বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
রমাদান প্রস্তুতি পূর্ব পরিকল্পনাঃ ২০২৩
আলহামদুলিল্লাহ, ধীরে ধীরে আমরা আবার ইন শা আল্লাহ পেতে যাচ্ছি বিশেষ একটি সম্মানিত মাস, সেই রমাদান মাসকে সামনে রেখেই চলুন নিজেদের প্রস্তুত করে নেই, মহান রবের অনুগ্রহ, ভালোবাসা, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায়। কুর’আনের এই মাসের মূল লক্ষ্যই হবে কুর’আনকে যথাযথভাবে তিলাওয়াত করা।
আল্লাহ অতি উত্তম কালাম নাযিল করেছেন- ইরশাদ হয়েছে
এ এমন এক কিতাব যার সমস্ত অংশ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যাতে বার বার একই কথার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। তা শুনে তাদের গাত্রে লোমহর্ষণ দেখা দেয়, যারা নিজেদের আল্লাহকে ভয় করে। পরে তাদের দেহ ও তাদের দিল নরম হয়ে আল্লাহর স্মরণে উৎসাহী ও উৎসুক হয়ে ওঠে। এ হচ্ছে আল্লাহর হিদায়াত, এর দ্বারা তিনি হিদায়াতের পথে নিয়ে আসেন যাকে তিনি চান। আর আল্লাহ যাকে হিদায়াত না করেন, তার জন্য হিদায়াতকারী কেউ নেই। (আয-যুমার-৩৯ : ২৩)।
اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰهُمُ الۡکِتٰبَ یَتۡلُوۡنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖ ؕ اُولٰٓئِکَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِهٖ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি, তাদের মধ্যে যারা যথাযথভাবে তা তিলাওয়াত করে, তারা তাতে ঈমান আনে। আর যারা তার সাথে কুফরী করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। সূরা বাকারাঃ ১২১
তারা যথাযথভাবে তা পাঠ করে (তারা তার হক আদায় করে তেলাওয়াত করে) এর কয়েকটি অর্থ তাফসিরকারকরা বলেছেন। যেমনঃ
(ক) অত্যধিক একাগ্রতা ও মনোযোগের সাথে পড়ে। জান্নাতের কথা এলে জান্নাত কামনা করে এবং জাহান্নামের কথা এলে তা থেকে পানাহ চেয়ে নেয়।
(খ) তার হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম মনে করে এবং আল্লাহর কালামের কোন বিকৃতি ঘটায় না।
(গ) এতে যা কিছু লেখা আছে, তা সবই লোকমাঝে প্রচার করে, এর কোন কিছুই গোপন করে না। এর সুস্পষ্ট আয়াতগুলোর উপর আমল করে, অস্পষ্ট আয়াতগুলোর উপর ঈমান রাখে এবং যে কথাগুলো বুঝে আসে না, তা আলেমদের মাধ্যমে বুঝে নেয়।
(ঘ) এর প্রত্যেকটি কথার অনুসরণ করে। (ফাতহুল ক্বাদীর) বস্তুতঃ (উল্লিখিত) সব অর্থই যথাযথভাবে তেলাওয়াতের আওতায় পড়ে। আর হিদায়াত এমন লোকদের ভাগ্যেই জুটে, যারা উল্লিখিত কথাগুলির প্রতি যত্ন নেয়।
মোটকথা: আল্লাহর আয়াতকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করাই এর যথাযথ তেলাওয়াত বলে বিবেচিত হবে। [ইবনে কাসীর] যথাযথ তেলাওয়াতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান আনা এবং তার যাবতীয় আদেশ নিষেধ বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেয়া।
আমাদের ওপর কোরআনের যে হকগুলো রয়েছে তা হলো:
১. ঈমান আনা
২. সহীহভাবে পড়তে জানা
৩. তেলাওয়াত করা ও শ্রবণ করা
৪. বুঝা ও উপলব্ধি করা
৫. আমল করা (বাস্তবায়িত করা)
৬. অপরকে শিক্ষা দেয়া
৭. হিফয বা মুখস্ত করা
৮. যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেয়া
৯. কোরআন প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা।
আরবী বার মাসের নাম
১) মুহররম ২) সফর ৩) রবিউল আউয়াল ৪) রবিউস সানি ৫) জমাদিউল আউয়াল ৬) জমাদিউস সানি ৭) রজব ৮) শাবান ৯) রমজান ১০) শাওয়াল ১১) জিলক্বদ ১২) জিলহজ্জ
(জমাদিউস সানি+ রজব+ শাবানঃ ১৪৪৪ হিজরী)
১। ব্যক্তিগত আত্মউন্নয়নের জন্যঃ
- কুর’আন তেলাওয়াতঃ প্রতিদিন ৫ পৃষ্ঠা করে(প্রতি ওয়াক্তে সালাতের পর বা আগে)
- কুর’আনিক শব্দার্থ সহকারে সহিহ তাজবীদের সাথে রিভিশন/ মুখস্থঃ সূরা নংঃ ৯৩-১১৪ (মোট ২২টি সূরা) ও পূর্বে যা মুখস্থ আয়াত সমূহ
- কুর’আনের তাফসীরঃ সূরা নংঃ ১০-১৯ (ইউনুস, হুদ, ইউসুফ, রাদ, ইবরাহীম, হিজর, নাহল, বনি ইসরাইল, কাহফ, মরিয়ম)
- মুখস্থঃ কুর’আনিক দু’আ সমূহ -৬টি
- হাদীস পাঠঃ রিয়াদুস সালেহীন থেকে (কমপক্ষে প্রতিদিন ২টি করে)
- দু’আ মুখস্থঃ সালাতে পঠিত ও নিত্য কাজের পূর্বের দু’আসহ,সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার,ইস্তেখারা দু’আ, জানাযার দু’আ, তাহাজ্জুদে পড়ার দু’আ ও দু’আর সমষ্টি
- বই নোটঃ রমজানে তাকওয়া অর্জনের উপায় (মুহাম্মদ লুতফেরাব্বী অনুদিত)
- ইসলামী সাহিত্যঃ রাসূল সা এর জীবনী, পোষাক,পর্দা ও দেহ সজ্জা (ড আব্দুল্লাহ জাহাংগির) ও রমাদান সংক্রান্ত মাস’আলা নির্বাচিত ফাতাওয়া
- যত্নশীল হতে হবেঃ – নিজের খাদ্য ও ঘুম (শারিরীক ও মানসিক সুস্থতা)
ফরয সালাত, সাওম, পর্দা (বিশেষ করে ঘরে সতর রক্ষা ও পর্দা) ও তাহাজ্জুদ সালাত ও দু’আ করা
যাকাত, দান সাদাকা ও সাদাকায়ে জারিয়ার কাজ
- যা থেকে দূরে থাকতে হবে- অতিরিক্ত গল্প ও অতিরিক্ত কথা বলা থেকে
– সামাজিক মিডিয়াতে অতিরিক্ত সময় দেয়া থেকে
– ছবি দেয়া বা দেখা থেকে
– গান শুনা/নাটক/মুভি দেখা থেকে
– অপ্রয়োজনে শপিং মলে যাওয়া থেকে
যা ছাড়তে হবে—-
রাগ, জোড়ে কথা বলা, অট্ট হাসি, গীবত, হিংসা, মিথ্যা বলা, ঝগড়া, কুধারনা, অন্যের কথার দোষ ধরা
হারাম আয় ও হারাম পথে ব্যয় এবং অপ্রয়োজনীয় হালাল খরচ
২। পারিবারিক সম্পর্ক উনুয়ন ও দায়িত্ব পালনঃ
- পরিবারের সদস্যদের সাথে একান্তে বসে মতবিনিময়, কথা বলা, তাদের কথা শুনা।
- পারিবারিক তালিম(যার যার পরিবেশে হিকমাহ অবলম্বন)-প্রতি সপ্তাহে ১টি
- প্রতি মাসে উপহার প্রদানঃ ১টি, প্রতি মাসে একবার একসাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়া।
- বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগীতার আসর করা—–প্রতি মাসে ১টি (খেলাধূলা, কুইজ)
- দ্বীনী পরিবেশের সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা। স্কলারদের লেকচার শুনানো। সপ্তাহে-কমপক্ষে ১টি
- কুর’আন সহিহ তাজবীদের ব্যবস্থা করে ফেলা-(যারা পারেন না) জরুরী ভিত্তিতে
- যেকোন একটি তাফসীর বা মোটিভেশনাল ক্লাশের গ্রুপের সাথে সংযোগ করে দেয়া।
৩। আত্মীয় ও প্রতিবেশী, কলিগ
- প্রাধান্য অনুসারে সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।-দাওয়াত/উপহার
- অনলাইন গ্রুপ করে সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক মোটিভেশনাল ক্লাশ শুরু করা।
- যেকোন একটি তাফসীর বা মোটিভেশনাল ক্লাশের গ্রুপের সাথে সংযোগ করে দেয়া।
- বই উপহার দেয়া বা বই সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করা। কম পক্ষে প্রতিমাসে ৪জন
- কুর’আন সহিহ তাজবীদের ব্যবস্থা করে দেয়া(যারা পারেন না)
৪। অধিনস্থদের প্রতি (গৃহ কর্মী/ড্রাইভার/দাড়োয়ান/ কর্মচারী)
- সততা ও আখলাকের শিক্ষা দেয়া, সালাতের ও পর্দার ব্যবস্থা রাখা
- সম্ভাব্য কাজ হালকা করে দেয়া, ক্ষমা করা, ঠান্ডা মাথায় বুঝানো
- তাদের প্রয়োজনীয় চাওয়ার ব্যবস্থা করা, উপহার দেয়া
- মাঝে মাঝেই খোঁজ নেয়া তাদের পরিবার ও পরিবেশের
- তাদের পরিবেশে দ্বীনি শিক্ষার ব্যবস্থা করার সুযোগ করা
৫। সামাজিক সাদাকায়ে জারিয়া
- নিজ নিজ দরিদ্র/ মিসকীন আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের মৌলিক চাহিদা পূরনে সহায়তা করা
- যার যার গ্রামের মসজিদে- হুইল চেয়ার, একটি ডিজিটাল প্রেসার মাপা ও অক্সিমিটার প্রদান। মাইয়্যতের গোসল ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম দেয়া
- বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, কুর’আন ও হাদীসের সেট দিয়ে পাঠাগার করে দেয়া।
- টয়লেট ও হাত ধোয়ার উপযুক্ত হাইজিন পরিবেশের ব্যবস্থা করা।
- সহিহ কুর’আন শিখার ব্যবস্থা করে দেয়া(উপযুক্ত আলেম দিয়ে)
- গ্রামের বাজার বা উপযুক্ত স্থানে পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা সম্ভব হলে করে দেয়া ও মেইনটেনেন্সের জন্য মাসিক ভাতা দিয়ে লোক ঠিক করা।
- গ্রামের বৃদ্ধদের খোঁজ নেয়া ও মৌলিক চাহিদা পূরন হচ্ছে কি না সহযোগীতা করা।
- গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা
- মাইয়্যেতের গোসল প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য প্রতি পারা থেকে ৫জনের গ্রুপ করে প্রশিক্ষন দেয়ার ব্যবস্থা করা
- সেলাই মেশিন বা রিকসা প্রদান
- বিবাহ সম্পন্ন হতে আর্থিক বা পরামর্শ, বিধবাদের ও এতিমদের সহযোগীতা করা
৬। এছাড়া নিজস্ব পরিবেশ অবস্থা ও চাহিদার আলোকে পরিকল্পনা করে সাথে এড করে নিতে পারেন
মহান আল্লাহ আমাদের ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফিক দান করুন। কবুল করে নিন সকল প্রচেষ্টা।
বিঃদ্রঃ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল প্রয়োজনীয় বই ও উপাদানসহ একটি নিজস্ব পড়ার টেবিল গুছিয়ে ফেলা ও একটি ক্যালেণ্ডারের মত করে পরিকল্পনার রুটিন করে ফেলা। মহান আল্লাহ আমাদের সহজ করে দিন ও দৃঢ়চিত্ত দান করুন।
জাযাকুমুল্লাহি খাইরান
রমাদান পূর্ব প্রস্তুতি পরিকল্পনাঃ২০২৩