আল্লাহর আহবানে বায়তুল্লাহর অতিথির সাড়া-“হে আল্লাহ আমি হাযির-১৬ তাওয়াফ

তাওয়াফ

শরীয়ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে কাবা ঘরের চতুর্দিকে সাতবার প্রদক্ষিণ করা বা চক্কর দেয়াকে তাওয়াফ বলে।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

আমার ঘরকে তাওয়াফকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। সূরা বাকারা:১২৫

আর তারা যেন প্রাচীন ঘর কাবা তাওয়াফ করে। সূরা আল হাজ্জ:২৯

রাসূল স. বলেছেন,

কেউ যদি যথাযথভাবে বায়তুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে তবে তার একটি ক্রীতদাস মুক্ত করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফ করতে গিয়ে কোন ব্যক্তি যখনই তার কদম রাখে,তখনই প্রতি কদমে তার একটি করে গুনাহ মাফ করা হয় এবং একটি করে নেকী লিখা হয়।          সহিহ জামে আত তিরমিযী:৯০১, হাসান হাদীস

তাওয়াফের শর্ত—-

১। অযু ও পবিত্রতার সাথে তাওয়াফ করা

২। মনে মনে তাওয়াফের ইরাদা বা নিয়ত করা

৩। হজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করা

৪। সাত চক্র পূর্ণ করা

৫। মসজিদে হারামের ভিতরে থেকে তাওয়াফ করা

৬। কাবাকে বাম পাশে রেখে তাওয়াফ করা

৭। সতর ঢাকা, মহিলাদের হিজাব থাকা।

তাওয়াফ শুরু করতে হয় যেভাবে তা হলঃ

১। মসজিদুল হারামে প্রবেশকালে সুন্নাত মুতাবিক ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা এবং মসজিদে প্রবেশের যে দোয়া আছে তা পড়ে প্রবেশ করা উত্তম।

[بِسْمِ اللَّهِ، وَالصَّلَاةُ] [وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ]

أَعُوذُ بِاللَّهِ العَظِيمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ»

للَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু  আলা রাসুলিল্লাহ আঊযুবিল্লাহিল আযীম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলতোয়ানাহিল কাদীম মিনাশ শাইতোয়ানির রাজীম আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা (আরবী দেখে সহীহ উচচারন দিয়ে পড়বেন)

আল্লাহ্‌র নামে (প্রবেশ করছি), সালাত ও সালাম আল্লাহ্‌র রাসূলের উপর।“আমি মহান আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারা ও প্রাচীন ক্ষমতার ওসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।“হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। এছাড়া সহীহ অন্য কোন দোয়া উল্লেখ নেই।

এখানে জানা থাকা দরকার যে, তাহিয়্যাতুল “মসজিদে হারাম” হলো তাওয়াফ করা। আর যখন তাওয়াফের নিয়্যাত ছাড়া মসজিদে হারামে যাবেন তখন দু রাকয়াত সালাত আদায় করে মসজিদে বসবেন। আর সালাতের জামায়াত শুরু হয়ে থাকলে সরাসরি জামায়াতে শরিক হবেন।

২। তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে তালবিয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

৩। তাওয়াফের নিয়ত করা যা মনে মনে ইচ্ছা পোষন করলেই হবে, মুখে উচ্চারন করার প্রয়োজন নেই।

৩। তারপর কা’বার দক্ষিন কোনে অবস্থিত হাজরে আসওয়াদের নিকট যেয়ে পূর্ণদেহ বা চেহারাকে কিবলামুখী হয়ে হাজরে আসওয়াদকে সম্মুখে রেখে চুমু দেয়া বা হাত দিয়ে স্পর্শ করে (হাত বা ছড়ি দিয়ে স্পর্শ করলে সেই হাত বা ছড়ি চুম্বন করা ) বলা বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার বা তা না হলে  ডান হাতে ইশারা করে ( ইশারা করে সেই হাতে চুম্বন করবে না।) (পরবর্তী চক্রের শুরুতে বলবেন আল্লাহু আকবার বলা), তারপর কাবা ঘরকে বামে রেখে তাওয়াফ শুরু করা ।

তাওয়াফের শুরুতে নিম্নের দো‘আটি পড়া সুন্নাত :

اللّهُمَّ إِيْمَاناً بِكَ وَتَصْدِيْقاً بِكِتَابِكَ وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتِّبَاعاً لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ

অর্থ : “হে আল্লাহ্! আপনার প্রতি ঈমান এনে, আপনার কিতাবকে সত্য প্রতিপন্ন করে, আপনার প্রতিশ্রুতিকে পূর্ণ করে এবং আপনার রাসূলের সুন্নাতকে অনুসরণ করে (আমি তাওয়াফ শুরু করছি)”।

আস সুনানুস সুগরা,মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাকী

তাওয়াফের ক্ষেত্রে সহিহ হাদীসের আলোকে এবং কুর’আনে উল্লেখ দোয়া সমূহ এবং কুর’আন পাঠ করা যাবে। নির্দিষ্ট কোন দোয়া বাধ্য করে দেয়া হয় নাই। যে কোন দোয়া ও যিকর সহজ তাই পড়বেন।

৪। হযরে আসওয়াদ কাবার একটি কোনায় অবস্থিত,এটি প্রথম ধরলে রুকনে ইয়ামনী হবে চতুর্থ কোন। তারপর যখন রুকনে ইয়ামানি বরাবর পৌছালে খুব ভিড় না থাকলে এই কোনকে  ডান  হাত দিয়ে স্পর্শ করা, এইখানে হাতে চুম্বন করবে না) অথবা স্পর্শ করতে না পারলে, ইশারা করা লাগবে না, তাকবীরও বলা লাগবে না।                            তাওয়াফে চলতে থাকবে অন্য কিছু করা লাগবে না। রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদ পৌছা পর্যন্ত দোয়া পড়তে হবে:

«﴿ رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَـنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّ

রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান্নার(আরবী উচচারন দেখে বলুন)

হে আমাদের রব ! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা করুন’’। সূরা আল-বাক্বারা : ২০১

৫। যখনই হাজারে আসওয়াদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে, তা স্পর্শ করে চুম্বন করবে এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ ও চুম্বন করা সম্ভব না হলে সে বরাবর আসলে ডান হাত দিয়ে সেদিকে ইশারা করে একবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে।

তাওয়াফকালে প্রতিবার হাজরে আসওয়াদের কাছে আসলেই প্রথমবারের মত করতে হবে,এইভাবে সাত চক্কর শেষ করতে হবে(হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু এবং এইখানে এসেই শেষ করতে হবে) ।

৬। তাওয়াফের ৭ চক্র শেষ হলে দু’কাঁধ এবং বাহু ইহরামের কাপড় দিয়ে আবার ঢেকে ফেলবেন। ৭ চক্র শেষ হলে পুনরায় আল্লাহু আকবার তাকবীর ধ্বনি দেওয়া ঠিক নয়। হাত উঠিয়ে ইশারাও নেই। তাকবীর বলার নিয়ম হলো তাওয়াফের শুরুতে এবং শুধুমাত্র হজরে আসওয়াদ কোনে।

তাওয়াফের চক্র গনায় ভুল হলে নিচের কম সংখ্যাটি ধরেই চক্র গননা করে সাত চক্র পূর্ণ করা দরকার।

তাওয়াফ করা অবস্থায় অযু ভেংগে গেলে পুনরায় অযু করেই তাওয়াফ সম্পন্ন করতে হবে।

যে সময়ে সালাত পড়া নিষেধ সেই সময়ে তাওয়াফ করা যায়।

৭। তারপর সহজে সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুরাকা’আত সালাত আদায় করা অথবা ভীড় / ধাক্কা এড়ানোর জন্য হারাম শরীফের যে কোন স্থানে নামাজ পড়ুন। প্রথম রাকা’আতে সূরা ফাতিহা ও সূরা কাফিরুন এবং ২য় রাকা’য়াতে ফাতিহা ও সূরা এখলাস পড়া সুন্নাত।

৮। এরপর সুন্নত হলো হাজরে আসওয়াদে গিয়ে স্পর্শ করা ও চুম্বন করা যদি তা সম্ভব হয়। তারপর যমযমের পানি পান করা মুস্তাহাব। এরপর সাঈ করার জন্য বাবে সাফা হয়ে সাফা পর্বতের দিকে রওয়ানা হবেন।

যমযমের পানি পান করতে যাওয়া মুস্তাহাব। পান শেষে যমযমের কিছু পানি মাথার উপর ঢেলে দেয়া সুন্নাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। (আহমাদ)

হজ্জ ও ওমরার জন্য প্রথম তাওয়াফের (তাওয়াফ আল কুদুম ও তাওয়াফে ওমরা) প্রথম তিন চক্কর এর সময় পুরুষদের রমল করতে হয়। রামল হলো ঘন ঘন পা ফেলে দ্রুত হেলে দুলে বীরের ভঙ্গিতে হাঁটা। বাকী চার চক্করে ইযতিবা করা।

 ইযতিবা

ইযতিবা হলো গায়ে চাদর পরিধানের একটি পদ্ধতি যা  মক্কায় প্রবেশের পর শুধুমাত্র উমরার তাওয়াফে বা হজ্জের প্রথম তাওয়াফের সময় পুরুষেরা ৭ চক্রেই করে থাকেন। সাধারন বা নফল তাওয়াফে ইযতিবা নেই। মহিলাদেরও কোন ইযতিবা নেই।

ইহরাম অবস্থায় পরিহিত চাদরের মধ্যভাগকে ডান কাঁধের নীচে দিয়ে চাদরের উভয় কোণ বাম কাঁধের উপর ধারন করতে হবে অর্থাৎ ডান কাঁধ খোলা রেখে বাম কাঁধ আবৃত করে উক্ত চাদর পড়তে হবে। এর ফলে চাদরের দুই কোণই বাম দিকে থাকবে। ডান কাঁধ, বাহু ও হাত খোলা থাকে। বাম কাঁধ ও বাম বাহু ঢাকা থাকবে।

উমর ইবনে খাত্তাব(রা) রুকন(হাজরে আসওয়াদ)-কে সম্বোধন করে বললেন,আল্লাহর শপথ আমি জানি তুমি পাথর বৈ কিছু নও তুমি কারো ক্ষতি করতে পারো না এবং উপকার করতেও পারো না আমি রাসূল .কে তোমায় চুমু দিতে না দেখলে আমিও তোমায় চুমু দিতাম না(এসব কথা বলার পর ) তিনি হাজরে আসওয়াদকে চুমু দিলেন এবং আবার বললেন,এই রমল করতেই বা আমাদের কি প্রয়োজন? হাঁ এর দ্বারা আমরা মুশরিকদের (আমাদের বীরত্ব ব্যঞ্জক ভাবভঙ্গি) দেখিয়েছি এখন আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এরপর তিনি বললেন , এটি এমন একটি বিষয় যা রাসূল .করেছিলেন অতএব তা পরিত্যাগ করা আমাদের পছন্দ নয়। হি বুখারী:১৫০১

ইবনে আব্বাস(রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন নবী(সঃ) একটি উটের পিঠে আরোহন করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। যখন তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকট পৌছতেন তখন সেদিকে কোন জিনিস দিয়ে ইশারা করতেন এবং তাকবীর বলতেন। হি বুখারী কিতাবুল হজ্জ: ১৫০৮

 

হজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী

রাসূল স. বলেছেন,

হজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর স্পর্শ গুনাহগুলোকে সম্পূর্ণরুপে মুছে দেয়।  জামে আত তিরমিযী

হজরে আসওয়াদ পাথরটি জান্নাত থেকে আসা একটি পাথর,আর এটি বরফের চেয়েও সাদা ছিল,কিন্তু শির্কপন্থীদের পাপ এটিকে কালো বানিয়ে দিয়েছে।   জামে আত তিরমিযী

নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা হজরে আসওয়াদকে কিয়ামতের দিনে উত্থিত করবেন। তার দুটি চক্ষু থাকবে,যা দিয়ে সে দেখতে পাবে,একটি জিহবা থাকবে,যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং যারা তাকে স্পর্ষ করেছে সত্যিকারভাবে এই পাথর সাক্ষ্য প্রদান করবে।  জামে আত তিরমিযী

 

মীকাত থেকে মসজিদে হারামে পৌঁছার পূর্বে যেসব ভুল লক্ষণীয়

১. তালবিয়া না পড়ে অন্য কথা বার্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকা। এমনকি কেউ কেউ গুনার কাজে লিপ্ত হতেও লজ্জাবোধ করেন না, যেমন- গান শুনা।

২. সমস্বরে তালবিয়া পড়া।

মসজিদে হারামে প্রবেশ সংক্রান্ত নানা গলদ

১. নির্ধারিত কোন দরজা দিয়ে হারামে প্রবেশ করাকে বাধ্যতামূলক মনে করা। এমনও দেখা যায় যে বাব ফাত্হ খুঁজতে খুঁজতে হাজীসাহেব ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়েন। অথচ এ বিষয়টিকে এত কঠিনভাবে নেয়া ঠিক নয়, বরং আপনি সুবিধামত যে কোন দরজা দিয়ে হারামে প্রবেশ করতে পারেন। তবে বাব ‘বনী শায়বা” দিয়ে প্রবেশ করতে পারলে ভাল। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন।

২. কিছু কিছু দো’আকে হারামে প্রবেশের বিশেষ দো’আ বলে মনে করা। প্রকৃতপক্ষে হারামে প্রবেশের বিশেষ কোন দো’আ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মসজিদে প্রবেশকালে যে দো’আ পড়তেন হারামে প্রবেশকালেও একই দো’আ পড়েছেন। আর তা হল,

[بِسْمِ اللَّهِ، وَالصَّلَاةُ] [وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ] «اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ».

“আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূলের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ্, আমার গোনাহ্ খাতা মাফ করে দিন, আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ার খুলে দিন।”

তাওয়াফ সংক্রান্ত নানা ত্রুটিবিচ্যুতি

১. নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা। যেমন, কাউকে বলতে শুনা যায়-

“হে আল্লাহ্, আমি সাতবার কাবা শরীফ তাওয়াফ করার নিয়ত করছি।” এ ধরণের কোন নিয়ত না রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, আর না সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্নিত হয়েছে। অতএব, শুধু অন্তরে নিয়ত করাই যথেষ্ট।

২. ঠিক হাজারে আসওয়াদের সীমানা থেকে তাওয়াফ শুরু না করা। সীমানায় পৌঁছার আগে তাওয়াফের নিয়ত করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি সীমানা পার হয়ে তাওয়াফ শুরু করলে সে চক্কর বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

৩. হাজারে আসওয়াদে চুমা দেয়ার জন্য বা রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার জন্য স্থানদ্বয়ে প্রচণ্ড ভিড় করা। ভিড় সৃষ্টি করে মানুষকে কষ্ট দেয়া আদৌ জায়েয নয়।

৪. হাজরে আসওয়াদে চুমা না দিলে তাওয়াফ আদায় হবে না মনে করা। অথচ এই পাথরটিকে চুম্বন করা সুন্নতমাত্র, যা অনাদায়ে ফরজের কোন ক্ষতি হয় না।

৫. রুকনে ইয়ামানীতে চুমা দেয়া, অথচ সুন্নত হল শুধু স্পর্শ করা।

৬. তাওয়াফের সকল চক্করে রমল করা। (রমল মানে- ছোট ছোট পা ফেলে দ্রুত হাটা) অথচ সুন্নত হল শুধু প্রথম তিন চক্করে রমল করা। তাও শুধু পুরুষের জন্য।

৭. প্রত্যেক চক্করের জন্য কোন একটি দো’আকে খাস করে নেয়া। কোন কোন তাওয়াফকারী তো একটা দো’আর বই সাথে রাখেন, আর অর্থ না বুঝে তোতা পাখির মত বইয়ের দো’আগুলো আওড়িয়ে যান-এটা আরো জঘন্য বিদআত।

৮.  হাতীমের ভেতর দিয়ে তাওয়াফ করা। যেহেতু হাতীম কাবার ভিটার অংশ বিশেষ, এ কারণে হাতীমের ভেতর দিয়ে তাওয়াফ করলে পূর্ণ কাবার তাওয়াফ করা হবে না বিধায় তাওয়াফ বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

৯. তাওয়াফের সময় কাবাকে বামে না রাখা। যেমন, কেউ কেউ তাদের সাথের মহিলাদেরকে ভিড় থেকে মুক্ত রাখার জন্য কয়েকজন মিলে মানববন্ধন তৈরী করে। এটা করতে গিয়ে কাবা শরীফ হয়ত তাদের কারো সামনে থাকে, কারো পিছনে থাকে, আবার কারো ডানে থাকে। অথচ এভাবে তাওয়াফ করলে আদায় না হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। যেহেতু তাওয়াফের অন্যতম শর্ত হল কাবাকে বামে রাখা।

১০. রোকনে ইয়ামানীর মত কাবার অন্যান্য স্তম্ভগুলোকেও স্পর্শ করা।

১১. এত উচ্চঃস্বরে দো’আ পড়া যাতে একাগ্রতা থাকে না, অন্যদিকে যা আল্লাহর ঘরের গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে এবং তাওয়াফরত হাজীদের বিরক্ত করে। আর ইবাদাতের মধ্যে কাউকে কষ্ট দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

১২. কারো কারো ধারণা তাওয়াফের দু’রাকাত সুন্নত নামাজ ‘মাকামের’ সন্নিকটে না হলেই নয়। এজন্য তিনি তাওয়াফের স্থান সংকীর্ণ করে মানুষকে কষ্ট দেন।

১৩. এ দু’রাকাত নামাজকে অত্যন্ত দীর্ঘ করা। অথচ এটি সুন্নাহ বিরোধী। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নামাজটা অত্যন্ত সংক্ষেপে আদায় করতেন সেখানে এ ব্যক্তি নামাজটাকে দীর্ঘ করে অন্যকে বঞ্চিত করে, মানুষকে কষ্ট দেয়।

১৪. ‘মাকামে ইব্রাহীমের’ কাছে পড়ার জন্য কোন একটি দো’আকে খাস করে নেয়া। আর যদি এ দো’আ হয় সম্মিলিতভাবে তাতো আরো জঘন্য গর্হিত কাজ।

১৫. ‘মাকামে ইব্রাহীম’ হাত দিয়ে স্পর্শ করা। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।

১৬. অনেকে মোবাইলে ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান, যা খুবই খারাপ একটি বিষয়। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে তাওয়াফের পুরুটা সময়ই হলো ইবাদাত। আপনি যখন মহান রবের দরবারে মুনাজাতে হাত তুলেন, তখন কি আপনার মোবাইলে সেলফি তোলার কথা বা অন্য ছবি তোলার কাজ করে থাকেন? তাওয়াফের পুরু সময়টি তার চেয়েও গুরুত্বঅপূর্ণ  তাসবিহ, দোয়া করার সময়। ঠিক এই পবিত্র কাবার উপরে সাত আসমানের উপরে বাইতুল মামুরে ফেরেশতারা প্রতিনিয়ত তাওয়াফ করে যাচ্ছেন।