আল্লাহর আহবানে বায়তুল্লাহর অতিথির সাড়া-“হে আল্লাহ আমি হাযির-১৩ মীকাত

মীকাত

 

কাবা শরীফ গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থানগুলো নবীজির হাদীস দ্বারা নির্ধারিত আছে। ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। হারাম শরীফের চর্তুদিকেই মীকাত রয়েছে।

হজ্জের জন্য মীক্বাতের স্থান সমূহ হচ্ছে পাঁচটিঃ ১) যুল হুলায়ফা ২) জুহ্‌ফা ৩) ইয়ালামলাম ৪) কারণে মানাযেল ৫) যাতু ঈরক্ব।

১) যুল হুলায়ফাঃ যাকে বর্তমানে আবা’রে আলী বলা হয়। ইহা মদীনার নিকটবর্তী। মক্কা থেকে এর অবস্থান ১০ মারহালা দূরে (বর্তমান হিসেবে প্রায় ৪০০ কিঃ মিঃ)। মক্কা থেকে এটি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। এটি মদীনাবাসী এবং সেপথ দিয়ে গমণকারী অন্যান্যদের মীক্বাত।

২) জুহ্‌ফাঃ শাম তথা সিরিয়াবাসীদের মক্কা গমণের পথে পুরাতন একটি গ্রামের নাম জুহ্‌ফা। সেখান থেকে মক্কার দূরত্ব ৩ মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১৮৬ কিঃ মিঃ)। এটা এখন আর গ্রাম নেই। বর্তমানে লোকেরা এর বদলে পার্শবর্তী স্থান রাবেগ থেকে ইহরাম বাঁধে।

যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম পরিধান করে তা হল :

(ক) সিরিয়া, (খ) লেবানন, (গ) জর্দান, (ঘ) ফিলিস্তীন, (ঙ) মিশর, (চ) সূদান, (ছ) মরক্কো, (জ) আফ্রীকার দেশসমূহ (ঝ) সৌদী আরবের উত্তরাঞ্চলীয় কিছু এলাকা এবং (ঞ) মদীনার পথ ধরে যারা আসে না তারাও এখান থেকে ইহরাম বাঁধে।

 

৩) ইয়ালামলামঃ ইয়ামানের লোকদের মক্কা আগমণের পথে একটি পাহাড় বা একটি স্থানের নাম ইয়ালামলাম। বর্তমানে এস্থানকে সা’দিয়া বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ৯২ কিঃ মিঃ।)

যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হল : (ক) ইয়ামেন, (খ) বাংলাদেশ, (গ) ভারতবর্ষ, (ঘ) চীন, (ঙ) ইন্দোনেশিয়া, (চ) মালয়েশিয়া, (ছ) দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্বের দেশসমূহ।

৪) কারণে মানাযেলঃ নজদ তথা পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের মক্কা গমণের পথে তায়েফের কাছে একটি পাহাড়ের নাম। বর্তমানে একে সায়লুল কাবীর বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা (বর্তমানে প্রায় ৭৮ কিঃ মিঃ।)

যেসব এলাকা ও দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হল : (ক) রিয়াদ, দাম্মাম ও তায়েফ (খ) কাতার (গ) কুয়েত (ঘ) আরব আমীরাত (ঙ) বাহরাইন (চ) ওমান (ছ) ইরাক, (জ) ইরানসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে।

৫) যাতু ইরক্বঃ ইরাকের অধিবাসীদের মক্কা আগমণের পথে একটি স্থানের নাম। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১০০ কিঃ মিঃ।) প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট না থাকায় এটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না।

এটা ছিল ইরাকবাসীদের মীকাত। তারা এখন তৃতীয় মীকাত ‘সাইলুল কাবীর’ ব্যবহার করে।

 

প্রথম চারটি মীক্বাত রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারিত। শেষেরটিও আয়েশা (রাঃ)এর বর্ণনা অনুযায়ী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারণকৃত মীক্বাত। যেমনটি নাসাঈ ও আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যাতু ইরক্বের ব্যাপারে সহীহ্‌ সূত্রে ওমর রা. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি উহা কূফা ও বস্‌রার অধিবাসীদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তারা এসে অভিযোগ করল, হে আমীরুল মু‘মেনীন! নবী সা. নজদবাসীদের জন্য কারণে মানাযেলকে (তায়েফ) মীক্বাত নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদেরকে অনেকটা পথ ঘুরে সেখানে যেতে হয় এবং আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তখন ওমর রা. বললেন, তোমাদের পথে ঐ মীক্বাতের বরাবর কোন স্থান তোমরা অনুসন্ধান কর। তখন যাতু ইরক্ব মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

 

মোটকথা, যদি নবী সা. থেকে সহীহ্‌ সূত্রে প্রমাণিত হয় তবে তো কোন প্রশ্ন নেই। যদি প্রমাণিত না হয়, তবে উহা ওমর বিন খাত্তাব রা. এর সুন্নাত থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি চার খলীফার মধ্যে অন্যতম। যারা ছিলেন সুপথপ্রাপ্ত এবং তাঁদের অনুসরণ করার নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওমরের সমর্থনে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কয়েকটি বিধান নাযিল করেছেন। আয়েশা বর্ণিত হাদীসটি যদি সহীহ্‌ হয়, তবে এটাও তাঁর প্রতি নবী সা. এর সমর্থন। তাছাড়া হযরত ওমরের নির্দেশ যুক্তি সংগত। কেননা কোন মানুষ যদি মীক্বাত থেকে ভিতরে যেতে চায় তবে সেখান থেকেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু এ স্থানের বরাবর কোন পথ দিয়ে ভিতরে যেতে চাইলে মীক্বাত অতিক্রমকারী হিসেবে উক্ত স্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবে।