্তা, যদি তোমরা বোঝ। সূরা শোয়ারাঃ ২৩-২৮

৩।  এই পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে হক পথে আসা না আসার পরিনতি সম্পর্কে। আখেরাতের জীবনকে তুলে ধরতে হবে স্পষ্ট করে। ছোট থেকেই ব্যক্তি যেন বুঝতে পারে এই দুনিয়ার জীবনে মুসাফিরের মতো যেখান থেকে নিয়ে যেতে হবে চিরস্থায়ী আখেরাতের জীবনের সফলতা।

“মূসা বলল, আমার পালনকর্তা সম্যক জানেন যে তার নিকট থেকে হেদায়েতের কথা নিয়ে আগমন করেছে এবং যে প্রাপ্ত হবে পরকালের গৃহ। নিশ্চয় জালেমরা সফলকাম হবে না”। সূরা কাসাসঃ ৩৭

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে যার যার অবস্থানে নিজেকে মহান রবের দরবারে খালেস আত্মসমর্পনকারী আমলদার হওয়ার ও তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে দীনের আহবান জানানোর তাওফিক দান করুন।

হকের পথে আহবানের পদ্ধতি- (তাওহীদ,রিসালাত ও আখেরাতের মূল জ্ঞান থাকা)

১। নিজেকে মহান রবের ও রাসূল স.এর পথে আত্মসমর্পনকারী হতে হবে।

২। তাওহীদের মূল পরিচয় বাস্তবতার আলোকে তুলে ধরতে হবে।

৩। দুনিয়ার জীবনের তুলনায় স্থায়ী আখেরাতের  জীবনের প্রাধান্য তুলে ধরতে হবে।

 

  • কিয়ামত ও আখেরাত তথা মৃত্যু পরবর্তী জীবন যে অবশ্যই সংঘটিত হবে এবং দুনিয়ার জীবনের পরিবেশ পরিস্থিতির অনিবার্য দাবী তা যুক্তি সহকারে তুলে ধরেছেন মহান আল্লাহ।

এটাতো খুব সহজ একটি বিষয় যা না বুঝার কোন কারন নেই তা হলো যেকোন জিনিষ প্রথম বানানো যতটা কঠিন ঠিক ততটাই সহজ হয়ে যায় বা তার চেয়েও সহজ হয়ে ২য়বার একই জিনিষ বানানো।মহান আল্লাহ বলেছেন-

যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’তখনই তা হয়ে যায়। অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। সূরা ইয়াসিন: ৮১-৮৩

মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না। সূরা মু’মিন: ৫৭

  • মহান আল্লাহ দুনিয়ার জীবনের প্রাকৃতিক সব উপাদানকে এতো সুন্দর সঠিক ও ভারসাম্য করে সাজিয়ে দিয়েছেন এবং মানুষসহ সকল প্রানীর জন্যই প্রয়োজনীয় উপাদান দিয়ে দিয়েছেন। যিনি এই গুলো দিয়েছেন তিনিইতো আবার এইগুলোকে ধ্বংস করে নতুন একটি ময়দান করবেন যেখানে সকলে উঠে আসবে জবাবদিহীর জন্য।
  • দুনিয়ার সকল প্রাকৃ্তিক অবস্থা ঘটনা যেভাবে নিয়মতান্ত্রিক সুগঠিতভাবে হচ্ছে ও চলছে তা মহাবিজ্ঞ এক প্রতাপশালী দয়াময় সৃষ্টিকর্তার পক্ষেই সম্ভব। মহান রবের দেয়া ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে মানুষ আজ ইলেকট্রনিক / ডিজিটাল জগতে যা আবিষ্কার করছে তা দিয়ে যেমন কিছু গড়াও যায় আবার ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। মহাজ্ঞানী আল্লাহ ন্যায়বিচারক বলেই দুনিয়ার সকল কিছুর পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে কায়েম করবেন বিচারালয় যেখানে যার যার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিবেন।মহান আল্লাহ বলেছেন-

“তারা বলেঃ আমাদের এ পার্থিব জীবনই জীবন। আমাদেরকে পুনরায় জীবিত হতে হবে না। আর যদি আপনি দেখেন; যখন তাদেরকে প্রতিপালকের সামনে দাঁড় করানো হবে। তিনি বলবেনঃ এটা কি বাস্তব সত্য নয়? তারা বলবেঃ হ্যা আমাদের প্রতিপালকের কসম। তিনি বলবেনঃ অতএব, স্বীয় কুফরের কারণে শাস্তি আস্বাদন কর। নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে করেছে। এমনকি, যখন কিয়ামত তাদের কাছে অকস্মাৎ এসে যাবে, তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এর ব্যাপারে আমরা কতই না ক্রটি করেছি। তার স্বীয় বোঝা স্বীয় পৃষ্ঠে বহন করবে। শুনে রাখ, তারা যে বোঝা বহন করবে, তা নিকৃষ্টতর বোঝা। পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না ?” সূরা আন’আম: ২৮-৩২

  • لطَّامَّةُ الْكُبْرَىٰ তোয়াম্মাতুল কুবরা দিয়ে কিয়ামতের ভয়াবহতা বুঝানো হয়েছে।
  • يَوْمَ يَتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ مَا سَعَىٰ ৩৫নং আয়াতে হাসরের মাঠে প্রতিটি ব্যক্তি তার জীবনের সকল ঘটনা মনে করে নিবে এবং আমলনামা দেয়ার আগেই সে চোখের মনের পর্দায় জীবনের কীর্তি ভেসে উঠবে, যেমন দুনিয়ার জীবনে কোন চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের আগে আমাদের আবার মনে পড়ে যায় প্রশ্নের উত্তর কোনটা ভুল করেছিলাম বা কি হয়েছিল খাতার অবস্থা!
  • এখানে জাহান্নামে যাওয়ার বৈশিষ্ট বলা হয়েছে—

১। সীমালংঘনকারী

২। দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের জীবনের তুলনায় গুরুত্ব প্রদান করা

অর্থাৎ যারা মহান রবের দাসত্বের কথা মুখে মুখেই বলে কিন্তু দুনিয়ার জীবনের চাওয়া পাওয়া ও নফসের ভালো লাগাকে বেশী প্রাধান্য দেন যে, এটাকে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে মহান রব ও তাঁর রাসূলের স. আনুগত্যের বাইরে গিয়ে সীমনলংঘনকারী হয়ে যেতেও প্রস্তুত থাকে।

জান্নাতে যাওয়ার গুনাবলী বলা হয়েছে-

১। মহান রবের সামনে দাঁড়াতে হবে সেই ভয় রেখে দুনিয়ার জীবনে মহান রবের দাসত্বকে আনুগত্যের মালা হিসেবে পড়ে চলেছিল।

২। নফস ও দুনিয়ার চাওয়া পাওয়ার উর্ধে স্থান দিয়েছিল আখেরাতের জীবনের চাওয়া পাওয়াকে।

“যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।

যেদিন কপট বিশ্বাসী(মুনাফিক) পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী(মুনাফিক) নারীরা মুমিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা কর, আমরাও কিছু আলো নিব তোমাদের জ্যোতি থেকে। বলা হবেঃ তোমরা পিছনে ফিরে যাও ও আলোর খোঁজ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব। তারা মুমিনদেরকে ডেকে বলবেঃ আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবেঃ হ্যাঁ কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। এই সবই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছে।

অতএব, আজ তোমাদের কাছ থেকে কোন মুক্তিপন গ্রহণ করা হবে না। এবং কাফেরদের কাছ থেকেও নয়। তোমাদের সবার আবাসস্থল জাহান্নাম। সেটাই তোমাদের সঙ্গী। কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্তন স্থল।

সূরা হাদীদঃ ১২-১৫

  • সকলকে সতর্ক করে যেতে হবে তবে ফায়দা তারাই লাভ করবে যারা সেদিনটির আসার ভয় করেছিল।
  • দুনিয়ার এই ক্ষনস্থায়ী জীবন আখেরাতের তুলনায় খুবই নগন্য। যে মৃত্যু সত্য ও কবরের জীবন নিশ্চিত তাকে ভুলে কিভাবে আমরা অনিশ্চিত দুনিয়ার জীবনের ভোগ বিলাসেই লিপ্ত থাকাকে মূল লক্ষ্য করে মহান রবের সামনে দাঁড়ানোর দিনকে ভুলে যাই? মহান আল্লাহ আমাদের উপলব্ধি করার মন দান করুন।

তারা কি বলে তা আমি ভালোভাবে জানি। তাদের মধ্যে যে, অপেক্ষাকৃত উত্তম পথের অনুসারী সে বলবেঃ তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে। সূরা তোয়াহাঃ ১০৪

আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করলে বছরের গণনায়?

তারা বলবে, আমরা একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। অতএব আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন। সূরা মুমিননঃ ১১২-১১৩

মহান আল্লাহ আমাদের সময় থাকতে সময়ের মূল্যায়ন করার তাওফিক দান করুন।

https://www.youtube.com/watch…
https://www.youtube.com/watch…
https://www.youtube.com/watch…
https://www.youtube.com/watch…

https://www.youtube.com/watch…
https://www.youtube.com/watch…
https://www.youtube.com/watch…

https://www.youtube.com/watch…

 

সূরা নাযিয়াত শিক্ষা-১

সূরা নাযিয়াত শিক্ষা-২য় রুকু-১

 

 

 

 

 

 

সূরা নাযিয়াত শিক্ষা-২

 

সূরা নাযিয়াত শিক্ষা ২য় রুকু-২