পবিত্রতায় অযু

 

অযু

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু-

power point presentation

অযু ২০২৩

অযু: ভিতর-বাহিরের পবিত্রতা অর্জনের উপায়

অযু এমন একটি আমল, যা আমরা প্রতিদিন করি এবং একাধিকবার করি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য অযুর প্রয়োজন হয়। তাই নামাযীমাত্রই অযুতে অভ্যস-। তবে কখনো কখনো এই অভ্যস-তা এক ধরনের যান্ত্রিকতাও তৈরি করে। সচেতন না হলে এর দ্বারা আমলের প্রাণময়তা বিনষ্ট হয়। অথচ কোনো আমলের পূর্ণ সুফল পেতে হলে তা জীবন- ও প্রাণবন- হওয়া চাই। শরীয়তের কোনো আমলই ছোট নয়। যেসব আমল বাহ্যিকদৃষ্টিতে সাধারণ বলে মনে হয়, তার দ্বারাও আল্লাহ তাআলার সন’ষ্টি ও নৈকট্যের পথে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব যদি তা যত্নের সঙ্গে করা হয়। এজন্য কোনো আমলকেই সামান্য মনে করা উচিত নয়। হাদীস শরীফ থেকেও এ বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) ‘কোনো ভালো কাজকেই সামান্য মনে করবে না, এমনকি তা যদি হয় তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত।’ উপরন’ অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো আমলের গুরুত্ব অনেক বেশি অথচ বিভিন্ন কারণে তা অস্পষ্ট হয়ে যায়। কখনো তা হয় আমলটি সহজ হওয়ার কারণে, কখনো প্রতিদিন বারবার করার কারণে, কখনো গুরুত্বের আলোচনা না হওয়ার কারণে, কখনোবা দ্বীনী বিষয়ে উদাসীনতার কারণে। মুসলমানদের জন্য যেসব কাজ অবশ্যকরণীয় তা সব এক ধরনের নয়। কিছু বিষয় রয়েছে যা সার্বক্ষণিক, অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তে অপরিহার্য, কোনো বিষয় কিছু সময় পরপর অপরিহার্য, কোনো বিধান সপ্তাহে একবার, কোনোটা বছরে একবার, আবার কোনো বিষয় জীবনে একবার অপরিহার্য। এই বিভিন্নতার পিছনে আল্লাহ তাআলা বহু তাৎপর্য নিহিত রেখেছেন এবং এর পূর্ণ জ্ঞান আল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে তবে আমলের প্রকৃতি, আমলকারীর যোগ্যতা ও সামর্থ্য এবং ইসলামী শরীয়তের রুচি ও প্রবণতা সম্পর্কে চিন-া-ভাবনা করলে কিছু বিষয় অনুধাবন করা যায়। আমরা সামান্য চিন-া করলেই বুঝতে পারি যে, যে আমলগুলো বারবার করণীয় তা যেমন বান্দার জন্য প্রয়োজনীয় তেমনি তা সম্পন্ন করাও সহজ। মু’মিনের ঈমানী জীবন গঠনেও তা অত্যন- সহায়ক।

সূরা মা-ইদার ষষ্ঠ আয়াতে অযুর বিধান উল্লেখিত হয়েছে। সঙ্গে গোসল ও তায়াম্মুমের বিধানও রয়েছে। আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) ‘আল্লাহ তোমাদের উপর কোনো প্রকার কষ্ট আরোপ করতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা শোকরগোযারী কর। (সংগ্রহঃ মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ)

অযুর ফযীলত:

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীস অযুর ফযীলত প্রমাণ করে। তিনি বলেছেন,

«مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ».

“তোমাদের যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অযু করে এ দো‘আ পাঠ করবে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল’ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।” সহীহ মুসলিম, ত্বহারাতঃ ২৩৪;

অযুতে অপচয় না করে উত্তমরূপে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করলে কিয়ামতের দিন অযুকারীর হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকা আবশ্যক করবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ»

“কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।” সহীহ বুখারী, অযু: ১৩৬; সহীহ মুসলিম, ত্বহারাত:২৪৬

নু’আইম আল-মুজমির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি ওযু করে বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মতদেরকে কেয়ামতের দিন তাদেরকে ‘গুররান-মুহাজ্জালীন’ বলে ডাকা হবে। (অর্থাৎ ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো উজ্জ্বল অবস্থায় উপস্থিত হবে) কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করতে সক্ষম, সে যেন তা (বৃদ্ধি) করে। [বুখারী: ১৩৬]

ওযু হলো উম্মত চেনার উপায় একবার সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উম্মতের যেসব লোক এখনো দুনিয়াতে আসেনি (পরবর্তী যামানায় আসবে) তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, তোমরা বলতো কালো ঘোড়ার পালের মধ্যে যদি কিছু সাদা কপাল ও সাদা পা ওয়ালা ঘোড়া মিশে যায় তাহলে এগুলো কি তোমরা চিনে বের করে নিতে পারবে না? উত্তরে সাহাবীগণ বললেন, হ্যা, ইয়া রাসূলুল্লাহ তা পারব (এটাতো সহজ কাজ)। তখন নবী করীম (স) বললেন, যারা আমার উম্মত হবে তারা তো ওযু করবে, আর ওযূর পানির ছোঁয়া লাগা অঙ্গগুলো কিয়ামতের দিন সৌন্দর্যের ঝলকানিতে চকমক ও ঝকঝক করতে থাকবে । (ফলে অতি সহজেই আমি তাদের চিনে বের করে ফেলতে পারব এবং) তাদেরকে হাউযে কাউসারের পানি পান করানোর জন্য আমি অনেক আগেই সেখানে পৌছে যাব। অতএব, যে লোক পরকালে তার সৌন্দর্য বর্ধন করতে চায়, সে যেন তখনই তার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে (অর্থাৎ উত্তমরূপে ওযূ করে)। (মুসলিম)

হযরত উছমান ইবনে আফফান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে উত্তমরূপে অযু করে তার শরীর থেকে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়।-সহীহ বুখারী;

ওযূর পানির ফোটার সাথে গুনাহ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যখন কোন মুসলিম বা মুমিন বান্দা ওযুর সময় মুখমণ্ডল ধোয়, তখন তার চোখ দিয়ে তার কৃত পাপরাশি পানির সাথে কিংবা পানির শেষবিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। আর যখন সে তার দুটি হাত ধৌত করে তখন হাত দ্বারা তার হয়ে যাওয়া গুনাহগুলো পানির সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে ঝরে যায়। এরপর সে যখন তার পা দু’টি ধৌত করে, তখন তার দু’পা দিয়ে করে ফেলা গুনাহখাতা পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বেরিয়ে যায়। এমনকি সে তার যাবতীয় (সগীরা) গুনাহ থেকে মুক্ত ও পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন হয়ে যায় । (মুসলিম: ২৪৪)।

বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “আমি কি তোমাদের এমন কাজ সম্পর্কে জানাবো না, যা করলে আল্লাহ তাঁর বান্দার পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল । (হে আল্লাহর রাসূল!) অবশ্যই আপনি তা বলুন। তখন তিনি বললেন, অসুবিধা ও কষ্ট থাকাসত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযূ করা, (প্রত্যহ পাঁচবার) মসজিদে যাওয়া-আসার কারণে পদক্ষেপের পরিমাণ। বেশি হওয়া এবং এক নামায আদায়ের পর পরবর্তী ওয়াক্তের নামায পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা (অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যের গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখা)।” (মুসলিম: ২৫১)

ওযূ অবস্থায় থাকলে ফেরেশতারা অনবরত নেকী লিখতে থাকে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “হে আবু হোরায়রা! যদি তুমি ওযু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল হামদুলিল্লাহ্’ বল, তাহলে একজন পর্যবেক্ষক (ফেরেশতা) তোমার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত নেকী লিখতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার ওযু ভঙ্গ না হয়।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১ম খণ্ড, পৃ. ২২০)

হজরত বারা ইবনে আযিব হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন সালাতের ন্যায় অজু করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অজু অবস্থায় ) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ্‌র সমীপে ফেরেশতাটি প্রার্থনায় বলে থাকে, হে আল্লাহ্‌! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল।’ (আল ইহসান ফি তাকরিব, সহীহ ইবনে হিব্বান)

ওযু শয়তানের গিঁট খোলার অন্যতম মাধ্যম:আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন-তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদাংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায়,তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত,অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে তাহ’লে একটি গিঁট খুলে যায়।পরে ওযু করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অতঃপর সালাত আদায় করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথা সে সকালে উঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য সহকারে।’(সহীহ বুখারী,১১৪২, ৩২৬৯ সহীহ মুসলিম,৭৭৬ আবু দাউদ,১৩০৬ ইবনে মাজা,১৩২৯ মিশকাত,১২১৯) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

অযুর শর্তাবলী:

অযুর শর্তাবলী দশটি। সেগুলো হলো:

১- ইসলাম।

২- জ্ঞান বা বিবেক।

৩- ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।

৪- নিয়ত করা এবং পবিত্রতা অর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়ত অবশিষ্ট থাকা।

৫- যেসব কারণে অযু ফরয হয় সেসব কারণ দূর হওয়া।

৬- ইস্তিঞ্জা করা (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পানি দ্বারা দূর করা) ও ইস্তিজমার করা (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পাথর বা পাতা বা অনুরূপ জিনিস দ্বারা দুর করা)।

৭- পানি পবিত্র হওয়া।

৮- পানি বৈধ হওয়া।

৯- চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাধা থাকলে তা দূর করা।

১০- যে ব্যক্তির সর্বদা অপবিত্র হওয়ার সমস্যা থাকে তার ক্ষেত্রে ফরয সালাতের ওয়াক্ত হওয়া।

হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথায় মাসেহ কর এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে, বা তোমরা স্ত্রীর সাথে সংগত হও এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। সুতরাং তা দ্বারা মুখমণ্ডলে ও হাতে মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা করতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তার নেয়ামত সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।মায়েদাঃ ৬

১। সমস্ত মুখমণ্ডল একবার ধৌত করা। এর মধ্যে- গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়াও অন্তর্ভুক্ত হবে।

২। কনুই পর্যন্ত হাত একবার ধৌত করা।

৩। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা। এর মধ্যে কানদ্বয় মাসেহ করাও অন্তর্ভুক্ত হবে।

৪। দুই পায়ের টাকনু পর্যন্ত একবার ধৌত করা।

৫। এই ক্রমধারা বজায় রাখা।

৬। পরম্পরা রক্ষা করা।

একটি অঙ্গ ধোয়ার পর অপরটি ধোয়ার মাঝখানে স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ সময়ের বিরতি না পড়ে। বরং এক অঙ্গের পরপর অপর অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ধৌত করা।

এগুলো হচ্ছে- অজুর ফরয কাজ; অজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য যে কাজগুলো অবশ্যই করতে হবে।

শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

এখানে অযুর ফরয দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে– ওযুর রুকনসমূহ।

এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আলেমগণের ভিন্নতা রয়েছে। কেউ কেউ ফরযগুলোকে রুকন হিসেবে উল্লেখ করেন। আবার কেউ কেউ রুকনগুলোকে ফরয হিসেবে উল্লেখ করেন।[‘আল-শারহুল মুমতি (১/১৮৩) থেকে সমাপ্ত]

জমহুর আলেম এর নিকট ফরযটাই হচ্ছে– ওয়াজিব।[দেখুন: 127742 নং প্রশ্নোত্তর] তাই ওযুর ফরযগুলোই হচ্ছে– ওযুর রুকন ও ওযুর ওয়াজিব; যেগুলো দিয়ে ওযু সংঘটিত হয় এবং যেগুলো ছাড়া ওযুর অস্তিত্ব হতে পারে না।

অযুর সুন্নতসমূহ অনেক।

শাইখ সালেহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ্‌) বলেন: ওযুর সুন্নতসমূহ হচ্ছে-

১। মেসওয়াক করা। এর স্থান হচ্ছে- গড়গড়ার সময়। যাতে করে মেসওয়াক ও গড়গড়ার মাধ্যমে মুখ পরিস্কার করা যায়; যার ফলে ইবাদত, তেলাওয়াত ও আল্লাহ্‌র সাথে গোপন আলাপের জন্য নিজেকে তৈরী করে নেয়া যায়।

২। ওযুর শুরুতে চেহারা ধৌত করার আগে হাতের কব্জিদ্বয় তিনবার ধৌত করা। এ বিষয়টি হাদিসে উদ্ধৃত হওয়ার কারণে এবং যেহেতু হস্তদ্বয় হচ্ছে- ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পানি ব্যবহার করার মাধ্যম।তাই এ দুটোকে ধৌত করার মাঝে সমস্ত ওযুর জন্য সতর্কতা অবলম্বন পাওয়া যায়।

৩। চেহারা ধৌত করার আগে গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়া; অনেক হাদিসে এ দুটো দিয়ে শুরু করার কথা উদ্ধৃত হওয়ার কারণে। রোযাদার না হলে প্রকৃষ্টভাবে এ দুটো আদায় করবে। গড়গড়া কুলি প্রকৃষ্টভাবে আদায় করার অর্থ হল: গোটা মুখের ভেতরে পানি ঘুরানো। প্রকৃষ্টভাবে নাকে পানি দেয়ার অর্থ হচ্ছে: পানি টেনে একেবারে নাকের উপরে তুলে নেয়া।

৪। পানি দিয়ে ঘন দাঁড়ি খিলাল করা; যাতে করে ভেতরে পানি ঢুকে। দুই হাত ও দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।

৫। ডান হাত ও ডান পা দিয়ে শুরু করা।

৬। মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয় ও পা-যুগল ধৌত করার ক্ষেত্রে একবারের অধিক তিনবার ধৌত করা।[আল-মুলাখ্‌খাস আল-ফিকহি (১/৪৪-৪৫) থেকে সমাপ্ত]

সুন্নতের মধ্যে আরও রয়েছে:

জমহুর আলেমের মতে, কানদ্বয় মাসেহ করা। ইমাম আহমাদের মতে, কানদ্বয় মাসেহ করা ওয়াজিব। ইতিপূর্বে 115246 নং প্রশ্নোত্তরে তা বর্ণিত হয়েছে।

অযুর পরে মুস্তাহাব হচ্ছে: আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত্তা ওয়াবীন ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাতাহ্হিরীন। সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক। (অর্থ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তাওবা করছি।)

আলহামদু লিল্লাহ।.

যদি কেউ পবিত্র অবস্থায় থাকে তাহলে পোশাক পরিবর্তন করা ওজু ভঙ্গের কারণ নয়; যতক্ষণ না ওজু ভঙ্গের কোন কারণ না ঘটে। এ ক্ষেত্রে নর-নারীর বিধান সমান। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

অযুর মাকরূহসমূহ:

অযুর মাকরূহসমূহের অন্যতম হলো:

১- অপবিত্রতা ছিটে অযুকারীর দিকে আসতে পারে এমন অপবিত্র স্থানে অযু করা।

২- অযুতে তিনবারের অধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন তিনবার ধৌত করেছেন। তিনি বলেছেন,

«مَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَظَلَمَ».

“অতঃপর যে ব্যক্তি এর অধিক করে সে অবশ্যই জুলুম ও অন্যায় করে।” সুনান নাসাঈ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৪০

৩- পানি ব্যবহারে অপচয় করা। যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুদ পানি দিয়ে অযু করেছেন। আর মুদ হলো এক মুঠো। তাছাড়া যেকোনো কিছুতে অপচয় করা নিষেধ।

৪- অযুতে এক বা একাধিক সুন্নত ছেড়ে দেওয়া; কেননা সুন্নত ছেড়ে দিলে সাওয়াব কমে যায়। তাই সুন্নতের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিৎ, ছেড়ে দেওয়া অনুচিত।

অযু ভঙ্গের কারণসমূহ নিম্নরূপ:

১। দুই রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া (যেমন- পেশাব, পায়খানা, বায়ু ইত্যাদি)। কিন্তু নারীর সামনের রাস্তা দিয়ে বায়ু বের হলে ওজু ভাঙ্গবে না।

২। নির্দিষ্ট নিগর্মন পথ ছাড়া অন্য কোনভাবে পায়খানা বা পেশাব বের হওয়া।

৩। বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলা। সেটা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে হোক; যেটা হচ্ছে পাগলামি। কিংবা বিশেষ কারণের পরিপ্রেক্ষিতে (যেমন- ঘুম, বেহুশ হয়ে যাওয়া, মাতাল হওয়া ইত্যাদি) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিবেক-বুদ্ধি বিকল হয়ে থাকুক।

৪। পুরুষাঙ্গ ছোঁয়া। দলিল হচ্ছে– বুসরা বিনতে সাফওয়ান (রাঃ) এর হাদিস তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে: “যে ব্যক্তি তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করেছে তার উচিত ওজু করা”।[সুনানে আবু দাউদ, তাহারাত অধ্যায়/১৫৪), আলবানী সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৬৬) বলেছেন: সহিহ]

৫। উটের গোশত খাওয়া। দলিল হচ্ছে জাবের বিন সামুরা (রাঃ) এর হাদিস: “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, আমরা কি উটের গোশত খাওয়ার কারণে ওজু করব? তিনি বললেন: হ্যাঁ।”[সহিহ মুসলিম, হায়েয অধ্যায়/৫৩৯)]

৬।- যেসব কারণে গোসল ফরয হয় সেসব কারণে অযুও ফরয হয়, যেমন ইসলাম গ্রহণ ও বীর্য বের হওয়া, তবে মারা গেলে শুধু গোসল ফরয হয়, অযু ফরয হয় না।

এখানে উল্লেখ্য, কোন নারীর শরীরের ছোঁয়া লাগলেই ওজু ভেঙ্গে যাবে না; সেটা উত্তেজনাসহ হোক কিংবা উত্তেজনা ছাড়া হোক; যতক্ষণ পর্যন্ত না এ ছোঁয়ার কারণে কোন কিছু বের না হয়।

[দেখুন: শাইখ উছাইমীনের ‘আল-শারহুল মুমতি’ (১/২১৯-২৫০) ও স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (৫/২৬৪)]

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

কিছু সাধারন প্রশ্নের মাসায়েল

আমার  অযু ছিল। আমি কিছু মিষ্টান্ন খেয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে গেছি, মুখ ধৌত করিনি। আমার নামায কি সহিহ?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

যে ব্যক্তি নামাযে দাঁড়িয়েছে তার জন্য মুখে যে খাবার ও গন্ধ লেগে আছে সেটি দূরীভুত করা মুস্তাহাব। এ কারণে নামাযে দাঁড়ানোর সময় মিসওয়াক করার বিধান দেয়া হয়েছে।

যদি কেউ সেটি না করে তাহলে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না; তার নামায সহিহ।

ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভেড়ার হাড্ডি থেকে গোশত খেতে দেখেছি। এরপর তিনি নামায পড়েছেন; কিন্তু কুলি করেননি এবং পানি স্পর্শ করেননি।”[মুসনাদে আহমাদ (২৫৪১), আলবানী ‘সিলসিলা সাহিহা’ গ্রন্থে (৩০২৮) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পান করেন। এরপর কুলি না করে ও ওযু না করে নামায পড়েন।[সুনানে আবু দাউদ (১৯৭), আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

আউনুল মাবুদ গ্রন্থে বলেছেন:

“এ হাদিসে দলিল রয়েছে যে, দুধ ও এ জাতীয় অন্য যে সব জিনিসে চর্বি রয়েছে সেগুলো খেয়ে ওযু করা জরুরী নয়। বরং এখতিয়ারী বিষয়।”[সমাপ্ত]

শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

“যখন নামাযের ওয়াক্ত হয় তখন আমার অযু আছে। কিন্তু আমি হয়তো কোন কিছু খেয়েছি, যার অবশিষ্টাংশ আমার দাঁতে লেগে আছে। এমতাবস্থায় এগুলো দূর করার জন্য কুলি করা কি আমার উপর আবশ্যকীয়; নাকি আবশ্যকীয় নয়?

তিনি জবাব দেন: খাবারের অবশিষ্টাংশ দূর করার জন্য কুলি করা মুস্তাহাব। মুখে খাবারের কোন অংশ অবশিষ্ট থাকলে সেটা নামাযের হুকুমে কোন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু গ্রহণকৃত খাবারটি যদি হয় উটের গোশত তাহলে নামাযের আগে অবশ্যই ওযু করতে হবে। কেননা উটের গোশত ওযু ভঙ্গকারী।”[সমাপ্ত][মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (২৯/৫২)]

মহিলাদের মাথার উপরে সাজ হিসেবে যা কিছু পরা হয়; যেমন- কাপড়, প্লাস্টিকের জিনিস, লোহার জিনিস এবং যেটা দিয়ে চুল বাঁধা হয় সেটা বেশি হোক বা কম হোক— এগুলোর ওপর মাসেহ করা কি জায়েয? প্রত্যেক অংশের চুল আলাদাভাবে বাঁধা কি জায়েয (চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত জড়ো করে একটি লোহার জিনিস দিয়ে সেটাকে বাঁধা) কিংবা অনেকগুলো বেনী করা; এরপর সেগুলোর ওপর মাসেহ করা?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

অযুর ফরয হচ্ছে মাথা মাসেহ করা। আল্লাহ্‌র বাণীর দলিলের কারণে: “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৬]

আলেমগণ মাসেহ করার অংশ কতটুকু এ নিয়ে মতভেদ করেছেন। গোটা মাথা মাসেহ করতে হবে; নাকি অংশ বিশেষ মাসেহ করলে চলবে? ইমাম মালেক ও আহমাদের অভিমত হচ্ছে গোটা মাথা মাসেহ করতে হবে। এটাই অগ্রগণ্য অভিমত।

অযুতে মাথা মাসেহ করার দুটো পদ্ধতি উদ্ধৃত হয়েছে:

১। হাত ভিজানোর পর সেই হাত মাথার অগ্রভাগে রাখা; অতঃপর মাথার পেছনে পর্যন্ত মাসেহ করা। এরপর হাতদ্বয়কে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনরায় ফিরিয়ে নেয়া।

২। গোটা মাথা মাসেহ করা; তবে চুল যেই দিকে ভাঁজ হয়ে আছে সেই দিক বিবেচনা করে। যাতে করে চুলের পজিশন পরিবর্তন না হয়।

যার চুল লম্বা (পুরুষ বা নারী) তার জন্য এই পদ্ধতিটি উপযুক্ত; যাতে করে হাতদ্বয় ফিরিয়ে নিতে গিয়ে তার চুল এলোমেলো হয়ে না যায়।

রুবাঈ বিনতে মুআওয়িয বিন আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বাসায় ওযু করলেন; তখন তিনি মাথার চূড়া থেকে গোটা মাথা মাসেহ করলেন। মাথার প্রত্যেক দিক চুলের অভিমুখের দিকে মাসেহ করলেন। চুলের পজিশন নাড়ালেন না।[মুসনাদে আহমাদ (২৬৪৮৪) ও সুনানে আবি দাউদ (১২৮), আলবানী ‘সহিহু আবি দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

হাদিসের ভাষ্য: مِنْ قَرْن الشَّعْر (চুলের চূড়া) দ্বারা উদ্দেশ্য চূলের উপরের ভাগ। অর্থাৎ মাসেহ শুরু করবে চুলের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত।

ইবনে কুদামা ‘আল-মুগানী’ গ্রন্থে (১/৮৭) বলেন: যদি হাত পুনরায় ফিরালে চুল এলোমেলো হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তাহলে হাত ফিরাবে না। এটি ইমাম আহমাদের স্পষ্ট ভাষ্য। কারণ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: যার চুল কাঁধ পর্যন্ত; সে কিভাবে মাসেহ করবে? তখন ইমাম আহমাদ তাঁর হাতদ্বয় মাথার সামনে থেকে পেছনে একবার সঞ্চালন করলেন এবং বললেন: এভাবে করবে; যাতে করে তার চুল বিক্ষিপ্ত হয়ে না পড়ে। অর্থাৎ সে ব্যক্তি মাথার পেছন পর্যন্ত একবার মাসেহ করবে; পুনরায় হাত ফিরিয়ে নেবে না। আহমাদ বলেন: আলী (রাঃ) এর হাদিসে এভাবে এসেছে। আর চাইলে মাসেহ করতেও পারেন; যেমনটি রুবাঈ’ এর হাদিসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বাসায় ওযু করেছেন। তিনি তার গোটা মাথা মাসেহ করেছেন। চুলের চূড়া থেকে প্রত্যেক পার্শ্ব; চুলের অভিমুখের দিকে। চুলের পজিশন পরিবর্তন করেননি।[সুনানে আবু দাউদ] আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: নারী কিভাবে মাসেহ করবেন? তিনি বললেন: এভাবে— তিনি তাঁর হাত মাথার মধ্যখানে রাখলেন। এরপর হাতকে সামনের দিকে টেনে আনলেন। এরপর হাত উঠিয়ে পুনরায় আগের জায়গায় রাখলেন। এরপর মাথার পেছনের দিকে হাতকে টেনে নিলেন। ওয়াজিব অংশটুকুর মাসেহ সম্পূর্ণ করার পর যেভাবেই মাসেহ করুক সেটা জায়েয হবে।[সমাপ্ত]

দুই:

যদি নারীর মাথায় কোন সাজগোজের জিনিস থাকে; যেমন ফিতা, প্লাস্টিক টুকরা ইত্যাদি তাহলে সেগুলো খুলে ফেলা জরুরী; যদি এসব জিনিস মাথার একটি অংশ জুড়ে থাকে। ‘গোটা মাথা মাসেহ করা ওয়াজিব’ এই অভিমতের উপর এই কথা নির্ভরশীল।

আল-বাজী (রহঃ) বলেন:

“যদি কোন নারী কোন পশম বা কৃত্রিম চুল যোগ করে চুল বাড়ানোর চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে ওগুলোর ওপর মাসেহ করা জায়েয হবে না। কেননা ওগুলোর কারণে পানি তার সকল চুলে পৌঁছবে না। বরং কিছু চুলে পৌঁছবে। এই অভিমত সব চুল মাসেহ করা ওয়াজিব এর উপর নির্ভরশীল।”[আল-মুনতাক্বা (১/৩৮) থেকে সমাপ্ত]

ইমাম আহমাদ (রহঃ) নারীর মাথা মাসেহ করার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল অভিমত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: মাথার অগ্রভাগ মাসেহ করবে।

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন: “মাথা মাসেহ করার ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। আল্লাহ্‌ তাআলা তার বাণী: “তোমাদের মাথা মাসেহ কর” এর মধ্যে দ্ব্যর্থহীনভাবে তা উল্লেখ করেছেন। তবে কতটুকু অংশ মাসেহ করা ওয়াজিব— এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সব মানুষের ক্ষেত্রে গোটা মাথা মাসেহ করার কথা বলেছেন। এটি খিরাক্বীর ভাষ্যের বাহ্যিক মর্ম এবং ইমাম মালেকের মাযহাব।

আবার ইমাম আহমাদ থেকে মাথার কিছু অংশ মাসেহ করলে চলবে— এমন অভিমতও বর্ণিত রয়েছে। কিছু অংশ মাসেহ করার অভিমত আরও ব্যক্ত করেছেন হাসান, ছাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী ও কিয়াসপন্থীরা। তবে ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে: পুরুষের ক্ষেত্রে গোটা মাথা। আর নারীর ক্ষেত্রে মাথার অগ্রভাগ মাসেহ করাই যথেষ্ট।

তিন:

নারীর জন্য মাথার চুল বাঁধা কিংবা বেনী করতে কোন অসুবিধা নেই এবং অযুর ক্ষেত্রে এগুলোর উপরেই তিনি মাসেহ করবেন।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে ‘নারীর বাঁধা চুলের উপর মাসেহ করার হুকুম সম্পর্কে’ জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন: “নারীর জন্য তার মাথার উপর মাসেহ করা জায়েয; তার চুল বাঁধা থাকুক কিংবা ছাড়া থাকুক। তবে নারী তার মাথার চুল মাথার উপরের অংশে উটের কুঁজের মত করে বাঁধবে না। কেননা এতে করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উক্তির অধীনে পড়ে যাওয়ার আশংকা করছি: “এমন নারী যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ। তাদের মাথা উটের বাঁকা কুঁজের মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।”[ফাতাওয়াস শাইখ বিন উছাইমীন (১১/১৫২) থেকে সমাপ্ত]

আমরা একদল নারী যিনি তার চোখের পাপড়িতে মাশকারা দেন তার ওযুর ব্যাপারে জানতে আগ্রহী। মাশকারা চোখের পাপড়িতে ব্যবহারযোগ্য এক ধরণের রঙ; যা রূপচর্চা হিসেবে ব্যবহার করা হয়; যা চোখের পাপড়িকে সুন্দর আকৃতি দেয় এবং কখনও ঘন করে। এই মাশকারাগুলোর মধ্যে কোন কোনটিতে পানি প্রবেশ করে। আর কোন কোনটিতে পানি প্রবেশ করে না; যেটাকে ইংরেজীতে বলে: waterproof। আমরা জানি যে, ওযুর পানি চোখের পাপড়িতে পৌঁছতে হবে। তাই এই অবস্থায় ওযুর হুকুম কি হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

অযু ও গোসলের ক্ষেত্রে চোখের পশম বা পাপড়িতে পানি পৌঁছা ওয়াজিব। যেহেতু এটি চেহারার গণ্ডিতে রয়েছে; যা ধৌত করার আদেশ এসেছে। অনুরূপভাবে চোখের ভ্রূ, গালের পশম, মোচ ও দাড়ি ধৌত করতেও আদিষ্ট।

‘আর-রওদুল মুরবি’ গ্রন্থে বলেন: “চেহারাতে বিদ্যমান হালকা চুল যার নীচ দিয়ে চামড়া দেখা যায় তা ধৌত করবে। যেমন: চোখের পশম, মোচ ও নিম দাড়ি। কেননা সেগুলো চেহারার অন্তর্ভুক্ত।”[সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিতভাবে সমাপ্ত]

দেখুন: “আল-মাজমু” (১/৩৭৬), “মাওয়াহিবুল জালিল” (১/১৮৫)

উপরোক্ত  আলোচনার প্রেক্ষিতে: যদি মাসকারার কালার পশমে পানি পৌঁছাকে বাধাগ্রস্ত না করে তাহলে ওযু শুদ্ধ। আর যদি পানি পোঁছাকে বাধাগ্রস্ত করে তাহলে ওযু ও গোসল করার আগে মাশকারার কালার অপসারণ করা ওয়াজিব। কেননা ওযু-গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো যা কিছু ওযুর অঙ্গে পানি পৌঁছাকে বাধাগ্রস্ত করে সেটাকে অপসারণ করা।

ইমাম নববী “আল-মাজমু” গ্রন্থে (১/৪৯২) বলেন: “যদি কোন অঙ্গের কোন অংশে মোম, আঠা কিংবা মেহেদি এ জাতীয় কিছু লেগে থাকে; যা অঙ্গটির কিছু অংশে পানি পৌঁছাকে বাধাগ্রস্ত করে তার পবিত্রতা অর্জন সহিহ হবে না; চাই সেটি পরিমাণে বেশি হোক কিংবা কম হোক।”[সমাপ্ত]

প্রশ্ন: আমি অজু করে কুরআন শরিফ পড়া শুরু করেছি। কুরআন শরিফ পড়ার মাঝখানে যদি সাদা স্রাব নির্গত হয় তাহলে কি কুরআন শরিফ পড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুনরায় ওজু করতে হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

লঘু অপবিত্রতা নিয়ে স্পর্শ না করে কুরআন শরিফ পড়া জায়েয আছে। অনুরূপভাবে তাফসির গ্রন্থসমূহ স্পর্শ করা এবং সেখান থেকে কুরআন পড়া জায়েয আছে। তবে ওজু ছাড়া কুরআন শরিফ স্পর্শ করা জায়েয নেই। এ বিষয়ে আরও জানতে 10672 নং ফতোয়া দেখুন।

দুই:

জরায়ু থেকে নির্গত সাদা স্রাব পবিত্র। তবে এটি বের হলে ওজু ভাঙ্গবে কিনা এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। জমহুর আলেমের মতে, এটি ওজু ভঙ্গকারী। যদি কারো ক্ষেত্রে এটি লাগাতরভাবে বের হতে থাকে তবে তার ক্ষেত্রে ‘প্রস্রাবে অসংযম’ রোগীর বিধান প্রযোজ্য হবে। এমন নারী প্রতি ওয়াক্তের নামাযের জন্য নতুন করে ওজু করবেন এবং এ ওজু দিয়ে ফরজ বা নফল যত রাকাত নামায পড়তে চান পড়ে নিবেন, কুরআন শরিফ স্পর্শ করতে পারবেন। এ সময় স্রাব নির্গত হতে থাকলেও কোন অসুবিধা নেই।

আর এ স্রাব যদি লাগাতরভাবে নির্গত না হয় তাহলে আপনি সরাসরি কুরআন স্পর্শ না করে মোজা বা এ জাতীয় কোন কিছু ব্যবহার করে কুরআন পড়তে পারেন। আরও জানতে 2564 নং ফতোয়া দেখুন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

নারীর জরায়ু থেকে নির্গত তরল হতে পারে বীর্য, হতে পারে মযী বা কামরস, হতে পারে সাধারণ স্রাব। এ তিনটির প্রত্যেকটির রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও প্রত্যেকটির রয়েছে স্বতন্ত্র বিধিবিধান

বীর্য এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-

১। হলুদ রঙের পাতলা। এ বৈশিষ্ট্যটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে- “নিশ্চয় পুরুষের পানি ঘন সাদা। আর মহিলার পানি পাতলা ও হলুদ রঙের।”[সহহি মুসলিম (৩১১)]

২। বীর্যের গন্ধ গাছের মঞ্জরির মত। আর মঞ্জরির গন্ধ ময়দার খামিরের কাছাকাছি।

৩। সুখানুভূতির সাথে বের হওয়া এবং বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসা।

এ তিনটি বৈশিষ্ট্য একত্রে পাওয়া শর্ত নয়। বরং একটি পাওয়া গেলেই সে তরলকে বীর্য হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে। ইমাম নববী তাঁর ‘আল-মাজমু’ নামক গ্রন্থে (২/১৪১) এ কথা বলেছেন।

কামরস:

সাদা স্বচ্ছ পিচ্ছিল পানি। যৌন উত্তেজনার সময় এটি বের হয়; যৌন চিন্তার ফলে কিংবা অন্য কোন কারণে। এটি বের হওয়ার সময় সুখানুভূতি হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে না।

সাদা স্রাব:

গর্ভাশয় থেকে নির্গত পদার্থ, যা স্বচ্ছ। হতে পারে এটি বের হওয়ার সময় নারী টেরও পায় না। এক মহিলা থেকে অপর মহিলার ক্ষেত্রে এটি বের হওয়ার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

পক্ষান্তরে, এ তিনটি তরল (বীর্য, কামরস ও স্রাব) এর মাঝে হুকুমগত দিক থেকে পার্থক্য হচ্ছে-

বীর্য পবিত্র। বীর্য কাপড়ে লাগলে সে কাপড় ধোয়া ফরয নয়। তবে, বীর্য বের হলে গোসল ফরয হয়; সেটা ঘুমের মধ্যে বের হোক কিংবা জাগ্রত অবস্থায়; সহবাসের কারণে বের হোক কিংবা স্বপ্নদোষের কারণে কিংবা অন্য যে কোন কারণে।

আর কামরস বা মযী নাপাক। এটি শরীরে লাগলে ধুয়ে ফেলা ফরয। কাপড়ে লাগলে কাপড় পবিত্র করার জন্য পানি ছিটিয়ে দেয়া যথেষ্ট। কামরস বের হলে ওজু ভেঙ্গে যাবে। কামরস বের হওয়ার কারণে গোসল ফরয হয় না।

পক্ষান্তরে, স্রাব পবিত্র। এটি ধৌত করা কিংবা কাপড়ে লাগলে সে কাপড় ধৌত করা আবশ্যক নয়। তবে, এটি ওজু ভঙ্গকারী। তবে এটা যদি চলমানভাবে বের হতে থাকে তাহলে সে মহিলা প্রত্যেক নামাযের জন্য ওয়াক্ত হওয়ার পর নতুন করে ওজু করবে। ওজু করার পর স্রাব বের হলেও কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।

খের নীচে যে ময়লা থাকে সেটা কি ওযুর শুদ্ধতাকে বাধাগ্রস্ত করে?   

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আল্লাহ্‌র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। পর সমাচার:

চল্লিশ দিন পার হওয়ার আগেই নখের পরিচর্যা করা আবশ্যক। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নখ কাটা, নাভির নীচের পশম কাটা, বগলের পশম উপড়ানো এবং গোঁফ ছাটাই করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন: চল্লিশ দিনের বেশি দেরী না করা। এই মর্মে সহিহ মুসলিমে (২৫৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে।

তাই নর-নারী উভয়ের উপর এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখা ওয়াজিব। তাই চল্লিশ দিনের বেশি সময় নখ, গোঁফ, নাভির নীচের পশম ও বগলের পশম রেখে দেওয়া যাবে না।

তবে অযু সহিহ। নখের নীচের ময়লার কারণে ওযু বাতিল হবে না। কারণ সেটি যৎসামান্য। সামান্য বিষয় ক্ষমার্হ্য।

যদি কোন মুসলিম অভ্যাসগত গোসল করে, অযু না করে; সে কি নামায পড়তে পারবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের অনুসরণে একজন মুসলিমের জন্য মুস্তাহাব হলো গোসলের পূর্বে ওযু করা।

যদি গোসলটি বড় অপবিত্রতাজনিত হয়; (যেমন জানাবাতের গোসল ও হায়েযের গোসল) এবং গোসলকারী কুলি করা ও নাকে পানি দেয়াসহ সমস্ত দেহে পানি পৌঁছায়; তাহলে এ গোসল ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসলের পর আর ওযু করতেন না।

আর যদি গোসলটি শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য হয় কিংবা পরিচ্ছন্নতার জন্য হয়; তাহলে সেটি ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে না।

শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: জানাবতের গোসল কি ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে?

তিনি জবাব দেন: “যদি কোন ব্যক্তি জানাবত (সহবাস, স্বপ্নদোষ, বীর্যপাত)-এর গোসল করে তাহলে তা ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “যদি তোমরা জুনুবী হও তাহলে প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন কর”। গোসলের পর তাকে ওযু করতে হবে না; যদি ওযু ভঙ্গের কোন কারণ না ঘটে। আর যদি গোসলের পর ওযু ভঙ্গের কোন কারণ ঘটে তাহলে ওযু করা তার উপর ওয়াজিব। আর যদি ওযু ভঙ্গের কোন কারণ না ঘটে তাহলে জানাবতের গোসলই তার ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে; চাই সে গোসলের পূর্বে ওযু করুক; কিংবা না করুক। কিন্তু কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। ওযু ও গোসলে এ দুটো অবশ্যই পালনীয়।”[সমাপ্ত]

[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ ইবনে উছাইমীন (১১/প্রশ্ন নং-১৮০)]

শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীনকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: শরিয়তে আদিষ্ট নয় এমন গোসল কি ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে?

তিনি জবাব দেন: “শরিয়তে আদিষ্ট নয় এমন গোসল ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে না। কেননা সেই গোসল কোন ইবাদত নয়।”[সমাপ্ত]

[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ ইবনে উছাইমীন (১১/প্রশ্ন নং-১৮১)

অনুরূপভাবে শাইখকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: গোসল কি ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে

তিনি জবাব দেন: “যদি সেটা জানাবত (সহবাস, স্বপ্নদোষ, বীর্যপাত)-এর গোসল হয়; তাহলে সেটি ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে। যেহেতু আল্লাহ্‌র বাণী হচ্ছে: “যদি তোমরা জুনুবী হও তাহলে প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন কর”। কোন ব্যক্তি যদি জানাবতের শিকার হন; এরপর কোন পুকুরে বা নদীতে বা এ জাতীয় অন্য কিছুর ভেতরে ডুব দেন এবং এর মাধ্যমে জানাবত দূর করার নিয়ত করেন, কুলি করেন ও নাকি পানি দেন; তাহলে এর মাধ্যমে ছোট অপবিত্রতা ও বড় পবিত্রতা উভয়টি দূরীভুত হবে। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা জানাবতের কারণে প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন করা ছাড়া অন্য কিছু করা ওয়াজিব করেননি। প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন হচ্ছে সারা দেহকে পানি দিয়ে ধৌত করা। যদিও জানাবতের গোসলকারীর জন্য উত্তম হচ্ছে- প্রথমে ওযু করে নেয়া। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাতের কব্জিদ্বয় ধোয়ার পরে লজ্জাস্থান ধৌত করতেন। এরপর নামাযের ওযুর মত ওযু করতেন। এরপর মাথার ওপর পানি ঢালতেন। যখন ধারণা হত যে, তিনি চামড়া ভিজিয়েছেন তখন মাথার ওপর তিনবার পানি ঢালতেন। এরপর অবশিষ্ট শরীর ধৌত করতেন।

পক্ষান্তরে পরিচ্ছন্নতা বা শরীর ঠাণ্ডা রাখার কারণে গোসল করলে সেই গোসল ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে না। কেননা সেটি ইবাদত নয়। বরং সেটি অভ্যাসগত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত; যদিও শরিয়ত পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এভাবে নয়; বরং পরিচ্ছন্নতার সাধারণ নির্দেশ; সেটা যে কোন কিছুতে যেভাবেই পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হোক না কেন।

মোটকথা: যদি গোসলটা শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য কিংবা পরিচ্ছন্নতার জন্য হয় তাহলে সেটি ওযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে না।[সমাপ্ত]

মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ বিন উছাইমীন (১১/প্রশ্ন নং-১৮২)

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

সংগৃহিত ও সংযোজিত